করোনা, একটি বদনা ও স্বপ্নকন্যা

সেদিন কাজ থেকে একটু আগে বাড়ী ফিরে এলাম । সাধারণত আমার ছোট মেয়ে আমার সাড়া পেয়ে উর্দ্ধশ্বাসে ছুটে এসে আমায় আলিঙ্গন করে। আজ ছিল ব্যতিক্রম আজকে একটু গম্ভীর মুখে সে বলল বাবা “সোশাল ডিসটেনছিং” COVID virus time.
গোছলের পর সারাদিনের ক্লান্তি শেষে দুমোঠ ভাত নিয়ে সবে বসেছি যখন ফোনটা বেজে উঠল। আমার সেক্রেটারি তার বিস্ময় ভরা কণ্ঠ- সার্জারি থেকে কে যেন সব টয়লেট পেপার চুরি করে নিয়ে গেছে। আমার মাথায় বাজ। এই দুর্দিনে যখন চারিদিকে টয়লেট পেপারের জন্য মাতম, তখন টয়লেট পেপার কোথায় পাবো? সার্জারিতেতো রুগীদের আমার এক বুদ্ধিমান়্ বন্ধুর মত টয়লেট পেপার রিসাইকেল শুরু করার নোটিশ দেয়া যাবেনা।
খাওয়া সেরে সোনার হরিণের খোঁজে বেড়িয়ে গেলাম। সাংবাদপত্র আর খবরের কল্যাণে জেনেগেছি ওলওয়রথ, কোলস এখন রনক্ষেত্র, টয়লেট পেপার পাওয়ার চাইতে লটারী পাওয়া অনেক সহজ। ভাবলাম ব্রিসবেনে কসকোতে চলে যাই, বাসা থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার। এক কাপ কফি খেয়ে রওনা হয়ে গেলাম। নির্জন মটরওয়ে, ক্লান্ত দেহ, ঘুমঘুম চোখ, গাড়ি বারবার লেন থেকে অসাবধানতায় সরে যেতে উদ্যত, আর আমি টয়লেট পেপার পাবার আশায় শহর পেরিয়ে ভিন্ন শহরে রাতের অন্ধকারে অভিযানেবেরিয়েছি। রাত ৮ টা ৩০ ব্রিসবেনে যখন পৌঁছালাম কসকো তখনো খোলা। কিন্তু একি। দোকানের সামনে ছোট্ট একটা বোর্ডে চকদিয়ে ক্লান্ত হাতে লেখা “No toilet paper or hand sanitizer”
বিমর্ষ হয়ে স্টোরে থেকে ফিরছি আর ভাবছি একটা বদনা কিনে নেব কিনা। কিন্ত সমস্যা হল এদেশের লোকজন বদনার ব্যবহার কত টুকোইবা জানে। আবার না তৃষ্ণার্ত নাগরিক এ থেকে জল পান শুরু করে। মাথায় হঠাৎ একটা আইডিয়া এলো। দেয়ালে ছোট্ট টিভিতে শৌচাগারে বাদনার ব্যবহার পদ্ধতির উপর একটা ডেমো ভিডিও দেয়া যেতে পারে। ওয়েবসাইটে সার্জারির সব ভিডিওতেই এতদিন secretary রা প্রচণ্ড উৎসাহে অংশগ্রহণ করেছে কিন্ত বাদনার ভিডিওতে স্বেচ্ছা সৈনিক পাওয়া সহজ হবেনা। নায়ক হবার সাধ প্রায়ই হয় তাইবলে বদনার নায়ক হবার সাধ আমারও আপাতত নেই।
ফেইসবুকএ খুলে দেখলাম রাজনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক , বিজ্ঞানী চিকিৎসকসহ সবার করনা ভাইরাসের চিকিৎসা নিয়ে বিশেষজ্ঞর অভিমত।
এক প্রফেসর যিনি দেখতে যেমন ইম্প্রেসিভ কথায়ও তত চমৎকার, জানালেন ২৩ ডিগ্রির উপরের তাপমাত্রাতে দম বন্ধ হয়ে করনা ভাইরাস মরে যায়। ভাইরাস মারার জন্য তিনি নতুন যে পদ্ধতি উদ্ভাবন করলেন তার নাম “তাপ চিকিৎসা”। হেয়ার ড্রায়ারের উষ্ণ বাতাস নাশিকা রন্ধ দিয়ে প্রবাহে মাত্র ১০ মিনিটেই ভাইরাস নিধন করা সম্ভব।
ভাবছি মানব দেহের তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি তে করনা কি ভাবে বাঁচে আর বংশ ছড়ায়। এটাও ভাবছি গোল্ড কোস্টর মত উষ্ণ আবহাওয়া তে করনা ভাইরাস কি ভাবে রোগ ছড়ায়।
দুদিন থেকে পেটের ভেতর গুড় গুড় করছে, রাতে শুরু হলো উদরাময়। অন্ত্রে ভাইরাস ঢুকেছে। জীবনে ইউরিন রিটেনসন এর জন্য জল চিকিৎসা দেখেছি, Clostridium difficile কোলাইতিস এর জন্য মল চিকিৎসা দেখেছি।এবার নাহয় অন্ত্রে রোগের জন্য তাপ চিকিৎসা চেষ্টা করা যাক।
গভীর রাত সবাই ঘুমন্ত। চারিদিকে শব্দ নেই।একপা দুপা করে বাথরুম এ গেলাম। স্ত্রীর হেয়ার ড্রায়ার চুরি করে অন্ত্রে তাপ চিকিৎসা শুরু করলাম। শব্দ পেয়ে আমার স্ত্রী আমার অজান্তে উঠে এসে আমাকে অবাক বিস্ময়ে দেখছে। আমি ভয়াতুর হয়ে বললাম-ভীষণ শীত।
পরদিন আমার স্ত্রী হঠাৎ তার মর্নিংওয়াক শেষে বাড়ি ফেরে খুব উত্তেজিত হয়ে জানাল থানকুনি পাতার সন্ধান পেয়েছে। ফেইসবুকের মাধ্যমে কাল সে জেনেছে থানকুনি পাতা কভিড ভাইরাসের চিকিৎসায় মহা ঔষধ। আমার দায়িত্ব হলো তুলে আনা।
সন্ধ্যায় বের হলাম। অলসেন আভেনুএ বাড়ির পাশে পার্ক। হাতের ডান পাশে দশমিটার যাবার পর, পাম ট্রির নীচে -উরেকা- পেয়ে গেছি। কিন্তু আমার প্রতিবেশী কেভিন তার কুকুর ছানা নিয়ে সন্ধ্যা ভ্রমনে বেরিয়েছে। তার সামনে থানকুনি পাতা তুলতে একটু দ্বিধা হচ্ছে। সে একটু আড়ালে গেলেই কাজটা সেরে ফেলবো। সাধারনত কেভিন খুব গম্ভীর, কথা খুব কম বলে। আজ ব্যতিক্রম। সোসাল আইসোলেসনে বোধ হয় বোরড। দুনিয়ার যত গল্প, ক্রিকেট, আবহাওয়া, আরও কত কি!
হঠাৎ কেভনের স্ত্রী বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো, ডাক পড়েছে তার।
যখন ভাবলাম – বাঁচা গেলো, ঠিক তখনই কুকুর ছানাটি পেছনের ডান পা উপরে তোলে থানকুনি পাতার উপর জল বর্ষণ করে দিলো।
প্রতিবেশীর সন্তান তুল্য কুকুরছানার মূত্র স্নাত থানকুনি পাতা আর বাড়ি নেয়া আলো না।
কাল ভোরে আবার কাজে যেতে হবে । রাত অনেক হয়েছে। এখন নিদ্রার সময়। আমি তখন গভীর ঘুমে।
স্বপ্নের পৃথিবীতে স্বপ্ন কন্যা এলো মমির মত সারাদেহ টয়লেট পেপারের জড়িয়ে। আমি বললাম – আমায় একটু টয়লেট পেপার দেবে?
স্বপ্ন কন্যা কাছে এসে ফিসফিস করে বলল – নাও।
আমি ভয়ে ভয়ে এক পাশ ধরে টয়লেট পেপার টানতে থাকলাম আর স্বপ্ন কন্যা ঘুরে ঘুরে কাছে আসতে লাগলো।
হঠাৎ আমার স্ত্রীর কিঞ্চিত বিরক্ত কণ্ঠস্বরে ঘুম ভাঙল- শাড়ির আঁচল ধরে টানছ কেন?
তাড়াতাড়ি চোক কচলাতে কচলাতে টয়লেটে ছুটে আমার প্রিয় বদনাটা জড়িয়ে ধরলাম।
লেখক:
Assoc.Prof Atifur Rahman
MBBS FRACP FCANZ
Interventional Cardiologist
Australia

Dr Atifur Rahman Zarin
Associate Professor MBBS FRACP FCANZ Interventional Cardiologist GC Heart & Specialist Centre
Related Articles
Role of Climatic and Environmental Laboratory in Teaching Architecture
Architecture is said to be the art and science of creating shelters. Creation of shelters, however, initiated long before architecture
Test_Page
Test form Test Page Test Page
Fifth Annual Social Business Day in Dhaka: The theme is “We are job-givers”
Nobel Laureate Professor Yunus organises Annual Global Social Business Summit which will be held from 27 – 28 November 2014
Nice and attractive…splash of easiness in this covid era
বহু বছর পরে তোমার আর একটি মন্ত্রমুগ্ধ লেখা প ড়লাম। তোমার সেই লেখাটি ছিল বরিশাল মেডিকেল কলেজের পঁচিশ বছর পুর্তি উপলক্ষে নিজস্ব স্মৃতি চারন।তারপরে তুমি হারিয়ে গেলে, করোনা তোমাকে খুঁজে বের করে আমার হাতে দিয়ে গ্যালো যেমনটি তোমার এক বন্ধু নব্বুইতে তোমার লেখাটি আমার হাতে পৌঁছে দিয়ে গ্যালো। কিন্তু এবার সে বন্ধু নয়, শত্রু বশে।তবে অনেক সময় বোকা বন্ধুর চেয়ে বুদ্ধিমান শত্রু উত্তম। করোনা বিশ্বকে অনেক কিছু শিখিয়েছে যারা শিখতে চায়।উন্নত বিশ্বে মানুষ কিভাবে নিজ গৃহে পাছা পরিষ্কার রাখার জন্য বেসুমার টয়লেট পেপার হোর্ডিং করল অন্য মানুষের পাছার তোয়াক্কা না করে।
বেশ ভাল লাগল তোমার লেখাটি, চমক আছে, মেজাজ আছে। অন্তহীন শুভ কামনা। আকবর ভাই।
Dear Akbar Vai. Thank you for kind words. I feel humbled.
At the end of the article if you click “More articles by Dr Atifur Rahman Zarin”, you will find couple of my past articles.
Stay well and safe.
Kind regards
Zerin
এটা কি লিখেছিস! অসম্ভব সুন্দর একটা লেখা। অনেক অনেক দিন পরে একটা দারুণ রম্য রচনা পড়লাম।
টেক কেয়ার। অভিনন্দন দোস্ত।
Very nice Zarin vai
সঙ্গীত প্রতিভা জানা ছিল কিন্তু সাহিত্য প্রতিভা – ধন্যবাদ COVID19, একজন সাহিত্যিক উপহার দেয়ার জন্য.
জেরীন,
উপভোগ করলাম তোমার বদনার কাহিনি। সপ্ন ভনগের পরে যে বদনাটা জড়িয়ে ধরলে তার পরের কাহিনিটা কিন্ত জানতে বড্ড ইচ্ছে করছে।
তা হয়ে যাকনা দিতিও পর্ব ?