সিডনিতে সাঁতার কাটতে গিয়ে সাগরে তলিয়ে গেলো বাংলাদেশি ছাত্র রাহাত
ফজলুল বারী: তিন বন্ধু। রাহাত-বাপন-ফয়সল। তিন বাংলাদেশি ছাত্র। তিনজনই বাংলাদেশের কুমিল্লার। অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে এসে তিন জন একসঙ্গে থাকতেন সিডনির ওয়ালি পার্কে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে তাদের এক বন্ধু নেই। বাসায় নেই। বন্ধুটির নিথর দেহ এখন সিডনির গ্লিভের মর্গে। যে মর্গে আছে তার নাম রাহাত। রাহাত বিন মোস্তাফিজ (২০)। প্রিয়জন বন্ধুকে হারিয়ে বাপন-ফয়সল বৃহস্পতিবার থেকে শুধু কাঁদছেন। কোন জবাব নেই।
তিন বন্ধু বৃহস্পতিবার একসঙ্গে বেড়াতে বেরিয়েছিলেন। বেড়াতে বেরিয়ে তিনজন এক দূর্ঘটনায় পড়েন দক্ষিন সিডনির ওয়াটামোলা সমুদ্র সৈকতে। সেখানেই পানিতে তলিয়ে যান রাহাত। বন্ধুকে বাঁচাতে আপ্রান চেষ্টা করেছেন বাপন-ফয়সল। পারেননি। রাহাতকে বাঁচানোর চেষ্টায় বাপন-ফয়সলও গুরুতর আহত হন। দু’জনেরই ফুসফুসে পানি ঢুকে যায়। একজন স্বেচ্ছাসেবক জীবন রক্ষাকারী তাদের প্রাথমিক পরিচর্যা দিয়ে সাহায্যের জন্যে এম্বুলেন্স ডাকেন। প্যারামেডিকসরা বাপন-ফয়সলকে দ্রুত নিয়ে যান সেন্ট জর্জ হাসপাতালে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া রাহাতকে মৃত অবস্থায়ই উদ্ধার করে পুলিশ। তার নিথর শরীরই এখন সিডনির গ্লিভের মর্গে।
দক্ষিন সিডনির রয়েল ন্যাশনাল পার্ক লাগোয়া ওয়াটামোলা সৈকতটি সাঁতারের জন্যে বিশেষ জনপ্রিয়। ওখানে কিছু উঁচু জায়গা আছে সেখান থেকে অভিযান প্রিয় সাঁতারুরা লাফিয়ে পড়ে সাগরে। বৃহস্পতিবার এখানে সেখানে ঘুরে ক্লান্ত তিন বন্ধু ওয়াটামোলায় যায়। এরমাঝে রাহাতেরই শুধু সাঁতারের প্রস্তুতি ছিল। মূলত রাহাতের আগ্রহেই বাপন-ফয়সল সেখান থেকে লাফিয়ে পড়েন সাগরে। তিন বন্ধুই সাঁতার জানতেন। কিন্তু লাফিয়ে পড়ে কিছুক্ষন সাঁতরাবার পর রাহাত বলেন তিনি আর সাঁতরাতে পারছেননা। বাপন-ফয়সল তখন রাহাতের উদ্দেশে সাহায্যের হাত বাড়ান। কিন্তু ততক্ষনে তলিয়ে যেতে শুরু করেছেন রাহাত। তাকে রক্ষায় বাপন-ফয়সলেরও তলিয়ে যাবার অবস্থা হয়। তিনজনই সেখানে পরষ্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। তখন কেউ কারো খবর তখন আর জানেননা।
কোনভাবে সৈকতে উঠে হেঁটে বাপন এসে কাছের এক গাড়ি পার্কিং’এ এসে আর হাঁটবার শক্তি হারিয়ে শুয়ে পড়ে বমি করতে থাকেন। সেখানেই বেড়াতে আসা এক নারী বাপনের অবস্থা বোঝে তার সঙ্গী লাইফগার্ডের দৃষ্টি আকর্ষন করলে তিনি দ্রুত তার পেটে জমা পানি বের করার উদ্যোগ নেন। খবর পেয়ে এম্বুলেন্স-প্যারামেডিকসরা ছুটে ফয়সলকেও শুশ্রুষা দিয়ে দু’জনকে নিয়ে রওয়ানা হন হাসপাতালে। পুলিশ এসে উদ্ধার করে রাহাতের মৃতদেহ। এই উদ্ধারে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক ধারনা ঘোরাঘুরিতে ক্লান্ত রাহাত লাফিয়ে পড়ার সময় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। এরকারনেই দূর্ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার এই দূর্ঘটনার পর তিন বন্ধুর একজনকে হারিয়ে অপর দু’জন শোককাতর। শুধুই তারা কাঁদছেন। নিউসাউথ ওয়েলস পুলিশের সদস্য রাহাতের এক নিকটাত্মীয় এখন মরদেহের আইনি দিক নিয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আর বাংলাদেশের কুমিল্লার থেকে রাহাতের পরিবারের কান্না এসে পৌঁছছে সিডনি পর্যন্ত। কারো কাছে কোন জবাব নেই। কারন অনেক স্বপ্ন নিয়ে এখানে রাহাত পড়তে এসেছিলেন। মরতে নয়। আইটির ছাত্র রাহাত সিডনিতে উবারইটসের সঙ্গে কাজ করতেন। সম্প্রতি ম্যাকডোনাল্ডে চাকরি হয়েছিল তার। কিন্তু সেই চাকরিতে যোগ দেবার আগেই চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেলেন বাংলাদেশের রাহাত।
Related Articles
A book in English – Dilruba Shahana
While in Bangladesh book lovers used to buy books in Bangla to bring with them abroad, it is a very
বসন্ত মেলার আয়োজনে মুখর সিডনিবাসী
শীতের শেষে বসন্ত মেলায় হলুদ পরীদের দেখেছি সেদিন জুবিলি ওভালের বালুকা বেলায় ঋতুরাজ বসন্তকে স্বাগত জানাতে ১২ অক্টোবর ২০১৩ কোগারাহ
Quarantiny – Chapter 2 Pre-Quarantine
“We will get through it andwe will come out stronger” We are the surrounded by the 21st Century Quarantine “Diplomacy”!