যুদ্ধাপরাধ বিচার_ এটা পুতুল খেলা নয় আগুন নিয়ে খেলা
মুনতাসীর মামুন
অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত মনে লিখছি যে, যুদ্ধাপরাধী/মানবতাবিরোধী অপরাধ বা একাত্তরের খুনীদের বিচারের বিষয়টি ছেলেখেলায় পরিণত হলো। আরও দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, এ ধরনের ছেলেখেলা যাঁরা দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন, যুদ্ধ করেছেন, যাঁরা গত তিন দশক বিচারের দাবিতে আন্দোলন করেছেন তাঁদের প্রতি এক ধরনের বিদ্রূপ। এটি যদি বিএনপি করত, যদি জাতীয় পার্টি করত, তাহলে মেনে নেয়া যেত। কিন্তু এটি এমন সময় হলো, যা মানা কষ্টকর।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিশাল ম্যান্ডেট আওয়ামী লীগ পেয়েছিল। তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে আপামর জনসাধারণ আশান্বিত হয়ে উঠেছিল। এমনকী বিএনপির মধ্য পর্যায়ের অনেকে আড়ালে বলছিলেন, বিচারটা হয়ে যাওয়া দরকার, বেগম জিয়া বা মওদুদ যতই একাত্তরের খুনীদের সহায়তা বা সমর্থন করম্নক না কেন? অতীতেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে এত বিশাল ম্যান্ডেট আওয়ামী লীগ পায়নি।
আওয়ামী লীগকে আমরা অনেকে সমর্থন করি বিভিন্ন কারণে, কিন্তু এ দলটিকে তো পাঁচ দশক ধরে আমরা চিনিও। সে কারণে এত আশার মধ্যেও একটা আশঙ্কা ছিল, বিচারটা খুব সহজে হবে না। হলেও এত গড়িমসি করা হবে যাতে পাঁচটি বছর পেরিয়ে যায়। অনেক হার্ডকোর আওয়ামী ভক্ত এ ধরনের আশঙ্কার কথা শুনে যারপরনাই ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কিন্তু বিচার শুরুর শুরুটা দেখুন। প্রথম বছর মন্ত্রীরা শুধু আশ্বাস দিতে লাগলেন। প্রধানমন্ত্রীও দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন। দ্বিতীয় বছর বলা হলো, বিচার শুরু হলো বলে এবং বিচারের স্থান নির্ধারণ করা হলো আবদুল গনি রোডের অপরিসর একটি ইমারতে।
তখনই বোঝা গেল, যাঁরা এ বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত তাঁরা এ বিষয়টি নিয়ে কত কম ভেবেছেন। আমাদের প্রতিবাদে কর্তৃপক্ষ অসন্তুষ্ট হলেন এবং বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে করদাতাদের টাকা খরচ করে ইমারতটি সাজালেন। প্রতিবাদ আরও প্রবল হলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জায়গা বদল হলো। কিন্তু ঐ যে আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম, সামরিক শাসকরা যেমন প্রতিবাদ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে, তেমনি আমাদের প্রতিবাদে রুষ্ট কর্তৃপক্ষ পুরনো হাইকোর্টের ছোট একটি পরিসরে বিচারের জায়গা স্থানান্তর করলেন, যেখানে রেকর্ডপত্র রাখার জায়গা, প্রসিকিউটরদের জায়গা, দর্শনার্থী, মিডিয়ার জায়গা হবে না। যতদিন আপনি মন্ত্রীদের কার্যকলাপ অন্ধভাবে সমর্থন করবেন ততদিন আপনার মতো ভাল আর কেউ নেই। খানিকটা যদি সমালোচনা করেন, তা হলে আর রক্ষা নেই। বলা হবে, আপনার মতো দুর্বৃত্ত আর নেই। শুধু তাই নয়, আমাদের মধ্যে জামায়াতী ঝোঁক আছে। আরও বলা হয়, বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে তো তাদের সমর্থক লেখকরা একটি কথাও লেখেন না। এসব নিরেট মস্তিষ্কঅলাদের বোঝানো অসম্ভব যে, সমাজে ঐসব লেখকের কোন অবস্থান নেই, আছে দু’একটি বিশেষ পত্রিকায়; যারা সাম্প্রদায়িকতা থেকে শুরু করে স্বৈরশাসন_ক্ষমতার সমর্থক ও পূজারী। এদের সাধারণ মানুষ দুর্বুত্ত বলেই মনে করে। আওয়ামী লীগের সন্তানরা কি চাইবেন দুর্বৃত্তরা তাদের সমর্থক হোক?
