নির্বাচনী ইশতেহারের বেকার ভাতা!
ফজলুল বারী
নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারেতরুন ভোটারদের সামনে টানতে নানা সুযোগ সুবিধার টোপ দেয়া হয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগঅস্বচ্ছ অথবা প্রতারনামূলক। অথবা যে সব অফারের প্রস্তাব করা হয়েছে এ সম্পর্কেসংশ্লিষ্টদের পর্যাপ্ত ধারনা আছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। ঐক্যফ্রন্টের বিএনপিরইশতেহারে চাকরির বয়সসীমা তুলে দেবার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অত চাকরিও দেশে নেই। যেসব দেশে চাকরির বয়সসীমা নেই সে সব দেশেও চাকরিতে নিয়োগের জন্যে তুলনামূলক কমবয়সীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়। কারন তরুনদের শারীরিক সক্ষমতা বেশি। তারা বেশিদিন কাজকরতে পারবে।
শুরুতেই বলে রাখি অস্ট্রেলিয়া সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সামাজিক নিরাপত্তার কর্মসূচির অংশ হিসাবে বেকার ভাতা সহ নানা ভাতা চালু আছে এসব কারো দয়া নয়, অধিকারের বিষয়। কল্যান রাষ্ট্রের চরিত্র যে সব দেশে-রাষ্ট্রে আছে সে সব দেশে চালু আছে এসব ব্যবস্থা। এক টেলিভিশনের টকশোতে দেখলাম একজন বলছেন, বেকারভাতা নাকি বিভিন্ন দেশে কেউ আগে চাকরিতে ছিল, এখন চাকরি নেই এমন বেকারদেরই দেয়া হয়। এই তথ্যটিও সঠিক নয়। বেকারভাতার যোগ্য যেমন সব বেকার নয়, তেমনি পুরো কনসেপ্টটাই সংশ্লিষ্ট বেকারের চাকরি পেতে সহায়তামূলক।
অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞতাটি এখানে শেয়ার করছি। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি সে যে বয়সেরই হোকনা কেনো রাষ্ট্র তাকে কাজ পেতে সহায়তা দেয়। যতোক্ষন কাজ না হবে ততোক্ষন দেয় বেকার ভাতা। অস্ট্রেলিয়ায় সেন্টার লিঙ্ক নামের সমাজকল্যান মন্ত্রণালয়ের একটি অফিস অথবা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বেকার ভাতা সহ সব ধরনের ভাতার বিষয়টি দেখভাল করা হয়। মনে করুন কেউ একজন সেন্টার লিঙ্কের ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করে বললেন তার কাজ নেই। তখন সেন্টার লিঙ্কের কোন একটি শাখা অফিসে তার একটি সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করা হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার অভাব থাকলে তখন তার জন্যে ব্যবস্থা করা হয় দোভাষীরও।
সেন্টার লিঙ্ক অফিসে সবার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্যে সৃষ্টি করা হয় একটি গ্রাহক রেজিস্ট্রেশন নাম্বার। অস্ট্রেলিয়ায় যেমন প্রতিটি কর্মক্ষম নাগরিকের একটি ট্যাক্স ফাইল নাম্বার থাকে, এই সিআরএন তথা কাষ্টমার রেজিস্ট্রেশন নাম্বারটিও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটির সব সময়ের জন্যে থাকবে। সাক্ষাৎকারের সময় নাগরিকের পাসপোর্ট সহ পরিচয় শনাক্তকরনের প্রমানাদি সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়। সাক্ষাৎকারে সবার আগে ক্ষতিয়ে দেখা হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আর্থিক অবস্থা। মনে করুন এক যুবক ভাতার জন্যে এসেছে সে যদি অভিভাবকের সঙ্গে থাকে অথবা তাঁর স্ত্রী যদি কোন কাজে থাকে তখন অভিভাবক বা স্ত্রীর আয়ের ওপর ভাতার বিষয়টি নির্ভর করবে। এই আয় যদি অস্ট্রেলিয়ান মানদন্ডে যথেষ্ট মনে করা হয় তাহলে তাকে ভাতার জন্যে বিবেচনাই করা হবেনা।
নির্ভরশীল বাবা-মা বা স্ত্রীর আয় যদি অস্ট্রেলিয়ান মানদন্ডে পর্যাপ্ত মনে করা না হয় তখনই তার ভাতার বিষয়টি বিবেচিত হবে। যদি আবেদন প্রার্থীর কোন নির্ভরশীল ব্যক্তিই না থাকেন তবে তার ভাতার পরিমান প্রতি দু’সপ্তাহে পাঁচশ ডলারের বেশি হতে পারে। দু’ সপ্তাহ পরপর টাকা চলে যাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যাংক একাউন্টে। তবে ভাতার পুরো বিষয়টি শর্ত সাপেক্ষ। অস্ট্রেলিয়ায় এই বেকার ভাতার নাম নিউ স্টার্টস এলাউন্স।
ভাতার সিদ্ধান্ত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেদিন সেন্টার লিঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন ভাতা দেয়া হবে সেদিন থেকেই। কিন্তু ভাতা প্রাপ্ত ব্যক্তিকে তখন থেকে কোন একটি জব সেন্টারের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেয়া হবে। তাকে অনলাইনে চাকরি খুঁজতে নিয়মিত যেতে হবে সংশ্লিষ্ট জব সেন্টারে। জব সেন্টারের শর্ত মেনে নিয়মিত সেখানে না গেলে তারা সেন্টার লিঙ্কে রিপোর্ট করলে তার ভাতা বন্ধ হয়ে যাবে। অস্ট্রেলিয়ার এসব জব সেন্টার কোন সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়। সরকারের সমাজকল্যান মন্ত্রনালয়ের সহায়ক হিসাবে এসব প্রতিষ্ঠান চুক্তি ভিত্তিক কাজ করে।
সংশ্লিষ্ট জব সেন্টার প্রতিষ্ঠান তাদের কাছে সেন্টার লিঙ্কের পাঠানো চাকরি প্রার্থীর দক্ষতা মাফিক কাজ খুঁজে দিতে সহায়তা করবে। এদেশ কাজ মানে যে কোন কাজে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম। মনে করুন একজন বেকার প্রকৌশলী বা শিক্ষক, বেকারভাতা প্রাপ্ত হিসাবে তিনি নিয়মিত জব সেন্টারে যান। ওই সময়ে যদি জব সেন্টার তার জন্যে একজন শ্রমিক বা নিরাপত্তা কর্মীর কোন কাজ পায় সেটিতেই তাকে পাঠানোর চেষ্টা করবে। সেন্টার লিঙ্কের ভাতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তিকে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কাজ দিলে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয় বিশেষ প্রনোদনা। এই প্রনোদনার পরিমান ছয় মাসে আট হাজার ডলারের মতো। কাজের চুক্তিটি হয়ে গেলে নতুন চাকরিতে যাওয়া উপলক্ষে পোশাক-জুতো কেনার জন্যেও টাকা দেয়া হয়। কাজ শুরু হয়ে গেলে তার আয়ের ওপর নির্ভর করে সরকারি বেকার ভাতা বন্ধ করা হয় পর্যায়ক্রমে।
অস্ট্রেলিয়ায় অনেকে কাজ খুঁজতে জব সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত থাকা অবস্থাতেই কোন একটি পড়াশুনাতেও চলে যান। কারন পড়াশুনায় গেলেও তিনি নিউ স্টার্টসের বদলে অস্টাডি নামে একটি ভাতা পাবেন। পড়াশুনা চলা পর্যন্ত এই ভাতা বহাল থাকবে। তখন আর জব সেন্টারে যেতে হবেনা। নিউ স্টার্টস এলাউন্স তথা বেকার ভাতায় থাকা অবস্থায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যদি পোষ্য সন্তান থাকে তাদের ভরনপোষনেও দেয়া হয় ভাতা। ১৮ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত এবং শিশু ভাতা পাবার যোগ্য। আবার সন্তানদের মা সন্তানের বয়স ৬ বছর না হওয়া পর্যন্ত যদি কাজ না করে বাচ্চা লালনপালন করতে চান তিনিও পাবেন মাতৃত্বকালীন ভাতা। মা পড়াশুনায় থাকলে এই পিতৃকালীন অথবা পেরেন্টিয়াল ভাতা পেতে পারেন বাচ্চাকে দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত পিতা। অস্ট্রেলিয়া একটি কল্যান রাষ্ট্র। এদেশের নাগরিকদের স্কুল পর্যন্ত (দ্বাদশ শ্রেনী) পড়াশুনা, চিকিৎসা ফ্রি। এদেশের অস্বচ্ছল পরিবারের শিশু এবং বয়স্কদের ভরনপোষনের দায়িত্ব পালন করে এই কল্যান রাষ্ট্র। সামাজিক নিরাপত্তার অংশ হিসাবে বেকার ভাতা সহ নানা ভাতা চালু থাকায় এদেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রনে থাকে। চাকরির অভাবে হাহাকার থাকেনা। বেকার ভাতার পরিমানটিও পর্যাপ্ত না হওয়ায় কর্মক্ষম উপযুক্ত ব্যক্তিরা এ ভাতায় পড়ে থাকতে চায় না।
বাংলাদেশে এরমাঝে নারী শিক্ষা, বিধবা ভ্রাতা, বয়স্ক ভাতার মতো কিছু কিছু ক্ষেত্রে কল্যান রাষ্ট্রের কনসেপ্ট চালু হয়েছে। কিন্তু এর অনেক কিছুই স্বচ্ছতার অভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত। নির্বাচিত ইশতেহারে এবার বেকার ভাতা সহ তরুনদের আকৃষ্ট করার নানা প্রস্তাব যেগুলো এসেছে তা ইতিবাচক। কিন্তু এসব প্রস্তাবনা যারা লিখেছেন এর বাস্তবায়ন নিয়ে সংশ্লষ্টদের পর্যাপ্ত ধারনা আছে কী?
Related Articles
Mamata Banerjee’s victory in West Bengal and its impact on Bangladesh
The power shift in West Bengal will have impact on Indo-Bangladesh issues. The unprecedented victory of Ms. Mamata Banerjee (56),
বড় ভেন্যুতে প্রবাসীদের বড় স্বপ্নের ম্যাচ
অস্ট্রেলিয়ার এত বড় ভেন্যুতে বাংলাদেশ এর আগে কখনো খেলেনি। এক সাকিব ছাড়া এখানে খেলেনি বাংলাদেশি কোন ক্রিকেটার! মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড।