ব্যাপক আয়োজনের মাধ্যমে ক্যাম্বেলটাউনে অমর ২১ শে উদযাপন
রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারীতে রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল শহীদ ভাষা সৈনিক সালাউদ্দীন, জব্বার, বরকত, রফিক, সালাম সহ আরো অনেক বীর বাঙালী। তাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল বাংলা ভাষার স্বীকৃতি, আর তার সিঁড়ি বেয়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে বাঙালীর এই আত্নত্যাগের দিনটি আজ আর কেবল বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে সীমাবদ্ধ নয়, আজ “২১ শে ফেব্রুয়ারী” দিনটি স্বীকৃতি পেয়েছে আন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। এই অমর একুশে ও মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে অষ্ট্রেলিয়ার ক্যাম্বেলটাউন এর প্রবাসী বাংলাদেশী বাঙালীরা ক্যাম্বেলটাউন এলাকায় প্রথমবারের মতো মিন্টোর এমপিহি থিয়েটার এ উন্মুক্ত মাঠে আয়োজন করেছিল অমর একুশে ও আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রভাত ফেরী, কবিতা আবৃত্তিসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানের বিপুল আয়োজন, উদ্দীপনা ও স্বত:স্ফর্তুতা প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মান করা হয় শহীদ মিনার, ফেষ্টুন, দেয়াল পত্রিকাসহ সুসজ্জিত করা হয়েছিল সমগ্র এমপিহি থিয়েটারটি। সর্বপ্রথমে সিডনীর বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান তরুন অনুষ্ঠানের সূচনা সংগীত পরিবেশন করেন এবং তারপর তার নেতৃত্বে উপসি’ত সকল প্রবাসীদের নিয়ে সমবেত কন্ঠে “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ” গানটি গেয়ে সমগ্র চত্বর প্রদক্ষিন করনে এবং শহীদ মিনারে পুস্পার্ঘ করেন। প্রভাত ফেরীতে ক্যাম্বেলটাউন এলাকার ষ্টেট এম পি মি. ব্রায়ান ডোয়েল অংশগ্রহন করেন এবং বেদীতে পরে পুষ্প প্রদান করেন। শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ অর্পন করেন অষ্ট্রেলিয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বাংলাদেশী অষ্ট্রেলিয়ান ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, ফেডারেল এম পি মি. লরি ফার্গারসন, ষ্টেট এম পি মি. এন্ড্রু ম্যাকডোনাল, লাল সবুজ সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। অমর একুশে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ক্যাম্বেলটাউন বাংলা ষ্কুলের সভাপতি ডা: বজলুল করিম, নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আবদুর রায্যাক, বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দীন আহমেদ, মিজানুর রহমান তরুন, শাহ আলম সৈয়দ, নতুন প্রজন্মের অবনিতা সরকারসহ প্রমুখ। অতিথি বক্তব্য রাখেন মি. লরি ফার্গারসন এমপি, মি. ব্রায়ান ডোয়েল এম পি এবং মি. এন্ডু্র ম্যাকডোনাল এম পি। নতুন প্রজন্মের পক্ষ থেকে অবনিতা সরকার ক্যাম্বেলটাউন এলাকায় একটি শহীদ স্মৃতি মিনার প্রতিষ্ঠার জন্য ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিলের কাছে আবেদন জানান এবং সকল বাংলাদেশীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। পরে এ ব্যাপারে স্বাক্ষর গ্রহন করা হয়। ক্যাম্বেলটাউন বাংলা ষ্কুলের ছোট্রমনিরা চমৎকার দেশের গান ও কবিতা আবৃত্তি করেন। কবিতা আবৃত্তি করে শোনান সুরভী ছন্দা, মেরাজ, ডা: আসাদ ও শাহীন শাহনেওয়াজ। আবৃত্তিকারদের কবিতা আবৃত্তি উপসি’ত সূধী ও শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে যায়। এরপরই সংগীত পরিবেশন করেন সাদিয়া খান, সীমা আহ্মেদ, সাজ্জাদ চৌধুরী বাপ্পী ও মিজানুর রহমান তরুন সহ অনেকে। তবলায় সহযোগিতা করেন কাউসার আহমেদ রুবেল। এ পর্বটি ছিল এক কথায় চমৎকার। দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন সিডনীর জনপ্রিয় দল ‘লাল সবুজ’।
লাল সবুজ বেশ কয়েকটি সংগীত পরিবেশন করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সর্বশেষ পরিবেশনায় ছিলেন জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী জুটি আতিক হেলাল ও মিতা আতিক। তারা অমর একুশের বেশ কয়েকটি গান গেয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেন। অমর একুশে উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানে দর্শকদের জন্য দেশীয় ঝাল মুড়ি, পিয়াজু চা এর ষ্টলের ব্যবস’া ছিল। ব্যবস’াপনায় ছিলেন মিসেস আবুল সরকার সহ নতুন পজন্মের বাংলাদেশীরা। ক্যাম্বেলটাউনে অমর একুশের অনুষ্ঠান সার্থক করার জন্য যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সহযোগিতার সার্থক হয়েছে তাদের মধ্যে আবুল সরকার, মাসুদ চৌধুরী, শাহ আলম সৈয়দ, মনসুর আহমেদ, মিজানুর রহমান তরুন, শাহ আবদুল মতিন পপলু, সাদেকুর রহমান মুন, রাজু, আবদুস সোবহান, শাহাদত হোসেন, আতিক হেলাল ও মাসুদ মিথুন সহ অনেকে। অনুষ্ঠানের সবশেষে অমর একুশে উদযাপন কমিটির আহবায়ক ডা. বজলুল করিম উপসি’ত সকল অতিথিবৃন্দ, সাংস্কৃতিক দল ও ব্যক্তিবর্গ, বাংলা স্কুলের সকল ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষিকাসহ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং দর্শকবৃন্দকে অনুষ্ঠান সাফল্যমন্ডিত করার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং আগামী ব্যাপক ভাবে অমর একুশে উদযাপনের আশা ব্যক্ত করেন।