কোরবানির দিন কোনও একটি দরিদ্র গ্রামে

কোরবানির দিন কোনও একটি দরিদ্র গ্রামে

ফজলুল বারী: জনকণ্ঠের পাঠকদের টাকায় আমরা একবার বাংলাদেশের একটি দরিদ্র জনপদে কোরবানির ব্যবস্থা করেছিলাম! পুরো ঘটনাটি আবার সবার সঙ্গে শেয়ার করি। একবার এক কোরবানি ঈদের আগে শেরপুরের এক গ্রামের মসজিদের ইমাম সাহেব আমাদের কাছে একটি চিঠি লেখেন। সেই চিঠিতে ইমাম সাহেব লেখেন, তার গ্রামের মানুষ খুব গরিব। বছরে একবারই কোরবানির ঈদ উপলক্ষে তারা মাংস খান! কিন্তু সে ঈদের আগের ঈদে গ্রামে কোনও কোরবানি না হওয়ায় তারা সে’বার মাংস খেতে পারেননি!  কারণ গ্রামের কারও কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। ইমাম সাহেবের কথাগুলো আমাদের খুব স্পর্শ করে। চিঠির কথাগুলোকে নিয়ে আমরা একটি মানবিক রিপোর্ট তৈরি করি। সেটি জনকণ্ঠের প্রথম পাতায় বক্স ট্রিটমেন্টে ছাপা হয়।

কিন্তু সেটি ছাপার পর সৃষ্টি হয় অন্য আরেক মানবিক পরিস্থিতির! নিউজটি ছাপার দিনই ঈদের ছুটি শুরু হয়ে গেছে। অফিস বন্ধ। আমি থাকতাম নিউ ইস্কাটন রোডের জনকণ্ঠ অফিসের সামনের গলিতে। অফিস থেকে ফোনে আমাকে অফিসে যেতে অনুরোধ করা হয়। কারণ, কিছু লোকজন অফিসে এসে আমাকে খুঁজছে! অফিসে গিয়ে দেখি তিন পরিবারের লোকজন রিসেপশনে বসা। আমাকে তারা বলেন আপনার রিপোর্ট পড়ে আমরা আবেগতাড়িত হয়ে আমাদের কোরবানির গরুর টাকা নিয়ে এসেছি। এই টাকাগুলো সেই গ্রামে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন প্লিজ। যে গ্রামে আগের ঈদে কোরবানি হয়নি! ওই অবস্থায় আমি যোগাযোগ করি জনকণ্ঠের  উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খান তথা সবার প্রিয় তোয়াব ভাইয়ের সঙ্গে। তাকে ঘটনা বলে এ ব্যাপারে নির্দেশনা চাই। তিনি টাকাগুলো রিসিভ করে তা জনকণ্ঠের শেরপুর প্রতিনিধির মাধ্যমে সে গ্রামে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে বলেন। কিন্তু তখন এ নিয়ে আরেক সমস্যা দেখা দেয়! । কারণ তখন তো আজকের মতো এমন টাকা পাঠানোর নানান ব্যবস্থাপনা ছিল না।

জনকণ্ঠের শেরপুর প্রতিনিধি মনিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি টাকাগুলো ফুলবাড়িয়ার বিআরটিসি বাস ডিপোতে অমুকের কাছে পৌঁছে দিতে বলেন। এরপর বিআরটিসির বাসে টাকাগুলো যায় শেরপুরে। সে টাকাগুলো পেয়ে মনিরুল ইসলাম ছুটে যান সেই গ্রামে। সেই ইমাম সাহেবকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের বাজার থেকে কেনেন তিনটি বড় গরু। ঈদের দিন এ নিয়ে সে গ্রামে ছোটাছুটি পড়ে যায়। ঈদের নামাজের পর সেই  পরিবারগুলোর সদস্যদের নামে সেই ঈদগাহের  পাশেই গরু তিনটি কোরবানি দেওয়া হয়। সেখানেই কাটা হয় মাংস। ঈদের জামায়াত শেষে অপেক্ষমাণ মানুষেরা যার-যার ভাগের মাংস নিয়ে বাড়ি যান। ঈদের ছুটির পর পুরো বিষয়টা নিয়ে জনকণ্ঠে আমরা একটি ফলোআপ রিপোর্ট করেছিলাম।

কোরবানির ঈদ, পশু কোরবানি নিয়ে আগামী কিছুদিনের মধ্যে বাংলাদেশ জুড়ে এক ধরনের যজ্ঞ শুরু হয়ে যাবে! অনেকে যার-যার গ্রামে কোরবানি দিতে যাবেন। শহরে পাড়ায়-পাড়ায় চলবে কোরবানির পশু নিয়ে নানাকিছু! কোরবানির উদ্দেশ্যে কেনা পশু নিয়ে পাড়ায় মহল্লায় ঘুরবে একদল মৌসুমি সৌখিন শহুরে রাখাল! আজকাল আমাদের সমাজে সংসারে ধর্মীয় বিশ্বাসের কোরবানির চাইতে কোরবানিটা আমাদের সামাজিক জীবনে এটি অনেকের বিত্ত-বৈভবের এক ধরনের প্রদর্শনীও বটে! কার গরুর দাম কত টাকা, ভাই আপনি গরু না ছাগল এসব প্রশ্নের নানান কিসিমের পরিস্থিতিও চলবে কয়েকদিন। দৃষ্টি আকর্ষণে অনেকে আজকাল উটও কোরবানি দেন! ভারতের রাজস্থানের উট সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে হয়ে যায় পবিত্র আরবের পবিত্র উট! ঢাকার মতো বড় শহরগুলোয় কোরবানির ঈদ উপলক্ষে মাংস সংগ্রহের জন্যে বাইরে থেকে অনেক লোকজন আসেন। তাদের অনেকে এতবেশি মাংস পান যে ঈদের দিন শহরের নানা জায়গায় এসব মাংস বিক্রির হাট বসে! বিভিন্ন এলাকার হোটেল মালিকরা তুলনামূলক কম দামে এসব মাংস কিনে নিয়ে ফ্রিজ বোঝাই করে রাখেন! ঈদের পর এসব মাংসের তরকারিই অনেকদিন বিক্রি হয় এসব হোটেল-রেস্টুরেন্টে। ঢাকার বাইরে থেকে আসা অনেকে এ সব মাংস খোলা জায়গায় রোদে শুকিয়ে শুটকির মতো করে নিয়ে যান!

দেশের সামর্থ্যবানদের আমরা কোরবানি নিয়ে ভিন্ন চিন্তার অনুরোধ করছি। আপনার কোরবানিটা এমন কোনও দূরবর্তী দরিদ্র গ্রামে গিয়ে দিন যেখানে অনেক মানুষের কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই। আপনার কোরবানিটা তেমন একটি গ্রামে দেওয়া গেলে এতে করে সে গ্রামের মানুষেরা অন্তত ঈদের দিন মাংস খেতে পারবে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে যে আনন্দ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে, তা হবে অনেক মূল্যবান এক উপলদ্ধি প্রাপ্তির।  পাবেন তাদের প্রাণের দোয়া। এতে করে আপনার সম্পদ দরিদ্র মানুষের  কাছে শেয়ারিং তথা ধর্মীয় মূল্যবোধের কাজটিও সঠিকভাবে করা যাবে। এ ব্যাপারে কেউ উৎসাহী হলে আমরা আমাদের মাঠকর্মী সাংবাদিকদের মাধ্যমেও এর আয়োজনে সহযোগিতা দিতে পারবো। প্রয়োজনে আপনিও উপস্থিত থাকতে পারেন তেমন আয়োজনের গ্রামে। দেখবেন এতে করে ঈদের খুশির আনন্দ ছড়িয়ে যাবে সবখানে। ট্রাই করে দেখবেন?


Place your ads here!

Related Articles

Foreign Minister Dr. Dipu Moni’s visit to India

In Bangladesh foreign policy, “India factor” looms large. Many bilateral issues are pending for a long time and Bangladesh cannot

মোসলেহ উদ্দিন নামের কোন লোক ধরা পড়েনি ভারতে

ফজলুল বারী: নিজের বিরুদ্ধে আজ রিপোর্ট লিখছি। নিজের বিরুদ্ধে কী রিপোর্ট লেখা যায়? রিপোর্ট যদি সত্য হয় তাহলে লিখা যাবেনা

প্রেস কাউন্সিল বন্ধ করে দিলে ক্ষতি কী?

ফজলুল বারী: মনটা খুব খারাপ। বাংলাদেশে আরেকজন সাংবাদিককে তথ্য প্রযুক্তি আইনে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে! সরকারের প্রেস কাউন্সিল আছে। সেখানে

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment