কোন সর্বনাশ হবে বাংলাদেশে? – সৈয়দ বোরহান কবীর:

কোন সর্বনাশ হবে বাংলাদেশে? – সৈয়দ বোরহান কবীর:

সরকার সম্পর্কে গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন কথাবার্তা বলা হচ্ছে। কথাগুলো বিচ্ছিন্নভাবে দেখলে এর কোনো অর্থ দাঁড়ায় না, কিন্তু সবগুলো কথা একসঙ্গে করলে একটি ভয়াবহ অর্থ দাঁড়ায়, তা হলো ষড়যন্ত্র। সেমিনারে দেয়া বক্তব্য আর পুলিশকে দেয়া হুমকি যদি এক করা হয়, তাহলে যেকোনো পাঠকই বুঝবেন কোথায় যেন ঘটছে কোনো সর্বনাশঃ।

অপরাধ মনোবিজ্ঞানে একটি সাধারণ তত্ত্ব হলো, কোনো গোষ্ঠী, অপরাধী বা ষড়যন্ত্রকারীরা অবচেতনভাবে তাদের ষড়যন্ত্রের দু-একটা কথা ফাঁস করে দেয়, এটাকে বলা হয় ক্লু। আমরা যদি লক্ষ করি তাহলে সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকীর বক্তব্য, একটি সেমিনারে বিচারপতি রউফের বক্তব্য এবং সাম্প্রতিক আরো কিছু বক্তব্য একই সুরে গাঁথা। সবগুলো বক্তব্য ইঙ্গিতবাহী। এটাই হলো ক্লু।

সম্প্রতি আখতার হামিদ সিদ্দিকী, একটি থানায় গিয়ে হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ সরকার আর দেড়মাস টিকবে, কদিনের মধ্যে লাখ লাখ লোক মারা যাবে। সাবেক এ ডেপুটি স্পিকার বলেছেন, সেনাবাহিনী এ সরকারকে ক্ষমতায় এনেছে এটা আসলে একটা তাঁবেদার সরকার। আখতার হামিদ থানায় গিয়ে যা বলেছিলেন তা স্রেফ কথার কথা নয়। ক্ষুব্ধ হয়ে অনেক গোপন কথার কিছুটা হয়তো তিনি উচ্চারণ করেছেন। এর মাত্র একদিন পর, বিচারপতি রউফ এক সেমিনারে বলেছেন, শেখ হাসিনা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। বিচ্ছিন্ন হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারবেন না তিনি। এর পরপরই বিএনপির প্রভাবশালী সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নতুন নির্বাচন দাবি করেছেন, তাদের মধ্যে একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এরা সবাই মৌলবাদী, যুদ্ধাপরাধী এবং প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে জড়িত।

সাবেক ডেপুটি স্পিকার স্বাধীনতাবিরোধী তৎপরতার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। ৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি মহাদেবপুরে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। বিচারপতি রউফ যেসব অনুষ্ঠান, সেমিনারে যান, তাদের আয়োজকদের পরিচয় সবাই জানে। বাংলাদেশে ৯১-এর পর ভোট কারচুপি এবং নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতের জনক তিনি। তার হাত ধরেই মাগুরা এবং মীরপুরের মতো কলঙ্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। অন্তত তিনটি মৌলবাদী এনজিওর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তারা প্রায় কাছাকাছি সময়ে একই কথা তারস্বরে বলছেন।

সময়টা কখন? যখন বর্তমান মহাজোট সরকার সফলভাবে বিডিআর বিদ্রোহ মোকাবিলা করেছে। একটি সামরিক সংকট প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞায় মোকাবিলা করেছেন। যখন সরকার খোলামেলাভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। জাতীয় সংসদে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সংক্রান্ত সর্বসম্মত প্রস্তাব পাস হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের দেশত্যাগের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যখন দীর্ঘ সাত বছর পর মানুষ বাজারে গিয়ে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। যখন সার আর ডিজেলের দাম কমায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। যখন ব্যবসায়ী শিল্পপতিরা হাত-পা ঝেড়ে কাজে নামার সাহস পাচ্ছেন। ঠিক তখনই সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন বলা, দেড়-দুমাসের মধ্যে সরকারের পতনের ঘোষণা একটি ইঙ্গিতবাহী এবং দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য।

তারা কি এমন কোনো পরিকল্পনার কথা জানেন, যার উপর দাঁড়িয়ে তারা এ তথ্যগুলো দিচ্ছেন। যারা এ সরকারকে, সেনাবাহিনী বসিয়েছে বলে অভিযোগ করছেন। এ সরকারকে তাঁবেদার বলছেন, তারাই কদিন আগে অভিযোগ করেছিলেন, সরকারের মদদেই নাকি পিলখানায় হত্যাযজ্ঞ ঘটেছে। দুটি ঘটনা একসঙ্গে মেলালে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়, আজ যারা প্রধানমন্ত্রীকে জনবিচ্ছিন্ন বলছেন, আজ যারা বলছেন এ সরকার বেশিদিন টিকতে পারবে না, তাদের সঙ্গে বিডিআর বিদ্রোহের হয়তো কোনো যোগসূত্র রয়েছে। তাদের ঐ পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায়, তারা আরো মরিয়া হয়ে, নতুন কোনো সর্বনাশের নেশায় মেতেছেন। তাদের মরিয়া হওয়ার কারণ একটাই, ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পথ উš§ুুক্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী একটি সৎ মন্ত্রিসভার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। দেশে একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারার সূচনা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আমি একটি কথা বলতে চাই, তা হলোÑ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদেশের মানুষের বিশ্বাসে, এদেশের মানুষের আকাক্সক্ষায় মিশে আছেন। এ সময়ে তিনি মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার মূর্ত প্রতীক। এ সরকার ৭৫-এর পর একটি অসাম্প্রদায়িক সরকার। এ সরকার ব্যর্থ হলে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিপন্ন হবে, এ সরকার ব্যর্থ হলে আমাদের স্বাধীনতা বিপন্ন হবে, এ সরকার ব্যর্থ হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিপন্ন হবে। আর সে কারণেই যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়, তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে চায়। যারা জঙ্গিবাদের মদদদাতা, তারাই এ সরকারের ব্যর্থতার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। আর এ ষড়যন্ত্রের কিছু চিহ্ন বেরিয়ে আসছে এসব কথাবার্তা থেকে। তাই এদের এখনই থামাতে হবে, না হলে বিডিআর বিদ্রোহের চেয়েও বড় কোনো রক্তপাত ঘটবে, কোনো সর্বনাশ হবে বাংলাদেশে।

নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত | link requested by Anim Rahman | original source


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment