আজই এ বসন্তে … স্বাগতম বসন্ত মেলায়
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন…
কখন বসন্ত গেল, এবার হল না গান।
কখন বকুল-মূল ছেয়েছিল ঝরা ফুল,
কখন যে ফুল-ফোটা হয়ে গেল অবসান।
কখন বসন্ত গেল এবার হল না গান॥
এবার বসন্তে কি রে যুঁথীগুলি জাগে নি রে!
না ,আমাদের হতাশ হবার কিছুই নেই। দিনভর মেলা আর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঋতুরাজ বসন্তকে স্বাগত জানাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সোসাইটি অফ সিডনি(বি ডি এস এস)।তাদের মহৎ উদ্যোগ এবং প্রচেষ্টায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশী-অস্ট্রেলিয়ান কমিউনিটির এই বসন্ত মেলা। দিনটি আগামী ১২ই অক্টোবর,শনিবার সকাল ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। । ফুল ফুটুক আর না ফুটুক সেদিন হলুদ আর সবুজের মেলার আয়োজন করা হচ্ছে KOGARAH JUBILEE OVAL এ। বাঙ্গালীর ঐতিহ্যবাহী রকমারি প্রদর্শনী ও বিকিকিনির জন্য এ মেলায় বিভিন্ন স্টল অংশ নিচ্ছে। এছাড়া ও আছে বিভিন্ন দেশীয় স্টল এবং ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্য আকর্ষণীয় রাইড। পবিত্র ঈদ উল আযহার পূর্বে অনুষ্ঠিত এ মেলা আশা করি আমাদের প্রবাস জীবনে এনে দিবে ঈদের জন্য কেনাকাটার অফুরন্ত সুযোগ, হাতে মেহেদীর আলপনার অভাবনীয় আমেশ। প্রদর্শনী ও বিকিকিনি ছাড়াও এ মেলায় আছে ৫ ঘণ্টা ব্যাপী বিশেষ আকর্ষণ -মনোঙ্গ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজন ,যেখানে থাকবে সিডনির সবার পরিচিত বাংলাদেশী এবং বিভিন্ন কমিউনিটির জনপ্রিয় শিল্পীবৃন্দের মিলন মেলা। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ ব্যান্ড ৮ নোট্স,ব্যান্ড স্বপ্ন, ঐকতান,কিশলয় কচিকাঁচা,রকডেল বাংলা স্কুল,অস্ট্রেলিয়ান চাইনিজ কমিউনিটি ।মেলায় বাড়তি সুবিধা হিসেবে আরো আছে ফ্রি পার্কিং এর ব্যবস্থা। বাংলাদেশ সোসাইটি অফ সিডনির(বি ডি এস এস)উদ্যোগে আয়োজিত এ মেলার যাবতীয় অর্থ দান করা হবে বিভিন্ন চ্যারিটিকে।তাদের এই মহৎ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
আশাকরি ১২ই অক্টোবর,শনিবার ফাল্গুন ও ভালোবাসার জয়গানে মুখর থাকবো আমরা সকলে, গাইবো ঋতু রাজের আগমনী গান।গানে, কবিতায়, নৃত্যে হিল্লোলিত হবে আমাদের হৃদয়। গাছে গাছে ফুলে আর কোকিলের কুহুতানে মনোরম পরিবেশে আশা করি সেদিন সকলের সময় ভালই কাটবে। হয়তোবা ৫০ বছর আগের মতো বনে বনে ফাগুনে আজ আর কোকিল ডাকে না। পলাশ, শিমুল ও মান্দার বিলুপ্ত হওয়ার পথে। সেসব গাছের ডালে থোকা থোকা রক্ত চোখে পড়ে না। আমগাছও কমে গেছে। আমের মুকুলের সোঁদা গন্ধে চারদিক ম-ম করে না। কিন্ত কবি বলেছেন, ফুল ফোটার জন্য বসন্ত অপেক্ষা করে না। আমরা বলব, নিজেকে উন্মোচনের জন্য ফুলই বসন্তের জন্য অপেক্ষা করে। উৎসব-প্রিয় বাঙালীর এক প্রাণের উৎসব এই বসন্ত-উৎসব। আমাদের কাছে শুধু প্রাণেরই উৎসব নয়, ফাল্গুনের আগুনঝরা, রক্তলাল বসন্ত এত আলো, হাসি, গান, সৌন্দর্যের পাশাপাশি একটি বিষাদের রাগিণী যেন সমান্তরালভাবে আমাদের চেতনায় প্রবাহিত। আমাদের কাছে ফাল্গুন আসে রক্তস্নাত ‘৫২’র ভাষা-আন্দোলনের প্রতীক হয়ে। তাই বসন্তের আবেদন আমাদের হৃদয়ের গভীরে,চেতনার মর্মমূলে।
প্রবাসে না আসলে মনে হয় আমরা দেশের প্রতি এক তীব্র টান ঠিকঠাক অনুভব করতাম না । তবে বিদেশে বসবাস করলেও হৃদয়ের মাঝে আমরা সবসময় বাংলাদেশকে বয়ে নিয়ে বেড়াই । মনের মাধুরীতে বাংলার সেই বসন্তের রুপ আর সৌরভ কে ধারণ করেই তাই আসুন ঋতু রাজের আগমনী আনন্দে সেদিন আমরা সিডনিতে পালন করি বসন্ত উৎসব। প্রান ভরে, মন উজাড় করে আড্ডা দেই বসন্ত কে নিয়ে। স্বাগত জানাই প্রিয় ঋতু বসন্তকে। কবি গুরুর সুরে আমরাও গেয়ে উঠি, আহা আজই এ বসন্তে এতো ফুল ফুটে, এতো বাঁশি বাজে, এতো পাখি গায়…… শুরু হয়ে যাক আড্ডা, আর তাই সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সুর মিলিয়ে মন থেকে বলে উঠি ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক—আজ বসন্ত।’ আশা করি প্রবাসে বসে এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমরা কিছুক্ষণের জন্য হলেও অনুভব করবো আমাদের প্রানের টান,মূল ধারায় প্রবাহিত হবে প্রবাসী বাঙালীদের প্রেমের শিকড়। সবাই কে জানাই বসন্তের শুভেচ্ছা।