দ্বিতীয় বছরের মাঝামাঝি ট্রাইব্যুনাল, তদন্ত সংস্থা, প্রসিকিউটরদের নিয়োগ দেয়া হলো। তখনই বোঝা গেল, আমরা যা চাই মন্ত্রীরা তা চান না বা বোঝেনও না। ট্রাইব্যুনালের কম্পোজিশন, প্রধান প্রসিকিউটর ও দু’একজন প্রসিকিউটর ছাড়া দেখা গেল কারও প্রতি মানুষের আস্থা নেই। বিচারের প্রধান উপাদান তদন্ত সংস্থার প্রতি দেখা গেল কারও কোন আস্থা নেই। যাঁদের নাম পত্রিকায় এসেছে প্রসিকিউটর ও তদন্ত সংস্থার সঙ্গে যুক্ত বলে তাঁদের অনেকে যোগও দেননি। এতদিন হলো, কেন কেউ যোগ দিচ্ছেন না বা যাঁরা দিচ্ছেন না তাঁদের জায়গায় অন্য নিয়োগ হবে কিনা এ বিষয়টি নিয়েও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদাসীন।
প্রথম থেকেই তদন্ত সংস্থার প্রধানকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মূল অভিযোগ হলো, তিনি জামায়াতের সমর্থক। এ নিয়ে লেখালেখি শুরু হলো। জানা গেল, তদন্ত সংস্থার নিয়োগ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আরও জানা গেল, প্রসিকিউটর নিয়োগ নিয়ে আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। আইন মন্ত্রণালয়ের অর্ধেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমর্থক এবং তদন্ত সংস্থার প্রধানকে নিয়ে যখন তর্ক-বিতর্ক চলছে তখন এ বিষয়টিকে মোটেই গ্রাহ্যের মধ্যে আনেনি কর্তৃপক্ষ। কারণ, তারা বিশ্বাস করে, কর্তা সব সময় সঠিক। কিন্তু আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে কর্তা সব সময় সঠিক_ এ আপ্তবাক্য বিশ্বাস করানো কঠিন। পয়সা দিলেও অনেকে বিশ্বাস করবে না_ অভিজ্ঞতা তাই বলে। কিন্তু পুরো বিষয়টাকে ঘোলা করে দেখা, জনমতের তোয়াক্কা না করা। সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, ব্যক্তিগত ও কোটারী স্বার্থ আজ বিষয়টিকে কোথায় নিয়ে এসেছে? এটাও তো এক ধরনের অপরাধ। এখন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নিচ্ছেন যে, গত এক মাস আমরা যা বলেছি তা সঠিক। গত শুক্রবার এক সেমিনারে তিনি বলেছেন, “প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা ইসলামী ছাত্রসংঘের একটি কলেজ শাখার সভাপতি পদের জন্য মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। তিনি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ তদন্ত কমিটির প্রধান হওয়ায় বিচারের অবস্থা কী দাঁড়াবে তা নিয়ে আমাদের সিরিয়াসলি ভাবতে হবে।” [জনকণ্ঠ, ১.৫.১০]
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা যখন এ কথা বলেন তখন বিষযটি ভিন্নমাত্রা পায়। তিনি তো আমাদের মতো হরিদাস পাল নন; তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নিত্য যোগাযোগ। এক. হতে পারে, প্রধানমন্ত্রী বিতর্কিত বিষয়টি জেনেছেন। কিন্তু মন্ত্রীদের কিছু বলতে পারছেন না; তাই উপদেষ্টাকে দিয়ে বিষয়টির গুরুত্ব বোঝানো হচ্ছে। এটি সত্য হলে, বোঝা যায় কেন প্রশাসন স্থবির। অথবা একজন প্রাক্তন শিক্ষক ও সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা ও জনপ্রতিনিধি হওয়ায় ড. আলাউদ্দিনের কাছে আর এসব মেনে নেয়া অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে। তিনি হয়ত এখন আর পদে থাকা নিয়েও লালায়িত নন। কারণ এ উক্তি সরাসরি সরকারের বিপরীত অবস্থান। একজন মন্ত্রী সরকারে থেকে প্রকাশ্যে সরকারী নীতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন না, কেবিনেট সভায় আলোচনাকালে পারেন। তবে আশ্বস্ত হযেছি এ কারণেও যে, মন্ত্রিসভায় এখনও দু’একজন আছেন যাঁরা আমাদের পর্যবেক্ষণ বিবেচনায় নেন ও তা সঠিক মনে হলে আমাদের পক্ষ নেন।
