অস্ট্রেলিয়ায় রোজা শুরু হয়েছে শুক্র-শনি দুই দিনে
ফজলুল বারী: দুনিয়ার মুসলমানদের যে ঐক্য নেই অস্ট্রেলিয়ার মুসলমানরাও এর বাইরে নয়। ২০১৬ সালের আদম শুমারি অনুসারে অস্ট্রেলিয়ায় মুসলমানের সংখ্যা ৬ লাখ ৪ হাজার ২ শ জন। কিন্তু এই অল্প সংখ্যক মুসলমানও এদেশে একসঙ্গে রাজা শুরু ঈদ করতে পারেননা।
সে কারনে এবারেও অস্ট্রেলিয়ায় রোজা শুরু হয়েছে শুক্র-শনি দুই দিনে। করোনার কারনে এদেশের সব মসজিদ এখন তালাবদ্ধ। তাই এবার কোন মসজিদেই তারাবির নামাজ হচ্ছেনা। পাঞ্জেগানা ও জুম্মার নামাজও কয়েক সপ্তাহ ধরে বন্ধ আছে।
অস্ট্রেলিয়ার মুসলমানদের মধ্যে আরব মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই আরবদের মধ্যে আবার সংখ্যাগরিষ্ঠ লেবানিজরা। এরা চল্লিশের দশক থেকে প্রথম অস্ট্রেলিয়ায় আসতে শুরু করে। মুসলিমদের নেতা হিসাবে চিহ্নিত একজন গ্র্যান্ড মুফতিও এদেশে আছেন। তিনিও লেবানিজ অস্ট্রেলিয়ান।
রোহিঙ্গা থেকে শুরু করে পৃথিবীর যত দেশে মুসলমান আছেন, এর প্রায় সব দেশের মুসলমান আছেন অস্ট্রেলিয়ায়। গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে মুসলিম দেশগুলোতেই যুদ্ধ-বিগ্রহ বেশি হয়েছে বা এখনও হচ্ছে। তেমন আশ্রয়হীন মুসলমানদের আশ্রয় দিয়েছে মানবিক অস্ট্রেলিয়া।
কাদিয়ানি, বাহাই বা দূরুজ এমন নানান মত পথের মুসলমানদের বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর মতো অমুক মুসলমান না, নিষিদ্ধ করতে হবে এমন দাবিও অস্ট্রেলিয়ায় করার কোন সুযোগ নেই। কারন যার ধর্ম তার কাছে রাষ্ট্রের কী বলার আছে।
সিডনির লাকেম্বার ওয়ানজি রোডের বড় মসজিদকে বলা হয় অস্ট্রেলিয়ার মুসলমানদের হেড কোয়ার্টার। পুলিশ থেকে অনুমতি নিয়ে প্রতি বছর দুই ঈদে এই মসজিদের সামনের রাস্তায় ঈদের জামাতও অনুষ্ঠিত হয়। অস্ট্রেলিয়ার আর কোথাও এভাবে রাস্তা বন্ধ করে রাস্তার ওপর নামাজ হয়না।
লাকেম্বার ওয়ানজি রোডের এই বড় মসজিদটিও লেবানিজ মুসলমান তথা আরবদের নিয়ন্ত্রনে। এই আরব মুসলমানরা সৌদি আরবকে অনুসরন করে রোজা শুরু করেন। ঈদ করেন। সে কারনে তারা এখনই বলে দিতে পারেন ঈদ কবে।
সৌদি আরবে এবার শুক্রবার রোজা শুরু হয়েছে। তাদের অনুসরনে অস্ট্রেলিয়ার আরব মুসলমানরাও রোজা শুরু করেছে শুক্রবার। তাদের সঙ্গে অনেক বাংলাদেশিও শুক্রবার রোজা রাখতে শুরু করেছেন।
তবে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান থেকে আসা মুসলমানদের বড় অংশ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে শনিবার থেকে রোজা রাখছেন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এই পক্ষ রোজা শুরু বা ঈদের দিন ঠিক করেন। মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ না থাকায় অস্ট্রেলিয়ায় ঈদের ছুটিও নেই।
শুক্রবার বাংলাদেশি মুসল্লিদের পক্ষে টেক্সট ম্যাসেজের মাধ্যমে যার যার কন্ট্রাক্টে জানিয়ে দেয়া হয় অস্ট্রেলিয়ার কোথাও শুক্রবার রোজার চাঁদ দেখা যায়নি। তাই রোজা এখানে শনিবার শুরু হয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে থাকেন বাংলাদেশের অনারারী কন্সাল জেনারেল প্রকৌশলী শফিকুর রহমান অনু। সেখান থেকে তিনিও টেক্সট করে জানান শুক্রবার নিউজিল্যান্ডে রোজার চাঁদ দেখা যায়নি। তাই সেখানেও শনিবার থেকে রোজা শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য বাংলাদেশের মতো জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মতো দেশে নেই। সে কারনে কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ টেক্সট বা অনলাইনের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে এসব সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। বাংলাদেশের যে নেতারা টেক্সটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত জানান তারা মূলত তবলিগ জামাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
তবে অস্ট্রেলিয়ার আর সবার মতো মুসলমানরা রাষ্ট্রের সব আইন মেনে চলেন। সে কারনে করোনা ভাইরাসের সংক্রমনকে কেন্দ্র করে সরকারি সিদ্ধান্তের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে সব মসজিদেও তালা দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এর বাইরে কেউ কোন আলগা দরদ দেখানোর চেষ্টা করেননি। এদেশে সেই সুযোগ কারও নেই। সবাই এখানে কাজ করে খায়।
রোজায় মুসলিম এলাকার সুপারমার্কেটগুলোয় খেজুর-ছোলা সহ নানান পন্যের নতুন চালান এসেছে। উল্লেখ্য অস্ট্রেলিয়ার সুপার মার্কেটগুলোয় রোজা-ক্রিসমাস উপলক্ষে পন্যের দাম বাড়েনা। কম লাভে বেশি বিক্রি এদের নীতি।
আরব মাংসের দোকানগুলোতে রোজা উপলক্ষে বিশেষ সেল চলছে। যেমন আমি তেমন একটি দোকান থেকে পাঁচ কেজি গরুর মাংস কিনেছি ৪৫ ডলারে। হরিনের মাংস কিনেছি কেজি ১৩ ডলারে। ৫৫ ডলারে কিনেছি ৫ কেজি ওজনের খেজুরের বাক্স। সুপার মার্কেটে খুচরা খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১২ ডলার কেজি।
সিডনির লাকেম্বার বাংলাদেশি দোকানগুলোয় জিলাপি সহ বাংলাদেশি ইফতারি সামগ্রী যা যা পাওয়া যায় এর সবই পাওয়া যায়। সেমাই-লাচ্চা থেকে শুরু করে রুহু আফজার শরবত পর্যন্ত। বাংলাদেশের প্রধান সব ব্রান্ডের পন্য এদেশে আমদানি হয়ে আসে। তবে অন্য রোজায় বাংলাদেশী দোকানগুলোর সামনে যেমন জিলাপি সহ নানান ইফতারি সামগ্রী তৈরি-বিক্রির ব্যবস্থা ছিলো, করোনার কারনে এবার সে সুযোগ নেই।
সামাজিক দূরত্ব কড়াকড়িভাবে মানার কারনেই এদেশের করোনা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রনে চলে এসেছে। সামাজিক দূরত্ব আইনের বাধ্যবাধকতার কারনে এবার লাকেম্বায় আরবদের কাবাবের দোকানগুলো বসানোরও অনুমতি মিলেনি। সেই দোকানগুলোর কারনে প্রতি রোজার রাতে লাকেম্বা উৎসবের রূপ নিতো। এবার তা নেই। কারন এখন করোনা মহামারী থেকে সবাইকে রক্ষার সময়।
রোজায়ও এদেশে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকে। এখন অবশ্য করোনার কারনে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী এখন বাড়িতে বসে অনলাইনে ক্লাস করছেন। বেশিরভাগ অফিস চলছে বাড়িতে থেকে অনলাইনে। এসব প্রতিষ্ঠানের মুসলমান কর্মীদের জন্যে এবার অন্যরকম একটি রোজা এসেছে।
যাদের কাজ আছে তারা সকাল বা বিকালের শিফট ধরে রোজা রেখে শুকনো মুখে ছুটছেন কাজের উদ্দেশে। এমনিতে প্রতি বছর রোজায় মসজিদগুলোতে ফ্রি ইফতার-সেহেরি খাওয়ানোর ব্যবস্থা থাকতো। এবারতো মসজিদই বন্ধ।
করোনায় কাজ হারানো বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীদের লাকেম্বার একটি রেষ্টুরেন্টের মাধ্যমে খাবার সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছেন একদল মানবিক মানুষ। রোজায়ও তাদের খাবার বিতরনের উদ্যোগটি চালু আছে।
শীত শুরু হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়। এরকারনে প্রতিটি দিনের আয়তন কমছে। রাত বড় হচ্ছে। শনিবার প্রথম রোজার ইফতার হয়েছে বিকেল ৫ টা ২৫ মিনিটে। আগের সকালে ৪ টা ৫২ মিনিটে সেহেরির সময় শেষ হয়। মে মাসের ২৩ তারিখে ৩০ রোজা হলে সেদিন সকাল ৫ টা ১০ মিনিটে সেহেরির সময় শেষ হবে। ইফতার হবে সেদিন বিকেল ৫ টা ২ মিনিটে।
শীত শুরু হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়। এরকারনে প্রতিটি দিনের আয়তন কমছে। রাত বড় হচ্ছে। শনিবার প্রথম রোজার ইফতার হয়েছে বিকেল ৫ টা ২৫ মিনিটে। আগের সকালে ৪ টা ৫২ মিনিটে সেহেরির সময় শেষ হয়। মে মাসের ২৩ তারিখে ৩০ রোজা হলে সেদিন সকাল ৫ টা ১০ মিনিটে সেহেরির সময় শেষ হবে। ইফতার হবে সেদিন বিকেল ৫ টা ২ মিনিটে।
Related Articles
Sheikh Hasina's Speech
Prime Minister Sheikh Hasina on 18th October proposed forming an all-party election-time government to oversee the next general election “We
Amendment of the Bangladesh Constitution
Following the August 29, 2005 High Court verdict that declared the fifth constitutional amendment illegal, the Appellate Division of the
আসুন নিজেকে প্রশ্ন করি – যা করছি তা কি ধর্ম সম্মত ? কোন পথ বেছে নেবো ?
২৭ শে রোজা শেষ না হতেই ঈদের ঘোষনা ,বিচিত্র আমাদের ধর্ম চর্চা ,এই শহরের গুনী মানুষ গুলো ছাগলের তিন নাম্বার
The story has written focussing on Sydney, not entire Australia