শেখ হাসিনা সবকিছুতে নাক গলান
ফজলুল বারী: বাংলাদেশে এ অভিযোগটি অনেকের। সবকিছুতে প্রধানমন্ত্রী নাক গলাবেন কেনো? সবকিছুতে প্রধানমন্ত্রীকে নির্দেশ দিতে হবে কেনো? তাহলে তাঁর পারিষদবর্গ তথা মন্ত্রিসভার কাজ কী? বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনেও প্রশ্নটি উঠেছিল। প্রধানমন্ত্রী এর যে জবাব দিয়েছেন এতে অনেকে খামোশ বনে গেছেন। অভিযোগটি আমলে নিয়ে এর জবাব দিয়েছেন শেখ হাসিনা। বলেছেন এটিই তাঁর স্বভাব। কাজের স্টাইল। এটা কেউ তাকে করতে বলেনা। তিনি নিজের থেকেই তাই করেন। শেখ হাসিনা বলেন আমি সরকার প্রধান হিসাবে সবকিছুর দায়দায়িত্বতো আমার। যতোক্ষন জেগে থাকি কাজের মধ্যে থাকি। খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে কৌতুক উচ্চারনে বলেন আসলে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সরকার পরিচালনা দেখে অনেকের অভ্যাস খারাপ হয়ে গেছে।
শেখ হাসিনার কথাগুলো শুনতে শুনতে তাঁর বোন শেখ রেহানার কথা মনে পড়ছিল। গত নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনাকে নিয়ে তৈরি একটা ছবিতে শেখ রেহানা মজার একটি তথ্য দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ধানমন্ডির বত্রিশ নাম্বার বাড়ির যে কক্ষে তাঁর বুবু থাকতেন তারা সেটিকে নাম দিয়েছিলেন, ‘আলসেখানা’! রেহানা যা বলতে চেয়েছেন তাহলো ওই সময়ে শেখ হাসিনা ছিলেন অলস প্রকৃতির। রূমে বসে সারাক্ষন বই পড়তেন। রূম ছেড়ে খুব একটা বেরুতেননা। অনেক সময় সেখানেই তাঁর খাবার দেয়া হতো। অলস লোকজনের যেমন হয় তেমনি তাঁর শয়নকক্ষটি কখনো গোছানো পরিপাটি থাকতোনা।
সেই শেখ হাসিনাই আজ বদলে যাওয়া একজন মানুষ। তিনি সারাক্ষন কাজের মধ্যে থাকেন। সময় পেলে গণভবনের রান্নাঘরেও ঢোকেন! প্রিয়জনের পছন্দের রান্না করেন। ছেলে জয় একবার তাঁর জন্মদিনে মায়ের রান্না করার একটি ছবি দিয়েছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। জয়ের জন্মদিনে ছেলের পছন্দের মোরগ পোলাও রান্না করছিলেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের দাপুটে শাসক। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে এ লেখাকে কেউ আবার তেল তেল মনে করার দরকার নেই। আমি এখন একজন বিদেশি নাগরিকও। বাংলাদেশে ফেরত যাবার কোন পরিকল্পনা নেই। দেশের মানুষের কাছে ভালোবাসা ছাড়া কিছু চাইনা। দেশে কারো কাছে কিছু চাইতেও যাবোনা। বিদেশে আয়-রোজগার করে যতোটা সম্ভব প্রতিমাসে দেশে পাঠাই। এবং সারাক্ষন দেশের সঙ্গেই থাকি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে এ লেখার একটি ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে। আমার অনুজদের ডাক নাম আমার কাছে প্রিয় প্রজন্ম। আমার প্রিয় প্রজন্মদের সব সময় একটা কথা বলি তাহলো, যে কোন কাজকে উপভোগ করার চেষ্টা করবে। তাহলে কখনো ক্লান্তি আসবেনা। যে কাজ তুমি উপভোগ করোনা সে কাজ করবেনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক বছর ধরে অনুসরন করে একটা ধারনা হয়েছে তাহলো তিনি তাঁর কাজকে সব সময় উপভোগ করেন। একজন মানুষ নিজের বিবেকের কাছে সৎ-স্বচ্ছ থাকলেই কিভাবে কথা বলতে পারে এর প্রমান শেখ হাসিনার বডিল্যাঙ্গুয়েজ। ধান্ধাবাজদের বডিল্যাঙ্গুয়েজ ভিন্ন হয়। নিজেকে নিজের বিবেকের কাছে লুকোনো যায় না। কোন না কোনভাবে তা প্রকাশ হয়ে যায়। নিজের বিবেকের কাছে স্বচ্ছ বলেই এখনো এই বয়সে তিনি এমন বিরতিহীন কাজ করে যাচ্ছেন। আপনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচক হতে পারেন। কিন্তু তাঁর পরে যিনি আসবেন তখন বিষয়টি টের পাবেন। তাঁর আগের সরকার প্রধানদের বেলায় তা অনেকে টের পেয়েছেন। স্মৃতি বিশ্বাসঘাতকতা না করলে বিষয়টি মিলিয়ে দেখতে পারেন।
বাবা-মা’র অনেক গুণ পেয়েছেন শেখ হাসিনা। ধানমন্ডির নাম্বার রোডের বাড়িটায় যারা গেছেন তারা একটা কথা নিজের মনের থেকে ভাবতে পারবেন তাহলো, একজন রাষ্ট্রপতি কী করে এ ধরনের একটি সাদামাটা অনিরাপদ বাড়িতে থাকতেন! বঙ্গবন্ধুর অনেক ছবি আছে লুঙ্গি-গেঞ্জি পরা। ওই অবস্থায় তিনি তাঁর বাড়িতে অনেকের সঙ্গে দেখা করতেন। জীবনের বহু বছরতো জেলে জেলেই কাটিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। বেগম মুজিব তখন শুধু সংসার সামলাতেননা। আওয়ামী লীগ নামের বিশাল সংগঠনটাও চালাতেন। জেলখানা থেকে যে সব নির্দেশনা বঙ্গবন্ধু পাঠাতেন সেগুলো ছড়িয়ে দিতেন নেতাকর্মীদের মধ্যে। জেলখানায় বাবা’র সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাঁর নির্দেশনা সমূহ টুকে আনতেন শেখ হাসিনা। তাঁর রাজনীতিতেতো হাত পাকানো সেভাবেই। শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। কিন্তু তাঁর মা ফজিলাতুন্নেসা মুজিবেরতো কোন প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রীও ছিলোনা।
সাংবাদিকতা পেশায় আসার আগে মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় ইতিহাস সংগ্রহে ১৮ মাসে আমি সারা বাংলাদেশ পায়ে হেঁটে ভ্রমন করেছিলাম। সাংবাদিকতা জীবনে কলকাতা ও আগরতলায় দীর্ঘ সময় থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের নানা তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেছি। সেই যুদ্ধের সময় বাঙালি প্রধান শহর দুটোয় যারা বাংলাদেশের জন্যে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন তাদের খুঁজে খুঁজে ইন্টারভ্যু করতাম। কলকাতায় এমন একজন সাংবাদিক ছিলেন রনেন মুখার্জি। যুদ্ধের তথ্য সংগ্রহের জন্যে প্রায় তিনি ছদ্মবেশে বাংলাদেশের ভিতরে ঢুকে যেতেন। এরজন্য রনেন মূখার্জি তখন পত্রিকায় লিখতেন কীর্তিবাস ওঝা ছদ্মনামে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধু যেদিন পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বত্রিশ নাম্বারের বাড়িতে প্রথম ফোন করেন ওই সময়ে বাড়িটায় ছিলেন রনেন মূখার্জি। ফোন ধরে বেগম মুজিব স্বামীকে যা বলেন তা শুনে রনেন মূখার্জি চমকে যান।
বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধুকে বলেন ‘তুমি ডাইরেক্ট ইন্ডিয়া হইয়া দেশে আসবানা। অন্য কোন দেশ হয়ে এরপর ইন্ডিয়া যাইতে পারো। ডাইরেক্ট ইন্ডিয়া হইয়া দেশে আসলে তোমারে তারা ইন্ডিয়ার লোক বলতে পারে।‘ মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু প্রথমে লন্ডনে যান। সেখান থেকে দিল্লী হয়ে দেশে ফেরেন। এ ঘটনাটি উল্লেখ করে রনেন মুখার্জি বেগম মুজিব সম্পর্কে আমাকে বলছিলেন প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রীবিহীন একজন নারী কতোটা প্রজ্ঞাবান হলে ওই পরিস্থিতিতে স্বামীকে এ ধরনের পরামর্শ দিতে পারেন। এরপর রনেন মুখার্জি যে কথাটি বলেন তা আমাদের জন্যে লজ্জার। ভারতীয় সেই সাংবাদিক বলেন ‘সেই বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশের মানুষ প্রো ইন্ডিয়ান বদনাম দিয়ে মেরে ফেললো’!
ভারতে সর্বশেষ যে নির্বাচনে কংগ্রেস ক্ষমতায় ফিরে এসেছিল সেই নির্বাচন কভার করতে আমি দেশটায় গিয়েছিলাম। প্রায় তিন মাস ধরে চষে বেড়িয়েছি সারা ভারত। জনপ্রিয় ভারতীয় নিউজ চ্যানেল এনডিটিভি তখন সোনিয়া গান্ধীর বড়সড় এক সাক্ষাৎকার প্রচার করে। সেই সাক্ষাৎকারে ইন্দিরা গান্ধীর পরিবারের বিদেশিনী বধূ সোনিয়া গান্ধী বলেছিলেন ‘পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে শেখ মুজিব যেদিন আমাদের বাড়িতে আসেন তাঁকে সামনাসামনি দেখা ছিল আমার জীবনের স্মরণীয় একটি স্মৃতি। কারন এমন বড়মাপের একজন নেতাকে সেই প্রথম আমি সামনাসামনি নিজের চোখে দেখি। যার নামে একটি দেশ যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এবার শেখ হাসিনা যখন ভারতে যান, সোনিয়া গান্ধী সহ কংগ্রেস নেতাদের সাক্ষাতের ছবিটা দেখে আমার সেই সাক্ষাৎকারের কথা মনে পড়ে যায়। শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে ধরার ছবি টুইটারে পোষ্ট করতে গিয়ে প্রিয়াংকা গান্ধীও তাঁর অনুপ্রেরনা নিয়ে তেমন একটি কথা লিখেছেন। এই অনুপ্রেরনার নাম শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুকে যে সব সাংবাদিক কাছে থেকে দেখেছেন তাদের গল্প শুনে মন ছুঁয়ে যায়। এমন একজন সাংবাদিক আহমেদ নূরে আলম আমাকে বলেছেন তারা তাদের নানা রিপোর্টিং আইডিয়া বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করতেন। বঙ্গবন্ধু তখন ওই পত্রিকার বার্তা সম্পাদককে ফোন করে রিপোর্টটির সম্ভাব্য শিরোনাম সহ তা সিঙ্গেল কলাম না ডাবল কলাম ছাপতে হবে তাও বলে দিতেন। আজকের যুগের কোন নেতার সঙ্গে কোন সাংবাদিকের এমন সম্পর্ক ভাবা যায়? তখন সাংবাদিকরা বঙ্গবন্ধুর সোর্স হিসাবেও কাজ করতেন। হোটেল পূর্বানীতে পাকিস্তানিরা কি বলেছে তা জানাতে মোটর সাইকেল চালিয়ে ছুটে আসতেন বঙ্গবন্ধু কাছে। স্বাধীনতার পরও ধানমন্ডির বত্রিশ নাম্বার বাড়িতে রাষ্ট্রপতির কাছে ছুটে আসতেন সামরিক অফিসার, সরকারি আমলা থেকে যে কেউ। অনেকে পারিবারিক বিচার সালিশ নিয়েও আসতেন। খালেদা জিয়াতো এভাবেই প্রথম বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে এসেছিলেন। সবার সঙ্গে তাঁর ছিল পিতা আর সন্তানের সম্পর্ক। জাতির পিতা সম্বোধনটিতো তাঁর শুধু আক্ষরিকই ছিলোনা।
নেতাকর্মীদের পরিবার পরিজনের খোঁজ খবরও রাখতেন বেগম মুজিব। মায়ের এই গুণটি শেখ হাসিনাও পেয়েছেন। আওয়ামী লীগ সহ অঙ্গ সংগঠন সমূহের নেতাকর্মীদের অনেকের হাড়ির খবর তিনি জানেন। শাহ এস এম কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া যে আওয়ামী লীগ ছেড়ে গণফোরামে গেছেন এর নেপথ্যেও জড়িত একটি সাংসারিক কাইজ্যা। রেজা কিবরিয়ার স্ত্রী রীনা সুলতানাকে শেখ হাসিনা খুব স্নেহ করতেন। রেজা কিবরিয়ার রীনা সুলতানাকে ডিভোর্স দিয়ে যখন তৃতীয় বিয়ে করেন তখন রীনা যাতে অসহায় হয়ে না পড়েন সে জন্যে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে তাঁর চাকরির ব্যবস্থা করেন। রেজা কিবরিয়া সেই ক্ষোভে বাবার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ছেড়ে যোগ দেন গণফোরামে।
শেখ রেহানার বর্ণনার সেই আলসেখানার শেখ হাসিনার জীবন বদলে দেয় পচাত্তরের ট্র্যাজিক হত্যাকান্ড। একমাত্র ছোট বোন ছাড়া পরিবারের সব সদস্যকে হারিয়ে শুধু নিজের সংসার না, এক পর্যায়ে দলেরও হাল ধরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। দেশে আসার আগে বিলাতের শহরে শহরে ঘুরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করেছেন। দেশে সেই ছিন্নবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগের কথা অনেকে মনে করতে পারেন। জোহরা তাজউদ্দিন, আব্দুল মালেক উকিল প্রমুখ তখন দলের হাল ধরেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে সবাই যেমন মানতেন এদেরতো সবাই সেভাবে মানতেননা। মূলত এদেরকে জব্দ করতেই ড কামালগং দিল্লী থেকে নিয়ে এসে শেখ হাসিনাকে নেতৃত্বে আনার উদ্যোগ নেন। দলের সিনিয়র নেতা কারা কারা তখন এর বিরোধিতা করেন তাতো সবাই জানেন। ড কামালের ধারনা ছিল শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা কম, তাকে তাঁর কব্জায় রাখা যাবে। এই নিয়ত ব্যর্থ হলে তিনি দল ছেড়ে নতুন দল করেন।
মিজানুর রহমান চৌধুরী মই মার্কার আওয়ামী লীগ (মিজান) বানিয়ে পরে যোগ দেন এরশাদের সঙ্গে। আব্দুর রাজ্জাক বানান বাকশাল। কিন্তু এরা ছোট দলের বড় নেতা হতে পারলেও শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের প্যারালাল হতে পারেননি। সিনিয়রদের মধ্যে একমাত্র জিল্লুর রহমান, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ, সাজেদা চৌধুরী কোনদিন তাঁর নেতৃত্বকে ছোট করে দেখার চেষ্টা করেননি। শেখ হাসিনা তাদেরকে যোগ্য সম্মান দিয়েছেন। মিজানুর রহমান চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক এরা আবার দলে ফিরে এসে আওয়ামী লীগ নেতা হিসাবে মৃত্যুবরন করেছেন। সেই থেকে শেখ হাসিনা আজো আওয়ামী লীগের ঐক্যের প্রতীক। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর ছিন্নবিচ্ছিন্ন একটি দলকে টেনেহিঁচড়ে একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন। এর পিছনেও মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে তাঁর টোয়েন্টিফোর সেভেন পরিশ্রমী নেতৃত্ব। এখনও কয়েক ঘন্টা ঘুমের সময় ছাড়া তিনি টোয়েন্টিফোর সেভেনই কাজ করেন।
শেখ হাসিনার দূর্ভাগ্য বঙ্গবন্ধুর যেমন তাজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, কামারুজ্জামানের মতো বিশ্বস্ত একটি টিম ছিল, তাঁর তা নেই। আজ পর্যন্ত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মতো সৎ মানুষ নেতা তিনি দ্বিতীয়জন পাননি। বেশিরভাগই দুর্নীতিবাজ-ধান্ধাবাজ। গত দশ বছরে এরা শেখ হাসিনার নিরলস পরিশ্রমের ওপর ভর করে ক্ষমতায় স্বাদ গ্রহন করেছেন আর একেকজন টাকার কুমির বনেছেন। এদের মধ্যে দলের বর্তমান সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাঁর কাছে মন্দের ভালো। ওবায়দুল কাদেরের শরীর স্বাস্থ্য আগের মতো ভালো নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের পরবর্তি কাউন্সিলে সাধারন সম্পাদক করার মতো দুর্নীতিমুক্ত দ্বিতীয় পছন্দ কেউ তাঁর হাতে নেই। তাঁর হৃদরোগের চিকিৎসার জন্যে শেখ হাসিনা যা করেছেন বাংলাদেশে এর দ্বিতীয় কোন নজির নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলন দেশের বেশিরভাগ সাংবাদিক লাইভ সম্প্রচার করে। এসব সংবাদ সম্মেলনে কিছু সাংবাদিক যে সব তেলবাজি করেন দেশের মানুষ তা পছন্দ করেননা। আমারতো মনে হয় শেখ হাসিনাও এতে বিব্রতবোধ করেন। দেশ-বিদেশের সব খবর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কাছে চলে আসার সব ব্যবস্থা আছে। এরবাইরে তাঁর সামনের টিভির মনিটরগুলোয় সারাক্ষন চলতে থাকে দেশের সব নিউজ চ্যানেলের সংবাদ। এরজন্যে সব সময় সর্বশেষ তথ্যে নানা সময় তিনি আপটুডেট থাকেন। নানাকিছুতে সঙ্গে সঙ্গে তিনি নির্দেশনা দেন। এতে কাজ দ্রুত হয়। বলা যেতে পারে এটি তাঁর দেশ পরিচালনার নিজস্ব স্টাইল। এতে অনেক কর্তৃপক্ষ নানা সময়ে অলস সময় পুরনো অভ্যাসের অলস সময় কাটানোর সুযোগ পায়না। শেখ হাসিনার দেশ পরিচালনার এই স্টাইলের নেগেটিভ পজিটিভ দুটোই আছে। প্রধানমন্ত্রী টোয়েন্টিফোর সেভেন সক্রিয়, এরজন্যে গত দশ বছরে দেশের অবিশ্বাস্য অগ্রগতি ঘটেছে। রাজনৈতিক বিরোধীরাও তাঁর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারেনা। কারন তাদেরকেও নানা ধান্ধা করতে হয়। নেগেটিভ হলো অনেক প্রতিষ্ঠান তাঁর নির্দেশের অপেক্ষায় বসে থাকে।
শেখ হাসিনার এই গতিতে দেশ পরিচালনা বাংলাদেশের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। তাঁর দূর্ভাগ্য তাঁর সমান গতির দ্বিতীয় কেউ এ দলে এখনও সৃষ্টি হয়নি। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর বেশিরভাগ নেতাকর্মী টপ টু বটম দুর্নীতিবাজ-ধান্ধাবাজ। নিজের হাতে বানানো ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারন সম্পাদককে তাঁর নিজের হাতে বাদ দিতে হয়েছে। যুবলীগে তিনি হাত দিয়েছেন। কিন্তু এসব দুর্নীতিবাজ ধান্ধাবাজ নেপথ্যে যারা সৃষ্টি করেছেন এদের তিনি কতোটা ধরতে পারবেন দেশে সে নিয়ে প্রশ্ন আছে। আত্মীয়স্বজনও ছাড়বেননা বলে যে হুশিয়ারি দিয়েছেন। তা কার্যকর করতে গেলে শেখ সেলিমকে শেখ মারুফকে ধরতে হবে। বেয়াইকেও ছাড়তে পারবেননা। দলের অনেক সিনিয়র নেতার গলার স্বর এরমাঝে নেমে গেছে। কারন কারা কি করেছেন তা তারা জানেন। শেখ হাসিনাও জানেন। বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী থেকে শুরু করে জেলা উপজেলার এমপি-জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান-উপজেলা চেয়ারম্যান এমন অনেককেই ধরতে হবে। তাঁর টোয়েন্টিফোর সেভেন পরিশ্রমের সঙ্গে এরা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। নিজের দলের দুর্নীতিবাজদের সাফ করতে পারলে প্রশাসন সহ অন্য দলের দুর্নীতিবাজদেরও তিনি ধরতে পারবেন। বাংলাদেশের টোয়েন্টিফোর সেভেন প্রাইম মিনিস্টার শেখ হাসিনা নিজস্ব উজ্জ্বল সততা নিষ্ঠায় এমন একটি চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে একটি স্ট্যান্ড নিয়ে ফেলেছেন। এখান থেকে তাঁর পিছনে হাঁটার সুযোগ নেই।
Related Articles
Bikrampur International Airport
প্রসঙ্গ পদ্মাসেতুঃ জাতিয় উন্নায়নের বাধার রাজনীতি কখনো কল্লান কর নয় । বিক্রমপুরের বুঁক চিরে দক্ষিন পষিচমাঞ্চলের উন্নায়নের দ্বার খুলে দেবে
সম্রাটের দরবারের সামনে থমকে যাওয়া অভিযান!
ফজলুল বারী: কথা ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান হবে। এ কথা দেয়া হয়েছিল নৌকার নির্বাচনী ইশতেহারে। জিরো টলারেন্স! ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারন সম্পাদকের
সুন্দর উপস্থাপন ♥️