নাজিম উদ্দিনরাই এই সময়ের হিরো
ফজলুল বারী: গ্রামের রাস্তায় আগে একটা দৃশ্য প্রায় দেখা যেতো। এখন সেটি দেখা যায় কীনা জানিনা। তাহলো, এক ভিক্ষুক আরেক ভিক্ষুককে ভিক্ষা দেন! আমার ধারনা এর পিছনে কিছু বিষয় কাজ করে। সহানভূতি, সহমর্মিতা এবং পরষ্পরের সঙ্গে শেয়ার করা। শেরপুরের ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনের ঘটনা এক সময় আমার গ্রামে দেখা দৃশ্য আবার মনে করিয়ে দিয়েছে।
নিজের ঘর ঠিক করার জন্যে অনেক দিনে দশ হাজার টাকা জমিয়েছিলেন এই ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন। কিন্তু দেশের এই পরিস্থিতিতে তার মনে হলো নিজের ঘর মেরামতের চাইতে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো বেশি জরুরি।
তাই শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদের কাছে সেই দশ হাজার টাকা তুলে দিয়েছিলেন নাজিম উদ্দিন নামের ভিক্ষুক পরিচয়ের একজন মহামানব।
একজন ভিক্ষুকের এমন মহানুভবতার গল্প সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে তা নজরে আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। দেশের এমন দরিদ্রদের খুঁজে খুঁজে বাড়ি করে দেবার একটি প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর আছে।
দলের নেতাদেরও তিনি প্রায় এমন লোকজনকে খুঁজে দিতে বলেন। বারবার করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীতে দেশে কোন গৃহহীন মানুষ তিনি রাখবেননা।
কিন্তু শেখ হাসিনার দলের সব নেতাকর্মীতো তাঁর মতো ভালো মানুষ নয়। বা এমন গণসম্পৃক্ত নয় বলে এমন একজন নাজিম উদ্দিনকে এতোদিন তারা খুঁজে পায়নি। অতঃপর নিজের কাজই সন্ধান দিয়েছে এমন একজন নাজিম উদ্দিনের।
প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে নির্দেশ এসেছে বসতবাড়ি সহ নাজিম উদ্দিনের ঘর পাকা করে দিতে হবে। উপজেলা প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। করোনার এই নানান খারাপ সময়ে এটি একটি ভালো খবর। ভিক্ষুক পরিচয়ের নাজিম উদ্দিনরাই আমাদের এই সময়ের হিরো।
বাংলাদেশে করোনার বিরুদ্ধে সংগ্রামের এই সময়ে এলাকায় এলাকায় পুলিশ-স্থানয় প্রশাসনের লোকজনের ভালো কাজগুলো মানুষকে সাহসী করছে। এক কর্মকর্তার লেখা এমন একটি ঘটনা আপনার চোখ ভেজাবে। এমন এক কর্মকর্তা লিখেছেনঃ
“বাজার খালি করছিলাম। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান বাদে কোন দোকান খোলা, কে অপ্রয়োজনীয় কাজে বাইরে বের হয়েছে তদারকি করছিলাম।
হাঁটতে হাঁটতে বাজারের কোণায় এই বৃদ্ধ লোক আর তার মেয়েটার দিকে চোখ পড়ল। হাতে দু তিনটা কাগজ নিয়ে ছোটাছুটি করছেন। ত্রাণের জন্য ফর্ম পূরণ করবেন, কাকে দিয়ে করাবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।
কাছে গেলাম।
কি হয়েছে চাচা?
কিছুনা বাবা, এই কাগজটা লিখতি হবে। পাশের ছোট্ট চায়ের দোকানটা আমার। ওর মধ্যেই থাকি আমি। বন্ধ দোকান। কিছু নেই খাওয়ার। খাইনা। পেটে ক্ষুধা।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওইসময়ই তাকে উপহার খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হলো।
ঘটনাটা এখানে শেষ হতে পারত।
পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
ওনার দোকানের মধ্য থেকে ৭-৮ টা কলা নিয়ে আসলেন। বললেন, বাবা, কিছু মনে করো না। তোমাদের মুখ শুকায় গেছে। অনেকক্ষণ কিছু খাওনি হয়ত। এই কলা কয়টা খাও।
জোর করে হাতে হাতে একটা করে কলা গুঁজে দিলেন।
আমার সঙ্গের এক কনস্টেবল এর চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো দেখলাম।
আমার চোখ লাল হয়ে গেলো। জড়ায় ধরতে মন চাইলো লোকটাকে। পারলাম না।
পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষটাকে আজ উপহার দিলাম।
আর পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষটার কাছ থেকে আজ জীবনের সবচেয়ে বড় উপহারটা পেলাম আমি।
একটা কলা। হাজার কোটি টাকা দাম এর!
– চোখ ঝাপসা করে দেবার মত এই ঘটনাটার সাক্ষী গোপালগঞ্জের এসিস্ট্যান্ট কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সালাহউদ্দিন দীপুর ফেসবুকের লেখাটি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।
করোনার সময়ে বাংলাদেশের নানা নেগেটিভের পাশাপাশি এমন পজিটিভগুলোও উঠে আসছে। শেখ হাসিনা তাঁর দলের লোকজনকে চেনেন। বাংলাদেশের রাজনীতির লোকজনকে চেনেন। বাংলাদেশের পন্ডিতদের চেনেন। এরজন্যে দেখবেন সব কাজ মূলত করাচ্ছেন প্রশাসনের লোকজন দিয়েই। তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সময় কাটাচ্ছেন ঘন্টার পর ঘন্টা।
এ নিয়ে অনেক সমালোচনাও আছে। আমলারাই যদি সব কাজ করবে তাহলে রাজনীতিকদের কাজ কী। রাজনীতিক আগের এখনকার রাজনীতিকে বিস্তর পার্থক্য। কেউ যদি রাস্তায় থাকে তাকে কেউ ফেরাতে সরাতে পারেনা।
আমাকে একদিন একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বললেন তার এলাকার একজন উপজেলা চেয়ারম্যান নিজের টাকায় অনেক লোকের বাড়িতে ত্রান পৌঁছে দিয়েছেন। ছাত্রলীগ ছেলেমেয়েদের এ কাজে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করেছেন।
আমাকে কিছু ছবি পাঠিয়ে বললেন আমার নাম উল্লেখ না করে একটা পোষ্ট দেন। উৎসাহ পেয়ে এই লোক ত্রান আরও বাড়িয়ে দেবে। তাই হয়েছে।
কাজেই কিছু চাউল চোরের খবরই সারা বাংলাদেশের সম্পূর্ন চিত্র নয়। চাউল চোর আগেও ছিল এখনও আছে। অনেকে এসবের আশাতেও খরচাপাতি করে জনপ্রতিনিধি হয়।
আগের সঙ্গে এখনকার পার্থক্য আগে এমন নিউজ হতোনা। ফেসবুক ছিলোনা। এখন যে যেখানে ধরা পড়ছে মিডিয়া ট্রায়ালেই গোষ্ঠীশুদ্ধ সে শেষ। আর কোনদিন জনপ্রতিনিধি হতে পারবেনা।
এখন যে সময় যত মানুষের হাতে কাজ নেই প্রশাসনের নেতৃত্বে এভাবে বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে না দিলে এতোক্ষনে অনাহারে অনেক মৃ্ত্যুর পেতেন। এখন বাংলাদেশে অনাহারে মরা কঠিন। সরকারি বেসরকারি যে যেভাবে পারছে মানুষের জন্যে কাজ করে। সিডনি বসে পার্বত্য চট্টগ্রামের এক নেত্রী শুধু সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে দূর্গম এলাকার পাহাড়িদের বাড়ি বাড়ি যেভাবে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন তা চোখের সামনে দেখি বলে আশা হারাইনা। বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের এই দূর্যোগে রোগের পাশাপাশি অভাব তাড়ানোর সংগ্রামটা বড়।
Related Articles
হাসান আজিজুল হকের সাক্ষাৎকার ও সাহিত্য, সিনেমা নিয়ে কিছু কথা
সাক্ষাৎকার দীর্ঘ তবে শিরোনাম অবান্তর এবং উদ্দেশ্যমূলক। সাহিত্যের অতলস্পর্শী অনুভূতি সিনেমাতে ধারন বোধহয় বা প্রায় অসম্ভব। তাই গ্যাবো(গ্যাব্রিয়েল মার্কেজ) তার
বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে এডিলেডে মানববন্ধন
বাংলাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে, এডেলেড সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় প্রতিবাদ র্যালি এবং মানববন্ধন করেছে ‘বাংলাদেশ পূজা ও কালচারাল সোসাইটি অব
অনেকের ভীড়ে একজন
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রিক্সায় যেতে যেতে হঠাৎ পাশে থাকা বন্ধু চিৎকার করে উঠলো, হুয়াক্কা হুয়া! সব দাঁত বের করে, দাঁড়িয়ে উঠে,