‘প্রভাত ফেরী – কবিতা বিকেল বাংলা সংস্কৃতি উৎসব’ “বাংলা ফেস্ট সিডনী” অনুষ্ঠিত হবে ২রা নভেম্বর ২০১৯
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কবিতা বিকেল প্রবাসে শুদ্ধ বাংলা সংস্কৃতির চর্চা ও প্রসারে কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছর থেকে সিডনির ওয়াইলি পার্ক এম্ফি থিয়েটারে আয়োজন করে আসছে “বাংলা ফাস্ট সিডনি” নামের সব্যসাচী একটি অনুষ্ঠানের যেখানে বাংলা সংস্কৃতির সবগুলো শাখাকে একইসাথে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। যার ফলে প্রবাসী প্রজন্ম এবং তাঁর উত্তরসূরিরা তাঁদের শিকড়ের সাথে সহজেই পরিচিত হতে পারে। সামান্য সময়ের জন্য হলেও প্রবাসী প্রথম প্রজন্ম ভাবালুতায় আক্রান্ত হয় আর দ্বতীয় প্রজন্ম বুঝতে পারে তাঁদের শিকড়ের সংস্কৃতির বিশালতা। এখানে উল্লেখ্য বাংলা ফেস্টের সকল আয়োজন বিনামূল্যে সকলের জন্য উন্মুক্ত।
এবছরও কবিতা বিকেল প্রবাসী বাঙ্গালীদের নিয়ে উদযাপন করতে যাচ্ছে দিনব্যাপী বাংলা সংস্কৃতি উৎসব। দেশ থেকে মনে বয়ে নিয়ে আসা রঙ দিয়ে সিডনীর সবুজ ক্যানভাসে আঁকতে চাইছে বাঙ্গালিয়ানার কোলাজ। সাতসুরে বেঁধে উড়িয়ে দিতে চাচ্ছে মন কেমনের ইচ্ছে ঘুড়ি।
কবিতা বিকেলের এই উদ্যোগের সাথে এবার যুক্ত হয়েছে ‘প্রভাতফেরী’ পত্রিকা। এবারও সিডনীর ওয়ালি পার্কের এরেনা মঞ্চটিকে কেন্দ্র করে দিনভর বাতাসে ভাসবে বাংলার সুর, নুপুরের ঝংকার, কবিতার ছন্দ; থাকছে আবহমান বাংলার লোকজ আঙ্গিকের পালা, বহুভাষী কবিদের সাহিত্য সম্মিলনী; প্রখ্যাত আলোকচিত্র শিল্পী জে. এম. বি. আকাশের ছবির হাট, মানুষের গল্প; সিডনীর গুণী শিল্পী এবং সংগঠনের পাশাপাশি এবারের উৎসবের মঞ্চে আলো ছড়াবেন নন্দিত সঙ্গীতশিল্পী, গবেষক মৌসুমী ভৌমিক।
দুপুর দুইটা থেকে শুরু করে এই আয়োজন চলবে রাত দশটা পর্যন্ত। শুরুতেই পরিবেশন করা হবে “নিঠুর বোনে বিধুর নিরুপম” নামে কটি লোকনাটক। এরপর থাকবে তামিমা শাহ্রীনের গ্রন্থনা ও পরিচালনায়, ‘কবিতা বিকেল : পরম্পরা’র শিশুদের গান ও আবৃত্তির কোলাজ ‘টোনা টুনির দেশে’। তারপর থাকছে কবিতা বিকেলের নতুন প্রযোজনা ‘হাড়েরও ঘরখানি’। সন্ধ্যা সাতটার সময় পরিবেশন করা হবে নাটক “দেবী সর্পযস্তা।” এরপর থাকছে অস্ট্রেলিয়ার শিল্পী জন প্রভুদান এবং তাঁর বন্ধুদের গান। আর সবশেষের আকর্ষণ হিসেবে রাখা হয়েছে মৌসুমী ভৌমিকের গান যেটা চলবে রাত দশটা পর্যন্ত। এসবের পাশাপাশি জিএমবি আকাশের চিত্র প্রদর্শনী চলবে অনুষ্ঠানের পুরো সময়টা জুড়েই। গতবারের ধারাবাহিকতায় এইবারও কবিতা বিকেল গুণীজন সংবর্ধনার আয়োজন করতে যাচ্ছে। এবারের গুণীজন সংবর্ধনা দেয়া হবে নেহাল নিয়ামুল বারীকে।
মৌসুমি ভৌমিক আমাদের সময়ের অনন্যতমা কণ্ঠস্বর; বিরুদ্ধস্রোতে একা দাঁড়িয়ে থাকা সাহসের নাম। আসছেন এবারের ‘প্রভাত ফেরী কবিতা বিকেল বাংলা সংস্কৃতি উৎসব’ – এ। উনি গানে গানে শোনাবেন দু’টো বাক্শে সারাজীবন পুরে নিয়ে নতুন এক দেশে পাড়ি জমানো পরবাসী, কিংবা নদীর ভাঙ্গনে ভূমিহীন ভূমিপুত্র, প্রান্তিক ব্রাত্যজন অথবা শহরবন্দী নাগরিক একা মানু ষের গল্প – ‘বাড়ি কোথায়?’
জি এম বি আকাশ মানুষের ছবি আঁকেন। যে মানুষেরা তোমার কাছে, আমার কাছে অদরকারী – ক্যমেরার চারকোনা ফ্রেমে আকাশ আমাদের সেইসব মানুষের গল্প শোনান। প্রতিদিনের যুদ্ধে লড়ে যাওয়া, হেরে যাওয়া মানুষেরা আকাশের ছবির বিষয়। ক্যমেরাকে আকাশ ব্যবহার করেন হাতিয়ার হিসেবে – দিনবদলের হাতিয়ার। ‘প্রভাতফেরী কবিতা বিকেল বাংলা সংস্কৃতি উৎসব’ – এ থাকছে জি এম বি আকাশের একক স্থিরচিত্র প্রদর্শনী।
বছর কুড়ি কিংবা তার কিছু আগের কথা। দু’ তিনটে টেবিলে কিছু বাংলা বই, সঙ্গে অন্তরে বাহিরে মাতৃভাষা বাংলা আর বাঙ্গালিয়ানাকে ধারণ, লালন করা ক’জন বন্ধু সুহৃদ – সিডনির অ্যাশফিল্ড শহরতলির একটি মাঠে, নেহাল নিয়ামুল বারী, এভাবেই শুরু করেছিলেন একুশের বইমেলা। মিশুক প্রকাশনীর ব্যনারে শুরু এ মেলাটি এখন একুশে একাডেমির সুদক্ষ তত্ত্বাবধানে আয়োজিত হয়ে আসছে প্রতিবছর; হয়ে উঠেছে সার্বজনীন, বৈশ্বিক এক ধারনা – ‘Conserve your mother language‘, ‘মায়ের ভাষার যতন কোরো’ – যার মুল প্রতিপাদ্য। প্রবাসের অচিন হাওয়া জলে, আমাদের প্রাণের ভাষা, মায়ের ভাষার ছোট্ট একটি চারাগাছ লাগিয়েছিলেন নেহাল নিয়ামুল বারী, কালের পরিক্রমায় তা আজ হয়ে উঠেছে মহীরুহ; ফেব্রুয়ারি মাসে সিডনিবাসী বাঙ্গালির অনিবার্য গন্তব্য – একুশে বইমেলা।
নিভৃতচারী, ঋজু এই মানুষটি ‘কবিতা বিকেল সম্মাননা ২০১৯’ এর জন্য মনোনীত হয়েছেন। আগামী ২ নভেম্বর ওয়াইলি পার্কে আয়োজিত ‘প্রভাত ফেরী – কবিতা বিকেল বাংলা সংস্কৃতি উৎসব’ -এ এই সম্মাননা তাঁর হাতে তুলে দেবেন কবিতা বিকেলের কর্ণধার, কবি মাহমুদা রুনু।
প্রবাস জীবনে সারাবছর জুড়েই নানা ধরণের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড চলতে থাকে তবে অনুষ্ঠানের মানদণ্ডের বিচারে সেগুলো কতখানি শুদ্ধভাবে বাংলা সংস্কৃতিকে তুলে ধরছে সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। সেখানে কবিতা বিকেলের মতো হাতেগোনা একটা দুটো প্রতিষ্ঠান শুদ্ধভাবে বাঙালি সংস্কৃতি চর্চা এবং সেটা পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাঁদের আরো একটা বিষয় লক্ষণীয় সেটা হচ্ছে অন্যান্য সকল অনুষ্ঠানে যেখানে বিজ্ঞাপন দাতাদের দৌরাত্ম্যে মূল অনুষ্ঠানের ভাবধারা বা ধারাবাহিকতা হারিয়ে যায় সেখানা কবিতা বিকেল বিজ্ঞাপনের পরোয়া না করে অনুষ্ঠানের গুণাগুণ অক্ষুন্ন রাখায় সচেষ্ট থাকে। যারফলে তাঁদের অনুষ্ঠানের যিনি একবার আসেন তিনি বারবার আসেন। আর বড়দের বিনোদনের পাশাপাশি বিনোদনের বিষয়টি মাথায় রেখে অনুষ্ঠানসূচি ঠিক করা হয় তাই সপরিবারে কেউ অনুষ্ঠানস্থলে আসলে পরিবারের কোন সসদ্যই আর বিরক্ত হন না। সিডনিবাসীদের প্রত্যাশা প্রবাসের শত প্রতিকূলতার মধ্যে কবিতা বিকেল তাঁদের এই বাঙালি সংস্কৃতির শুদ্ধ চর্চা অব্যাহত রাখবে এবং প্রতিবছর বাংলা ফেস্টের মতো আয়োজনের মাধ্যমে প্রবাসী প্রজন্মকে তাঁদের শিকড়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে।
Md Yaqub Ali
আমি মোঃ ইয়াকুব আলী। দাদি নামটা রেখেছিলেন। দাদির প্রজ্ঞা দেখে আমি মুগ্ধ। উনি ঠিকই বুঝেছিলেন যে, এই ছেলে বড় হয়ে বেকুবি করবে তাই এমন নাম রেখেছিলেন হয়তোবা। যাইহোক, আমি একজন ডিগ্রিধারী রাজমিস্ত্রি। উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করতে অস্ট্রেলিয়াতে আমার আগমন ২০১৫ সালের মার্চে। আগে থেকেই ফেসবুকে আঁকিবুকি করতাম। ব্যক্তিজীবনে আমি দুইটা জীবের জনক। একটা হচ্ছে পাখি প্রকৃতির, নাম তার টুনটুনি, বয়স আট বছর। আর একজন হচ্ছে বিচ্ছু শ্রেণীর, নাম হচ্ছে কুদ্দুস, বয়স দুই বছর। গিন্নী ডিগ্রিধারী কবিরাজ। এই নিয়ে আমাদের সংসার। আমি বলি টম এন্ড জেরির সংসার যেখানে একজন মাত্র টম (আমার গিন্নী) আর তিনজন আছে জেরি।
Related Articles
Bangladesh and Dr. Manmohan Singh
Dr Manmohan Singh, Prime Minister of India is an erudite person, having earned degrees from both Oxford and Cambridge. He
প্রিয় মানুষের শহর – ৩
[প্রিয় মানুষের শহর] আমিনা ও আবুল আমার ফেইজবুক বন্ধু। বেশ কয়েক বছর থেকে। সরাসরি দেখা হয়নি কখনো। ওনাদের একটা বাচ্চাদের
Innovate or perish – who cares about tomorrow?
Investment in research and development (R&D), science and technology can stimulate sustainable and longer-term economic growth of a country –