বহে যায় দিন – দিন চলে যায়, সবই বদলায়

বহে যায় দিন – দিন চলে যায়, সবই বদলায়

> বহে-যায়-দিন সকল প্রকাশিত পর্ব >

।। এক ।। দিন চলে যায়, সবই বদলায় (২০০৬ প্রকাশিত ধারাবাহিকের পুনঃ প্রকাশ)

সকাল বেলার পর আসে অলস দুপুর। সেই দুপুরও ক্রমশ গড়িয়ে যায় বিকেলের দিকে । তারপর গোধূলির শেষ আলোটুকু মুছে তরতর করে নেমে আসে সন্ধ্যা। একসময় সারা পৃথিবীটাই ঢাকা পড়ে নিস্তব্ধ রাত্রির গাঢ় অন্ধকারের গভীরে । অতঃপর আবার সেই সোনালী সকাল । এমন করেই দিন আসে, দিন চলে যায় । এক একটা দিন মিশে যায় আরেকটা দিনের সাথে । তারপর মাস ও বছর – এই ভাবে আসে, এই ভাবে যায় । এক সময় হারিয়ে যায় অতীতের গভীর অতলে । তাছাড়া সময় সবার জন্য একই তালে চলে না । যার যার জীবনের গতির সাথে মিলিয়ে চলে। আর এই সময়ের সঙ্গে বদলে যায় মানুষের রুচি এবং চাহিদা ।

আমার এই ক্যানবেরার বাইশ বছর জীবনে পৃথিবীতে অনেক রদবদল হয়েছে, ঘটেছে নানান ঘটনা। বিশাল সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে তৈরী হয়েছে ছোটো ছোটো স্বাধীন রাষ্ট্র, বার্লিন প্রাচীর ভেঙ্গে দুই জার্মানী এক হয়ে গেছে, আটাশ বছর জেলের অন্ধকার থেকে নেলসন মেন্ডেলা বেরিয়ে এসেছে খোলা হাওয়ায়, গুড়িয়ে গেছে ন্যুইয়র্কের টুইন টাওয়ার, কাবুলের রাস্তা বোমার আঘাতে হয়েছে চূর্ণ-বিচূর্ণ, বুলডোজারের আঘাতে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে বাগদাদের সড়কে সাদ্দামের বিশাল ‘স্ট্যাচ’, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সুনামির প্রচন্ড ঢেউয়ে ভেসে গেছে হাজার হাজার জীবন । সাম্প্রতিক কালে ডেনমার্কের একটা পত্রিকায় নবী করীম (সাঃ)-এর বেশ কিছু ব্যঙ্গচিত্র ছাপিয়ে সারা বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের ভেতর ক্ষোভ-বিক্ষোভ আর প্রতিবাদের ঝড় তুলে দিয়েছে । আরো কতো কি ঘটনা ।

বাংলাদেশেও অনেক কিছু ঘটেছে এই বাইশ বছরে। এই সময়ের মধ্যে ঘটেছে বার কয়েক রাজনৈতিক পরিবর্তন । হাল-আমলে সারা বাংলাদেশ জুড়ে ‘পপ কর্ন’-য়ের মতো জঙ্গিরা বোমা ফাটিয়েছে দিন-দুপুরে এবং নিহত হয়েছে বেশ কিছু নিরীহ মানুষ । অবশেষে সম্প্রতি দু’জন শীর্ষস্থানীয় জঙ্গি নেতা ধরাও পড়েছে । অরাজকতা আর রাহাজানি বেড়েছে হু হু করে । অনিয়ম এবং দূর্নীতির বিষবাস্প ছেয়ে গেছে সমস্ত অফিস-আদালত, যেমন করে কল-কারখানার কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে থাকে বাতাসের মধ্যে । ঢাকা শহরের পুরোনো অভিজাত এলাকায় বাড়ী-ঘর ভেঙ্গে তৈরী হয়েছে মাল্টিস্টোরিড এপার্টমেন্ট । তার সাথে পাল্লা দিয়ে এখানে সেখানে গড়ে উঠেছে আলিশান সপিং সেন্টার। রাস্তায় জানজট বেড়েছে কয়েক গুণ । ফলে শব্দ-দূষণ এবং বায়ু দূষণ বেড়েছে অনেক। পথচারীরা প্রতিনিয়ত এই দূষণের মুখোমুখি হচ্ছে । আর প্রতিটি মুহূর্তে নিঃশ্বাসের সঙ্গে বুকের ভেতর টেনে নিচ্ছে নানান রোগ-জীবানু ।

তা ছাড়া ভেজালে দেশটা ছেয়ে গেছে, যে রকম আষাঢ়ের কালো মেঘে ছেয়ে যায় নীল আকাশ । তার ওপর ইদানীং স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের বদৌলতে খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে সমাজের চেহারা, নাগরিক জীবনযাপন। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকা শহর ছাড়াও দেশের অন্যান্য সব জায়গায় সমাজের উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্তদের মাঝে আশঙ্কাজনকভাবে ডিভোর্সের ঘটনা বাড়ছে । অন্যদিকে তথ্য-প্রযুক্তির বান-ভাসিতে এখন প্রায় সবাই, বিশেষ করে তরুণ সমাজ, ভেসে যাচ্ছে নিত্য-নতুন দিগ-দিগন্তে । পশ্চিমা শিল্প-সংস্কৃতির হাওয়ায় গা ভাসিয়ে সবাই ভুলতে বসেছে হাজার বছরের নিজেদের আপন সংস্কৃতি আর বৃষ্টি । সারা দেশব্যাপী তরুণ সমাজ ‘ভালোবাসা দিবস’ (ভেলেনটাইনস্ ডে) নিয়ে মেতে উঠেছে দ্বিগুণ উৎসাহে । ঢাকার বিভিন্ন দৈনিক পত্র-পত্রিকা এবং সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনে এ নিয়ে বিশেষ সংখাও বের করছে। আবার অনেকেই ‘মা-দিবস’ (মাদার্স ডে) কিংবা ‘বাবা-দিবস” (ফাদার্স ডে) পালন করছে সগৌরবে । অথচ অনেকেই আছেন যারা মা-বাবার প্রতি দারুণ উদাসীন । নিজেদের সংসারে বুড়ো-বুড়ি বাবা-মার ঠাঁই নেই । উচ্চবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত সংসারে একান্নবর্তী পরিবারের ‘কনসেপ্ট’ হারিয়ে গেছে আধুনিকতার যান্ত্রিকতায় । আর্থিক সহযোগিতা তো দূরের কথা, এমন কি অনেকে আছে যারা বয়স্ক মা-বাবার খোঁজ-খবরও নেয় না । শুধু নিজেদের নিয়ে মহা ব্যস্ত । আরো, আরো অনেক কিছু ।

সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আমরাও বদলে গিয়েছি, এখনও যাচ্ছি এবং আগামীতেও বদলে যাবো । এটাই নিয়ম । এই নিয়ম ভাঙার সাধ্য আমাদের নেই, জানা নেই কোনো স্বচ্ছ উপায় । কিছু কিছু মানুষ আছে, যারা অতি সহজেই এই পরিবর্তনকে মেনে নেয়, আবার অনেকের মেনে নিতে সময় লাগে । অন্যদিকে অনেকে আবার কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না । ক্যারোলিন শোয়েডারের কোটেশন উদ্ধৃতি দিয়ে শেষ করছি এই পর্ব, ‘Some people change when they see the light, others when they feel the heat’.
(চলবে)


Tags assigned to this article:
বহে যায় দিন

Place your ads here!

Related Articles

‘দেবী’ নারীশক্তি নয় অত্যাচারিতের অভ্যুদয়

বাংলাদেশের সিনেমা ‘দেবী’ একটি নিটোল নির্মান । কাহিনী কিংবদন্তী লেখক হুমায়ূন আহমেদের । এই সিনেমাতে সুচারু দৃশ্যপরম্পরা, আবহ সৃষ্টিতে শব্দ

ভাষা সংগ্রামীদের শ্রদ্ধা জানাল ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল।

আমরা ছাড়া কে পেরেছে মায়ের ভাষাকে এমন করে ভালবাসতে। আমরা ছাড়া কে পেরেছে ভাষার জন্য প্রাণ বিলিয়ে দিতে। মাতৃভাষার মর্যাদা

টনি এ্যাবটের অস্ট্রেলিয়া

টনি এ্যাবটের অস্ট্রেলিয়া শুধু মাত্র আনুষ্ঠানিক শপথ বাকি, তারপরই লিবারেল পার্টির প্রধান টনি এ্যাবট অস্ট্রেলিয়ার ২৮ তম প্রধানমন্ত্রী। সর্বশেষ হিসাব

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment