সাফিনার সারাবেলা

সাফিনার সারাবেলা

সাফিনার সাথে আমার পরিচয় খুবই কাকতালীয়ভাবে। বাংলাদেশি কমিউনিটির একটা অনুষ্ঠানে গেছি। ভিতরে বড়রা বিভিন্ন ধরণের পরিবেশনায় ব্যস্ত। কিন্তু আমার ছেলেটাকে কোনোভাবেই স্থির রাখা যাচ্ছে না দেখে অগত্যা বাইরে এসে তাকে একটু নড়াচড়ার সুযোগ করে দিলাম। দেখি একই বয়সি জনা পাঁচেক বাচ্চা নিজেরা খেলছে। বাচ্চাদের দেখলেই আমার মনের মধ্যে নিজের ঐ বয়সের কথা মনেপড়ে আর আমি সাথেসাথে দুষ্টুমি শুরু করে দিই। তাই ওদের দেখেও আমি বিকট মুখভঙ্গি করে দিলাম একটা ভেংচি কেটে। সবাই কপট ভয় পেয়ে সরে গেল কিন্তু একটা মেয়ে আমার দিকে চেয়ে আমার চেয়েও বিকট ভঙ্গিতে একটা ভেংচি কেটে দিল।  ব্যস সাথেসাথে ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গেল।  একে অপরকে ভেংচি কাটার এই খেলা চলল আমাদের যতক্ষণ পর্যন্ত না সাফিনার মা এসে ওকে ডেকে নিয়ে গেল বাচ্চাদের পরিবেশনার জন্য।

দুরন্ত সাফিনা

সাফিনার মা সাকিনা আপুর সাথেও আমার সেই প্রথম পরিচয়। উনাকে না দেখলে আমি জানতামই না যে মেয়েরাও তবলা বাজাতে পারে। সাকিনা আপু বাংলাদেশে গ্রামীণ ফোনের মত ডাকসাইটে কোম্পানিতে একসময় চাকুরী করতেন।  এখানে এসেও উনি সফল কর্মজীবন পরিচালনা করছেন। বর্তমানে একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে রিয়েল এস্টেট এজেন্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। সাফিনার বাবা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ভাই হচ্ছেন সাফিনার সবচেয়ে ভালো বন্ধু।  সাকিনা আপুর শৈশব এবং কৈশোরের ছবি দেখে যতটুকু বুঝেছি উনি নিজেও অনেক দুরন্ত ছিলেন সেইসাথে মেধাবী। তাই প্রকৃতির নিয়মেই সাফিনা তার মায়ের সেই দুরন্তপনা এবং মেধা দুটোই পেয়েছে।

সাফিনার বাংলাদেশ

সাফিনার বয়স মাত্র ছয় পেরিয়ে সাতে পড়েছে। এই বয়সেই সে একইসাথে নাচ গান আর আঁকাআঁকিতে তার মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। সাফিনার আঁকাআঁকির বিশেষত্ব হচ্ছে তার ভিন্নধর্মি বিষয়বস্তু। একেবারে চিনামাটির পেয়ালা থেকে শুরু করে কাঠ সবকিছুতেই সে অবলীলায় একে চলে।  ওর আঁকাআঁকি দেখে বুঝার উপায় নেই যে ওর বয়স মাত্র ছয় বছর।  এরই মধ্যে সে প্যাস্টেল ছেড়ে তেলরঙের ব্যবহারও শিখে ফেলেছে। এমনকি সেটা দিয়ে সে তার মায়ের একটা পোট্রেট ওএকে ফেলেছে। পোট্রেট সবাই আঁকতে পারে কিন্তু ওর পোট্রেট এর বিশেষত্ব হচ্ছে ও ওর মায়ের একেবারে পোশাকের রং থেকে দুল পর্যন্ত নিখুঁতভাবে নকল করেছে। সেটা তখনই সম্ভব হয় যখন আপনি খুব ভালোভাবে আপনার মডেলকে লক্ষ করবেন। এটা থেকে ওর দেখার দূরদৃষ্টির একটা ধারণা পাওয়া যায়। আঁকাআঁকির পাশাপাশি সাফিনা গান শিখছে কিশলয় কচি কাঁচাতে রোকসানা বেগমের তত্ত্বাবধানে।

ভাষা দিবসে সাফিনা

সাফিনা আঁকাআঁকির বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন পুরস্কার জিতে নিয়েছে ইতোমধ্যেই। তাছাড়াও বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এখন সাফিনার মায়ের সাথেসাথে সাফিনার নামও চলে আসে নাচ এবং গানের জন্য। ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিল আয়োজিত ইঙ্গেলবার্ন লাইভে সাফিনার নাচ জাতি বর্ণ নির্বিশেষে আয়োজিত দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। সাফিনা যে এইটুকু বয়সে এতকিছু করে ফেলেছে তার সবকিছুর জন্য রয়েছে নানা লোকমান হাকিম, নানু হাফিজা বেগম, বিউটি নানু, বড় খালা শারমিন আক্তার, খালু আনোয়ার হোসেন, বাবা-মায়ের পাশাপাশি বাংলা আর্ট এক্সিবিশনের অণুপ্রেরণা এবং অকুন্ঠ সহযোগিতা। তাই আপনারা সকলে দোয়া করবেন যেন সাফিনা বড় হয়ে এই বিদেশ বিভুঁইয়ে তার মেধার স্বাক্ষর রাখতে পারে আর বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করতে পারে।

চিনামাটির বাটি প্রাণ পেয়েছে সাফিনার তুলির ছোঁয়ায়

কাঠের উচ্ছিষ্ট অংশে সাফিনার তুলির আঁচড়

সাফিনার আঁকা তার মায়ের পোট্রেট

নিজের আঁকা ছবির প্রদর্শনীতে সাফিনা

সাফিনা পেয়েছে একাধিক পুরষ্কার

একই ফ্রেমে তিন প্রজন্ম

Md Yaqub Ali

Md Yaqub Ali

আমি মোঃ ইয়াকুব আলী। দাদি নামটা রেখেছিলেন। দাদির প্রজ্ঞা দেখে আমি মুগ্ধ। উনি ঠিকই বুঝেছিলেন যে, এই ছেলে বড় হয়ে বেকুবি করবে তাই এমন নাম রেখেছিলেন হয়তোবা। যাইহোক, আমি একজন ডিগ্রিধারী রাজমিস্ত্রি। উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করতে অস্ট্রেলিয়াতে আমার আগমন ২০১৫ সালের মার্চে। আগে থেকেই ফেসবুকে আঁকিবুকি করতাম। ব্যক্তিজীবনে আমি দুইটা জীবের জনক। একটা হচ্ছে পাখি প্রকৃতির, নাম তার টুনটুনি, বয়স আট বছর। আর একজন হচ্ছে বিচ্ছু শ্রেণীর, নাম হচ্ছে কুদ্দুস, বয়স দুই বছর। গিন্নী ডিগ্রিধারী কবিরাজ। এই নিয়ে আমাদের সংসার। আমি বলি টম এন্ড জেরির সংসার যেখানে একজন মাত্র টম (আমার গিন্নী) আর তিনজন আছে জেরি।


Place your ads here!

Related Articles

বাঙালি ঐতিহ্যের বার্তা ও সংস্কৃতির প্রতীক প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা’র অনন্য সাক্ষী হয়ে রইল সিডনির এএনজেড স্টেডিয়াম

হ্যাপি রহমান: কিছু কিছু উৎসব আছে, যেগুলো বাঙালী সংস্কৃতিকে ধরে রাখে সকল জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে। সে রকমই নিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক একটা

Lurking Under Bangladesh: The Next Great Earthquake?

নিচের লিঙ্কগুলো দেখুন। দেখুন কি ভয়াবহ অতি সম্ভাব্য ভুমিকম্পের ঝুকিতে আছে বাংলাদেশ। আমাদের অজ্ঞতায় নির্বুদ্ধিতায় কি ভয়াবহ অপরিকল্পিত মরন ফাদের

বনভোজনের বর্নিল ছোঁয়ায় আলোড়িত ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল।

“সব প্রান বলে আজ সদলবলে শিহরিত তণু-মন দেখ খুশি চারিদিক আলো ঝিকিমিক হচ্ছে বনভোজন”। বহু বছরের ধারাবাহিকতায় এবারো ক্যাম্বেলটাউন বাংলা

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment