বাংলাদেশ কালচারাল নাইট ২০১০ ডারুইন চৌধুরী মোহাঃ সদর উদ্দিন

বাংলাদেশ কালচারাল নাইট ২০১০ ডারুইন চৌধুরী মোহাঃ সদর উদ্দিন

বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ডারুইনের প্রেসিডেন্ট সাহেবের প্রচন্ড ইচ্ছা সাধারন ডারুইনবাসীকে বাংলাদেশিদের একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপহার দেওয়ার। কল্পনাটা করা খুব সোজা কিন্তু বাস্তবায়ন করাটা প্রচন্ড কষ্টের কাজ। প্রথম বাধা ফান্ড। দ্বিতীয় – ১৫০ জনের বাংলাদেশি ডারুইনবাসীর মাঝথেকে মোটামুটি গান-নাচ করতে পারে এমন লোক খুজে পাওয়া। তৃতীয়- টিকেট কেটে অনুষ্ঠান দেখতে আসবে এমন দর্শক পাওয়া। এরপরে রয়েছে আরও আনেক আনেক সমষ্যা। কিন্তু ইচ্ছার টানটা এতই বেশি যে কারও সাথে এমনকি এসোসিয়েশনের কমিটির সাথেও কথা না বলে উনি করে বসলেন ফান্ডের জন্য দরখাস্ত। সামান্য ফান্ড যখন অনুমোদন হয়ে গেল তখন অবশ্য উনার আর পথ থাকলোনা ব্যাপারটা কমিটিকে না জানিয়ে। বিভিন্ন পদের বাঁধা আর সল্পসংখক বাংলাদেশি এবং তার থেকেও সল্প সংখক নাচ-গান করতে পারে এমন মানুষের সংখ্যা আর বিশাল কাজের কথা চিন্তা করে কমিটি ব্যাপারটা জেনেই মোটামুটি ভাবে প্রেসিডেন্ট সাহেবকে বেশ নাস্তানাবুদ করে তার পর মহা উৎসাহে কাজে লেগে গেলো। এরপর বাঁধা আর মিটিং-এর চললো মহা হাড্ডা হাড্ডি লড়াই। বাঁধা কতও প্রকারের যে হতে পারে সেটা মনে হয় সবার ছিল কল্পনার অতীত। তবে বাঁধার ঠেলায় কমিটি মিটিং করাটাতে বেশ ভালো ভাবেই পোক্ত হয়ে গেছে যে সে ব্যাপারে কোন সন্ধেহ নেই। তবে আশ্চর্য লাগলো কিছু বাংলাদেশিদের আগ্রহ দেখে। প্রচন্ড একাগ্রতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো তারা কাজে। এরকম একটা মোটামুটি বিশাল আয়োজনে কত রকমের যে কাজ থাকতে পারে সেটাও মনে হয় বুঝতে একটু সময় লাগলো। ছেলে মেয়েদের নিয়মিত রিহার্সালে নিয়ে আসা, কস্টুইম সেলাই করা, ফ্লাইয়ার বানানো, অনুষ্ঠানের দিনের জন্য ব্রোসার বানানো আর বাংলায় গান টাইপ করা থেকে মিউজিসিয়ান জোগাড় করা, রিহার্সেলের জায়গা জোগাড় করা, গন্য মান্যদের দাওয়াত করার কার্ড ছাপানো ইত্যাদি ইত্যাদি।

প্রথম সমস্যা দর্শক পাওয়া। সিডনির মত ডারুইনে হাজার হাজার বাংলাদেশি বাস করেনা অতএব, প্রধান কাজ হচ্ছে কিভাবে আকর্ষন করা যায় সবাইকে, সে ইন্ডিয়ান হোক আর পাকিস্তানি হোক আর সাধারণ অস্ট্রেলিয়ান হোক। প্রস্তাব আসল অনুষ্ঠানটা মালটিকালচারাল করার কিন্তু মোটামুটি ভাবে কমিটির সবাই তাতে একবাক্যে নারাজ। বাংলাদেশকে আমরা তুলে ধরবো বাংলাদেশের সাংস্কৃতি দিয়ে। মার্কেটিং পার্টের দ্বায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের কথা খাবারের ব্যবস্থা হলে আসবে সাধারণ অস্ট্রেলিয়ানরা, বলিউড থাকলে আসবে ইন্ডিয়ান আর পাকিস্তানিরা, বাদ দিতে হবে এমন কোন পরিবেশনা যেটা পাকিস্তানিদের ফেলতে পারে একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। কল্পনা আর বাস্তবতার টানাপোড়নে সাবাই তখন অসহায়। একসময় অনুষ্ঠান করা হবে কিনা তানিয়ে লাগলো মহা বিতর্ক। অবশেষে নিতান্ত না পেরেই সমাধান হিসেবে কালচারাল পার্টের হাল ধরা ব্যাক্তিটি অনুষ্ঠানকে দুই ভাগে ভাগ করার প্রস্তাব দিলেন। খাবারের আগে পুরপুরি বাংলাদেশি অংশ, খাবারের পর মালটিকালচারার পার্ট। রাত ১টা পর্যন্ত চলল মহা মিটিং, কেওই মন থেকে ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছেনা আবার পথও পাচ্ছেনা কোন। অবশেষে রাজি হতে বাধ্য হলেন সবাই নিরুপায় হয়ে। তবে এখনের জায়গাই দাড়িয়ে মনে হচ্ছে, দর্শক পাওয়ার সেই কৌশলটা ভুল ধারণারই ছিল প্রতিফলন।

এরপরের সমস্যা ভেন্যু। আবার রিতিমত দুঃসাহস দেখিয়ে কমিটি ডারুইনের সবচেয়ে নামি এবং আবশ্যই তার সাথে লেজুর জুড়া দামি ভেন্যুটাই করে ফেললো ভাড়া। এরপরে কে নেবে কালচারাল পার্টের ভার। গান পাগল মানুস ডারুইনের সবাই কিন্তু গান শেখাতে পারে এবং পরিবেশন করতে পারে এমন লোকের সংখ্যা মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন, আঙ্গুলে গোনা বললাম না কারন ১০ সংখাটা এখানে একদম বেমানান। এদের মাঝে থেকে একজন এগিয়ে আসলেন হাল ধরতে। আমার মনে হয়না উনি কখনও কল্পনা করেছিলেন কাজটায় তার কি পরিমান মনযোগ আর সময় দিতে হবে। আরেকজন প্রচুর সময় দিলেন গান শেখানোতে সাহায্য করে। বাচ্চাদের গান শেখানোর কাজটি করলেন আরেকজন। আর এসবের সাথে অংশগ্রহনকারীদের মাঝে বন্ধন আর সাংযোগের দ্বায়িত্বটা যথাযথ ভাবে পালন করে গেলেন হাল ধরা সেই ব্যক্তিটি । একক আর দলীয় গানের অংশগুলিও হয়ে উঠলো নিজস্ব স্ব:কিয়তাতে উজ্জ্বল। বিশ্বাস করতে আনেকেরই কষ্ট হচ্ছিল যে এরা সবাই শখের শিল্পী এবং ডারুইনেরই বাংলাদেশি। এদের অনেকের পরিবেশনা দেখে প্রশ্ন আসল এদের আমরা কোথা থেকে এনেছি, সিডনি নাকি বাংলাদেশ থেকে।

কি নাচ পরিবেশন হবে তা ঠিক করে, ডারুইনবাসী বাংলাদেশিদের দ্বারা সেটা করা যাবে কিনা সেটা ঠিক করতেও লাগলো সময় । অনেক ভাবনা চিন্তার পর ঠিক হলো বাংলাদেশ থেকে আনা হবে একজন নৃত্য শিল্পীকে । শেষ পর্যন্ত ভিসা জটিলতার করণে বাংলাদেশের নৃত্য শিল্পীর আর আসা হলোনা। অতএব, আরেক জন ডারুইনবাসী বাংলাদেশির ঘাড়ে পড়লো দুইটা নাচের দ্বায়িত্ব। খুবি স্বল্প সময়ে উনি উপস্থপনা করলেন এত সুন্দর দুইটি নৃত্যের যে সবাই এখন ভাবছে কেন প্রথমথেকেই এটাকে রাখা হয়ে ছিলনা পরিকল্পনায়। মালটিকালচারাল অংশের নৃত্যের দ্বায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসলো ইন্ডিয়ান কম্যুনিটির তিন জন। ওদের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশিদের নিয়মিত অবদানের কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশই ছিল সেটা। নাচ জানা নতুন প্রজন্মের একজন নতুন ডারুইনবাসী পরিবেশন করলো সুন্দর দুটি নাচ। একটি বাংলাদেশি অংশে আন্যটি মালটিকালচারাল অংশে

নতুন প্রজন্মের, বাচ্চাদের এবং কখনো নাচেনি এরকম দুজনের নাচ শেখাবার দ্বায়িত্ব নিলেন এমন দুইজন যারা কি যে করবেন তা জানতোনা কেওই। কিন্তু দেশেকে সবার সামনে তুলে ধরার কাজ বলেই মনে হয়, সমস্ত বাধা পার করে তারা উপস্থিত করলো এক অদ্ভুত সুন্দর পরিবেশনা। এখানে বেড়ে উঠা ১৫-১৮ বছরের বাচ্চাদের দিয়ে বাংলাদেশি নাচ করানো মনে হয়না কারো কল্পনাতেও ছিল, কিন্তু সেই তারাই এখন জানতে চায় আবার হবে কিনা এমন অনুষ্ঠান। কেও কেও আপষোস করে কেন আরও নাচে অংশ নেয়নি সে। আর ছোটদের কথা কি বলবো, যেগুলি এখনও ঠিক মত হাঁটতে শিখেনি তারাও করতে চায় নাচ।

আনকোরা উপস্থাপনার দ্বায়িত্ব নিয়ে অসম্ভব সুন্দর আর সাবলীল স্পষ্ট উচ্চারন আর সামান্য কথায় প্রাণময় নিটল পরিবেশনা করলেন উপস্থাপিকা। উপস্থপনা যে কিভাবে একটা অনুষ্ঠানকে দিতে পারে একটা অন্য মাত্রা সেটা আমরা সবাই মনে হয় অনুভব করলাম নতুন করে।

অনেক ভাবনা চিন্তা হলো কিভাবে বিদেশিদের আমারা আমাদের পরিবেশনা বোঝাবো। অবশেষে স্টেজের বিশাল প্রোজেক্টরের সাহায্যে বাংলাদেশি অংশের সমস্ত পরিবেশনার ইংরেজি অনুবাদ দেওয়া হলো যথাযথ ছবি সহকারে। ব্যাপারটা কতটুকু কাজে লাগবে সেটা নিয়ে সবাই ছিলো একটু আধটু স্বন্ধিহান, সংশয় অবশ্য ভংলো অনুষ্ঠানের পরে। নাচের মুদ্রাতে কি হচ্ছে সেটা ইংরেজিতে গানের অর্থের কারনে যখন বহুগুন সোন্দর্য নিয়ে ধরা দিল সবার কাছে তখন অনেকেই সেটা জোর গলায় প্রকাশ করলেন রাতের খাবারের সময়। অনেকে অভিযোগ করলেন কেন একই কাজ করা হয়নি মালটিকালচারাল অংশে। তারা জানবে কিভাবে কি পরিমান সময় দিতে হয়েছে ‘Œড়ালি বিড়ালি‘ ইত্যাদি অনুবাদে আর কথার সাথে খাপ খাওয়ানো ছবি খুজতে।

আশা করা হয়েছিল মার্কেটিং পার্টি ঠেলেঠুলে পাকিস্তানি আরা ইন্ডিয়ান মিলে ৩৫০ এর মত দর্শক জুটাতে পারবে। সে অনুযায়ি খাবারের আয়োজনও করা হলো, কিন্তু হলের কারনেই হোক আর মার্কেটিংয়ের কারনে হোক বা দুজন বাংলাদেশির মার্কেটিং পারদর্শিতাতেই হোক, ৪৫০ বেশি টিকেট যখন শেষ হয়ে গেল তখন বাধ্য হয়ে টিকেট বিক্রি করা হলো বন্ধ। হলের কর্তৃপক্ষ ভীষন অখুশি, ১০০০ সিটের হলের সব টিকেট কেন বিক্রি করতে দেওয়া হবে না তদের। শেষ মুহুর্তে হয়তবা আরও খাবারের আয়োজন করা যেত কিন্তু ৪৫ মিনিটের বিরতিতে ৫০০-৬০০ বেশী দর্শককে খাওয়ানো একদম ছিলনা সম্ভব। এরপরেও অনুষ্ঠানের দিনে ৯০-১০০ জনকে বিনা খাবারে আনুষ্ঠান দেখার অনুমোদন দিল এসোসিয়েশন। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে অনুষ্ঠানে পাকিস্তানির উপস্থিতি ছিল একদম কম। সংখ্যা অনুযায়ি ইন্ডিয়ানরাও তেমন ছিলনা উল্লেখ করার মত। অথচ এই কারণেই করা হয়েছিল দ্বিত্বীয় অংশের আয়োজন। সাধারণ অস্ট্রেলিয়ানরা প্রথম অংশের আমেজ নিয়েই করেছেন তার অনেক প্রশংসা। অনুষ্ঠানের সবালীল গতি, মিনিট ধরে সময় মানা আর বৈচিত্র অর্জন করল সবার ভূয়সি প্রশংসা। এত কম পয়সায় এত পদের খাবারের আয়োজন সবাইকে করলো বিস্মিত।

জানিনা ভবিষ্যতে এরকম আরেকটা অনুষ্ঠান হবে কিনা তবে ব্যক্তিগতভাবে মালটিকালচার অংশটুকুর সংযোজন নিয়ে মনের মাঝে একটা অপরাধবোধ মনে হয় সব সময় কাজ করে যবে অনেকেরই। তবে নিঃসন্দেহে বলতে পারি এই অনুষ্ঠানের বিশেষকরে বাংলাদেশ অংশ আমাকে করেছে অবেগ আপ্লুত আর গর্বিত ।

বিঃ দ্রঃ

ইউটিউবে আপাতত বাংলাদেশ অংশের হাইলাইটস দুই পর্বে আর দুটি নাচ সম্পূর্ণ দিলাম। আন্য কোন অংশ ভালো লাগলে জানালে আমি সেটাও ইউটিউবে দেবার চেস্টা করবো।

সৌজন্যে –
ছবি – ইমরান আবেদিন
ইউ টিউবের ভিডিও – রিপন, ইমরান, মুহিব, আমিন, ডঃ পার্থ ও আব্দুল কাদের।

চৌধুরী মোহাঃ সদর উদ্দিন
২০/০৭/২০১০


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment