অনু গল্প: ডাকাতিয়া

অনু গল্প: ডাকাতিয়া

সিমছাম, সুন্দর নিরীহ গ্রাম। যে দিকে চোখ যাবে, সবুজ আর সবুজ; চোখ জুড়ানো সবুজ চারিদিকে। আর সাথে আছে সরল প্রাণ নানান ধর্মের, ধর্মপ্রাণ মানুষের বসবাস।

সামনে ডাকাতিয়া নদীর স্বচ্ছ জল। ঘুঘুরচপের খিলার খাল আর ডাকাতিয়া নদীর মোহনায় একলা একটা বাড়ি। তার সদর পথের মুখে, নদীর পাড়ে ঘাসের উপর জলের দিকে মুখ করা একটি বেঞ্চি পাতা। তাতে বসা দুজন। স্নেহা আর অপূর্ব। দু’জনই একে অন্যের পার্শবর্তী গ্রামের। এক জন চাঁদপুর, অন্যজন কমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্চ পড়ছে।

স্নেহা, অপূর্বর হাতের উপর তার হাতটা রাখা। ঠিক হাতের উপর হাত না, অপূর্বই স্নেহার হাতের উপর হাতটা রেখে স্নেহার আঙুলের ফাঁকে নিজের আঙ্গুল গুলি গুঁজে দিয়ে আলতো করে ধরে রেখেছে। দুজনের পা’ই ভাঁজ করা। এক পায়ের উপর আরেক পা তোলা।

দু’জন দু জনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ থাকলেও সামনা সামনি অনেক দিন পর দেখা।

মুখলেস আছরের নামাজ পড়ে, ঠান্ডা শীতল জলের বাতাসে হাটতে বেরিয়েছে। আজ সকাল থেকেই বেশ গরম পড়ছিলো। গ্রীষ্মের বিকাল নদীর পাড় ধরে ছায়ায় ছায়ায় না হাঁটলে – নরম ঠান্ডা জলের বাতাস ও মনে হয়, লু হওয়া!

দূর থেকে খেয়াল করে চিনতে পারলো অনুজ স্নেহা আর অপূর্ব কে। দাউ দাউ করে আগুন জলে উঠলো মুকলেসের মাথায়। নিজেকে সামলে নিলো। কাছে গিয়ে আদর আর শ্রদ্ধা দিয়ে কথা বললো – কিছু সময় কাটালো ওদের সাথে। এসব ছেলে মেয়েদের জন্যেই অনাচারে ভরে গেছে এই সহজ সরল গ্রামের ধর্মপ্রাণ সমাজ। হাসিমুখে বিদায় নিয়ে আবার হাঁটা ধরলো মুখলেস।

আব্দুল বাড়ি থেকে বের হলো মাঝারি আকারের স্পোর্টস বেগ কাঁধে নিয়ে। মুখলেস অপেক্ষা করছে নদীর পাড়ে ফসল পাহারা দেবার কৃষকদের ছোট্ট ঝোপড়ি ঘরে।

মুখলেস আর আব্দুল, দু’জনেরই গ্রামে বেশ খ্যাতি আছে। যেমন ভদ্র, নম্র তেমনি মুরুব্বিদের প্রতি শ্রদ্ধা। ধার্মিক। অনার্চ, মাস্টার্স শেষ করেও গ্রামে পরে আছে তারা। গ্রামের সব কিছুর প্রতি কড়া খেয়াল। সমাজ, গ্রাম, দেশের প্রতি অনেক মায়া, নিবেদিত প্রাণ তারা।

সন্ধ্যা হতে আর বাকি নাই। খিলা বাজার জামে মসজিদ থেকে দেয়া মাগরিবের আজান শোনা যাচ্ছে! মুখলেস আর আব্দুল দু’জনই গোসল করে নিলো তড়িঘড়ি। ভাবছে নদীর পাড়েই নামাজ আদায় করে দু’জন বাড়ি যাবে একসাথে।

পরের দিন খুব ভোরে অজ্ঞাতনামা দু’জনের লাশ ভেসে উঠলো। চেনার উপায় নেই। শরীফপুর জামে মসজিদ আর নাগেশ্বর দীঘি, পীর শাহ শরীফ বাগদাদী (রহ.) মাজারের মাঝা মাঝি উল্টা দিকে! ঘুঘুরচপ থেকে প্রায় দশ পনেরো কিলোমিটার দূরে। ডাকাতিয়া নদীতে।

Shahadat Manik

Shahadat Manik

Writer, poet, lyricist and social activist.


Place your ads here!

Related Articles

স্বাধীনতার ঘোষক – মহান মুক্তিযুদ্ধ

আজকে বাংলাদেশের অনেককেই দেখলাম স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার দুষ্টচক্রে প্রেসিডেন্ট হওয়া ও পরে

আমাকে কেন?

দিলরুবা শাহানা: বার্তাটি হল আর্থার এ্যাশের। প্রশ্ন আসবে কে আর্থার এ্যাশ? তার কথা কি এমন গুরুত্বপূর্ণ? কেনই বা কথাগুলো শুনতে

Migrants and Remittances: Strategies for Future

The remittances from migrants contribute significantly to Bangladesh’s socio-economic development. The remittances have a multiplier effect not only for the

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment