Bangladesh Awami Leaque Er Nam Koron

Bangladesh Awami Leaque Er Nam Koron

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নামকরণ

ফজল হাসান

পরিচয়ের সুবিধার জন্যই জগতে নামের উদ্ভব । যদিও চার শত বছরেরও আগে ইংরেজ মহাকবি এবং বিশ্ববিখ্যাত নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়ার তার ‘রোমিও এন্ড জুলিয়েট’ নাটকে জুলিয়েটের সংলাপে বলেছিলেন, ‘নামে কি আসে যায় ?’ আসলে নামে অনেক কিছুই আসে, অনেক কিছুই যায় । আর এ জন্যই এ লেখার অবতারণা ।

নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হচ্ছে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ । ইতিহাসের অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজ বাংলাদেশের প্রধান এবং অন্যতম রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সর্বজন স্বীকৃত । মূল বিষয়ে যাওয়ার আগে বর্তমান প্রজন্মের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্ম এবং সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বলা প্রয়োজন ।

তৎকালীন পাকিস্তান সৃষ্টির পর, অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের আগষ্ট, থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ এবং পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকের ভেতর শুরু হয় শোষিত এবং শোষকের দ্বন্দ্ব । ফলে ১৯৪৯ সালে ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেন ম্যানসনে পূর্ব পাকিস্তানের নিপীড়িত অধিবাসীরা ‘পাকিস্তান মুসলীম লীগ’ ভেঙে গড়ে তোলেন ‘অল পাকিস্তান মুসলীম আওয়ামী লীগ’ । দলের প্রথম সভাপতি নিযুক্ত হন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন জনাব শামসুল হক । পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুদের দলে ভেড়ানোর জন্য ‘সেকুল্যার’ বা ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ রাজনৈতিক দল হিসেবে ১৯৫৩ সালে এক কাউন্সিল সভায় ‘অল পাকিস্তান মুসলীম আওয়ামী লীগ’ থেকে অপ্রাসঙ্গিক মনে করে ‘মুসলীম’ শব্দটি বাদ দেয়া হয় । ফলে নতুন নাম ‘অল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে । ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা লাভের পর সঙ্গত কারণেই এই রাজনৈতিক দলের নামকরণ করা হয় ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ । জন্মের পর থেকে বিগত ছয় দশকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ব্যপ্তি ছড়িয়েছে দেশের আনাচে-কানাচে । রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রয়েছে এই রাজনৈতিক দলের অসংখ্য সংগঠন, নেতা-কর্মী এবং ‘ডাই হার্ড’ সমর্থক ।

এ কথা সর্বজন স্বীকৃত এবং সত্যি যে, উনিশ শ’ একাত্তরের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ । চল্লিশ বছর আগে নয় মাসের রক্তাক্ত যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদের তাজা প্রাণের বিনিময়ে পাকিস্তানের কাছ থেকে আমরা ছিনিয়ে এনেছি স্বাধীনতা । যার ফলে আজ বিশ্বের বুকে মাথা তুলে সগৌরবে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে পারি, খোলা আকাশে ওড়াতে পারি লাল-সবুজের পতাকা, প্রশান্তির গভীর নিঃশ্বাস টেনে বুক ভরে নিতে পারি নির্মল হাওয়া আর অকুতোভয়ে প্রাণ খুলে কথা বলে পারি মায়ের ভাষা বাংলায় । এ কথা স্বীকার করতে হবে যে, বাংলা এবং বাঙালীত্বকে পুঁজি করে আমরা স্বাধীনতা অর্জণ করেছি । অথচ পরিতাপের বিষয়, আমাদের প্রধান রাজনৈতিক দলের নামের মধ্যে রয়েছে ভিনদেশী ভাষার ছড়াছড়ি ।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ – তিন ভাষার তিনটি শব্দের মিশ্রণ । ‘বাংলাদেশ’ নিখাদ একটি বাংলা শব্দ, ‘আওয়ামী’ হচ্ছে উর্দু শব্দ (যার অর্থ জনগণ বা জনতা । মূল শব্দ আওয়াম, অর্থাৎ জাতি) এবং ‘লীগ’ হচ্ছে ইংরেজী শব্দ (যার অর্থ মৈত্রী বা দল) ।

কথায় আছে, স্বামীর নাম মুখে আনলেও ভাসুরের নাম উচ্চারন করা রীতিমত অশোভনীয়, এমনকি বেয়াদপি । অথচ ১৯৪৮ সালে মাতৃভাষা বাংলাকে কবর দিয়ে যারা আমাদের উপর জোর করে উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল, তাদের মাতৃভাষার শব্দ ‘আওয়ামী’ আজও আমরা আমাদের প্রধান এবং অন্যতম রাজনৈতিক দলের নাম থেকে মুছে ফেলতে পারিনি । বরং নামের ঠিক মাঝখানে বহাল তবিয়তে জড়িয়ে রেখেছি । মুছে ফেলা তো দূরের কথা, এ বিষয়টি কখনই আমাদের কারোর মাথায় আসেনি । কখনো আমাদের মগজে স্পার্ক করেনি । সত্যি, কি সেলুকাস !

যদিও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, ‘কোন কিছুর নাম হচ্ছে লাউয়ের ডগার মতো, তাতে ধরবার সুবিধা এবং বোঁটার আকার নিয়ে কেউ লাউয়ের বিচার করে না ।’ তাই দিন বদলের ‘ডিজিটাল’ যুগে বাংলাদেশের প্রধান এবং অন্যতম রাজনৈতিক দলের নাম কোন মতেই ‘এনালগ’ (বা ককটেল) হতে পারে না । এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার আরেকটা বিশেষ কারণ হলো, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ইংরেজীতে লিখে শব্দ তিনটির আদ্য অক্ষর ক্রমানুসারে সাজালে নতুন যে সংক্ষিপ্ত (অ্যাব্রীভিয়েটেড) শব্দের উৎপত্তি হয়, তা আর যাহোক, পিতা-মাতা এবং অন্যান্য মুরুব্বীদের সামনে উচ্চারণ করা রীতিমত বিব্রতকর, অশোভনীয় । কেননা সংক্ষিপ্ত শব্দটি শ্রুতিকটুর এবং বাংলা ভাষায় প্রচলিত একটি গালি । তাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম পাল্টিয়ে খাঁটি বাংলায় রাখা হলে মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে এবং আমাদের বাঙালীত্ব আরও মজবুত হবে । উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, খাঁটি বাংলায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম হতে পারে ‘বাংলাদেশ জনমৈত্রী’, যা পুরোপুরি বাংলা সংস্করণ । তবে এ নামই যে হতে হবে, তা নয় । অন্য যে কোন যুৎসই নামও হতে পারে ।

শেক্সপিয়ারের ভাষায় বলতে হয়, যাকে আমরা গোলাপ বলি, অন্য নাম হলেও সে তো গন্ধ ছড়াবে । তা ঠিক । আমাদের এ-ও মনে রাখতে হবে, লতার শেকড় যদি মাটি থেকে রস টানতে পারে, তবে রোদের তাপে সে কখনই শুকিয়ে মরে না । বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম পাল্টালে তাতে দলের কোন পরিবর্তন হবে না, এমনকি আমজনতার ভালোবাসায় কোন খামতি দেখা দেবে না । আশা করি, দিন বদলের শ্লোগানের সঙ্গে সঙ্গে নাম বদলের কাজটিও করা যায় । উপরের প্রস্তাবনাটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সুস্থ মাথায় একবার ভেবে দেখবেন ।

বিশ্ব সাহিত্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠা এবং আসন পাকাপোক্ত করার জন্য মাইকেল মধুসূদন দত্ত একদিন মাতৃভূমি এবং মাতৃভাষাকে পরিত্যাগ করে পড়ি জমিয়েছিলেন ইংরেজী ভাষার সূতিকাগার বিলেতে । সেখানে তিনি ইংরেজী ভাষায় কাব্যচর্চ্চা শুরু করেন । কিন্তু একদিন নিজের ভুল বুঝতে পেরে তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘হে বঙ্গ ভান্ডারে তব বিবিধ রতন, তা সবে অবোধ আমি অবহেলা করি’ ।

কোন সন্দেহ নেই, বাংলা ভাষা নিয়ে আমাদের গর্বের সীমানা দিগন্তপ্রসারী । আজ আমরা নির্ভয়ে প্রাণ খুলে মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারি, নির্দ্বিধায় প্রকাশ করতে পারি আমাদের মনের কথা । এর চেয়ে আত্মতৃপ্তি, এমনকি সুখের, আর কিইবা আছে । কবির ভাষায় বলতে হয়, ‘বিনা স্বদেশী ভাষা, মিটে কি আশা’ । এছাড়া কবি আরও বলেছেন, ‘মোদের গরব মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা ।’ আসলে মনের অস্বস্তি বা স্বস্তি প্রকাশের জন্য মাতৃভাষাই শ্রেষ্ঠ মাধ্যম । এর কোন বিকল্প নেই, থাকতে পারে না ।

****

Link: http://www.shaptahik.com/v2/?DetailsId=6442


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment