বোহেমিয়ান মন

বোহেমিয়ান মন

বন্ধুর অনুরোধ ভ্রমণ বিষয়ক একটা লেখা যেন লিখি বন্ধুদের ম্যাগাজিনের জন্য! ভ্রমণ বিষয়ক লেখা কিন্তু আমিতো মুজতবা আলী নই আবার অনেক দেশ বিদেশ দেখার সৌভাগ্যও এখনো হয়নি আমার!

ভেবে দেখলাম অনেক দেশ বিদেশে ঘুরাঘুরি কম হলেও ভাবনার জগতে আমি সদাই একজন ভবঘুরে যাযাবর কিনবা বলা চলে একটা শহুরে বোহেমিয়ান মন নিয়ে আমি ঘুরে বেড়াই বিশ্ব চরাচর আর বিশ্বাস করি আমার আছে দেখবার এক দৃষ্টি যা দিয়ে হয়তো তাই দেখি আপাত দৃষ্টিতে যা দেখা যায় না, এই দৃষ্টি শুধু অনুভব দিয়ে দেখা যায় তাই লিখেই ফেলি কিছু প্রলাপ!

মানুষ প্রকৃতির সন্তান, যতই আমরা নগর করি,সভ্যতা বানাই মনের মধ্যে সেই হরিণ চড়ানো,কুল পেড়ে খাওয়া গুহাবাসী পূর্বপুরুষরা রয়ে গেছে নিউরনের কোন চিকন শাখা প্রশাখায়।তাই প্রতিটা মানুষ ছুটতে চায়, বেরিয়ে পড়তে চায়, দেখতে চায়, ছুঁতে চায় প্রকৃতি। অনুভব করতে চায় নিজেকে। মানুষ যতো প্রকৃতি থেকে দূরে গিয়েছে কিনবা যাবে,অকৃত্রিমকে আপন করবে ততই আবার প্রকৃতির মাঝে ফিরবার আর্তনাদ বেশি করে অনুভব করবে! এ যেন নাড়ীর বাঁধন!

নিজের ভ্রমণ বিষয়ক অভিজ্ঞতা লেখার কথা সেখান থেকে অনেক দূরে সরে এসেছি, মূল আলোচনায় ফিরে যাই। শহরে ইট পাথরের জীবনের কারণে হোক কিনবা নিজের এই একপুরুষ আগের পূর্ব পুরুষরাও বোহেমিয়ান জীবন যাপনের কারণে হোক রক্তে বয়ে চলে ছুটে চলবার এক নেশা আমি কদাচিত এড়িয়ে চলতে পারি, নিজের ভেতর অনুভব করি অস্হিরতা। খুব ছোটবেলার আমার সারেং দাদা যখন ঘরে থাকতে পারতো না অস্হিরতা করতো আর সদ্য ডাঙার জীবন যাপন বেছে নেওয়া বাবা আর দাদার সেই মানসিক সংগ্রাম এ বেলায় কিছুটা হলেও টের পাই। সব রকম অস্হিরতা নিয়ে কিছু একটার টানে আমি বেরিয়ে পড়ি। আমার জন্য এটা বলা খুব মুশকিল পাহাড় বেশি টানে নাকি সাগরের নীল জল!

আমার প্রকৃতির মাঝে থাকতেই বেশি ভালো লাগে তাই যখন সাগরের পাড়ে বসে থাকি কিনবা হেঁটে চলি তখন এর বিশালতা ম্লান করে দেয় জগতের তুচ্ছতম বিষয়। নিজেকে এতো ছোট আর অসহায় লাগে, মন শুধু হুহু করে উঠে! কি নগন্য এক মানুষ এই চরাচরে! এমন কদাচিত হয়েছে সমুদ্রে নেমে চোখ চিকচিক করেনি। সমুদ্রের বিশালতা মানুষকে অমায়িক হতে শেখায় মনে হয়। এদিকে পাহাড়ে যখন যাই পাহাড়ের পর পাহাড়, সবুজ আর সবুজ, মেঘেদের আনাগোনা আর এর উচ্চতা কোথায় যে নিয়ে ফেলে ভাবনার জগৎ! মনে হয় এখানে কোথাও ছিলো আমাদের পূর্ব পুরুষ, পাহাড়ের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসবে অজানা কোন রহস্য। কঙ্গলাক পাহাড়ের ছোট এক চায়ের দোকানে বসে চা হাতে মেঘেদের ছুঁয়ে দিতে দিতে মনে হয় ঝাপ দিয়ে এই পাহাড় থেকে অরন্যের সেই রাজ্যে চলে যাওয়া যাবে, যেখানে আমি রাজকন্যা কুন্তি। পাহাড় আর অরন্য আমার সাম্রাজ্য। ভাবনায় ছেদ টেনে দেয় হয়তো উচ্চস্বরে সাউন্ড বক্সের কোন হিন্দি গান।

আবার ফিরে আসতে হয় নিজেদের তৈরি ইট সুড়কিবাঁধাই জীবনে। চাইলে আমার যেকোনো একটা ঘুরাঘুরির অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারতাম, যেমন ওমুক জায়গায় কিভাবে যায়,কি কি দেখার আছে, খেতে কি পাওয়া যায়, খরচ কেমন এসব ইনফরমেশন দিয়ে একটা ভ্রমণ বিষয়ক লেখা। আমি আসলে ও রকম কিছু লিখতে চাই নিই। আমি বলতে চেয়েছি যার মাঝে একটা ভবঘুরে যাযাবর মন আছে, বেরিয়ে পড়ো। ঘর থেকে দু কদম ফেললেই দেখবার অনেক কিছু আছে তুমি শুধু ঘরের দরজা খুলে বের হও। টাকা হবে বিদেশ ঘুরবো এটা কিন্তু ভ্রমণ পিপাসু মন নয়। ভ্রমণ পিপাসুদের চারপাশে দেখবার অনেক কিছু আছে। আর দেখবার এই ইচ্ছেটা বজায় থাকলে বৈষয়িক দিকগুলো খুব সুন্দর করে পরিকলপনা করে ম্যানেজ করে ফেলা যায়। তাই আর্থিক পারিবারিক সামাজিক বিষয় গুলো কোনদিন ঘুরার অন্তরায় হবার কথা না।
পরিশেষে আমার একটাই অনুরোধ থাকবে যেটা যখন যেখানে ঘুরতে গিয়ে আমি অনুভব করেছি, আমাকে পীড়া দিয়েছে সেটা হলো প্রকৃতিকে ময়লা করে আসা।

প্রকৃতি দেখতে গিয়ে উচ্চস্বরে মাইক বাজানো, জোরে শোরে চিৎকার, পিকনিকের নামে পলিথিন আর পানির বোতল দিয়ে ময়লা করা, বাচ্চাদের ডায়াপার, কনডম, টিস্যু পেপার কোথায় না ফেলে আসে! ময়লা ময়লার ফেলার জায়গায় ফেলুন। প্রকৃতি দেখতে গিয়ে আকন্ঠ মদ গিলে মাতলামো করে হৈচৈ করে কতোটা সভ্য এটা প্রমাণ না করলেই কি নয়। আমাদের শহুরে জীবনে যেখানে সেখানে ময়লা, শব্দ দূষণ থেকে শুরু করে সব রকম দূষণে আমাদের চোখ ও মন সয়ে গেছে এসব থেকে একটু রক্ষা পেতেই নির্জন প্রকৃতির কাছে ছুটে যাওয়া আর সেখানে গিয়েও যদি এসব দেখতে হয় খুব কষ্ট লাগে, মানুষ হিসেবে লজ্জা লাগে, সত্যি বলছি খুব লজ্জা লাগে! প্রকৃতির দিকে আর সরাসরি তাকাতে পারি না।
আমাদের ভ্রমণ পিপাসু মন যেন প্রকৃতির জন্য হুমকি না হয়ে পড়ে প্রকৃতির সন্তান হিসেবে এটা দেখা কিনবা মেনে চলাও আমাদের কাজ।
ভ্রমণ হোক আনন্দের কোন স্মৃতি।

বন্ধুর অনুরোধ ভ্রমণ বিষয়ক একটা লেখা যেন লিখি বন্ধুদের ম্যাগাজিনের জন্য! ভ্রমণ বিষয়ক লেখা কিন্তু আমিতো মুজতবা আলী নই আবার অনেক দেশ বিদেশ দেখার সৌভাগ্যও এখনো হয়নি আমার!

ভেবে দেখলাম অনেক দেশ বিদেশে ঘুরাঘুরি কম হলেও ভাবনার জগতে আমি সদাই একজন ভবঘুরে যাযাবর কিনবা বলা চলে একটা শহুরে বোহেমিয়ান মন নিয়ে আমি ঘুরে বেড়াই বিশ্ব চরাচর আর বিশ্বাস করি আমার আছে দেখবার এক দৃষ্টি যা দিয়ে হয়তো তাই দেখি আপাত দৃষ্টিতে যা দেখা যায় না, এই দৃষ্টি শুধু অনুভব দিয়ে দেখা যায় তাই লিখেই ফেলি কিছু প্রলাপ!

মানুষ প্রকৃতির সন্তান, যতই আমরা নগর করি,সভ্যতা বানাই মনের মধ্যে সেই হরিণ চড়ানো,কুল পেড়ে খাওয়া গুহাবাসী পূর্বপুরুষরা রয়ে গেছে নিউরনের কোন চিকন শাখা প্রশাখায়।তাই প্রতিটা মানুষ ছুটতে চায়, বেরিয়ে পড়তে চায়, দেখতে চায়, ছুঁতে চায় প্রকৃতি। অনুভব করতে চায় নিজেকে। মানুষ যতো প্রকৃতি থেকে দূরে গিয়েছে কিনবা যাবে,অকৃত্রিমকে আপন করবে ততই আবার প্রকৃতির মাঝে ফিরবার আর্তনাদ বেশি করে অনুভব করবে! এ যেন নাড়ীর বাঁধন!

নিজের ভ্রমণ বিষয়ক অভিজ্ঞতা লেখার কথা সেখান থেকে অনেক দূরে সরে এসেছি, মূল আলোচনায় ফিরে যাই। শহরে ইট পাথরের জীবনের কারণে হোক কিনবা নিজের এই একপুরুষ আগের পূর্ব পুরুষরাও বোহেমিয়ান জীবন যাপনের কারণে হোক রক্তে বয়ে চলে ছুটে চলবার এক নেশা আমি কদাচিত এড়িয়ে চলতে পারি, নিজের ভেতর অনুভব করি অস্হিরতা। খুব ছোটবেলার আমার সারেং দাদা যখন ঘরে থাকতে পারতো না অস্হিরতা করতো আর সদ্য ডাঙার জীবন যাপন বেছে নেওয়া বাবা আর দাদার সেই মানসিক সংগ্রাম এ বেলায় কিছুটা হলেও টের পাই। সব রকম অস্হিরতা নিয়ে কিছু একটার টানে আমি বেরিয়ে পড়ি। আমার জন্য এটা বলা খুব মুশকিল পাহাড় বেশি টানে নাকি সাগরের নীল জল!

আমার প্রকৃতির মাঝে থাকতেই বেশি ভালো লাগে তাই যখন সাগরের পাড়ে বসে থাকি কিনবা হেঁটে চলি তখন এর বিশালতা ম্লান করে দেয় জগতের তুচ্ছতম বিষয়। নিজেকে এতো ছোট আর অসহায় লাগে, মন শুধু হুহু করে উঠে! কি নগন্য এক মানুষ এই চরাচরে! এমন কদাচিত হয়েছে সমুদ্রে নেমে চোখ চিকচিক করেনি। সমুদ্রের বিশালতা মানুষকে অমায়িক হতে শেখায় মনে হয়। এদিকে পাহাড়ে যখন যাই পাহাড়ের পর পাহাড়, সবুজ আর সবুজ, মেঘেদের আনাগোনা আর এর উচ্চতা কোথায় যে নিয়ে ফেলে ভাবনার জগৎ! মনে হয় এখানে কোথাও ছিলো আমাদের পূর্ব পুরুষ, পাহাড়ের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসবে অজানা কোন রহস্য। কঙ্গলাক পাহাড়ের ছোট এক চায়ের দোকানে বসে চা হাতে মেঘেদের ছুঁয়ে দিতে দিতে মনে হয় ঝাপ দিয়ে এই পাহাড় থেকে অরন্যের সেই রাজ্যে চলে যাওয়া যাবে, যেখানে আমি রাজকন্যা কুন্তি। পাহাড় আর অরন্য আমার সাম্রাজ্য। ভাবনায় ছেদ টেনে দেয় হয়তো উচ্চস্বরে সাউন্ড বক্সের কোন হিন্দি গান।

আবার ফিরে আসতে হয় নিজেদের তৈরি ইট সুড়কিবাঁধাই জীবনে। চাইলে আমার যেকোনো একটা ঘুরাঘুরির অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারতাম, যেমন ওমুক জায়গায় কিভাবে যায়,কি কি দেখার আছে, খেতে কি পাওয়া যায়, খরচ কেমন এসব ইনফরমেশন দিয়ে একটা ভ্রমণ বিষয়ক লেখা। আমি আসলে ও রকম কিছু লিখতে চাই নিই। আমি বলতে চেয়েছি যার মাঝে একটা ভবঘুরে যাযাবর মন আছে, বেরিয়ে পড়ো। ঘর থেকে দু কদম ফেললেই দেখবার অনেক কিছু আছে তুমি শুধু ঘরের দরজা খুলে বের হও। টাকা হবে বিদেশ ঘুরবো এটা কিন্তু ভ্রমণ পিপাসু মন নয়। ভ্রমণ পিপাসুদের চারপাশে দেখবার অনেক কিছু আছে। আর দেখবার এই ইচ্ছেটা বজায় থাকলে বৈষয়িক দিকগুলো খুব সুন্দর করে পরিকলপনা করে ম্যানেজ করে ফেলা যায়। তাই আর্থিক পারিবারিক সামাজিক বিষয় গুলো কোনদিন ঘুরার অন্তরায় হবার কথা না।
পরিশেষে আমার একটাই অনুরোধ থাকবে যেটা যখন যেখানে ঘুরতে গিয়ে আমি অনুভব করেছি, আমাকে পীড়া দিয়েছে সেটা হলো প্রকৃতিকে ময়লা করে আসা।

প্রকৃতি দেখতে গিয়ে উচ্চস্বরে মাইক বাজানো, জোরে শোরে চিৎকার, পিকনিকের নামে পলিথিন আর পানির বোতল দিয়ে ময়লা করা, বাচ্চাদের ডায়াপার, কনডম, টিস্যু পেপার কোথায় না ফেলে আসে! ময়লা ময়লার ফেলার জায়গায় ফেলুন। প্রকৃতি দেখতে গিয়ে আকন্ঠ মদ গিলে মাতলামো করে হৈচৈ করে কতোটা সভ্য এটা প্রমাণ না করলেই কি নয়। আমাদের শহুরে জীবনে যেখানে সেখানে ময়লা, শব্দ দূষণ থেকে শুরু করে সব রকম দূষণে আমাদের চোখ ও মন সয়ে গেছে এসব থেকে একটু রক্ষা পেতেই নির্জন প্রকৃতির কাছে ছুটে যাওয়া আর সেখানে গিয়েও যদি এসব দেখতে হয় খুব কষ্ট লাগে, মানুষ হিসেবে লজ্জা লাগে, সত্যি বলছি খুব লজ্জা লাগে! প্রকৃতির দিকে আর সরাসরি তাকাতে পারি না।

আমাদের ভ্রমণ পিপাসু মন যেন প্রকৃতির জন্য হুমকি না হয়ে পড়ে প্রকৃতির সন্তান হিসেবে এটা দেখা কিনবা মেনে চলাও আমাদের কাজ।
ভ্রমণ হোক আনন্দের কোন স্মৃতি।

বোহেমিয়ান মন
নূর নাহার তৃপ্তি

নূর নাহার তৃপ্তি


Place your ads here!

Related Articles

Rahul Gandhi’s visit to Bangladesh its possible impact on bilateral relations

We all welcome the visit of Rahul Gandhi,(38), India’s ruling Congress party leader and a member of Lok Sabha (MP).

বৈশাখী মেলায় অজি এনএসইউআরস্

শাহরিয়ার পাভেল: অজি এনএসইউআরস্, অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের সংগঠন । সংগঠনটি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রছাত্রীদের মধ্যকার যোগাযোগ

21st Century “Kunta Kinte”! Chapter 9: Epilogue (Final Chapter)

21st Century “Kunta Kinte”! Introduction: Revealing the “untold”! | Chapter 1: The realisation! | Chapter 2 : The beginning! |

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment