‘তোমাকে পাবার জন্য…’

‘তোমাকে  পাবার জন্য…’

শুরু হোক এভাবে । পেরিয়ে এসেছি বেশ কিছু  সময়। মেলবোর্নের সাহিত্যপ্রেমীদের অতিথি হয়ে  বাংলাদেশ থেকে  কবি আসাদ চৌধুরী এসেছিলেন। কবির  স্ত্রীও সঙ্গে ছিলেন। আমাদের সদানন্দে ভরপুর সাদামাটা জীবন ও কবির মত সহজসরল আপনজন  দুয়ে দুয়ে চার নয় দুই দুগুনে  চার হয়ে উঠলো।  তাদের স্বল্পকালীন অবস্থানের দিনগুলো  ছিল বৈচিত্রময়  । তখন রোজামাস শুরু হয়েছে। শেষরাতে সেহরী বা সাহরী খাওয়ার পর খাবার টেবিলেই  গল্পগুজবে সকাল নয় দশটা বেজে যেতো। গল্প ও উপন্যাস লেখক ও কবির মাঝে সুক্ষ্ণ এক পার্থক্য আমার পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে। কবি হঠাৎ হঠাৎ করেই পারিপার্শ্বিকতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কেমন যেন একঘোরে ডুবে যান। এমনি এক রমজানের সকালে সাহরী  পরবর্তী  গল্প চলছে। টেলিফোন বাজলো। ক্যানবেরা থেকে বাংলাদেশ হাই কমিশন কবিকে দাওয়াত  দিল।

আমি বলে উঠলাম

-বাংলাদেশী আমলারাও কবিসাহিত্যিকদের খুব পছন্দ করে; দেখুন না হাই কমিশনার সাহেবও  কবির বিষয়ে আগ্রহী।

কবি বল্লেন

-দেশটা স্বাধীন তো তাই আজ বাংলাভাষা, বাংলাসাহিত্য সন্মানিত, আদৃত।

একটু সময় চুপ করে থেকে কবি আচমকা সেই ঘোরে তলিয়ে গেলেন। তারপর খুব দ্রুতই ঘোর থেকে ফিরে এসে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বল্লেন

-এর জন্য কৃতজ্ঞ বঙ্গবন্ধুর কাছে, কৃতজ্ঞ মুক্তিসেনার কাছে।

কথাটা সামান্য। তবে অন্তরের অন্তঃস্থলে কাঁপন জাগায়।

কেউ কি কখনো স্বাধীনতা দান বা উপহার হিসাবে পেয়েছে? না কখনোই নয়। ‘তোমাকে পাবার জন্য হে স্বাধীনতা’ অনেক অনেক নারীপুরুষ, তরুণকিশোরের রক্ত ঝরেছে, কত কত মা বোনের সম্ভ্রম লুন্ঠিত  হয়েছে, কত যে নারীর সিঁথির সিঁদুর মুছে গিয়েছে। তবেই তো  অর্জিত হলো স্বাধীনতা।

পৃথিবীর সবখানে, সব কোনে কোনে মানুষ অনবরত কাজ করে যাচ্ছিল মুক্তির লক্ষ্যে। স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য অদম্য বাসনা নিয়ে নানা কাজ। কবিতায় হুঙ্কার, গানে আওয়াজ, ছবিতে আঁকুতি। বিশ্ব বিবেকের কাছে সমর্থন ও সাহায্যের জন্য জানানো হচ্ছিল  অবিরত আবেদন। অকুতোভয় মুক্তিসেনারা  অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছিল কাতারে কাতারে।

আমাদের মুক্তির লড়াইয়ের বিষয়ে বিশ্বকে জানানো, বিশ্বকে জাগানো ছিল বিরাট কাজ। যুদ্ধ চলাকালীন সময়েই প্রবাসে সরকার গঠন হলো। সে সরকার নানা কাজকর্ম করে যাচ্ছিলেন। উদ্দেশ্য একটাই নিজেদের আত্মমর্যাদাশীল স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনেই  ছিল সে ইঙ্গিত যে আমাদের আর ‘দাবায়ে রাখা যাবে না’। পঁচিশে মার্চের কালো রাত্রির পরের ভোরে স্বাধীনতার ঘোষনা নিয়ে সূর্য উঠেছিল। স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছে  ঠিকই তবে এখন শুরু যুদ্ধ জেতার লড়াই।

কি লড়াই কি  যে লড়াই! অকুতোভয় গেরিলাযোদ্ধারা প্রাণের মায়া তুচ্ছ করে নানা কায়দায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে দমআটকানো  পরিস্থিতিতে  ফেলছিলো বার বার। হানাদার বাহিনী যাতে দেশের প্রত্যন্ত  অঞ্চলে যেতে না পারে  সে জন্য বিস্ফোরক দিয়ে সেতু উড়ানো,  রেললাইন তুলে ফেলার পাশাপাশি ঢাকা শহরে মুক্তিযোদ্ধার অস্তিত্ত্ব জানান দিতে তৎকালীন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে পরবর্তীতে শেরাটনে বোমা ফাটানো হল। পৃথিবী বিস্মিত হল। অন্যদিকে প্রবাসী সরকারের উদ্যোগে  আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রকাশ হল স্বাধীন দেশের প্রথম ডাকটিকেট।


Place your ads here!

Related Articles

Justice of the Peace – origin and role

A Justice of the Peace (JP) is essentially an officer appointed by the government (federal or state) to carry out

Why do foreign diplomats speak in our domestic affairs?

Bangladesh is in the grip of a political crisis because the ruling and the opposition parties are unable to reach

Narrative of a voluntary emergency response team

As I saw the ticker tape scroll under the BBC news about the collapsed garments factory in Savar, my first

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment