১৯৭১ সেই সব দিন – একটি পর্যালোচনা

১৯৭১ সেইসব দিন’ বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছে অগাস্ট মাসে। অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা শহরে BongOz Films এর বদৌলতে আমরা গত রবিবার এই সিনেমাটি উপভোগ করলাম। প্রথমেই BongOz Films কে ধন্যবাদ আমাদের এই সুযোগ করে দেয়ার জন্য।
সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে প্রয়াত নন্দিত অভিনেতা ও নাট্যকার ড. ইনামুল হকের গল্প অবলম্বনে। এটি পরিচালনা করেছেন তারই বড় মেয়ে অভিনেত্রী ও নির্মাতা হৃদি হক। ১৯৭১ সেই সব দিন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত একটি বাংলাদেশী রোমান্টিক নাট্য চলচ্চিত্র। প্রধন চরিত্রে আছেন ফেরদৌস আহমেদ, সজল নূর, লিটু আনাম, সানজিদা প্রীতি, সাজু খাদেম, হৃদি হক। সংগীত পরিচালনা করেছেন কলকাতার দেবজ্যোতি মিশ্র।
একাত্তরের সেই উত্তাল সময়ে তৎকালীন ঢাকা শহরের শান্তিবাগ এলাকার ১৭ নাম্বার বাড়িতে থাকা একটি যৌথ ফ্যামিলির মানুষের গল্প নিয়েই এই সিনেমা। সাথে পাশের বাড়ির একটি হিন্দু পরিবারও গুরুত্ব পেয়েছে গল্পে। ১৭ নাম্বার বাড়ির তিন ছেলে তাদের স্ত্রীরা দেশকে নিয়ে ভাবে ভিন্নভাবে। স্বাধীনতার পক্ষে-বিপক্ষে তাদের যুক্তিও আছে। তবে একটা সময় সেইসব কিছু ছাপিয়ে জীবন বাঁচানোই যখন মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায় সাথে দেশ স্বাধীনের জন্য সবকিছু তুচ্ছ করে যুদ্ধে নাম লেখানো সবই এসেছে বিশ্বাসযোগ্যভাবে। চিত্রায়ন এবং অভিনয়ে অবশ্যই মুন্সিয়ানার ছাপ ছিলো। অসাধারণ শ্রুতিমধুর বেশকিছু গানের দেখা ও শুনতে পারার অভিজ্ঞতা হয়েছে এই সিনেমায়, বিশেষ করে ‘যাচ্ছো কোথায়’
এইবার আসি এই সিনেমার কিছু অংশে যা আমার কাছে কিছুটা খারাপ লেগেছে। প্রথমেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিলো একটি রাজনৈতিক যুদ্ধ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে এই জনযুদ্ধ সংগঠিত হয়। কোথাও এর উল্লেখ নেই। মনে হয় সবাই বিচ্ছিন্ন ভাবে যুদ্ধ করছে কারো নেতৃত্বে নয়।
সিনেমায় ২৫শে মার্চ সন্ধ্যায় “রক্ত করবী” নাটকটির মহড়ায় শিল্পীরা গাইছে সেই বিখ্যাত গান -“”শোনো একটি মুজিবরের থেকে”I এটি শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে দ্বিতীয় গান যা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় ভারত ও বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়।গানটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। আধুনিক এই সঙ্গীতের শিল্পী ও সুরকার ছিলেন অংশুমান রায়। গানটির গীতিকার ছিলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার যা লিখা হয় ১৩ই এপ্রিল এবং ২২ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে আকাশবাণী কলকাতায় প্রথম সম্প্রচারিত হয়। কিভাবে গানটি ২৫শে মার্চ তারিখে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে একদল শিল্পী গাইছে তা আমার বোধগম্য নয়।আমাদের জাতীয় ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম অধ্যায় হলো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। এই মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্মলাভ করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্থায়িত্বকাল যদিও ছিলো নয় মাস কিন্তু এর জন্য আমাদের ত্যাগ কিন্তু কম নয়। যুদ্ধ চলাকালে শহীদ হয়েছেন প্রায় ৩০ লক্ষ, প্রায় আড়াই লক্ষ নারী পাকিস্তান সেনাবাহিনী আর তাদের পদলেহী বিশ্বাসঘাতক দেশদ্রোহীদের নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। যুদ্ধের সময় প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিতে হয়েছিল অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি, এই এক কোটি মানুষ দেশত্যাগ না করলে তাদের প্রত্যেককেই হয়ত এই দেশে হত্যা করা হতো। আমরা যে এমন এক ভয়াবহ সময় পার করেছিলাম ১৯৭১ এ তা এই সিনেমায় আমি পাইনি।
আমাদের শ্রেষ্ঠতম অধ্যায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। আমরা এমনি এক দুর্ভাগা জাতি, এই মহান অধ্যায় নিয়ে এখন প্রচুর বিতর্ক। এই বিষয়ে সমস্ত বাঙালি যেখানে এক হওয়ার কথা আমরা সেখানে নিজেদের ফায়দা লুটতে বিভিন্ন শিবিরে বিভক্ত। এই সব দেখে দুঃখ লাগে। এইভাবে চলতে থাকলে পরবর্তী প্রজন্ম ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, এর ভয়াবহতা, আত্মত্যাগ কিছুই জানবে না, স্রেফ এটিকে একটি বিচ্ছিন্ন গন্ডগোল হিসেবে জানবে।
পরিশেষে বলতে চাই, ১৯৭১ – সেই সব দিন একটি পরিচ্ছন্ন এবং উপভোগ্য সিনেমা। এর নির্মাতা এবং কলাকুশলী সবাই ধন্যবাদ প্রাপ্য। সুদূর অস্ট্রেলিয়াতে বসে বাংলাদেশের এই সিনেমাটি আমাদের উপভোগ করতে দেয়ার জন্য BongOz Films এর সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
Related Articles
Saving the rice of Bangladesh from extinction; it is 11th hour
From the foothills of the Himalayas to the shores of Sundarbans and the beaches of Teknaaf is situated one of
যে কারনে নির্বাচন করছেন না সাকিব
ফজলুল বারী: শুক্রবার (৯ নভেম্বর) খবর পাই বাংলাদেশের চলমান ক্রিকেট লিজেন্ড মাশরাফি বিন মর্তুজার আওয়ামী লীগে যোগদান আর নড়াইল-২ আসন
মা, চোখ বন্ধ করিস না!
ভেবেছিলাম নুসরাতকে নিয়ে কিছু লিখবো না। লিখতে গেলে – আবার সেই অসহ্য ব্যাপার গুলি চোখের সামনে চলে আসবে। আমি নিতে