Shuvo 2011 (Late post)

Shuvo 2011 (Late post)

জীর্ন যা কিছু যাহা কিছু ক্ষীন,নবীনের মাঝে হোক তা বিলীন…..শুভ ২০১১

রাণ্গিয়ে দিয়ে যাও যাও ,যাওগো এবার যাবার আগে
তোমার আপন রাগে,তোমার গোপন রাগে
তোমার তরুন হাসির অরুন রাগে
অশ্রু জলের করুন রাগে….
রং যেন মোর মর্মে লাগে,আমার সকল কর্মে লাগে………:).

বিদায় ২০১০..তুমি যেমনি ছিলেনা কেন,যাবার আগে আমার এই প্রার্থনাটুকু রেখো…..রবিঠাকুরের কথাগুলি যেন আমারি মনের কথা….তারই ভাষায় সাথে সাথে ২০১১ তোমাকেও বলি……
এসো শ্যামল সুন্দর…..
আনো তব তাপহারা তৃষাহরা সন্গসুধা
বিরহিনী চাহিয়া আছে আকাশে…….

চারিদিকে হৈ চৈ,উৎসব,দাওয়াত,নতুনেরে অভিনন্দণ জানাতে ব্যস্ত সবাই,জানাতে চাচ্ছে তাদের প্রানঢালা ভালবাসা,কেউ করছে বার্বিকিউ কেউ আবার এমনি লান্চ,ডিনার! আমাদের এখানে দাওয়াতের ছড়াছড়ি,সবসময়ি অবশ্য এরকমটা থাকে……….যেটা আমার একেবারেই পছণ্দ না,এই দাওয়াত বাসায় না করে যদি খাবার দাবার নিয়ে দূরে কোথাও,যেমন,পার্কে/বীচ সাইডে যাওয়া যায়,সাথে খেলাধূলা,গানের সরন্জাম,কত্ত ভাল হয়…..

আমি এই বাসায় দাওয়াত খেতে যাওয়া মোটামুটি বাদ দিয়েছি,তার উপর একা একা আরো ইচ্ছা করেনা…মেয়ে যদিও তার পড়া নিয়ে ব্যষ্ত তবুও যথেষ্ট সময় আমাকে দেয়!আর ওর বাবা দেশে……..এই পরিস্থিতিতে ভাবছি কি করা যায়! নিউ ইয়ার একা একা? ঘরে বসে? তা কি করে হ্য়?:|

একবার অবশ্য এরকমটা হয়েছিল..চাকুরীর প্রয়োজনে ঢাকায় গেলাম,আব্বা,আম্মা তখন দেশের বাইরে,বাসায় আমি একেবারেই একা! বন্ধু,আত্মি্যরা অনেক জোড় করেছিল ঢাকার ৩১শে ডিসেম্বর রাতে বাইরে নিতে….আমি যাইনি,শুধু একটা গানের প্রোগ্রাম দেখে চলে এসেছি বাসায়,মনটা খারাপ ছিল কারন ঘুম থেকে উঠে পাশে কাউকে পাবনা হ্যপি নিউ ইয়ার বলার! পরদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি বাসার ৩ জন বিসিষ্ট ব্যক্তি….দাড়োয়ান,ড্রাইভার আর ক্লীনার হাসিমুখে দাড়িয়ে…আমাকে অবাক করে দিয়ে বল্ল,”আফা,হেপি নিউ ইয়ার”।:-*

এখন ভাবি,আহা,ওরাও যদি থাকতো!!/:) যাকগে মেয়েতো আছে কাছে…দুজনে মিলে ভাবছি কি করা যায়…: বার বার মনে হচ্ছে আম্মা ঢাকায় থাকতে বছরের প্রথম দিন অনেক রান্না বান্না করতেন আর আমাদের আত্মী্যরা সবাই আমাদের বাসায় দিনটি পালন করতো! “দিন গুলি মোর সোনার খাচায় রইলনা,রইলনা সেই যে আমার নানা রং এর দিনগুলি!!!আচ্ছা,রবিঠাকুর,তুমি কি করে আমাদের সবার মনের কথা বুঝে লিখে রেখে গেছো? নাকি,পৃথিবীর সবার অনুভূতিই তোমার মাঝে বিরাজমান ছিল?

যারা বাবা মা নিয়ে বিদেশে থাকে তারা যে কত্ত সুখী!!


কি করব বা কি করা যায় চিন্তা করে ভাবলাম, দেখিতো আগে আশে পাশের লোকজন সব কি করে …:|

পার্থের লাবনি দেশে,সিডনীতে রিমা তার সদ্য ভূমিষ্ঠ রোদেলাকে নিয়ে ব্যস্ত,বাকিরা প্রায় সবাই দেশে,মেলবর্ণে লিপি তার নিউজিল্যান্ড মেহমান নিয়ে ব্যস্ত,লিপি আমার অনেক প্রিয় একজন ছোটবেলার বন্ধু! এমন ভাল দুজন মানুষ, কি বলব!পপি,নাহিদ,লিটু ভাইরা দেশে….ফৌজিয়াকে পেলামিনা,মনে হয় তার গায়ক ছেলে এহসানকে নিয়ে ব্যস্ত! এহসান ৮ বছরের কিন্তু বাংলা গানের কলি তার ঠোটের আগায়! তপুকে কল দিয়ে দেখি বাইরে যাবার জন্য রেডি হচ্ছে…..৭ বছরের উপমা আমার আর এক প্রিয় একজন! ওর ৩ বছর বয়সে আমাকে সূরা ফাতিহা মুখস্ত শুনিয়েছে!

আর হোদলা বরাবরের মতই মহাব্যস্ত!:-* যখন কল দিলাম যাচ্ছে কোন এক আইল্যান্ডে,কাল নাকী গেসিল জাম্বিয়া পার্কে,এর পর যাচ্ছে…..গড় গড় করে বলেই যাচ্ছে….হটাৎ বুঝি তার মনে হোল যে আমার খবরও নেয়া উচিৎ তাই বল্ল,তোরা মা, মেয়ে কি করছিস? কি প্ল্যান? আমি আর কি বলব! এটা সেটা বলে ফোনটা রেখে দিলাম..আসলে ঢাকা থেকে আসা তার বড় বোন আর বোনের ছেলে যে মোনাষে আর্কিটেকচারে ভর্তি হোল তাদের নিয়েই প্রধানত: তার এই ব্যষ্ততা,তাছাড়া,হোদলার মেয়েটাতো আছেই…..ভীষণ আদুরে একটা জানপাখী!!ও কাছে থাকলে আর কারো কিছু লাগেনা! বুড়ি টার মা,খালা,খালু সহ ওদের বাড়িও সবসময় রমরমা…:).

চারিদিকে এই ফুর্তি ফুর্তি ভাব দেখে মনটা একটু কেমন যেন হয়ে গেল,মেয়েকে বল্লাম,”তুমি যাও,ঘোর বন্ধুদের সাথে,আমি বাসায় থাকবো আর আমি মনে মনে ঠিক করে রাখলাম,থাকলামিনা বাসায় একা,মন্দ কি?স্মৃতি রোমন্থন করব আর লিখবো!:| কিন্তু কিছু ভাল বন্ধুর জন্য পারলামনা তা করতে! তাদের বক্তব্য আমাকে এভাবে থাকতে দেয়া যাবেনা,তাই তারা আমাকে বাড়ি থেকে বের করার জন্য আর ওদের সাথে অংশগ্রহনের জন্য ঠিক আমার দুর্বল যায়গাটিতে টোকা দিল……..যা করলে আমি কিছুতেই মানা করবনা!!;)

ওরা গান বাজ্‌নার এক বিশাল অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করল! ….. :):) তাও আবার সেটা ৩১শে ডিসেম্বর রাতে!! আমারই এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু জেরিন এর বাসায়……..জেরিন গোলড্‌ কোস্ট হস্‌পিটালে কার্ডিয়োলোজিষ্ট হিসেবে কর্মরত,পেশায় ডাক্তার হলেও গানবাজ্‌না ওর দারুন পছন্দ! লক্ষি বৌ পুতুল আর ১ ছেলে ২ মেয়ে নিয়ে ওর সুন্দর সংসার…..:)


গোল্ড কোস্টে লেক এর পারে বিশাল জায়গা জুড়ে ওর দোতলা বাড়ি…..বিদেশে বসেও দেশি আমেজ পাই ওখানে গেলে…..বাড়ির পেছনটা একদিকে যেমন ফোয়ারা,দেশি, বিদেশি ফুলের বাগান দিয়ে সাজানো,অন্যদিকে নানান রকম দেশি সব্জি ও ফলের বাগান মনকে নিয়ে যায় সেই গ্রাম ছাড়া ঐ রান্গা মাটি’র দেশে!!:)

আমি প্রায় প্রতি পূর্নিমায় ওর বাসায় চলে যাই…..লেক এর পানিতে চাদের আলোর ঝলকানি আমাকে পাগল করে দেয়! মন চলে যায় নিউজিল্যান্ডের সেই “মিশন বে”তে…..যেখানে প্রায় প্রতিটি পূর্নিমা আমার কাটতো!!:)

প্রোগ্রামের তারিখ আর জায়গা ঠিক হবার পর শুরু হোল পুতুলের ফোন কল,প্রতিদিন আলোচনা চলতে লাগলো..কি কি করবে,কাকে কাকে বলবে ইত্যাদি……এসব গানবাজনার প্রোগ্রামে সাধারনত: ওরা আমার সাথে আলাপ করে।আর জেরিন নিজেও জানতোনাযে ও এতো ভাল গান গায়..একবার ডাক্তার এসোসিয়েশন এর প্রোগ্রামে জোড় করে আমি ওকে স্টেজে উঠিয়ে ছিলাম…তারপর খুব পপুলার হয়ে গেল ও…..এরপর আর বলতে হয়নি আমার…..দারুন কনফিডেন্ট,তাছাড়া রিসেন্টলি মিউজিক সিস্টেমও কিনেছে!!:)

আমরা আলাপ করে ঠিক করলাম বিকেল ৬ টা থেকে বার্বিকিউ আর তারপর শুরু গান বাজনা!! কিন্তু শিল্পী??

আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে!!!:)


ড্রেস কোড ঠিক হোল “লাল সূতী/কোটা শাড়ি”:)

পরে আরো জানলাম,বিশেষ আকর্ষণ হোল আমাদের সাথে নিউ ইয়ার সেলিব্রেট করতে সিডনী,মেলবর্ন আর কফ্‌স হারবার থেকে বন্ধু বান্ধব আসছে….খুবি এক্সাইটেড আমরা! বিশেষ করে দিনা,চপলের মেয়ে ২ টা…পৌর্ষি আর টায়রা…..ভীষন ভালবাসি আমি ওদের!:)

আমি সাধারনত: একা কোন প্রোগ্রাম এটেন্ড করিনা,ভাল লাগেনা..তার উপর নতুন বছরের আগমনি অনুষ্ঠান!! মনটা কেমন যেন করছিল,পরে চিন্তা করলাম,আমি মন খারাপ করে থাকলে আমার মেয়েটারো যে সময় মাটি! তাছাড়া,বর্তমানই তো আমাদের ভবিষ্যত,আবার ,বর্তমানই ভবিষ্যতের অতীত……তাই এই সময়টাকে যেভাবেই হোক সুন্দর করতেই হবে আর তাহলেইতো ভবিষ্যতে পাব একটা চমৎকার অতীত!!

এবার একটু আমার মেয়ের দিকে আসি…তার অনেক ধরনের প্ল্যান!! খুবি স্বাভাবিক!! যাই হোক,মেয়ের আমার বহু প্ল্যান তার বন্ধুদের নিয়ে ফায়ার ওয়ার্কস দেখবে কিন্তু মায়ের একাকিত্ত দেখে পুরাটা সময় সে আমাকে দিতে রাজী হোল! ধন্য আমি! আমায় অবাক করে দিয়ে সে শাড়িও পড়তে রাজী হোল…:-*

অবশেষে প্রতিক্ষিত দিনটি এল….যথাসময় আমরা যাবার জন্য তৈরি হোলাম….রওনা হবার আগে মঈণ ভাই কল দিয়ে বল্লেন,উনারা আমাদের নিয়ে যাবেন যেহেতু ২ জন মানুষ আমরা যেন গাড়ি না ণেই..ভালৈ হোল.. ভাবি,বাচ্চাদের সাথে গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে…মঈণ ভাই প্রিন্স চার্লস হাসপাতালে গ্যাস্ট্রোএনট্রোলোজিস্ট হিসেবে কাজ করছেন….রানু ভাবি খুব ভাল সংসারী একজন বৌ…….ওনাদের বাসা আমাদের থেকে ৫ মিনিট ড্রাইভ!

আমরা সময়মত পৌছালাম ওখানে…..দারুন ভাবে সাজিয়েছে বাসার ভেতর,বাহির..।বৃষ্টি হলে ভেতরে আর নাহলে বাইরে……আমার গাছের কিছু রজনিগন্ধা,রন্গন আর গোলাপ ফুলদানিতে সাজালাম,গন্ধে ঘর ভরে উঠলো..:)…কিসের জন্য এয়ার ফ্রেশনার??


তারপর ধিরে ধিরে বাসা ভরে গেল..ওদিকে বার্বিকিউ চলছে.:P….চরম হৈ চৈ….বার্বিকিউ হলেই আমি একজনেরটা খুব মিস করি,যেরকোমটা কখনও খাইনি আর…সেই নিউজিল্যান্ডে থাকতে খেয়েছি!!

অনেক দিন পর দেখা মিশু,চপল,দিনা,চপল,সামিম,মুমু…..বাইরে থেকে আসা ওরা গল্পে মাতিয়ে দিল আমাদের….মজার ব্যাপার আমি, জেরিন সহ এরা সবাই একি মেডিকেল এবং নিউজিল্যান্ডের! বাচ্চাগলিও প্রচন্ড মজা পাচ্ছে…:)

খাওয়া শেষে শুরু হোলো গান.”ওহে সুন্দর মম গৃহে আজি পরোমৎসব রাতি.”…

কেউতো প্রফেশনাল না….একেক পর একজনকে স্টেজে তোলা হোল,রবিঠাকুর,নজরুল থেকে শুরু করে মান্না দে,পিন্টু,শ্যামল,কিশোর,সাবিনা,হাদী,লতা,আশা,মৌসুমি ভৌমিক কেও বাদ যায়নি! কেউ কেউ ব্যান্ডের গানও গাইল,কেও আবার কবিতা…. বাচ্চাগুলিও তাদের প্রতিভা দেখাতে পিছ পা হ্য়নি..যে যা পারে,ইংলিশ,বাংলা…..গান,কবিতা…বাচ্চাগুলি কত স্টেজ ফ্রি এখন,ভাবতে অবাক লাগে! আমরা কি ছোটকালে এমন ছিলাম!


অনুষ্ঠানের মাঝে হটাৎ করেই আমার ইচ্ছা হোল লেকটার পাশ দিয়ে একটু হেটে আসতে! চুপচাপ উঠে গেলাম কেউ যাতে টের না পায়..আহ্‌,কি সুন্দর!:D চাদের আলোয় পুরাটা লেকের পানি কি দারুন ঝলমল করছে! অবাক লাগলো ভেবে এই না ২ দিন আগে টানা কদিন কি বৃষ্টি!বন্যা! আবার এখন কি চমৎকার আবহাওয়া…খোদার কি অদ্ভুত খেলা!কৃতগ্গতায় তার প্রতি মন ভরে উঠলো আর নিজের মনেই গেয়ে উঠলাম,”খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে,বিরাট শিশু আনমনে…….ভান্গিছ গড়িছ নিতী ক্ষণে ক্ষণে,নিরজনে প্রভু নিরজনে” ভীষণ প্রিয় গান আমার এটা! জাতিয় কবি নজরুলকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরন করলাম!

ঠিক রাত ১২ টায় কেক কেটে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হোল,ওদের বাসা থেকে ফায়ার ওয়ার্কস দেখা যায়,যেটা আমরা সুন্দর ভাবে উপভোগ করলাম,ফায়ার ওয়ার্কস প্রথমে রাত ৯টায় একবার,যখন শুধু বাচ্চাদের জন্য হ্য় তবে আমরাও দেখেছি আর এখোনো দেখলাম মন ভরে!..বাচ্চাগুলির আনন্দ দেখে মন আরো ভরে গেল আমার….:)

ভাবলাম,খোদার কি অশেষ রহমত! কি সুন্দর করে আজকের দিনটা তিনি আমায় কাটানোর সুজোগ করে দিলেন!তার প্রতি কৃতগ্গতায় আবারও মন ভরে উঠলো আর রবি ঠাকুরের কটা লাইণ মনে পড়ে তার প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে এল,মনে মনে বল্লাম “তোমারি গেহে পালিছ স্নেহে তুমি ধন্য ধন্য হে….”

সবাইকে প্রানভরা শুভেচ্ছা জানিয়ে রওনা হোলাম বাড়ীর দিকে……:D

2011/pdf/98679_shuvo2011_903921659.pdf ( B) 


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment