Baba Ke Chilen

বাবা কে ছিলেন!
দিলরুবা শাহানা
বাবার দাড়ি ছিল না,
মসজিদে যান নি কখনো
এমন কি জুম্মার নামাজেও যেতে দেখেনি বাবাকে;
লাল ঝান্ডার নীচেও দাড়ান নি।
ওষুধের দোকান চালিয়ে রুটি রোজগারে ব্যস্ত সদাই;
বিনা পয়সায় সামান্য ওষুধ কখনও দিতেন গরীবগুর্বাদের।
লাগোয়া মসজিদের অজুখানায় পা পিছলে
অশীতিপর মুসল্লী পা ভাঙ্গলেন।
মসজিদে আসা বন্ধ হল তার।।
এরপর বাবা প্রতি জুম্মার ভোরে গরীব দু’জনকে নিয়ে
ব্লিচিং দিয়ে অজুখানা সাফ করে দিয়ে আসতেন।
সুরেশ মুচী গাড়ীর তলায় চাপা পড়ে মরলো
আপনজন কেউই ছিলনা তার, তখন সবাই বললো
‘আন্জুমানে মফিদুল ইসলামকে ডাক মুর্দা দাফন করবে’
বাবা বললেন
‘না না এটা উচিত হবে না, সুরেশের মরদেহ শশ্মানে যাবে!’
‘কেউ তো নেই ওর, মরদেহ পোড়া হল নাকি গোরে গেল
তাতে কার কিই বা হবে?’
অনেক তর্কবিতর্কের পর বাবা সুরেশকে
সন্মানের সাথে শশ্মানে পৌঁছে দিলেন।
অনেক রটনা হল বাবার নামে
তবুও বাবা রইলেন অনড় অটল।
তারপর বাতাস বদলালো,
বাবাকে ধরে নিয়ে গেল।
একটা পা থেত্লে পঙ্গু করে দিল তাকে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি নাস্তিক।
তারপরও বাবা যেমন তেমনই রইলেন।
ছেলে দাড়ি রাখলো
মুসল্লীদের সারিতে সামিল হল।
একদিন বাবা ছেলেকে বললেন
‘একজন মুসলমানের লাশ পানিতে সমাহিত!
তারজন্য প্রতিবাদী না হও
গায়েবানা জানাজা তো পড়তে পারতে।’
তারপর কি হল?
দাড়িহীন বেনামাজী বাবাকে কারা যেন ধরে নিয়ে গেল।
তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হল।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি উগ্র ধার্মিক।
মৃতকে সন্মান জানানো কাজটা আসলে মানবিক।
বাবা কিছুই ছিলেন না,
ছিলেন শুধুই মানুষ।