ফতুল্লায় মধুর সমাপ্তি
৩০৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সবসময়ই কক্ষপথে ছিল মুশফিক বাহিনী। শামসুর রহমান আর নাঈম ইসলামের দৃঢ় ভিত্তির পর নাসির হোসেনের ঠাণ্ডা মাথার ‘ফিনিংশিং’ এ ৪ বল বাকি থাকতেই ৪ উইকেটে জিতে নিউ জিল্যান্ডকে আবার সবগুলো ম্যাচে পরাজয়ের লজ্জায় ফেললো বাংলাদেশ।
ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে রস টেইলরের নবম শতকে শতকে ৫ উইকেটে ৩০৭ রান করে নিউ জিল্যান্ড। জবাবে ৪৯ ওভার ২ বলে ৬ উইকেটে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
জিয়াউর রহমানের সঙ্গে শামসুর রহমানের ৬১ রানের উদ্বোধনী জুটি বাংলাদেশকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেয়। মিচেল ম্যাকেক্লেনাগানের বল এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে থার্ড ম্যানে অ্যাডাম মিল্নের হাতে সিরিজের প্রথমবারের মতো খেলতে নামা জিয়া (২২) ধরা পড়লে ভাঙ্গে ৭ ওভার ৪ বল স্থায়ী জুটি।
দ্বিতীয় উইকেটে মুমিনুল হকের সঙ্গে ৬৫ রানের আরেকটি চমৎকার জুটি উপহার দেন শামসুর। ৩৩ বলে ৪টি চারের সাহায্যে ৩২ রান করে মুমিনুল অ্যারন ডেভসিচের ফিরতি ক্যাচে পরিণত হন।
নাথান ম্যাককালামের পরের ওভারে অধিনায়ক মুশফিকুর রহমান স্কয়ার লেগে টেইলরেকে ক্যাচ দিলেও দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যান শামসুর-নাঈম ইসলাম। নাঈমের সঙ্গে ৭৫ রানের জুটি গড়ে দলকে ৩ উইকেটে ২০৪ রানের দৃঢ় ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে মাঠ ছাড়েন শামসুর।
কোরি অ্যান্ডারসনের বলে উইকেটরক্ষক লুক রঞ্চির গ্লাভসবন্দী হওয়া এই ব্যাটসম্যান মাত্র ৪ রানের জন্য শতক পাননি। ৯৬ রান করা শামসুরের ১০৭ বলের ইনিংসে ৭টি চার ও ৪টি ছক্কা।
নাসির হোসেনের সঙ্গে নাঈমের ৫০ রানের আরেকটি চমৎকার জুটি দলকে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা সপ্তম জয়ের দিকে নিয়ে যায়। ৭৪ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ৬৩ রান করা নাঈম সাজঘরে ফিরেন রান আউট হয়ে।
এরপর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের (১৬) বিদায় স্বাগতিকদের একটু চাপে ফেললেও নাসির হোসেন দলকে স্বস্তির জয় এনে দেন। ৩৯ বলে ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন নাসির।
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান। প্রথম ওয়ানডের ২৬৫ রান ছিল আগের সর্বোচ্চ।
এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জেতার ঘটনা। এর আগে ২০০৯ সালের অগাস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বুলাওয়ায়োতে ৩১৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জেতে বাংলাদেশ।
২০১০ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের চারটির খেলা হয়েছিল। চার ম্যাচেই জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার তিন ম্যাচের সবক’টিতেই জিতল স্বাগতিকদের। এর আগে কেনিয়ার বিপক্ষে দুবার, জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একবার করে সিরিজের সব ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ।
২৬তম ওভারে জীবন পাওয়া টেইলর অপরাজিত থাকেন ১০৭ রানে। ওই ওভারের ব্যাক্তিগত তিন রানে রুবেল হোসেন নিজের বলে টেইলরের ক্যাচ ধরতে পারেননি।
টেইলরের ৯৩ বলের ইনিংসে ৯টি চার ও ৩টি ছক্কা। ছক্কা তিনটি এসেছে অফস্পিনার সোহাগ গাজীর করা ৪৭তম ওভারে পর পর তিন বলে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় শতক পাওয়া টেইলরের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শেষ ১৫ ওভারে ১৪৬ রান তুলে অতিথিরা। লুক রঞ্চির সঙ্গে তার ষষ্ঠ উইকেট অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৩৪ বলে উঠে ৭৫ রান।
এর আগে টম ল্যাথামের সঙ্গে অ্যান্টন ডেভসিচের ৬৬ রানের উদ্বোধনী জুটি নিউ জিল্যান্ডকে ভালো সূচনা এনে দেয়। ল্যাথাম দেখেশুনে খেললেও ডেভসিচ খেলেছেন আক্রমণাত্মক মেজাজে। মাহমুদুল্লাহর বলে শর্ট ফাইন লেগে আব্দুর রাজ্জাকের হাতে ক্যাচ দেয়া ডেভসিচের ৩৮ বলের ইনিংসে ছিল ৮টি চার।
বেশীক্ষণ টেকেননি তিন নম্বর ব্যাটসম্যান গ্রান্ট এলিয়ট (৩)। রাজ্জাকের বলে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তিনি। একশ’ পেরুনোর পর সাজঘরের পথ ধরেন ল্যাথামও। ৭৩ বলে ৪৩ রান করা এই ওপেনারকে রুবেলের বলে গ্লাভসবন্দী করেন মুশফিকুর রহিম।
এরপর সিরিজে প্রথমবারের মতো খেলতে নামা কলিন মানরোর সঙ্গে টেইলরের ১৩০ রানের জুটিতে অতিথিদের বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে উঠে। ৭৭ বলে ৭টি চার ও ২টি ছক্কার সাহায্যে ৮৫ রান করা মানরোকে বিদায় করেন মাহমুদুল্লাহ।
এরপর কোরি অ্যান্ডারসন (১) সোহাগ গাজীর বলে পুল করতে গিয়ে শর্ট থার্ড ম্যানে জিয়াউর রহমানের হাতে ক্যাচ দিলে স্বস্তি ফেরে বাংলাদেশ শিবিরে।
৩৬ রানে ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার মাহমুদুল্লাহ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩০৭/৫ (ডেভসিচ ৪৬, ল্যাথাম ৪৩, এলিয়ট ৩, টেইলর ১০৭*, মানরো ৮৫, অ্যান্ডারসন ১, রঞ্চি ১৩*; মাহমুদুল্লাহ ২/৩৬, রুবেল ১/৩৮, রাজ্জাক ১/৫৭ সোহাগ ১/৬৭)
বাংলাদেশ: ৪৯.২ ওভারে ওভারে ৩০৯/৬ (শামসুর ৯৬, জিয়া ২২, মুমিনুল ৩২, মুশফিকুর ২, নাঈম ৬৩, নাসির ৪৪*, মাহমুদুল্লাহ ১৬, সোহাগ ১১*; ম্যাকক্লেনাগান ২/৬৯, ডেভিসিচ ১/৩৬, নাথান ১/৪৪, কোরি ১/৫৬)
Source: www.bdnews24.com