বাদল দিনে বাদল ধারা

ক্যানবেরার ছোট্ট বাঙালি কমিউনিটিতে বেশ কয়জন গুণী কবি- সাহিত্যিক, গীতিকবি, কণ্ঠ শিল্পী, তবলা বাদক আছে। ফেসবুক ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এদের সরব ও নিরব উপস্থিতি দেখা যায়। এদের পরিবেশনা পান্না আর আমি খুব উপভোগ করি। শিল্প সংস্কৃতির সাথে জড়িত মানুষদের আমি ব্যাক্তিগত ভাবে শ্রদ্ধা করি ও তাদের সামনে যতটুকু করি, পিছনে তার বেশি স্তুতিবাদ করি। তার কারন নিজে চেষ্টা করে এই লাইনে কিন্ডীও পাশ করতে পারি নাই, তাই এই লাইনের গ্র্যাজুয়েটদের ঈর্ষা করি ও ভালবাসি।
পেশায় অস্ট্রেলিয়া সরকারের পাবলিক সারভেন্ট, শাহাদত মানিক, যিনি মানিক ভাই নামে পরিচিত- তিনি কবিতা লিখেন, কবিতার বইও ছেপেছেন, এই পর্যন্তই জানতাম। কবিতায় তিনি তাঁর জন্মস্থান চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীকে প্রায়ই টেনে আনেন যা নিয়ে আমি তাঁকে ফোঁড়ন কাটি। তিনি হাসেন। মানুষের সংলাপ- তাঁর এই কবিতার বইটা আমি মাঝে মাঝেই খুলে দেখি। ছোট ও ঝর ঝরে শব্দ- কিন্তু গভীর অর্থবহ। প্রিয় অস্ট্রেলিয়া নামে তাঁর একটা ওয়েব পেজ আছে- সেখানে আমি মাঝে কয়টা লেখা দিয়েছিলাম, কিন্তু আমার মত কুইড়া বেশি লেখা দিতে পারি নাই।
সেদিন দেখি ইউটিউবে মানিক ভাইয়ের লেখা গান। সুর দিয়েছেন ক্যানবেরার আর এক সঙ্গীতজ্ঞ ডাঃ রবিন গুডা। রবিন দার কণ্ঠের গান মানেই উচ্চ মার্গীয়- সামনে বসে শোনার অনুভুতি অন্যরকম। এই বিদেশ বিভূঁইয়ে এতো সংগ্রামের মাঝেও সঙ্গীত তাঁকে ছেড়ে যায় নাই। এর আগেও রাবিন দা গানে সুর দিয়েছেন। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ওপার বাংলার পণ্ডিত তুষার দত্ত, যিনি রবিন দা’র গানের উস্তাদও বটে।
এই গানটা প্রথমবার শোনার পর মনে হচ্ছিল গানটা যে মুড বা রাগে সেট করা- কখনও শুনেছি কিন্তু মনে করতে পারছিলাম না। কয়েক দশক আগে গীটারের উস্তাদ হাবিবুর রহমান রেজার কাছে দরবারি, বিলাবল, ভুপালি- এইসব কিছুদিন শিখেছিলাম- এবং দৌড় ওই অব্দি। তাই এই গানের মুডটা জানতে মানিক ভাইকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন- পিলু। শুনেছি, গানে সিজনাল মুড আনতে এই রাগ খুব জনপ্রিয়। তখন মনে হল হোস্টেলে মাঝে মাঝেই আমি রবি শঙ্করের সেতারের টেপ শুনতাম- অন্য রুমমেটরা লুকিয়ে হাসত। হ্যা, ওইখানে এইরকম সেতার বাদন ছিল- মেনাহেম নামের কারও সাথে। যা ই হোক, আমার ওই অব্দি ব্যাপ্তি। কিন্তু আমি গানের একজন নিবেদিত শ্রোতা- আমার শত্রুও স্বীকার করবে। পান্না আমাকে বলে, গান ভাল লাগে শোন, অত কিছু জানতে চাও ক্যান? আমি বলি, তাহলে একটা গানের সম্পূর্ণটা পাওয়া যায়; অর্ধ প্রাপ্তিতে আমি খুশি হই না।
বাদল দিনে বাদল ধারা
মন মানে না – মন মানে না
মানে না মন তোমাকে ছাড়া
ঝিরি ঝিরি ঝরে বারি
সবুজ পাতার বুকে
কেঁপে ওঠে পুস্প কদম
ভালোবাসায় ঝুঁকে
ভালোবাসার এ অপরূপ
সে তো জানে না
মন মানে না – মন মানে না
মানে না মন তোমাকে ছাড়া
মনের মায়ায় মোদির বারি
অধর ছোয় বাদলে
স্বপন সায়র দোলায় দোলে
মিলিয়ে জলে জলে
বাদল দিনে বরষা বরণ
সে তো জানে না
মন মানে না – মন মানে না
মানে না মন তোমাকে ছাড়া
গীতিকার বর্ষা ঋতু এবং তার প্রিয়াকে একসাথে পেতে চাইছেন, কিন্তু প্রিয়া তা বুঝে না। বাদল দিনে মন মানে না তোমাকে ছাড়া- এই করুণ আর্তিই সুরে সুরে ফুটিয়ে তুলেছেন পণ্ডিত তুষার দত্ত। মন মানে না- এই শব্দ কয়টাকে তিনি কত ভাবে যে গাইলেন ও ঘুরে ফিরে বার বার ওই আকুতি- তোমাকে ছাড়া। গানের শেষাংশে তিনি ফিরে এসেছেন আরও জোড়াল কণ্ঠে তাঁর উস্তাদি কায়দায়- তোমাকে ছাড়া। গানের চিত্রায়ন বা ভিডিও আমার কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে না; তার কারন সঙ্গীত অনুভবের বিষয়। দেখার নয়।
আমি গান শুনি; ভালবাসি তার সুর ও বাণী আর যথার্থ গায়কী।
Related Articles
Islamic State in Iraq and Syria grossly misrepresents peaceful Islam
The so-called Islamic State misrepresents grossly the tenets of Islam as revealed in the Holy Qu’ran. Islamic preaches love, peace,
দৌড়া, বাঘ আইলো!
১. বাংলাদেশ তখনও ওয়ানডে স্ট্যাটাসই পায় নি। চার বছর পরপর অনিয়মিতভাবে কখনো সখনো এশিয়া কাপ খেলার সুযোগ পায়। যাকে বলে
মাতৃভাষা ও হাট্টানগাটি সমাচার
ফেব্রুয়ারী মাস চলছে। ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ আমাদের অর্থাৎ বাংলাভাষীদের আবেগ তাড়িত করে। মনের মাঝে তাগিদ। কিছু করার তাগিদ। অনেক কিছু