স্বাধীনতার ঘোষক – মহান মুক্তিযুদ্ধ

স্বাধীনতার ঘোষক – মহান মুক্তিযুদ্ধ

আজকে বাংলাদেশের অনেককেই দেখলাম স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার দুষ্টচক্রে প্রেসিডেন্ট হওয়া ও পরে নির্মমভাবে নিহত হওয়া জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে বলছেন!

আমরা যখন স্কুলে পড়তাম তখনও এইরকম একটা তথ্য ছিল আমাদের স্কুলের বই এ! সেই যে বই পড়ে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে জিয়াউর রহমান কে জেনেছেন তারপর আর নিজে সেই তথ্য যাচাই করেননি আপনারা। আপনাদের দোষ দিয়ে কি লাভ? যারা সেইসব বই রচনা করেছিল ভুল তথ্য দিয়ে তারা বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস মানুষ জানুক সেটা চায় না।

এখন সময় এসেছে বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস জানার। আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে মানি। প্রশ্ন হচ্ছে, আমি মানলেই আপনি মানবেন কেন?

১৯৭০ এর নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান এর নিরংকুশ বিজয়ে তিনিই সেই রাজনৈতিক ম্যান্ডেট পেয়েছিলেন দেশে এবং বিদেশে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় এবং সংজ্ঞায় তিনিই একমাত্র স্বাধীনতার ঘোষণা দিবার অধিকার রাখেন। তাঁর সেই রাজনৈতিক অধিকার ছিল জনগণের উপর, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের উপর। রাষ্ট্রের নিজের অভ্যন্তরীন এবং অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণের চূড়ান্ত ক্ষমতাটা তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশের উপর নির্ভর ছিল। জনগণের উপর, সার্বভৌমত্বের বিষয়ে জিয়াউর রহমানের সেই কতৃত্ব ছিল না ৭১ এর মার্চের সেই উত্তাল দিনগুলোতে। ওয়েস্টফ্যালিয়ান সার্বভৌমত্ব এর ধারণা অনুযায়ী পাকিস্তান রাষ্ট্রের কতৃপক্ষের কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না বাংলাদেশের উপর ৭১ এর মার্চের সেই উত্তাল দিনগুলোতে। কার ছিল সেই কতৃত্ব? উত্তরটা সবার জানা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছিল সেই কতৃত্ব।

যে কেউ ঘোষণা দিলেই সেটা স্বাধীনতার ঘোষণা হয়ে যায় না। তার সেই রাজনৈতিক অধিকারটা থাকতে হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যেটা নিশ্চিতভাবে ছিল। এই রাজনৈতিক অধিকার শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া বাংলাদেশের আর কারোরই ছিল না তখন। অন্যের পক্ষে ঘোষণা পাঠ করা এক বিষয় আর ঘোষক হওয়া আর এক বিষয়। জিয়াউর রহমানও আর কয়েকজন এর মত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন মাত্র। শেখ মুজিবুর রহমান কে বাদ দিয়ে কিংবা না উল্লেখ করে কেউ কোন কিছু করে থাকলে সেটা বৈধ হত না আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এবং দেশের জনগণের কাছেও।

স্বাধীনতা ঘোষণা করার জন্য একটা রাজনৈতিক সত্ত্বা ( Political Entity) লাগে যার কাছ থেকে একজন নেতা সেই রাজনৈতিক অধিকারটুকু পায় স্বাধীনতা ঘোষণা করার জন্য। শেখ মুজিবুর রহমান সেটা পেয়েছিলেন ১৯৭০ এর নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমে। জিয়াউর রহমান এর সেটা ছিল না। শেখ মুজিবুর রহমান এর এই অধিকার কে বাংলাদেশের প্রথম সরকার এপ্রিল ১৯৭১ এ স্বীকৃতি দিয়েছিল। জিয়াউর রহমান একজন সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত হয়েছিলেন সেই মুজিব নগর সরকারের অধিনে। জিয়াউর রহমান এর কোন রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না তখন। তাই সে কোনভাবেই স্বাধীনতার ঘোষক হতে পারে না। জিয়াউর রহমান কে কেউ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক বানিয়ে দিতে চাইলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় সেটা হাস্যকর হবে।

তারপর আসুন জনগণ, সার্বভৌমত্ব এবং একটা নির্দিষ্ট অঞ্চল নির্ধারন করা। এটা কে করেছিল? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষিতে ৭১ এর এপ্রিলে মুজিব নগর সরকারই এটা করেছিল।

ডিক্লেয়ারেশন অভ ইন্ডিপেন্ডেন্স যে কেউ দিলেই হয়ে যায় না। তার সেই রাজনৈতিক কতৃত্বটা থাকতে হয় জনগণের উপর কোন একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলের। জিয়াউর রহমান এর কোনটাই ছিল না।

আমার এই সহজ ভাষায় বর্ণনাটার জন্য কোন রেফারেন্স লাগবে না। এখানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাধারণ কিছু বিষয় এর উপর ভিত্তি করে এই কথাগুলো বলেছি। আপনার সাধারণ জ্ঞান থাকলে বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা না।

আমার এই সহজ ভাষায় বর্ণনাটাও যদি বোধগম্য না হয় তাহলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে একটু পড়াশোনা করুন। সঠিক ইতিহাস জানুন। আপনার পরবর্তী প্রজন্মকেও সঠিক ইতিহাস শিক্ষা দিন।

জয় বাংলার লড়াই এখনো শেষ হয় নি।


Place your ads here!

Related Articles

Bangladesh High Commission Observing International Mother Language Day to Conserve Mother Languages

In an informal meeting with the Mother Languages Conservation (MLC) Movement members in the Bangladesh House, Canberra on 19 January

বাস্তবতা

আমাদের বাস্তব সময়টা যেমনই হোক না কেন, যতই কঠিন, অসহনিয়, অবর্ননীয় যেমনই হোক, সেটাকে মেনে নিয়ে, তার সাথে তাল রেখে

Bengali New Year: Pahela Baishakh

The Bengali calendar consists of 6 seasons, instead of 4, with two months each, comprising: spring, summer, monsoon, autumn, early

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment