মৃত্যুঞ্জয়ী গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীর গল্প।

মৃত্যুঞ্জয়ী গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীর গল্প।

আজ ১৬ই নভেম্বর ২০১৯। ঠিক আঠারো বছর আগে এই দিনে খুব ভোরে আমার বাবাকে হত্যা করা হয়। বাবা আমার ঘুমাচ্ছিল, আমাদের দুইকামরার ছোট্ট ভাড়া বাসায়। ২০০১ সালে নির্বাচন পরবর্তী যে নৃশংস হত্যাকান্ড গুলো হয় তার মধ্যে ঠিক কেন বাবাকে জামাত – শিবিরের হাতে খুন হতে হলো তা আজও আমার কম বুদ্ধির মাথায় আসে না।

সপরিবারে গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী

আমার বাবার নাম গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী। এইটুকুই তখন জানতাম যে বাবা নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ। লোকমুখে শুনতাম বাবা কলেজে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করেছিল, সেই সময়ের জন্য যেটা নাকি অসম্ভব ব্যাপার ছিল । মাঝে মাঝে পেপারে দেখতাম বাবার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হবার পুরষ্কার, গাছ লাগানোর পুরষ্কার কিংবা এরকম আরো অনেক কিছু ।

বাবার কিছু লেখা পড়তাম। বেশীরভাগই ছাপা হতো বিভিন্ন কলেজের ম্যাগাজিন গুলোতে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লেখাটাই থাকতো বেশি,আর দেখতাম ছাত্রছাত্রীদের সাংষ্কৃতিক কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করার কথা।

শুনেছি বাবা অসীম সাহসী, প্রচণ্ড জেদী, অসাম্প্রদায়িক আর পরোপকারী ছিল। বাবা আমার গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিল মেয়েদের জন্য। কিন্তু আমাদের কাছে বাবা ছিল শুধু “ভালো করে পড়ালেখা কর” কিংবা “নিয়মিত ব্যায়াম কর” বলা বাবা।

বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিল। বাবা বোধকরি যুদ্ধে যাওয়াটা দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছিল। কোনো আফসোস বা আদিখ্যেতা দেখিনি এই ব্যাপারটা নিয়ে। শুধু যেবার সরকার ঘোষণা দিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের মারা যাবার পর গার্ড অব অনার দেয়া হবে সেবার খুব খুশী হয়ে ঘরে এসে মাকে বলতে এসেছিল। বাবার গার্ড অব অনার পেতে খুব বেশীদিন অপেক্ষা করতে হয়নি!

পারিবারিক অনুষ্ঠানে গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী

বাবাকে যেদিন হত্যা করা হয় সেদিন হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিলেন, প্রতিবাদে মুখরিত হয়েছিল চারিদিক। টিভি,অন্যান্য সংবাদ মাধ্যম, সাধারণ জনতা, রাজনৈতিক আর অরাজনৈতিক দলগুলো প্রচন্ড প্রতিবাদ জানিয়েছিল। আমৃত্যু কৃতজ্ঞ থাকবো আমরা সবার কাছে।

কিন্তু বাবা আমাদের কাছে শুধু বাবাই। আমি এখনো যখন বাবাকে স্বপ্নে দেখি, কখনো মৃত দেখিনা। শুধু খুঁজে পাই না কোথাও। ঘুম ভেংগে গেলে মনে পরে সব। বছরের পর বছর একি দুঃস্বপ্ন ! সময় শোক ভুলিয়ে দিয়েছে। তবু !


Place your ads here!

Related Articles

কৃতী প্রবাসী : একজন ডা. রফিকুল ইসলাম – ফজল হাসান, ক্যনাবেরা থেকে

মোমবাতি নিজে জ্বলে, কিন্তু অন্যকে আলো বিতরণ করে। তেমনই কিছু কিছু মানুষের ভালো কাজের জন্য অন্যেরা আলোকিত হয় এবং সঠিক

মা, চোখ বন্ধ করিস না!

ভেবেছিলাম নুসরাতকে নিয়ে কিছু লিখবো না। লিখতে গেলে – আবার সেই অসহ্য ব্যাপার গুলি চোখের সামনে চলে আসবে। আমি নিতে

Trade Investment Cooperation Framework Agreement (TICFA) with the US Bangladesh

Bangladesh seeks trade and investment from the US and other countries. Most economists say that investment up to 34% of

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment