আগস্ট ষড়যন্ত্রের মূল কোথায়? – খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ

আগস্ট ষড়যন্ত্রের মূল কোথায়? – খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ

সূর্যের সাথে ঘুরে ঘুরে প্রতিবছরই আগস্ট আসে। পাকিস্তান ও ভারত উভয়ের স্বাধীনতার মাস। পাকিস্তান উৎসব করে, আনন্দ করে। বাংলাদেশে শোকের মেঘ বেয়ে কান্নার বৃষ্টি ঝরে। বাংলাদেশের মাটি কেঁপে ওঠে। কাঁদে বাংলার মানুষ। পনেরই আগস্ট শোকগাথা লেখেন অনেক সুধিজন। আমি এবার লিখতে পারিনি। কেবলই মনে হয়েছে, শোক প্রকাশের অধিকার কি আমাদের রয়েছে? আমরা কি অর্জন করেছি সে নৈতিক অধিকার? যেসব সৈনিককে বঙ্গবন্ধু দেশ রক্ষার দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তাদেরই বিশ্বাসঘাতক অংশ বঙ্গবন্ধুর প্রাণ সংহার করলো। সেনাপ্রধান, উপপ্রধান, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন। বিশ্বাসঘাতকেরা রাস্তায় রাস্তায় কামান-বন্দুক নিয়ে জনগণকে ঘরে ঘরে বন্দী করে রাখলো। বন্দী জনগণ ঘরে বসে কেঁদেছিল, নামাজ পড়ে দোয়া করেছিল, অভিশাপ দিয়েছিল হত্যাকারীদের। রক্ষীবাহিনী অর্ডার পেলো না প্রতিরোধ সৃষ্টির। ভুট্টো সাহেব পাকিস্তানে বসেই বাংলাদেশকে ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র’ বলে ঘোষণা দিলেন। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে আহ্বান জানালেন নতুন ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক সরকারকে স্বীকৃতি দান করতে। সৌদি আরব স্বীকৃতি দিল। চীন কোন্ ইসলামী জোশে স্বীকৃতি দিয়ে ফেললো, গায়েবের মালিক আল্লাই জানেন। বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বোস্টার সাহেব ঢাকা শহর চষে বেড়ালেন, সারাদেশের খবর নিতে তৎপর হলেন। ঘন্টায় ঘন্টায় রিপোর্ট করতে লাগলেন। এদিকে জনপ্রতিনিধিদের অবস্থা যঃ পলায়তি সজিবতি। যে পালায় সেই বাঁচে। ওয়াক ওভার পেয়ে শিখণ্ডি মোশতাককে ধাক্কা মেরে ক্ষমতা ছিনতাই করলো সন্ত্রাসীরা। এই হলো পনেরই আগস্ট ও পরের কিছুদিনের কথা। কিন্তু তারপর? বঙ্গবন্ধুর সাথে সাথে হত্যা করা হয়েছিল তার পরিবার পরিজনকে। বাড়ির নববধূকে। এমনকি শিশু রাসেলকেও। প্রতিরোধ হয়নি। অন্ততঃ বিচার তো হবে। না, তাও রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছিল। অনেক পরে এসে বিচার হলো। কিন্তু আজো শাস্তি কার্যকর হয়নি। আটকে আছে উচ্চতম আদালতে। মোশতাক-জিয়া-এরশাদের ক্ষমতারোহণ বেআইনী ঘোষণা হলো হাইকোর্টে। রায় আটকে রইল সুপ্রিম কোর্টে। অনেকে বিবেকের তাড়নায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু জাতি হিসেবে আমরা এখনো দায়িত্ব পালনে সমর্থ হইনি। তাই এলিজি বা শোকগাঁথা রচনার অধিকার এখনো আমরা অর্জন করিনি।

আমি শোকগাঁথা লিখতে বসিনি। জানাতে চেষ্টা করছি, নিজেও বোঝার চেষ্টা করছি, পনেরই আগস্টের ষড়যন্ত্রের মূল কোথায়? ভূমিকম্পের একটি উৎসস্থল থাকে। সাধারণত সাগরের গভীরে, ভূমন্ডলের অভ্যন্তরে/ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলা চোখে দেখা যায়। ধ্বংসের মাত্রাও হিসাব করা যায়। কিন্তু উৎসস্থলের অবস্থান জানতে প্রযুক্তির সাহায্য নিতে হয়। চোখে দেখা যায় না। আগস্ট ষড়যন্ত্রের উৎস খুঁজতে হলে নিবিড় গবেষণা করতে হবে। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে। ঘটনার সাথে ঘটনার মিল খুঁজতে হবে। সংশ্লেষণ-বিশ্লেষণে বেরিয়ে আসবে গভীরের অনেক চিত্র, যেগুলো ফুটিয়ে তুলবে ষড়যন্ত্রের মূলকথা।

ফিরে যাই পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট। পাকিস্তানে কার্যরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিজ দেশে প্রথম যে রিপোর্টটি প্রেরণ করেছিলেন (যা এখন সাধারণ্যে প্রকাশ করা হয়েছে), তাতে বাংলাদেশকে ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। ২১ আগস্ট মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক বার্তায় উল্লেখ ছিল, ‘ভুট্টোই ঢাকার নতুন সরকারকে দ্রুত স্বীকৃতি দিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন।’ ২০ আগস্ট পাকিস্তানে দায়িত্বরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত হেনরি আলফ্রেড বাইরোড তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে, জামায়াতে ইসলামীর নেতা মওলানা মওদুদী মোশতাকের ক্ষমতায় আরোহণকে ‘আল্লাহ রহমত এবং ইসলামের বিজয়’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ২২ আগস্ট বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বোস্টার প্রেরিত প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল, ‘পাকিস্তান উপঢৌকন হিসেবে বাংলাদেশের নতুন সরকারকে চাল ও কাপড় পাঠানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে, কিন্তু বাংলাদেশ তা গোপন রেখেছে।’ বোস্টারের বার্তায় আরো প্রকাশ পায় যে, (ক) রেডিও বাংলাদেশ রবীঠাকুরের গান বর্জন করেছে (খ) গীতাপাঠ বন্ধ করা হয়েছে (গ) জয়বাংলা পরিহার করে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ (পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্টাইলে) বলা হচ্ছে। এসব তথ্য পর্যালোচনায় যেসব প্রশ্ন উঠে আসবে, সেগুলো হলো (ক) বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনে পাকিস্তান এত খুশি কেন? (খ) ভুট্টো বাংলাদেশকে ‘ইসলামিক রিপাবলিক’ নামে আখ্যায়িত করলেন কেন? (গ) বাংলাদেশের খুনী সরকারকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য ভুট্টো সাহেবের বিশ্ব মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের প্রতি আহ্বান, কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো এবং অস্বাভাবিক উদ্যোগ গ্রহণের কারণ কি? (ঘ) মওলানা মওদুদীরই বা উচ্ছ্বাস প্রকাশের কারণ কি? (ঙ) নাস্তিক কমিউনিস্ট দেশ চীন ‘ইসলামী বাংলাদেশ’কে স্বীকৃতি প্রদানে ঝাপিয়ে পড়ল কেন? (চ) যে সৌদি আরব মুক্তিযুদ্ধের রক্তস্নাত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি, সে রাষ্ট্রটিই বা বঙ্গবন্ধুর রক্তস্নাত বাংলাদেশকে হঠাৎ করেই স্বীকৃতি দিল কেন?

এখন ফিরে যাই পনেরই আগস্টের পটভূমিতে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মেয়াদোত্তীর্ণ এবং বর্তমানে প্রকাশিত রেকর্ড থেকে জানা যাচ্ছে যে, স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই ১৯৭২ সালে মেজর ফারুক ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসে অস্ত্র সংগ্রহের জন্য গোপনে ধর্না দিয়েছিলেন, যা দূতাবাস তাদের ৩১৭২ নম্বর বার্তাযোগে ওয়াশিংটন পররাষ্ট্র দপ্তরে জানিয়েছিল। প্রকাশিত তথ্যে প্রকাশ, ১৯৭৩ সালের ১১ জুলাই মেজর রশীদ গোপনে আবারো একই উদ্দেশ্যে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসে যান এবং তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত ‘আর্মামেন্টস প্রকিউরমেন্ট কমিটি’র পক্ষ থেকে এসেছেন বলে জানান। পরদিন ১২ জুলাই মেজর ফারুকও দূতাবাসে যান। প্রকৃতপক্ষে ব্রিগেডিয়ার জিয়া এ ধরনের কোন কমিটির প্রধান ছিলেন না। দূতাবাসের চার্জ দ্য এফেয়ার্স ড্যানিয়েল নিউবেরি বিষয়টি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে জানিয়েছিলেন। তিনি তার রিপোর্টে উল্লেখ করেন, ‘উভয়ে (রশিদ ও ফারুক) উর্দি পরা অবস্থায় বিনা এপয়েন্টমেন্ট এসেছেন।’ এ থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, জিয়ার নেতৃত্বে ফারুক-রশীদ চক্র ১৯৭২ সাল থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছিল সশস্ত্র অভ্যুত্থানের। এখন আরো একটু আগে যাওয়া যাক। মেজর জিয়া মুক্তিযুদ্ধে প্রথমে একজন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়েই তাকে সেক্টর কমান্ডারের পদ থেকে অপসারণ করা হয় প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীর সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের হস্তক্ষেপে মেজর জিয়াকে সেক্টর কমান্ডারের পরিবর্তে ‘জেড ফোর্সের’ দায়িত্ব দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের শেষ অবধি জিয়া জেড ফোর্সের প্রধানই ছিলেন, সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব আর ফিরে পান নাই। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশিত তথ্য বিশেষ নাই। তবে জীবিত অবস্থায় জেনারেল ওসমানী জানিয়েছিলেন যে, তিনি তার ডায়েরীতে ‘সব কিছুই’ লিখে রেখেছেন, যা তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হবে। তার মৃত্যুর পর সে ডায়েরীর হদিস মেলেনি। হয়তো গায়েব করা হয়েছে। সত্য অনুদঘাটিতই রয়ে গেল। তবে মুক্তিযুদ্ধকালীন অন্য একটি ঘটনা বেশ আলোচিত। খন্দকার মোশতাক এবং মাহবুবুল আলম চাষী কলকাতাস্থ মার্কিন কনসুলেটের সাথে যোগাযোগ করতেন এবং শেখ মুজিবের মুক্তির বিনিময়ে পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশনের প্রস্তাব নিয়ে মার্কিন দুতিয়ালির পক্ষে ছিলেন। তাজউদ্দিন-সৈয়দ নজরুলের স্বাধীনতার পক্ষে দৃঢ় ভূমিকার জন্য মুশতাক সফল হননি। তখন কি মেজর জিয়া ও মুশতাকের অনুসারি ছিলেন? এ ধরনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এসব তথ্য, দূতাবাসের রিপোর্ট এবং বিশ্লেষণ থেকে একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্ন কিন্তু বেরিয়ে এসেছে। একসঙ্গে সাজালে এমন দাঁড়ায়ঃ (ক) মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াই একমাত্র সেক্টর কমান্ডার যাকে ঐ পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছিল; (খ) মুক্তিযুদ্ধের পরপরই ১৯৭২ সাল থেকে জিয়া-ফারুক-রশীদ গোপন চক্র গঠন করেন; (গ) ফারুক-রশীদের মাধ্যমে মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ রক্ষিত হতে থাকে; (ঘ) মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরকে সবই জানানো হতো তাদের দূতাবাস থেকে; (ঙ) মার্কিন সরকার আগাগোড়াই বাংলাদেশ সরকারকে এ বিষয়ে এড়িয়ে চলেছে; (চ) পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পর মুশতাক, জিয়া, ফারুক, রশীদ একসাথেই ছিলেন; (ছ) হত্যাকাণ্ডের পর একদিকে পাকিস্তানের ভুট্টো বাংলাদেশের নতুন সরকারের স্বীকৃতির জন্য বিদেশে ‘অস্বাভাবিক’ দূতিয়ালি করেন, অন্যদিকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বোস্টার ও ‘অস্বাভাবিক’ তৎপরতা প্রদর্শন করতে থাকেন। ঘটনার এই ধারাবাহিকতা কি নির্দেশ করে?

ঘটনার আরো একটি দিক আলোচনার দাবি রাখে। বলা হয়ে থাকে, ফারুক-রশীদ-ডালিম খুনীচক্র নাকি মুক্তিযোদ্ধা! আসলে এই খুনীচক্র মুক্তিযুদ্ধের প্রথম থেকেই পাকিস্তানে ছিল। মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শেষলগ্নে তারা পাকিস্তান থেকে ভারতে আসেন। অনেকেই প্রশ্ন করেন, তারা কি মুক্তিযুদ্ধ করতে এসেছিলেন? নাকি পাকিস্তান তাদের পাঠিয়েছিল পাকিস্তানী চর হিসেবে? প্রশ্নটি জোরালো হয়ে ওঠে যখন জানা যায় যে, খুনীচক্রের কেউই একঘন্টার জন্যও যুদ্ধ করেনি।

মেজর জিয়ার মুক্তিযুদ্ধে যোগদানও কিন্তু রহস্যের চাদরে ঢাকা। বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মেজর রফিকুল ইসলাম তার বইতে লিখছিলেন যে, জিয়া নাকি সোয়াত জাহাজ থেকে পাকিস্তানী অস্ত্র খালাস করতে যাচ্ছিলেন। বাঙ্গালী সেনা অফিসার জিয়াকে পথিমধ্যে ইন্টারসেপ্ট করে এবং ফিরে আসতে বাধ্য করে। প্রকাশ, মেজর জিয়া ইতিপূর্বে দীর্ঘকাল পাকিস্তান সেনা ইন্টেলিজেন্সে কাজ করেছেন। যুদ্ধের চেয়ে গোয়েন্দা অভিজ্ঞতাই তার বেশি।

ব্রিগেডিয়ার জিয়া ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ক্ষমতায় আরোহণ করেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে বার্তা পাঠান, তাতে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ এখন পাকিস্তানপন্থী, ইসলামপন্থী ও পাশ্চাত্যপন্থী হয়েছে। ৭ নভেম্বর ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস ওয়াশিংটনে যে তারবার্তা পাঠান তার শিরোনাম ছিল Trouble in Bangladesh. First thoughts on Zia‘ অর্থাৎ বাংলাদেশে গোলযোগ, জিয়াকে নিয়ে প্রারম্ভিক ভাবনা। এইসব তথ্যের সাথে ১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালে ফারুক-রশীদের মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ এবং জিয়ার নেতৃত্বে তথাকথিত অস্ত্র সংগ্রহ কমিটির বরাত দেয়া, এসব মেলালে কি মনে হয় না যে, জিয়া নিজেই আগস্ট ষড়যন্ত্রের এ্যাংকর? প্রকাশিত তথ্যে প্রকাশ, জিয়া পঁচাত্তরের শেষ দিকটায় নিজেই ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ করে ‘সম্ভাব্য ভারতীয় আক্রমণ’ ঠেকানোর জন্য অস্ত্র সাহায্যের বিষয়ে একাধিকবার অনুনয়-অনুরোধ করেছেন। যদিও দূতাবাস প্রেরিত বার্তাসমূহ প্রমাণ করে যে, দূতাবাস তেমনটি ভাবছেন না। অস্ত্র সংগ্রহ জিয়ার এই অতি আগ্রহ কি প্রমাণ করে? তিনি কি সম্ভাব্য গণপ্রতিরোধের ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছিলেন? সেক্ষেত্রে একাত্তরের ধাঁচে গণহত্যা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন?

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর বাংলাদেশ বিজয়ী স্বাধীন দেশ হিসেবে পরিচালিত হতে থাকলে, বাংলাদেশী-জামায়াত-রাজাকার-আলবদর-মুসলিম লীগ তথা পরাজিত শক্তিসমূহের নেতৃবৃন্দ দেশে না থেকে পালিয়ে গেলেন লন্ডনে এবং পাকিস্তানে। এটুকুন পর্যন্ত বোঝা যায়। হয়তো তারা তাদের অপকর্মের সম্ভাব্য শাস্তির ভয়ে পালিয়েছেন। কিন্তু লন্ডনে তাদের ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি’ গঠন এবং ভুট্টো অর্থাৎ, পাকিস্তান কর্তৃক তাদের অন্তত দু’বছর যাবৎ যাবতীয় খরচাদির জন্য অর্থ প্রেরণ কি ইঙ্গিত দেয়? পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দু’একটি দেশও ঐ কমিটিকে অর্থ-সাহায্য করেছে। তাহলে কি বলা যায় যে, একাত্তরের পরাজিত শক্তিগুলো হিংসাউন্মত্ত পাকিস্তানের (বিশেষ করে আইএসআই) সহায়তায় স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র গড়ে তোলে, যার পরিণতি ছিল পঁচাত্তর সালের মধ্য আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের নৃশংস ঘটনাবলী। সন্ত্রাসের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে জেনারেল জিয়া সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত করেছিলেন গোলাম আজমসহ ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি’র সদস্যদের। তাহলে জেনারেল জিয়াই কি ছিলেন ‘পুনরুদ্ধার’ প্রকল্পের স্থপতি? ষড়যন্ত্রের মূলে কি ছিল একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মোশতাক-চাষী প্রমুখের মার্কিন দূতাবাস ভিত্তিক ‘পাকিস্তান কনফেডারেশন’ গঠনের চক্রান্ত? যাতে সায় ছিল ভুট্টো ও কিসিঞ্জারের?

[লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন ডেপুটি গভর্নর] | link requested by Kamrul Ahsan Khan | orginal source


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment