কোটা আন্দোলনের গুন্ডামি! কোটা আন্দোলনের বিরুদ্ধে গুন্ডামি!

কোটা আন্দোলনের গুন্ডামি! কোটা আন্দোলনের বিরুদ্ধে গুন্ডামি!

বঙ্গবন্ধু আর শেখ হাসিনার ছবি মাথায় নিয়ে এক শিবির নেতার নেতৃত্বে যখন কোটা আন্দোলনটি শুরু হয় তখন চমকে যাই। কারন আমার কাছে এটি ছিল এক ধরনের ব্ল্যালমেইলিং। কারন এ ছবি তারা মন থেকে মাথায় নেয়নি। মাথায় নিয়েছে চাকরি পাবার স্বার্থে। আন্দোলনে ছাত্রলীগের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর অংশগ্রহন দেখে এক পর্যায়ে ভাবি এর পিছনে সরকারের কোন অংশের সমর্থন আছে কিনা! ভয়ও করে! কারন যত ছেলেমেয়েকে নিয়ে আন্দোলনে হয়েছে, অত সরকারি চাকরি বাংলাদেশে নেই। দুনিয়ার সব সরকার যেখানে ব্যয় কমাতে লোকবল কমাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশ সরকার উল্টো এত বিপুল পরিমান চাকরির ব্যবস্থা করে ফেলবে এমন আশা করাটা বাস্তব সম্মতও নয়। আর গত ৪৭ বছর ধরে বাংলাদেশের সরকারি চাকরির অভিজ্ঞতা দেশের মানুষ জানে। কেউ একটা কাজের জন্যে দেশের কোন একটি সরকারি অফিসে ঢুকলে তার ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’র অবস্থা হয়! বাংলাদেশের সংবিধানে জনগনকে মনিব আর সরকারি কর্মচারীদের সেবক অথবা গোলাম হিসাবে বর্ননা করা হয়েছে। গোলাম কিভাবে মনিবকে জিম্মি-হেনস্থা পারে সে অভিজ্ঞতা নিতে বাংলাদেশের যে কোন সরকারি অফিসে গেলেও যথেষ্ঠ। এরমাঝে ব্যতিক্রম যদি কেউ থাকেন বা থাকার চেষ্টা করেন তাকে সাইজ করে দেবার ব্যবস্থাটি সরকারি অফিসের মধ্যেই আছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যয় কমিয়ে সেবা নিশ্চিত করতে সরকারের অনেক চাকরি বিভিন্ন এজেন্সির হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশেও তাই একদিন করতে হবে।

নিজেদের স্বার্থধান্ধার কোটা আন্দোলনটি এক পর্যায়ে মানুষের পথ বন্ধ করে দিলো! চিন্তা করুন চাকরি পাবে বা করবে সে, আর এটি আদায়ের জন্যে মানুষের পথ বন্ধ করে দেবে! তাও আবার বঙ্গবন্ধু আর শেখ হাসিনার ছবি মাথায় নিয়ে! পুলিশ তখন তাদের তুলে দিতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে! অনেক আহত হয়! এরপর বলা হয় পুলিশ বিনা উস্কানিতে শান্তিপূর্ন হামলা চালিয়েছে! আমি তখন লিখেছিলাম, এই ছেলেরা মেয়েরা একদিন বাংলাদেশের ম্যাজিস্ট্রেট-পুলিশ অফিসার হবে। তাদের দায়িত্বের এলাকায় যদি কোন একটি গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দাবি আদায়ের জন্যে যদি বেআইনিভাবে মানুষের পথ বন্ধ করে রাখে তখন একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট-পুলিশ অফিসার হিসাবে তাদের ভূমিকা কী হবে? যারা পথ বন্ধ করে রেখেছে তাদের তুলে দেয়া না গোলাপ ফুল বিতরন করা! আমার কথা যাদের পছন্দ হয়নি তারা গালি দিয়ে বলেছেন, সরকারের দালাল! তার মাথার ওপর শেখ হাসিনার ছবি! আর আমি সরকারের দালাল! আর আমিতো থাকি বিদেশে। বাংলাদেশের কারো খাই-পরিনা। এর মানে এই দাঁড়ায়না, সেই আমার প্রথম কথায়! ছবিটা তারা মাথায় নিয়েছে স্বার্থধান্ধায়! মন থেকে নয়।

যাক এ বিষয়টিকে আমি গুরুত্ব দেইনা। আমি আমার প্রিয় প্রজন্ম ছেলেমেয়েদের চাকরি চাই। কিন্তু তাদের চাকরি চিন্তাটি বাস্তবোচিত নয়। যত মেধাবীই হোননা কেনো তাকে-তাদেরকে অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে দেখেন। টিকে থাকার জন্যে প্রথম একটা ক্লিনিং অথবা কিচেনহ্যান্ড জব খুঁজবে। অস্ট্রেলিয়ান পড়াশুনা এবং কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনের পরই হয়তো তুলনামূলক ভালো কোন জব পেতে পারে। তবে তা সরকারি চাকরি নয়। কারন এদেশের বেশিরভাগ রেলস্টেশনেও একজন মাত্র স্টাফ। তিনি টিকেট বিক্রি করেন। টয়লেটও তিনিই পরিষ্কার করেন। এদেশে সরকারি কর্মকর্তাদের কোন পিয়ন-ড্রাইভার নেই। তিনিই তার পিয়ন। তিনিই তার ড্রাইভার। কারো বাসায় কোন বুয়া নেই। এদেশে আমরা সবাই একেকজন বুয়া। এদেশে একজন বিদ্যুৎ প্রকৌশলীর চেয়ে বিদ্যুৎ মিস্ত্রির আয় বেশি। সবাই সেই কাজ করার চেষ্টা করেন যেটিতে আয় বেশি হয়। কারন চাকরির বেতনে বাইরে অন্য কিছু অর্জনের সুযোগ এখানে নেই। আট ঘন্টার অফিস মানে আট ঘন্টা। চার ঘন্টা পরে কুড়ি মিনিটের একটা ব্রেক। আর নিজের চাকরির স্বার্থে মানুষের পথ বন্ধ করা? সোজা ধরে নিয়ে তুলে দেবে বাংলাদেশগামী কোন বিমানে। যাও বাবু সব বাবুগিরি বাংলাদেশে গিয়ে করো। বাবুদের দেশ বাংলাদেশ!

পরিস্থিতি এমন দাঁড়ালো ছেলেমেয়ে জামায়াত-শিবির স্টাইলে গুজব রটিয়ে এটাসেটা করে বসে! মুক্তিযোদ্ধা মতিয়া চৌধুরীর উদ্দেশে এমনকিছু বলা হলো যেন সামনে পেলে তাকে ছিঁড়ে ফেলবে! আসল কথা হলো এদের সিংহভাগ যেমন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানেনা তেমন মতিয়া চৌধুরীকেও জানেনা। সরকারের যে কয়েকজন দুর্নীতিমুক্ত মন্ত্রী আছেন মতিয়া চৌধুরী তাদের অন্যতম। আর এই ছেলেমেয়েরা এখন সরকারি চাকরিতে যোগ দিলে তারা মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর অধীনে চাকরি করবেনা?

সৃষ্ট অরাজক পরিস্থিতিতে বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষনা দিলেন সরকারি চাকরিতে আর কোটা থাকবেনা। আন্দোলনটি যেহেতু স্বার্থ সংশ্লিষ্ট তাই আন্দোলনকারীরা শেখ হাসিনাকে আরও খুশি করার নিয়তে ‘মাদার অব এডুকেশন’ খেতাবও দিয়ে দেন। শেখ হাসিনা কি বলেছেন তা সংসদের রেকর্ডে আছে। কিন্তু এরপর গেজেটের জন্যে চাপাচাপি শুরু হয়! তুমি শেখ হাসিনার ছবি মাথায় নিয়ে আন্দোলন করো, তাকে মাদার অব এডুকেশন’ খেতাব দাও কিন্তু তাকে বিশ্বাস করোনা! শেখ হাসিনাকে মা’ ডাকো, তাঁর ওপর আস্থা রাখা, তাঁর ঘোষনা একোমডেট করতে তাকে সময় দেয়া উচিত ছিল। কারন ৪৭ বছর ধরে চলে আসা কোটা ব্যবস্থাটি এক ঘোষনায় তুলে দেয়া সহজ নয়। আন্দোলনকারীরা যেমন একটি পক্ষ, এর প্রতিপক্ষও আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সব পক্ষকে একোমডেট করে এগোতে হবে। কারন কেউ বিষয়টি নিয়ে কোর্টে গেলেই তা আটকে যাবে। বাংলাদেশের নানা পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে যেতে সরকারের সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা আছে। সরকার এরমাঝে কোটার বিষয়টি নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করেছে। সে রিপোর্ট আসুক। মুক্তিযোদ্ধা কোটায়, বীরাঙ্গনা ও শহীদ পরিবারকেও অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। দেশের অস্বচ্ছল সংগ্রামী পরিবারের মেধাবী সদস্য, মেধাবী এতিম ছেলেমেয়েদেরও কোটার আওতায় আনতে হবে।

এমন আরও অনেক কিছুতে একোমডেটিভ ভূমিকা নিতে হবে সরকারকে। এসব মাথায় না রেখে হঠাৎ একটি উস্কানিমূলক কাজ করে বসেছেন কোটা আন্দোলনের নেতা রাশেদ খান! ফেসবুক লাইভে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দেশটা কী তোর বাবা’র’!’ আরে বাবা তুমি যার ছবি মাথায় নিয়ে আন্দোলন করেছো, হঠাৎ তাঁর উদ্দেশে এমন অশোভন উক্তি করতে গেছো কার উস্কানিতে? এটি কি কোন নেতার কাজ হয়েছে? রাশেদ খানকে গ্রেফতারের পর আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের একটি মন্তব্য খুব পছন্দ হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট তাকে বলেছেন, নেতা হতে গেলে ধৈর্য ধরতে হয়। তার ধৈর্যচ্যুতি তাকে এবং তার অনুসারীদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। এখন রাশেদের দল জামায়াত-শিবির ক্ষমতায় না ফেরা পর্যন্ত তার আর কোন আশা নেই।

গত কয়েকদিন ছাত্রলীগের যে সব নেতাকর্মী যে গুন্ডামি দেখিয়েও তাও সমর্থন করিনা। তাদের দিয়ে এসব কারা করাচ্ছে তাও জানি। ছেলেগুলোকে বলছি সংযত হয়। নিজের ভালোমন্দ বোঝতে শেখো। গুন্ডাকে সবাই ব্যবহার করে। সমাদর করেনা। দলের নামে গুন্ডামি করতে গিয়ে দেশের বিপুল সংখ্যক তরুনকে সরকারের বিরুদ্ধে ঠেলেও দিওনা। এমন ভূমিকা পালন করতে গিয়ে ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী কক্ষচ্যুত হয়ে ফেরারী জীবন কাটাচ্ছেন। পুলিশের কাজ পুলিশ করুক।

প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দেশের কর্মক্ষম ছেলেমেয়েদের চাকরি পাবার সুযোগ কিভাবে বাড়ানো যায় এমন বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করুন প্লিজ। ছেলেমেয়েদের কাজ দরকার। প্রতিদিন আপনারা এত বক্তৃতা দেন, এত পরিকল্পনা পাশ করান, কিন্তু লক্ষ্য নতুন কর্মসংস্থান বাড়ানো, তা টার্গেটে কখনো শুনিনা। নতুন কর্মসংস্থান বাড়ানো হোক সরকারের মূল টার্গেট কর্মসূচি।

ফজলুল বারী


Place your ads here!

Related Articles

Justice Muhammad Habibur Rahman

During my tenure back in 2012 as a president of Singapore Bangladesh Society, I always had this idea of arranging

প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর: কিছু ভাবনা

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। এই বিজয় অর্জনে ভারত ও বিশেষ করে ইন্দ্রাগান্ধী এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী অসামান্য অবদান রেখেছিলেন বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে।

বাংলাদেশ এবং নিউজিল্যান্ড

অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড এর খেলাতে আবারও প্রমানিত হলো বিপক্ষ দল এবং অল্প রানকে অবজ্ঞা করলে কি পরিনতি হয় I অন্যদিকে

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment