অপূর্ব এক সন্ধ্যা – অপূর্বের সাথে -সাহাদৎ মানিক
এক ছোট ভাই বলল – কলকাতা থেকে একজন কবি আসছেন অস্ট্রেলিয়াতে। আগামী মাসে। ক্যানবেরাতে আসতে আগ্রহী। ওর কথার ধরনেই বুজতে পারলাম প্রস্তাবটা কি। কয়েক সপ্তাহ পর আমাদের বাৎসরিক ‘কবিতা ও শীতের পিঠা উৎসব’। কবিতা উৎসবের সাথে একজন মূল ধারার কবিকে পেলে মন্দ হয় না। আগ্রহী হলাম।
এক বড় ভাইয়ের (যিনি প্রথমত খোজটা দিয়েছিলেন) মাধ্যমে যোগাযোগ হলো কবির সাথে। সবকিছু ঠিক ঠাক কিন্তু সমস্যা হলো রবিবার ছাড়া অন্য কোন দিন খালি নেই কবির ডাইরীতে। অগত্যা রাজি হলাম। রবিবারই সই, যদিও রিস্কটা থেকেই যায়। এমনিতেই, এখানে (ক্যানবেরাতে) কেউই তেমন একটা রবিবারের অনুষ্ঠান গুলিতে আসতে চায় না। তার উপর কবিতার অনুষ্ঠান বলে কথা! মরার উপর রবিবার বিকেল, পরের দিন সবার অফিস শুরু। দর্শক শ্রোতা পাবোতো?
আমাদের প্রস্তুতি শুরু হলো। আসছেন কবি অপূর্ব দত্ত। অপূর্ব দত্ত!? কখনো নাম শুনেছি বলে মনে পড়ে না। খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করলাম। বড় ভাই কবি’র ওয়েব সাইটের এড্রেস দিলেন। ভিজিট করলাম। ঠিক মনের মতো হলো না, দু’একটা ছড়া বাদ দিলে। কি আর বলবো, ওয়েব সাইটের ডিজাইন যা ইচ্ছে তাই। নিতান্তই প্রয়োজন, না হয় লিংক গুলিতে ক্লিক-ই করতাম না। জেনে খুশি হলাম, কবির পকেটে বেশ কিছু সাহিত্য পুরস্কারও আছে।
অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় কবির জন্যে রাখা হলো – ৯০ মিনিট কবির সাথে আলোচনা যা পরিচালনা করবেন তপন দা এবং সবার শেষে ১ ঘণ্টার ‘আড্ডা’ পরিচালনায় থাকবেন প্রবাল ভাই। মজার ব্যাপার হলো প্রবাল ভাইকে আগে থেকে কিছুই জানানো হয়নি। অনুষ্ঠানে এসেই জেনেছেন – ‘আড্ডা’র হোষ্ট তিনিই। যা হোক, রাজি হলেন, আমরাও খুশি হলাম।
অনুষ্ঠান ২.৩০ আরম্ভ হবার কথা। কথাইতো! আমরা কামলারা, সময় মত সবাই হাজির হলাম দুপুর ২.১৫ আগেই। কবি দুপুরের খাবার দাবার সেরে ক্যানবেরাতেই আছেন। তপন দা’র সাথে ‘এই আসল বলে’। কিন্তু আমাদের ‘শ্রোতা – দর্শক’রা কোথায়?আমাদের ‘কামলা’ ফ্যামিলিদের বাইরে বড়জোর পাছ ছয়’টা ফ্যামিলি! আমি, আফজাল ভাই, অভিজিৎ, আমরা যারা ‘সময় মতো আসা’ অতিথি’দের আপ্যায়ন করছিলাম, ‘লজ্জিত’ হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। আধা ঘণ্টা পর আমাদের পরম অপেক্ষার অতিথিরা আসতে শুরু করলেন। যাক, তাও তো আসছেন। আসছেন ধীরে ধীরে দু’একজন করে। দু’জন ভাবী ব্যস্ত হয়ে পড়লেন ‘আর্লি বাডস’দের মেহেদি আলপনায়। এরই মধ্যে কবি এসে গেছেন – প্রযেক্টরে মুভি চলছে ‘moun amar – shesher kobita revisited’।
আচ্ছা, আমরা কি কখনো হলে মুভি দেখতে গিয়ে লেট হই? বা প্লেন ধরতে? তবে কেন কমিওনিটি ইভেন্ট গুলোতে আসতে লেট করি? নামি, দামি ব্যস্ত ব্যক্তিরা কি আমাদের ইভেন্ট গুলোতে দেরিতেই আসেন? দেরিতেই আসবেন? যদি আসবার পরিকল্পনা থেকেই থাকে, প্লিজ সময় মত আসবেন আমাদের অনুষ্ঠান গুলোতে। অনেক যত্ন করেই আমরা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠান সাজাই। আপনাদের জন্যেই। সময়মতো এলে, আমরা সম্মানিত হবো। আপনার জন্যে সর্বোচ সম্মান তোলা থাকবে আমাদের পক্ষ থেকে। নিশ্চিত থাকুন।
যা হোক, ফিরে আসি মূল কথায়।কবি অপূর্ব দত্ত এসে গেছেন অনেক আগেই। এই প্রথম কবির সাথে পরিচিত হলাম। কথা বলে ভালো লাগল, যদিও বেশি কথা বলার ফুসরৎ ছিল না। মুখটা খুব পরিচিত ‘কোথাও দেখিছি’ এমন। অতি সাধারণ, মানুষ, নিশ্চিত বোধ করলাম।
‘স্বরচিত কবিতা ও আবৃত্তি’র পর্ব চলছে। কবি ও আবৃতিকার’দের বিশেষ ভাবে বলে দেয়া হয়েছিল ২.১৫ মধ্যেই অনুষ্ঠানে থাকতে। ২২ জনের মধ্যে মাত্র ৭ জন এলেন সময় মতো। বাকীরা এলেন নিজস্ব মেজাজে, নিজের সময় মতো। কেউই বাদ পড়লেন না, সবাইকে অনুষ্ঠান চলাকালিন সময়েই ‘সমন্নয়’ করা হলো।
কবি অপূর্ব দত্তের সময় এলো। শ্রাবণী’র সংক্ষিপ্ত কবি পরিচিতির মাধ্যমেই শুরু হলো ‘কবি এবং তপন দা’ পর্ব। আলোচনা পর্ব। আলোচনার দু’জনই আমাদের কাছে স্টেজে নতুন মুখ, অতএব, আমাদের প্রত্যাশার কোন সীমারেখা নেই। প্রিয় টিভি চ্যানেলের প্রিয় উপস্থাপকের মতোই শুরু করলেন তপন দা, কথা বললেন সারা সময়, শেষ করলেন সে রকমই। ওয়াও! নির্ধারিত দেড় ঘণ্টা পরেও মনে হলো আরো কিছু সময় চললে খারাপ হতো না!
আলোচনা পর্বের শুরুতেই, কয়েক মিনিটের মধ্যেই টের পেলাম মন্ত্র মুগ্ধের মতো কবির কথা শুনছি।চমৎকার। যেমন কথার ধরন, তেমনি সেন্স অব হিউমার। ছড়া কি কবিতা, যেমন গঠন শৈলীতে তেমনি আধুনিকতায়! ক্রিকেট নিয়ে লেখা ছড়া গুলো এক কথায় ‘অপূর্ব’! হয়তো অপূর্ব দত্ত লিখেছেন বলেই কথা! অপূর্ব দত্তের ওয়েব সাইট, সাইট ডিজাইন দেখে ভেবেছিলাম – বাচছাদের জন্যে ভদ্রলোক ভালো ‘ছড়া টড়া’ লিখেন হয়তো! ‘ছড়া টড়া’ টা ইচ্ছে করে লিখলাম, জানি কবি ‘ছড়া’ সাথে ‘টড়া’ পছন্দ করেন না। সে যাই হোক।
চতুর্দিকে খেয়াল করে দেখলাম আমি একা নই। হল ভর্তি দর্শক শ্রোতা – মন্ত্র মুগ্ধের মতোই কবির কথা শুনছেন!
নিচের আট’টি ক্লিপে (প্রায় ১ ঘণ্টা, ২০ মিনিট) মোটা মোটি অপূর্ব দত্তের পুরো আলোচনা পর্বটি দেয়া হয়েছে। হয়তো এখানে সেখানে, ১০ থেকে ১৫ মিনিট কাটা পড়তে পারে (আলোচনা পর্বটির মূল অংশ থেকে), যেটা খুবই অনিচ্ছাকৃত। কিন্তু আমি নিশ্চিত ভিডিও দেখে আমার অনুভূতির সাথে একমত হবেন।
>>>
Clip 1 of 8
Clip 2 of 8
Clip 3 of 8
Clip 4 of 8
Clip 5 of 8
Clip 6 of 8
Clip 7 of 8
Clip 8 of 8
অবশেষে বলতেই হচ্ছে, এই পর ভূমে, পর বাসে, ও বাংলার হাতে গোনা ক’জন বিখ্যাত লেখক ছাড়া বর্তমানের কাউকেই তেমন একটা চিনি না। বুজতে পারলাম কতটা নাড়ি ছেঁড়া হয়ে গেছি। মনে মনে বললাম যাবজ্জীবন কারাদন্ডে আছি।অসম্ভব কি? অনেক কিছুই সম্ভব।
Event Review: https://priyoaustralia.com.au/community-news/canberra/70624.html
Event Photos at: https://priyoaustralia.com.au/photos/main.php?g2_itemId=10052