আশুরার তাৎপর্য এবং সমকালীন ইসলাম

আজ পবিত্র আশুরা, মহরমের ১০ তারিখ আশুরা নামে পরিচিত। চন্দ্র বর্ষের প্রথম মাস মহরম । সৃষ্টির শুরু থেকে মহরমের ১০ তারিখ , তথা আশুরার দিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে , তাই আশুরা মর্যাদাশালী এবং সম্মানিত ।
এই দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হজরত আদম (আ) কে সৃষ্টি করেছেন। এইদিন নুর (আ) এর নৌকা তুরস্কের জুদি নামক পর্বতে গিয়ে থামে , হজরত ইব্রাহিম (আ) জালিম বাদশা নমরুদের অগ্নিকুনড থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন, হজরত ইউনুস (আ) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন , হজরত আইয়ুব (আ) রোগ মুক্তি লাভ করেছিলেন, হজরত সুলায়মান (আ) তার হারানো রাজত্ব ফিরে পান, হজরত ইয়াকুব (আ) তার হারানো পুত্র হজরত ইউসুফ(আ) কে ৪০ বছর পর ফিরে পান , হজরত ঈসা (আ) জন্মগ্রহন করেন এবং ওইদিনই তাকে আকাশে তুলে নেয়া হয় , হজরত মুসা (আ) সিনাই পাহাড়ে তাওরাত লাভ করেন এবং ওইদিনই তিনি তার অনুসারি বনি ইসরাইলিদের ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্ত করেন এবং ফেরাউনের সলিল সমাধি ঘটে , এই জন্যও এই দিনটা ইহুদিদের কাছেও পবিত্র। হিজরতের পর মদিনায় এসে রাসুলুললাহ (সা) সাহাবিদের নির্দেশ দিলেন- ‘ তোমরা ইহুদিদের থেকে ব্যতিক্রম করো, আশুরার একদিন আগে বা একদিন পরেও রোজা রাখো। ( মুসনাদে ইমাম আহমদ ইবনে হামবল রহ.)
আশুরার পবিত্র এই দিন আরও এক ঐতিহাসিক ঘটনা – ৬৮০ খৃি কারবালার হৃদয়বিদারক , মর্মান্তিক এবং শোকাহত ঘটনা যা মুসলমানদের ইতিহাসের এক বিবর্তনের সুচনা । হজরত মুআবিয়া (রা.) র মৃত্যুর পর ৬৮০ খৃি এপ্রিল মাসে ইয়াজিদ মসনদে আরহন করলে মককা, মদিনা, কুফাসহ বহু এলাকার সাহাবি এবং জনগন তাকে খলিফা হিসাবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। তিনি মুনাফিক ও ইহুদিদের সহযোগি হয়ে উঠেন । কুফার জনগন হজরত হোসাইকে খলিফা হিসাবে দেখতে চান, তারা শত শত চিঠি লেখে তাকে কুফায় এসে খলিফা ঘোষনার জন্য আমন্ত্রণ ও দাবি জানায়।
মহানবী (সা) এর ওফাতের অর্ধ শতাব্দী পর ৬১ হিজরি ১০ মহরম শুক্রবার এক অসম যুদ্ধে হজরত হোসাইন (রা) শাহাদাতবরন করেন । মৃত্যুর আগে হজরত হোসাইন (রা) কুফাবাশীর উদ্দেশে যে ভাষন দিয়েছিলেন তার মর্ম ছিলো – যে শাসক অত্যাচার করে, আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লংঘন করে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ভংগ করে , সুন্নতে নববীর বিরোধিতা করে , অন্যায় ভাবে শক্তি ব্যবহার করে মানুষের উপর শাসন করে , তার এই অবস্তা দেখেশুনেও যে ব্যক্তি কথাও কাজে এর প্রতিবাদ করেনা , আল্লাহ তার পরিনাম ভালো করবেন না ( আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আষ্টম খন্ড , ইমাম মুহাম্মদ ইবনে কাসির রাহ ) বিংশ শতাব্দিতে আমরা দেখি ইসলামের এক নতুন রুপ । আশুরার মর্ম বানী আজ সুদুর পরাহত। আন্যায়ের প্রতিবাদতো দুরের তথাকথিত আলেমরা জালিম শাসকের গুন গানে ব্যস্ত । ইসলাম ছিলো এক বিপ্লব , অনাচারের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম , মেধা মননের চর্চা , সমাজের সর্ব ক্ষেত্রে সাম্যের জয়গান। আর আজ দুই ধরনের ইসলাম। ওহাবিবাদ কিংবা সালাফিবাদের এক নতুন সংকরন। নামাজ পড় আর কিছু শরিয়তি আইন মেনে চলো , ইমামদের অনুসরন কর , রাষ্ট্রের ব্যপারে নাক গলাবা না আর সুফি দর্শনের নামে আরেক ধারা বলে – সব আল্লাহর ইচ্ছা , সবর কর ।
আর তাই ইসলাম আজ আর সেই সব বিপ্লবী জন্মদেয় না , জন্ম দিচ্ছে কিছু মোশাহেবের। এই আশুরার হোক জেগে উঠার অনুপ্রেরন।
Related Articles
Ebarer Shongram… Kintu Mukti Kothy?
এবারের সংগ্রাম… কিন্তু মুক্তি কোথায়?জাতির জনক ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ডাক দিয়েছিলেন আন্দোলনের। বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। কিন্তু
বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮
আমাদের সময় ছিল মোহামেডান – আবাহনী। কত দিনরাত গেছে শুধু নিজ ক্লাবের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরতে। ফুটবল নিয়ে ইটা ইটি, মারামারি,
সাদা কথা-পরিচয় সংকট
সাদা কথা-পরিচয় সংকট ১৯২৪ সাল মার্চ ৩, তুরস্কের জাতীয় সংসদ খেলাফত বিলুপ্তি ঘোষনা করে আইন পাশ করলো । যার পরিপেক্ষিতে