প্রবাসে বাঙালি সংস্কৃতির প্রসার
দেশের বাইরে গেলেই নিজের দেশ এবং সংস্কৃতিকে খাটো করে দেখার একটা অদ্ভূত প্রবণতা বেশিরভাগ বাঙালির মধ্যেই দেখা যায়। কিন্তু এর ব্যতিক্রমের সংখ্যাও একেবারে কম নয়। ঠিক তেমনি একজন আমাদের আজকের অতিথি। সোফিয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়াণ তরুনি। তিনি নিজের জীবিকার সংস্থানের পাশাপাশি বাঙালি সংস্কৃতির প্রসারে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। সেই গল্পই আজ শুনবো তার কাছ থেকে।
প্রশ্নঃ দেশের সংষ্কৃতি নিয়ে কাজ করার অনুপ্রেরণা কোথা থেকে পেলেন?
সোফিয়া — অনুপ্রেরণা পেয়েছি মূলত আমার স্বামী মুনরাত এর কাছ থেকে। এই ছোট্ট জীবনে খারাপ ভালো অনেক কিছুই দেখেছি যেখানে কিছু ছিল আমার নিজের ভুল। কিন্তু যখন জীবিনের সবচেয়ে খারাপ সময়ে মুনরাতের সাথে পরিচয় হয় ফেইসবুকে তখন তার সান্নিধ্যে জীবনকে যেন আবারো ভালোবাসতে শুরু করি, নিজেকে ভালোবাসতে শুরু করি, নিজের মধ্যে অনেক পজিটিভ দিক ধীরে ধীরে তৈরি হতে থাকে। আমরা বন্ধুরা সবাই মিলে মাঝে মধ্যেই ভ্রমণে যেতাম, বাংলাদেশকে ঘিরে অনেক গল্প হতো আর ছোটবেলার কিছু কথা মনে পড়ে যেত। জীবকে আরো ভালোভাবে বুঝতে শিখলাম। জীবনে অনেক কিছু জানা বা দেখার বা করার আছে যাতে করে আমরা আমাদের ভবিষৎ প্রজন্মের কাছে আরো ভালো কিছু আশা করতে পারি।
প্রশ্নঃ আপনি কিভাবে বাঙালি সংস্কৃতির প্রসারে কাজ করে যাচ্ছেন?
সোফিয়া — আমরা শখের জন্য নিজেদের দেশের পণ্য বিজয় দিবস, ভাষা দিবসে পরি কিন্তু চাইলেই নিজের দেশীয় পণ্য পরিধাণ করে অন্যান্য উৎসব গুলোকেও আরো বেশি ফুটিয়ে তুলতে পারি এবং সেটা নিয়ে গর্ব করতে পারি। যা দেখে অন্যরাও ঈর্ষান্বিত হবে এবং নতুন প্রজন্মও জানতে পারবে আমাদের দেশীয় পণ্য ও সংস্কৃতি সম্মন্ধে এবং একই সাথে তাদের মধ্যে এগুলো নিয়ে সচেতনতা তৈরি হবে। আমার কাছে সবসময়ই মনেহয়েছে বাংলাদেশি বস্ত্র বাংলাদেশের প্রকৃতিকে অনেক সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। তখন আমি চিন্তা করলাম আমিই যদি বাংলাদেশি পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করি তাহলে আমরা সুলভে দেশীয় পণ্য পছন্দ করে কিনতে পারবো।
আমি ছোট খাটো একটা বুটিক চালায় অজময়ুরি যেটার নামকররণ করা হয়েছে আমার ময়ূরের নাম যাকে আমি আমার বিপদের দিনে বিক্রি করে দিয়েছিলাম। আমি আমার কাজটা শুরু করেছিলাম বাংলাদেশি পণ্য বিশেষকরে বিভিন্ন উৎসবের উপযোগি পোশাক দিয়ে। আমাদের সংগ্রহে আছে ছেলেদের পায়জামা, পাঞ্জাবি যেগুলো আমাদের সংস্কৃতির সাথে একেবারে খাপ খাইয়ে যায়। আরো রয়েছে, মেয়েদের শাড়ি, সালোয়ার কামিজ ইত্যাদি, সাথে পাবেন গহনা ও ক্লাচেস। আমি বাংলাদেশের পুরুস্কার বিজয়ী অন্যতম ফ্যাশন হাউস অঞ্জনসের অস্ট্রেলিয়াতে অনুমোদিত পাইকারি বিক্রেতা। আমি তাদের সাথে কাজ করতে পেরে গর্বিত ও আনন্দিত। বঙ্গজ আমাদের নিজস্ব ডিজাইনের এবং পুরোপুরি বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের সমাহার যার স্লোগান হচ্ছে – হৃদয়ে বাংলাদেশ। যেটা বাংলাদেশে পরিচালনা করছেন এর নির্বাহী পরিচালক সোনিয়া আক্তার আপু যিনি আমাকে সর্বাত্মক সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন সবসময়। আমরা দুজনেই মনপ্রাণ উজাড় করে কাজ করে যাচ্ছি। ঠিক এইভাবে আমরা বাঙালি সংষ্কৃতির বিস্তারে খুব সামান্য হলেও ভূমিকা রাখছি।
প্রশ্নঃ সিডনিতে তো আরো অনেক বাঙালি ফ্যাশন হাউস আছে, সেগুলোর সাথে আপনাদের পার্থক্য কি?
সোফিয়া – হ্যা, এখানে অনেক বাঙালি ফ্যাশন হাউস আছে এবং সেগুলোর প্রতি আমার শতভাগ সম্মানও রয়েছে। আমি সমাজের সকলের সমন্বয়ে সামষ্টিকভাবে কিছু করতে চায় যেটা সমাজে পরিবর্তন আনবে এবং যাতে করে বাঙালিরা নিজেদের স্বকীয়তা ধরে রাখতে পারে, তেমনি আর্থিকভাবে লাভবানও হবে। আমাদের এখানে সব সাজ পোশাকই বাংলাদেশে তৈরী এবং সরাসরি বাংলাদেশ থেকেই আসে এবং মূল্যও হাতের নাগালের মধ্যে। এছাড়াও সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে আপনি অনলাইনের পাশাপাশি আমাদের দোকানে এসেও নিজের চোখে দেখে পোশাক কিনতে পারবেন, যাতে করে আপনি শতভাগ মানসিক তুষ্টি নিয়ে একটি পোশাক কিনতে পারেন।
প্রশ্নঃ আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
সোফিয়া — বাঙালিরা সারা অস্ট্রেলিয়াতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করছেন। আমি বাংলাদেশিদের জন্য কিছু কাজ করতে চায় প্রবাসের মাটিতে যেখানে আমার মিশন এবং ভিশন হচ্ছে এখানে বসেই আমরা বাংলাদেশের পণ্য পেতে পারি। পাশাপাশি দেশীয় পণ্যকে আরো সামনের দিকে নিয়ে যেতে পারি নতুন রূপে। আমাদের রয়েছে কাপড় থেকে শুরু করে গহনা পর্যন্ত পণ্যের বিশাল সমাহার এবং আমরা অঞ্জনস এর অস্ট্রেলিয়ার গর্বিত স্পনসর। আমার লক্ষ্য হচ্ছে একটি সকল পণ্যের ভিড়ে বাংলাদেশের পণ্যের একটি স্বকীয় বাজার তৈরি করা।
আপনার এই দীর্ঘ পথচলায় আপনি কিভাবে সবার সহযোগিতা পেয়েছেন?
সোফিয়া –আমি বলবো আমার উপর আমার শুভাকাঙ্খীদের দোয়া এবং সর্বোপরি সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমত ছিল তাই এতদূর আসতে পেরেছি। ঝুঁকির পাশাপাশি অনেক কষ্টও করতে হয়েছে কিন্তু আমার স্বামীর কারণে সেটা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল। আমি এছাড়াও আমার এক ভাইয়া এবং আপুর প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ যাদের অনুপ্রেরণা এবং সহযোগিতা ছাড়া আমি এ পর্যন্ত আস্তে পারতাম না। ভাইয়া আমার ব্যবসার পরামর্শদাতা আর আপু আমাকে গঠনমূলক পরামর্শ প্রদান করে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছিল। আমার আরেকজন আপু আমাকে আমাকে সবসময় নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে শিখিয়েছেন ও আমাকে সবসময় সমর্থন করে গেছেন। আমার পরিবার বিশেষ করে আমার স্বামী, যাকে ছাড়া আমি কখনোই এতদূর আসতে পারতাম না। আমি সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই তাদেরকে আমার জীবনে পাঠানোর জন্য।
আমি আরো ধন্যবাদ জানাতে চাই জিএম গ্রাফিক ডিজাইন, AOZ প্রিন্ট মাসকট, বঙ্গ বাজার, হেভেন পিঠাঘর, বৈশাখি পেঁয়াজু ঘর বিশেষত জিএম গ্রাফিক ডিজাইন কে তার সৃষ্টিশীল কাজের জন্য।
প্রশ্নঃ আপনার শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। সোফিয়া — আপনাদেরকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। দোয়া করবেন আমাদের জন্য।
Md Yaqub Ali
আমি মোঃ ইয়াকুব আলী। দাদি নামটা রেখেছিলেন। দাদির প্রজ্ঞা দেখে আমি মুগ্ধ। উনি ঠিকই বুঝেছিলেন যে, এই ছেলে বড় হয়ে বেকুবি করবে তাই এমন নাম রেখেছিলেন হয়তোবা। যাইহোক, আমি একজন ডিগ্রিধারী রাজমিস্ত্রি। উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করতে অস্ট্রেলিয়াতে আমার আগমন ২০১৫ সালের মার্চে। আগে থেকেই ফেসবুকে আঁকিবুকি করতাম। ব্যক্তিজীবনে আমি দুইটা জীবের জনক। একটা হচ্ছে পাখি প্রকৃতির, নাম তার টুনটুনি, বয়স আট বছর। আর একজন হচ্ছে বিচ্ছু শ্রেণীর, নাম হচ্ছে কুদ্দুস, বয়স দুই বছর। গিন্নী ডিগ্রিধারী কবিরাজ। এই নিয়ে আমাদের সংসার। আমি বলি টম এন্ড জেরির সংসার যেখানে একজন মাত্র টম (আমার গিন্নী) আর তিনজন আছে জেরি।
Related Articles
করোনাকে জয় করে স্কুল খুলেছে অস্ট্রেলিয়ায়
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে আমি থাকি। এখানে গত ২৪ ঘন্টায় ৬ হাজারের বেশি লোককে টেস্ট করেও নতুন কোন করোনা
বিচার বিভাগ যে স্বাধীন নয় এর বড় ভিকটিম আপনি, প্রিয় প্রধানমন্ত্রী
ফজলুল বারী: দেশে শাসন বিভাগের সঙ্গে বিচার বিভাগের অস্বাভাবিক সম্পর্ক চলছে। বিচার বিভাগের অভ্যন্তরীন নানা বিষয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখছেন প্রধান বিচারপতি
প্রিয় লেখকের পক্ষপাতিত্ব! – জন মার্টিন
এক: ইন্টারনেট আমাদের অনেক কিছু বদলিয়ে দিয়েছে। সারা পৃথিবী হাতের মুঠোয় এনে দিলেও মানুষের সাথে মানুষের দূরত্বটি অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।