দাস প্রথা এবং ইসলাম
সমকালীন সময় কিছু ইসলামিক ধর্মতত্ত্ববীদ, বিশেষ করে প্রাচাত্য শিক্ষায় আলোকিত কিংবা ধর্মান্তরিত নও মুসলিম চিন্তাশীল তত্ববীদ যুক্তি তুলে ধরছেন – দাস প্রথা ইসলামের দৃষ্টি কোন থেকে নৈতিকতা কিংবা যৌক্তিক / অযৌক্তিকতার বিষয় না বরং ঐতিহাসিক ভাবেই প্রথাটা ইসলাম গ্রহন করে নিয়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময় আই এস, ইয়াজেদি সম্প্রদায়ের মহিলাদের গনিমতের মাল বলে যে অনৈতিক আচরনটা করছে সেটাকে আবার যখন ইসলামের আলোকে যৌক্তিক বলার চেষ্টা করছে , তখন পশ্চিমা দুনিয়ায় বিষয়টা আরও বেশী আলোচিত হচ্ছে , এই বলে ইসলাম দাস প্রথাটা প্রাতিষঠানিক ভাবেই মেনে নিয়েছে।
যদি তাই হয় – যে ইসলাম মানবতার ধর্ম , নৈতিকতার ধর্ম , অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ধর্ম , যৌক্তিক অযৌক্তিকতার আলোকে গ্রহন যৌগতার শিক্ষাদেয় , সেই ধর্ম কি করে এত বড় অনৈতিকতা সমর্থন করে?
আর যদি তাই হয় গত ১৫০০ বছর মূল্যবোধের আলোকে নৈতিকতার যে শিক্ষা ইসলাম দিয়েছে তার কি বিরুদ্ধাচারন হচ্ছে না ? ইসলামের অন্যতম মৌলিক শিক্ষা – মানুষ হচ্ছে দুনিয়াতে সৃষ্টি কর্তার খলিফা বা প্রতিনিধি এবং দাস এবং তার কাছেই শুধু মাথানত করবে – এই মূলমন্ত্রেও কি বরখেলার হচ্ছে না ?
সাম্প্রতিক সময়ের ইতিহাসে কিন্তু দাস প্রথার প্রচলনটা ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে ইউরোপ এশিয়া সবখানেই ব্যপক ভাবে মেনে নিয়েছে । আধুনিক গনতন্ত্রও রাজা কিংবা রানীর সামনে মাথা নত করার বহুল প্রচলিত চর্চাটা স্বীকার করে নিচ্ছে । আর মধ্যযুগে এ সবতো ছিলো অনেকটা ‘ফরজ’ কর্ম ।
সমকালীন বহুল আলোচিত ধর্মতত্ত্ববীদ ড: আবু আল ফাইদ এই বিষয়টাকে তার এক সাম্প্রতিক খুতবাতে কোরানের আলোকে তুলে ধরেছেন এবং যারা বলে কোরান দাস প্রথা সমর্থন এবং গ্রহন করে, স্বীকার করেনা এটা কোরানের নৈতিক শিক্ষার চরম বিরোধী , তিনি তাদের এই মতবাদের বিরুদ্ধাচারন করেছেন ।কোরানের যে আয়াতের আলোকে দাস প্রথাকে গ্রহন যোগ্য ফতোয়া দেয়া হচ্ছে, তিনি ঠিক সেই আয়াতের আলোকেই বলছেন , দাস প্রথা ইসলামের নৈতিক শিক্ষার সাথে সাংঘরশিক , এবং ইসলাম মানবিক মূল্যবোধ , সাম্য, ন্যায়বিচারকে তুলে ধরে অন্যদিকে পৌওলিকতাবাদই দাস প্রথা গ্রহন ও সমর্থন করে।
আরও একটু ব্যপক ভাবে চিন্তা করা যেতে পারে , সরল ধর্মই যেমন ইহুদীবাদ , খৃষ্ট ধর্ম কিংবা ইসলাম , হজরত ইব্রাহিম (আ:) এর মাধ্যমে প্রবর্তিত ঐশরিক সকল ধর্ম গুলোই কি দাস প্রথার সমর্থক ? না কি ঐতিহাসিক ভাবেই সময়ের প্রয়োজনে নৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক শিক্ষার আলোকে সমাজ দাস প্রথাকে অনৈতিক বলে দাবি করে?
হজরত ইব্রাহিম (আ:) এর মাধ্যমে প্রবর্তিত সকল ধর্মের অন্যতম নৈতিক মূলমন্ত্র – মানুষ সৃষ্টিকর্তার দাস এবং সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কারো কাছেই মাথা নত না করা। তাহলে দাস প্রথা কোন আলোকে ধর্ম সম্মত ?
মূলত সুরা নাহল, আয়াত ৭৫ এব ৭৬ , এই দুটি আঁয়াতের আলোকে দাস প্রথাকে ইসলাম সম্মত বলে বলা হচ্ছে –
আয়াত ৭৫, অনুবাদ –
‘ আল্লাহ একটি দৃষ্টান্ত বর্ননা করছেন , অপরের মালিকানাধীন গোলামের যে কোন কিছুর উপর শক্তি রাখেনা এবং এমন একজন যাকে আমি নিজের পক্ষ থেকে চমৎকার রুযী দিয়েছি । অতএব সে তা থেকে ব্যয় করে গোপনে এবং প্রকাশে । উভয়ে কি সমান? ‘
আয়াত ৭৬, অনুবাদ –
‘ আল্লাহ আরেকটি দৃষ্টান্ত বর্নানা করছেন , দু ব্যক্তির একজন বোবা, কোন কাজ করতে পারেনা । সে মালিকের উপর বোঝা। যেদিকে তাকে পাঠায় , কোন সঠিক কাজ করে আসে না । সে কি সমান হবে ঐ ব্যক্তির , যে ন্যয় বিচারের আদেশ করে এবং সরল পথ কায়েম রয়েছে ।’
মধ্যযুগের ধর্মতত্ত্ববীদরা যদিও নৈতিক ও যৌক্তিক শিক্ষার আলোকে দাস প্রথার বিরুদ্ধাচারন করেনি তথাপি এই ব্যবস্হাটাকে যৌক্তিক বলেও গ্রহন যোগ্যতা দেননি । অন্যদিকে সমকালীন প্রাচ্য শিক্ষায় আলোকিত এবং নও মুসলিম তত্ববীদরা দাস প্রথাটাকেই ইসলামের আলোকে প্রাতিষঠানিক
গ্রহন যোগ্যতা দেয়ার চেষ্টা করছে – যা মহান ইসলামের নৈতিক ও যৌক্তিক শিক্ষার পুরোপুরি বিরোধী।
ড: আবু আল ফাইদ, সুরা নাহল এর আয়াত ৭৫ এবং ৭৬ এর ব্যাখ্যা দিচ্ছেন নৈতিকতার আলোকে । উভয় আয়াতে আল্লাহ দুই জোড়া মানুষকে উদাহরণ হিসাবে সামনে আনছেন । প্রথম জোড়ায় আছে একজন যার কোন স্বাধীনতা নাই , কোন কিছুর উপর ক্ষমতাও রাখেনা যাকে ড: ফাইদ বলছেন পৌওলিকতাবাদের প্রতিরুপ , আর অন্য জন স্বাধীনচেতা , যে মানব কল্যান করে গোপনে এবং প্রকাশে যা মহান ধর্ম ইসলামের অন্যতম নৈতিক শিক্ষা ।
দ্বিতীয় আয়াতটা সম্পর্কেও তিনি বলছেন – প্রথম জন পৌওলিকতার দাস আর আন্যজন আছে সিরাতুল মোস্তাকিমে। । মুলত এই দুই আয়াত বলছে – আমাদের কি হওয়া উচিত , কি হওয়া উচিত না । অন্যভাবে বললে – ইসলামের আলোর কাছে , পৌওলিকতার আলো বা শিক্ষার অবস্হান কোথায় মহান সৃষ্টিকর্তা তাই বলেছেন । বলছেন – পৌওলিকতা হচ্ছ দাস , যার কোন স্বাধীনতা নাই , অন্যদিকে ইসলাম হচ্ছ সিরাতুল মোস্তাকিমের পথ ।
বলছেন – ব্যয় করো, দান করো, থাকো সরল এবং সঠিক পথে , পৌওলিকতাবাদের মত গোলাম, বোবা , বোঝা হওনা , যা কিনা দাসের সমতুল্য ।
ড: ফাইদ বলছেন – সমাজ যখন নৈতিকতা এবং যৌক্তিকতার শিক্ষা থেকে দুরে সরে যায় তখন একই আয়াতের ভিন্ন ব্যথ্যাও করা যায় ।দুই মুসলিম কোরানের একই আয়াত পড়ে বলছে – দাস ব্যবস্হা পৌওলিকতার সমতুল্য , যা মহান ইসলামের নৈতিক ও যৌক্তিক শিক্ষার চরম বিরোধী, অন্যদিকে আরেক জন বলছে – ইসলাম দাস প্রথার প্রতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিচ্ছ ।উদাহরণ হিসাবে ড: ফাইদ , ইব্রাহিম (আ:) এর ছাত্র ইবনে আজকের ঘটনা বলছেন, যেখানে ইব্রাহিম (আ) , ইবনে আজরকে পাঠিয়েছিলেন – হজরত লুত (আ:) খবর নিতে । ইবনে আজর তার গাধা নিয়ে হজরত লুত (আ:) এর খোজে বেড়িয়ে পরলেন , নতুন শহরে এসে গাধাটা বাজারের এক পাশে বেঁধে রেখে আশে পাশে খোজ করে ফিডে এসে দেখেন , গাধাটা চুরি হয়ে গেছে । ইবনে আজর লোক জনের কাছে খোঁজ করে গাধা চোরের খবর নিয়ে , তাকে পাকরাও করে বিচারকের কাছে হাজির করে বিচার দাবী করলে , বিচারক চোরের কাছে জানতে চাইলে , চোর বললো – মহামান্য বিচারক আমি বিষয়টা একটু ভিন্ন ভাবে দেখি । আমি হেটে যাচ্ছিলাম , দেখলাম গাধাটা বেঁধে রাখা হয়েছে , কোন খাবার দেয়া হয় নাই , না খেতে পেয়ে কাতর হয়ে আছে , ভাবলাম একে নিয়ে যাই , যত্ন আওি করি , মালিক ফিরে এলে , খাবার ও যত্নআওি বাবদ কিছু টাকা আমাকে দিলে , গাধাটা ওঁকে দিয়ে দিব। মহামান্য আদালত আমার যে চুরির নিয়ত ছিলো তার তো কোন প্রমান নাই ।
বলাবাহুল্য , বিচারক চোরের পক্ষেই রায় দিয়েছিলেন , এ হচ্ছ সেই সমাজের উদাহরণ যে সমাজ নৈতিকতা এবং যৌক্তিকতার শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হয় । সুতরাং নৈতিক ইসলাম কখনই দাস প্রথার সমর্থক হতে পারেনা ।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে – কোরানের ব্যখ্যা প্রথম দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ( সাহাবা, তাবেইন এবং তাবে তাবেইন ) প্রজন্ম চেয়ে ভিন্ন ভাবে , সমকালীন সমস্যার আলোকে নতুন ভাবে কতটুকু করা যাবে?
খালেদ আবু আল ফাইদ , Professor of Law UCLA, এর শুক্রবার এর খুতবার ছায়ার আলোকে ।
Related Articles
মহানবীর (দঃ) বংশধররা থাকেন কায়রোয়
ফজলুল বারী: আরবদের মাঝে কায়রোর নাম কাহেরা। যেমন মিশরীয়দের নাম মাশরি। আমার কাছ থেকে দেখা প্রথম এই আরব জাতিটি নিয়ে
Islamic Calendar – It is all about the Moon, Babe
Like the birth of a new baby the moon is born to dawn a new Islamic month. But without education
The Methodology of the Salafus Saalih (the Rightly-Guided Predecessors) by Brother Abul Ehsan (2.20 hours Video)
The lecture “The Methodology of the Salafus Saalih”(the Pious or Rightly-Guided Predecessors) by Brother Abul Ehsan, reminds people that both