রাজউকের প্লট বরাদ্দের আবেদনের সময় বাড়ল ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত

রাজউকের প্লট বরাদ্দের আবেদনের সময় বাড়ল ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত

একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে রাজউকের প্লট বরাদ্দে আবেদন গ্রহণের সময়সীমা আগামী ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। মানুষের চরম ভোগান্তি শেষে বুধবার বিকালে পূর্ত সচিব এএসএম রশিদুল হাই মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে সময় বাড়ানোর এ ঘোষণা দেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ ১৮ ডিসেম্বর আবেদন গ্রহণ ও জমা দেয়ার সময় নির্ধারিত ছিল। পূর্ত সচিব প্লট বরাদ্দে আবেদন ফরম উত্তোলন ও জমা দেয়ার ক্ষেত্রে মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগের জন্য দু:খ প্রকাশ করেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পূর্ত সচিব বলেন, প্লটের আবেদন ফরম জমা দেয়া নিয়ে মানুষের চরম দুর্ভোগ দেখে এবং যাতে করে ইচ্ছুক সবাই আবেদন করতে পারেন সেজন্য সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে সময়স্বল্পতার কারণে বিদেশে অবস্খানরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের আবেদন জমা দিতে বেশি সমস্যা হচ্ছিল। এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতরা তাদের সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়ে সময় বাড়ানোর আবেদন করায় সময় বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়। তিনি বলেন, অনেকে তাকে বলেছেন একটু সময় বাড়ালে ক্ষতি কি? বাস্তবে তিনিও দেখলেন কোন ক্ষতি তো নেই। বরং সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে প্লট বরাদ্দের প্রক্রিয়া অভিযোগমুক্ত থাকাই ভালো।

হাজার হাজার মানুষকে চরম দুর্ভোগে ফেলে এবং কয়েকগুণ বেশি দামে স্ট্যাম্প বিক্রি হওয়ার পর সময় বাড়ানোর এ বোধোদয় হল কেন এ প্রশ্নের জবাবে পূর্ত সচিব রশিদুল হাই এবং সংবাদ সম্মেলনে উপস্খিত রাজউক চেয়ারম্যান মো: সফিকুল ইসলাম যৌথভাবে বলেন, প্লট নেয়ার জন্য মানুষ এভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়বে তা তাদের ধারণার বাইরে ছিল। এর আগে প্লট বরাদ্দের সময় ২০ হাজারের মতো আবেদন পড়েছিল। সে হিসেবে এবার দ্বিগুণ হলে ৪০ হাজারের বেশি হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত শুধু রাজউকের আবেদন ফরম বিক্রি হয়েছে প্রায় দু’লাখ। অবস্খাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আবেদনের সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। এছাড়া দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ফরম নেয়া ও জমা দেয়ার কষ্ট দেখে তারা নিজেরা ব্যথিত হয়েছেন। পূর্ত সচিব বলেন, মানুষের দুর্ভোগের জন্য তিনি দু:খিত। আসলে এত আবেদনের চাপ পড়বে তারা তা আগে বুঝতে পারেননি।

নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের কৃত্রিম সংকট তৈরির ব্যাপারে রাজউক কেন ব্যবস্খা নেয়নি প্রশ্নের জবাবে রশিদুল হাই বলেন, শুনেছি মানুষকে বেশি দামে স্ট্যাম্প কিনতে হয়েছে। সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটি চক্র ফায়দা নিয়েছে। কিন্তু যারা কিনেছেন তাদেরও উচিত ছিল এ বিষয়ে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সহায়তা নেয়া। তিনি বলেন, স্ট্যাম্প সংকট নিরসনের জন্য তারা বিলম্বে হলেও স্ট্যাম্পের পরিবর্তে কোর্ট ফি দেয়ার সুযোগ দিয়েছেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পূর্ত সচিব বলেন, ১৫ জানুয়ারি প্লটের আবেদন জমা দেয়ার সময়সীমা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে লটারির মাধ্যমে প্লট বরাদ্দের ফলাফল জানিয়ে দেয়া হবে। যারা প্লট পাবেন না তাদের লটারি হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে টাকা তুলে নিতে হবে। এ সময়ের মধ্যে কেউ টাকা তুলতে ব্যর্থ হলে ১০ ভাগ জরিমানা দিতে হবে। তিনি জানান, কিস্তি অনুযায়ী যথাযথভাবে টাকা পরিশোধের পর ২০১১ সালের মধ্যে প্রত্যেককে প্লট বুঝিয়ে দেয়া হবে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন শেষে প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্খা সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে জমির মূল্য, প্লটের সংখ্যা, বিভিন্ন পেশার কোটা এবং প্লট হস্তান্তরের সময়সীমাসহ বিস্তারিত তথ্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি আকারে জানিয়ে দেয়া হবে। জমির দাম আগের তুলনায় কিছুটা বাড়ানো হবে। সচিব বলেন, পূর্বাচল নতুন উপশহর প্রকল্প একটি অত্যাধুনিক শহর হবে। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করে এখানকার ধারণক্ষমতা অনুযায়ী প্লট বরাদ্দের ব্যবস্খা করা হয়েছে। ধারণক্ষমতা অনুযায়ী ১৫ লাখের বেশি লোকের সংকুলান করা যাবে না। প্লটের পরিবর্তে ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দেয়া হলে লোকের চাপ বাড়বে। সেক্ষেত্রে তা পুরান ঢাকার মতো ঘিঞ্জি এলাকায় পরিণত হবে। তবে পূর্বাচলের পাশে ১ লাখ ২০ হাজার ফ্ল্যাট করার পরিকল্পনা রয়েছে।

সচিব জানান, পূর্বাচল নতুন উপশহরে সচিবালয় স্খানান্তর করার জায়গাও রাখা হয়েছে। এছাড়া এখানকার ২৭ নং সেক্টর শুধু কূটনীতিকদের অফিস এবং আবাসস্খলের জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে। কূটনৈতিক জোনের চারদিকে থাকবে লেক। এদিকে পূর্বঘোষিত ১৮ ডিসেম্বর প্লট বরাদ্দের আবেদনপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন হওয়ায় গতকাল সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোতে সকাল থেকে হাজার হাজার মানুষের উপচেপড়া ভিড় ছিল। এ কারণে ব্যাংকগুলোতে টাকা লেনদেনের স্বাভাবিক কাজকর্ম দারুণভাবে ব্যাহত হয়েছে। কয়েকটি ব্যাংকে বিশৃংখলা সৃষ্টি হওয়ায় পুলিশ মোতায়েন করতে হয়। সময় বাড়ানোর খবর না জানার কারণে গতকাল সন্ধ্যার সময়ও কয়েকটি ব্যাংকে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। পূর্বাচল নতুন উপশহর প্রকল্পের প্লট বরাদ্দের জন্য গত ২৫ নভেম্বর এবং পরদিন উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পের জন্য রাজউক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। পূর্বাচল প্রকল্পে ৬ হাজারের বেশি এবং উত্তরা প্রকল্পে ১১শ’র মতো প্লট বরাদ্দ দেয়া হবে। [ভিওবিডি, নিউইয়র্ক থেকে]

photo courtesy priyo.com


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment