Review on full length Bangla drama in Perth
অস্ট্রেলিয়ার পার্থে মঞ্চ নাটক “জ্ঞান বৃক্ষের ফল” – শর্মিষ্ঠা সাহা
বাঙালী সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী মাধ্যম মঞ্চনাটক। পাত্র-পাত্রীদের অভিনয় কুশলতার সংগে আলো ও শব্দের বর্র্ণিল ম্রিশ্রনে মঞ্চকে নাটকের মায়াময় জগতে নিয়ে যাওয়ার পারদর্শিতার উপরেই মঞ্চ নাটকের সফলতা নির্ভর করে। বাংলায় মঞ্চ নাটকের ইতিহাস র্দীঘ দিনের। নাটক পাগল বাঙালীই জন্ম দিয়েছে ”নটি বিনোদিনী”র। সংস্কৃতির এই মাধ্যমটি বাংলাকে ছাড়িয়ে সম্প্রসারিত হয়েছে প্রবাসী বাঙালীদের মধ্যেও। এরই ফলশ্রতিতে সুদুর অস্ট্রেলিয়ার পার্থে ম্ঞ্চায়িত হলো দ্বিতীয় মঞ্চনাটক ” জ্ঞান বৃক্ষের ফল”। অভিনয় শিল্পি এবং কলাকুশলী মিলিয়ে ত্রিশ জন মঞ্চকর্মীর দীঘ চারমাসের প্রচেষ্টার ফসল এই নাটকটি। দুই বছর আগে এই পার্থের সংস্কৃতি কর্মীরাই মঞ্চস্থ করেছিল প্রথম পূণার্ঙ্গ নাটক “দেওয়ান গাজীর কিচ্ছা”।
দুটি নাটকই মঞ্চস্থ করেছে” বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া এসোসিয়েশন অব ওয়ের্স্টান অস্ট্রেলিয়া” (বাওয়া) । গত ১৯ মে সন্ধ্যাটি র্পাথ প্রবাসী বাঙালীদের জন্য অন্যান্য দিনের চেয়ে অব্শ্যই ভিন্নভাবে এসেছে। বাতাসে হিমেল হাওয়ার ছোঁয়া মনে করিয়ে দেয় শীতের আগমনী বার্তা। তবে বৃষ্টির স্যাঁতস্যাতনি ছিলনা। সন্ধ্যা ৬টার পর থেকেই জন কার্টিন থিয়টার হলে শুরু হয়ে যায় দশর্কের আনাগোনা। নাট্যশিল্পী এবং কলাকুশলীরা এসে গেছেন আরও আগেই। নাটক শুরুর র্পূবে তাসনুভা খালেকের উপস্থাপনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আহ্বায়ক নাজমুস সাদাত শিবলী এবং বাওয়া সভাপতি হাবিবুল হক আহেমেদ। এর পর আসে সেই মহেন্দ্রক্ষণ। প্রায় চারশ দশর্কের সামনে মঞ্ছায়িত হয় পূর্ন বাংলা নাটক “ জ্ঞান বৃক্ষের ফল” ।
জনপ্রিয় রুশ লেখক লিও তলস্তয় এর ” ফ্রুটস অব কালচার” অবলম্বনে রচিত বাংলা নাটক জ্ঞান বৃক্ষের ফল। বাংলায় রূপান্তর করেছেন পশ্চিম বঙ্গের বরণ্য নাট্যাকর চন্দন সেন। নাটকটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রুপান্তর এবং নির্দেশনা দিয়েছেন বাপি মাজহার।
পুজিবাদী অথর্নীতি সম্প্রসারণের সন্ধিক্ষণে কৃষকদের ওপরে সামন্তবাদী ও জার শক্তির অমানবিক নিযার্তনের বিরুদ্ধে তলস্তয় ছিলেন বরাবরই সোচ্চার। সামন্তবাদী শক্তির উপমহাদেশীয় প্রতিচ্ছবি জমিদার প্রথা। চন্দন সেন তাই নাটক রুপান্তরে জমিদার এবং কৃষকের শ্রেণী সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরেছেন। নাটকের মুল কাহিনী আবর্তিত হয়েছে জমিদার মহিউদ্দিন চৌধুরী, তাঁর পরিবার ও বন্ধুদের ঘিরে। সংস্কৃতির মায়াজালে আবৃত এ জমিদার জ্ঞানী পন্ডিত হিসেবে পরিচিত হয়েও কুপমন্ডুকতার চুড়ান্ত প্রমাণ দিয়েছেন প্লানচেট এ বিশ্বাস করে। পাশাপাশি অঢেল সম্পদের মালিক হয়েও দরিদ্র কৃষকদেরকে দেয়া ছয় বিঘা জমি বিক্রির প্রদিশ্রুতি রাখতে চাননি। এ ঘটনাটি নাড়া দেয় তাঁর বাড়িতে ছেলেবেলা থেকে আশ্রিতা চাষীর ঘরের মেয়ে কুসুমকে। আশ্রয়দাতা জমিদারের বিরুদ্ধে সরাসরি না গেলেও বুদ্ধি দিয়ে সে জমিটা পাইয়ে দেয় কৃষকদের। এভাবেই ধনী ও দরিদ্রের , জমিদার এবং কৃষকের শ্রেণী দন্ধের চিত্র ফুটে উঠেছে নটিকটিতে।
প্রায় প্রতিটি দৃশ্যের শেষে দর্শক করতালির মধ্য দিয়ে অভিনন্দিত করে পাত্র পাত্রী এবং কলাকুশলিদের। দুই ঘন্টার এই নাটকে অভিনেতা অভিনেতত্রীদের সাবলিল পদচারণা দেখে মনেই হয়নি তারা অপেশাদার নাট্যকর্মী – বহু দশর্কই এমন মন্ত্যব্য করেছেন। র্সাবিকভাবে ভাবে প্রবাসে এমন প্রচেস্টা অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে রূপদান করেছেন, মোয়াম্মের রেজা বিন ওয়ালী, দিশারী সরকার, আরিফ কোরেশী, প্রিয়ঙ্কর ঘোষ, নাবিল জাহাঙ্গীর, সোয়েব আহমেদ রোমেল, হাসিনা মুনমুন, আরিফ হোসেন সরকার, শর্মিষ্ঠা সাহা, মো: রবিউল হাসান রবিন, মুহাম্মদ খালেদুজ্জামান হিমেল, ফারহানা মাহতাব, মোহাম্মদ বারী রনী, পলাশ বড়ুয়া, বিদ্যুৎ কুমার বণিক, শামসুল ইসলাম পান্না, বিশ্বজিৎ বসু ও আশেকুল হক রাজ। নেপথ্যে ছিলেন মিতালি মনজুর, নওশিন আজিজ, তামান্না রাব্বি, ফারহানা সুমী, শাওলি শহিদ, সমরজিৎ দেব, লাবনী ওমর, তানভির শহিদ, আফনান খন্দকার, মুহাম্মদ গণি, শিপলু কিবরিয়া এবং বাপি মাজহার।