ড. আলাউদ্দিনের মন্তব্য শুনে মনে হয়েছে, যথেষ্ট প্রমাণ হাতে না নিয়ে তিনি মন্তব্য করেননি। অবশ্য তদন্ত সংস্থার প্রধান জনাব মতিন বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। জনাব মতিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ যদি সত্য না হয় তাহলেও বিষয়টি এত স্পর্শকাতর ও বিব্রতকর যে, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই থাকবে। সে পরিপ্রেক্ষিতে উনি নিজে থেকে সরে গেলেও ভাল। তা না হলে বিষয়টি কী দাঁড়াচ্ছে? যুদ্ধাপরাধের বিচার আওয়ামী লীগ করাচ্ছে জামায়াতের লোক দিয়ে? এ কারণেই যুদ্ধাপরাধ নিয়ে জামায়াত হইচই করছে বটে, কিন্তু তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না, দিলে এর নেতারা নিয়ত উদ্ধত্যপূর্ণ কথাবার্তা বলতেন না। জামায়াত যে কত দূরদর্শী এ একটি ঘটনাই তা প্রমাণ করে। আর এ ধরনের কাজ আওয়ামী লীগের পক্ষেই সম্ভব। বিএনপি-জামায়াত কখনই এ কাজ করত না। আমরা আরও জেনেছি, হয়ত তা নিছক গুজব, যে কারণে তা গ্রাহ্যের মধ্যে আনিনি, আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই বিএনপি বা বিরোধীদের থেকে অর্থ নিয়ে তাঁদের কাজ করে দিচ্ছেন। যে কারণে জলাশয় সংক্রান্ত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর অবস্থান সত্ত্বেও তা মানা হচ্ছে না।
উপদেষ্টা ড. আলাউদ্দিন আরও দু’টি মন্তব্য করেছেন, যাতে সরকারের অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। তিনি বলেছেন, “যুদ্ধাপরাধীরা প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে আছে। তারা প্রতিটি পদে বাধার সৃষ্টি করছে। এমনকি ছোট একটি প্রজ্ঞাপন জারির ক্ষেত্রেও তারা বাধার সৃষ্টি করছে।” (ঐ)। এখানে যে প্রশ্নটি ওঠে তা হলো, সরকার কি এ ধরনের লোকদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে? আরও আছে, অনেক ক্ষেত্রে চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলে অনুরোধ জানান হয়েছে। কাজ হয়নি। আমাদের জানামতে, জানপ্রাণে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থকদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে, ওএসডি করা হয়েছে, গুরুত্বহীন পদে বদলি করা হয়েছে। নীতিনির্ধারকদের অনেকেই বলেছেন, এর পেছনে যে অর্থের ভূমিকা নেই তা কে নিশ্চিত করবে? এই দায় কার?
তাঁর তৃতীয় মন্তব্যটিও প্রণিধানযোগ্য_ “যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিদেশে মিশনগুলোকে ভালভাবে সক্রিয় করা হয়নি। (ঐ। এ বিষয়ও আমরা অনেক বলেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ৰেত্রে ডা. দীপুমণির অবস্থান পরিষ্কার। তিনি এ ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা পালনেও আগ্রহী। পররাষ্ট্র সচিব শহীদ পরিবারের ছেলে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বলতে বাধ্য হচ্ছি, ড. আলাউদ্দিনের মন্তব্য সত্য। হতে পারে তাঁদের সব সময় বিদেশ থাকতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে মনোযোগ দেয়ার সময় তাঁদের নেই। কিন্তু বিচার শুরু হলে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংস্থা যে আগ্রাসন শুরু করবে তা মোকাবেলা করার মতো অবস্থা কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আছে? না কি দেশে থেকে বিষয়গুলো নিয়ে ভেবেচিন্তে কাজ করে যেটুকু শক্তি আছে তা সংহত করার জন্য আরও একসেট সচিব ও নীতি নির্ধারক রাখা উচিত!
এক কথায় বলা যায়, পুরো বিষয়টা নিয়ে এক ধরনের ছেলেখেলা চলছে। আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, আগুন নিয়ে খেলা চলছে। কোথাও কোন সমন্বয় নেই। আপনি মন্ত্রীদের জিজ্ঞেস করুন, কেউ বলতে পারবে না বিচারের বিষয়টি কোন্ পর্যায়ে আছে?
এ বিচারের সঙ্গে সরাসরি আইন, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, অর্থ মন্ত্রণালয় জড়িত। এদের নিয়ে কি পুরো বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে? না।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যাঁরা ছিলেন তাঁদের মধ্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই দৈনিক খবরের কাগজগুলো উল্টেপাল্টে দেখেন; যে গুণ তাঁর মন্ত্রীদের মধ্যেও বিরল। আমাদের লেখা পড়ে তিনি সন্তুষ্ট/অসন্তুষ্ট যাই হোন না কেন, [যদি পড়েন] এ কথা সত্য যে, তাঁর বিপদে তাঁর দলের অনেকের চেয়ে আমরা তাঁর জন্য সবার আগে দাঁড়িয়েছি, এখন যাঁরা ক্ষমতায় আছেন তখন তাঁদের অনেকের টিকিটিও দেখা যায়নি বা কাজের অজুহাতে বিদেশ চলে গেছেন। আমরা পুরস্কারের আশায় আপনার পাশে দাঁড়াইনি, পুরস্কৃত হব সে আশাও করি না। অভিজ্ঞতায় দেখেছি, যাঁরা সব সময় সবার পক্ষ থাকে তাঁরাই বেশি পুরস্কৃত হয়। এবারও তাই হয়েছে। আমরা একেবারে জনবিচ্ছিন্ন তাও বলা যাবে না। আওয়ামী লীগ যাতে জেতে সে জন্য আমাদের ভূমিকা একেবারে খাটো করে দেখা বোধহয় অনুচিত। এর অর্থ, আমরা যা বলছি তা বিবেচনা করা বাঞ্ছনীয়।
আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। যাঁর প্রজ্ঞা আছে, তিনি যদি কোথাও ভুল করে থাকেন সেটি শুধরে নেন। আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রী বিচারের পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করে যেখানে যেখানে ঘাটতি আছে তা পূরণ করে বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবেন। আমরা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিবেদন করছি_ খাদ্য, আশ্রয়, পানি, বিদ্যুতের মতো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও অগ্রাধিকার পর্যায়ে পড়ে। যাঁরা এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন তাঁরা ভুল করছেন। যুদ্ধাপরাধের বিচার এখন যে পর্যায়ে এসেছে তা যথাযথভাবে সম্পন্ন না হলে দেশের মানুষ সঙ্কটে ও দেশ অস্তিত্ব সমস্যায় পড়বে। সুতরাং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এ বিষয়ে মনোযোগ দেয়া বাঞ্ছনীয়। আমরা তাই প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাব, তদন্ত সংস্থার প্রধান নিয়োগের দায় কার, তাকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিন। এ ঘটনা সরকারের ভাবমূর্তি অনেকাংশে বিনষ্ট করেছে এবং সরকার যে অদক্ষ তা তুলে ধরেছে। কিন্তু সময় এখনও ফুরোয়নি। নতুন তদন্ত সংস্থা প্রধান শুধু নয়, অন্য পদগুলোও আপনি পূরণ করুন। মন্ত্রীতে মন্ত্রীতে যে দ্বন্দ্ব, যে সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, তাতে ভুলের বোঝা বাড়বে। যেসব মন্ত্রী এসব বিষয়ে এলোমেলো সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন তাদের অপসারণ করুন। মানুষ শুধু এতে খুশি হবে না, সরকারের প্রতি আস্থাও বাড়বে। অনুগ্রহ করে মন্ত্রীদের এ পরামর্শ দিন, তাঁরা টিভি ক্যামেরা দেখলেই যেন ঝাঁপিয়ে না পড়ে বিভিন্ন মন্তব্যে মেতে না ওঠেন। তাঁদের কথা বলার আগ্রহ দেখলে মনে হয়, পরিবার পরিজন থেকে তাঁরা মাইক ভালবাসেন। যুদ্ধাপরাধ নিয়ে তাঁদের বিভিন্ন মন্তব্য বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে, যার ফলে লাভবান হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত।
সবশেষে বলব, এ বিচার পুতুল খেলা নয়, আগুন নিয়ে খেলা। এ খেলায় ভুল করলে শুধু আমরা পুড়ে মরব তা নয়, আপনারাও ছাই হয়ে যাবেন।
Link requested by Anim Rahman | Original link: http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2010-05-03&ni=16718