মুজিব : একটি জাতির রূপকার – আমার অনুধাবন

মুজিব : একটি জাতির রূপকার – আমার অনুধাবন

গতকাল সুদূর অস্ট্রেলিয়াতে বসে আমরা উপভোগ করলাম ভারতের খ্যাতিমান পরিচালক শ্যাম বেনেগালের – মুজিব : একটি জাতির রূপকার।
সিনেমায় বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ। শেখ হাসিনা চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ফারিয়া এবং বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের চরিত্রে নুসরাত ইমরোজ তিশা।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যায় , খায়রুল আলম সবুজ (লুৎফর রহমান), দিলারা জামান (সাহেরা খাতুন), সায়েম সামাদ (সৈয়দ নজরুল ইসলাম), শহীদুল আলম সাচ্চু (এ কে ফজলুল হক), প্রার্থনা দীঘি (ছোট রেনু), রাইসুল ইসলাম আসাদ (আবদুল হামিদ খান ভাসানী), গাজী রাকায়েত (আবদুল হামিদ), তৌকীর আহমেদ (সোহরাওয়ার্দী), সিয়াম আহমেদ (শওকত মিয়া), মিশা সওদাগর (জেনারেল আইয়ুব খান), এলিনা (বেগম খালেদা জিয়া) ও জায়েদ খান (টিক্কা খান)।

প্রথমেই বলতে হয় এটি একটি অসাধারণ সিনেমা হয়েছে। আরেফিন শুভ যে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন তাতে আমি মুগ্ধ। তিনি অন্য সব চরিত্রকে ম্লান করে দিয়েছেন। বোঝাই যায় তিনি মুজিবকে ধারণ করবার জন্য পরিশ্রম করেছেন এবং এটি তার এখন পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ কাজ। একজন পরিচালকের প্রতিভা কিভাবে একজন সামান্য অভিনেতাকে দিয়ে অসামান্য অভিনয় করিয়ে একটি চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলা যায় এই সিনেমা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিয়ে মুভি শুরু হয়। তাজউদ্দীন আহমদসহ ন্যাশনাল লিডাররা গণমানুষদের সাথে নিয়ে এয়ারপোর্টেই তাদের প্রাণপ্রিয় মুজিব ভাইকে সংবর্ধনা দেন। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া তাজউদ্দীন আহমদকে যতটা হাইলাইটেড করা দরকার ছিল চলচ্চিত্রে আমরা তেমনটা দেখি না। বস্তুত আল বদর, রাজাকারদের সাধারণ ক্ষমা, বাকশাল গঠন; ইত্যাকার নানাবিধ কারণে বঙ্গবন্ধুর ছায়াসঙ্গী তাজউদ্দীন আহমদের সাথে মুজিবের দূরত্ব তৈরি হয়। পঁচাত্তর ট্রাজেডির এটাও একটা কারণ। সেই বিষয়গুলো সিনেমাতে উহ্য রাখা হয়েছে। কার্যত তাজউদ্দীন আহমদ ও বঙ্গবন্ধুর যে রাজনৈতিক রসায়ন সেটি আমরা চলচ্চিত্রে দেখলাম না। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তাজউদ্দীনের নেতৃত্বে যেভাবে যুদ্ধ সংগঠিত হয় তাও অনুপস্তিত। পরিচালক হয়তো শুধু মুজিবকেই হাইলাইট করতে চেয়েছেন।

পঁচাত্তর ডেকে আনায় খন্দকারের মোশতাকের সাথে দেশি-বিদেশি চক্রান্তের রূপরেখা মুভিতে নেই। খন্দকার মুশতাক এবং তাহেরউদ্দিন ঠাকুর এর সঙ্গে নির্বাক জিয়ার প্রতিমূর্তি দেখানো কি খুব জরুরি ছিলো?

মুভিতে রিয়েলিস্টিক শট হিসেবে মুক্তিযুদ্ধকালীন ভারতে যাওয়া বাঙালি শরণার্থী, মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার এবং মিত্রবাহিনীর কাছে হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের অরিজিনাল ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুকে পাঠ করলে যে কেউ অনুধাবন করবেন, তিনি কেবল রাজনৈতিক কবিই নন, মানুষ ও ভূমির অনন্য কথাকারও ছিলেন বটে। তাঁর রচিত জীবনী, রোজনামচা, চিঠিপত্র ও বক্তৃতামালার প্রতিটি বাক্য, সংলাপ বা অনুচ্ছেদই যেন এক একটি মহাকাব্য। তার যে বিশাল ব্যক্তিত্ব তা যথার্ত ফুটে উঠেছে সিনেমায়।

রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে হয়তো শেখ মুজিবের অনেক ভুলত্রুটি ছিলো, কিন্তু তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং জ্ঞানের ফসল আজকের বাংলাদেশ তা আপনি স্বীকার করেন বা নাই করেন। আমার কেন যেন মনে হয় শেখ মুজিব এমন এক জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন যার জন্য তারা প্রস্তুত ছিলেন না, হয়তো এখনো না। পৃথিবীর অনেক দেশ আজও বহু বছর যুদ্ধ করছে তাদের স্বাধীনতার জন্য। তাদের একজন মুজিব থাকলে হয়তো চিত্র ভিন্ন হত।

পরিশেষে Bongoz Films Australia এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ সুদূর অস্ট্রেলিয়াতে বসে এমন একটি অসাধারণ সিনেমা উপভোগ করবার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।


Place your ads here!

Related Articles

RIP Syeda Nirupama Hossain

Sherele Moody: 33-year-old Syeda Nirupama Hossain was stabbed to death on Easter Sunday in Minto. Her children – aged six

প্রিয় মানুষের শহর – ৭

[প্রিয় মানুষের শহর] প্রতি ভিজিটে ১০ সেন্ট! যতবার যাবেন – তত বারই ১০ সেন্ট করে চলে যায় ব‌্যাংক একাউন্টে! বিষয়

অবিন্যাস্ত

এক ভোর রাতে নিজের অস্তিত্বের ব্যবচ্ছেদ করতে করতে শেষ পর্যন্ত যেটায় উপনীত হলাম, তা হল, এই হিসেবি ঘেরাটোপের, আর হিপোক্রেসিতে

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment