সংলাপে স্পষ্ট নির্বাচন হচ্ছে শেখ হাসিনার সরকারের নেতৃত্বে – দন্ডিত খালেদা জিয়া, তারেক রহমান নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না
ফজলুল বারী: নির্বাচনকে সামনে রেখে সংলাপের প্রথম দু’দিনেই দেশের রাজনীতি মোটামুটি একটি আকৃতি নিয়ে নিয়েছে। বিশেষ করে ড কামালের নেতৃ্ত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সরকারের সঙ্গে সংলাপে অংশ গ্রহনের পর সকলপক্ষ ধারনা পেয়েছেন নির্বাচন হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই। ঐক্যফ্রন্ট বুঝে গেছে নির্বাচনকালীন সরকারে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশ্নে ক্ষমতাসীনরা কোন ছাড় দেবেনা। ঐক্যফ্রন্টের সাতদফা না মানলে তারা নির্বাচনে যাবেনা এমন শক্ত আওয়াজও আর তাদের পক্ষে নেই। এতোদিন বক্তব্য ছিল সাতদফা আদায় করেই তারা নির্বাচনে যাবেন না। আন্দোলন করে সাতদফা আদায়ের রাজপথের শক্তিমত্তা, সময় এর কোনটাই এখন নেই ঐক্যফ্রন্টের অনুকূলে। অনেকে ৬ নভেম্বর ঐক্যফ্রন্টের ঢাকা জনসভা পর্যন্ত অপেক্ষার কথা বলতে পারেন। কিন্তু পরিস্থিতির বিশেষ পরিবর্তন হবার মতো আবহাওয়া নেই।
এরমাঝে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে সংলাপের পর ধারনা এসেছে তারা নির্বাচনে যাচ্ছেন। অধ্যাপক চৌধুরীকে সাইজ দিতে তাকে ছাড়াই গঠন করা হয়েছিল ঐক্যফ্রন্ট। বলা হয় দলের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব, সাবেক রাষ্ট্রপতির ঐক্যভূক্তি নিয়ে বিএনপির আগ্রহের ঘাটতি ছিল। বিশেষ করে বিএনপিকে জামায়াত-শিবির ছাড়ার শর্ত বিকল্পধারা দিলে তা বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলে দেয়। এরপর দলবাজ অথচ স্বঘোষিত নিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবী ব্যারিষ্টার মইনুলের ভূমিকায় বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে এড়িয়েই গঠন করা হয় ঐক্যফ্রন্ট। আর ওখানে ড কামাল না অধ্যাপক চৌধুরী কে মূল মুরব্বি এটাও যুৎসই খাপ খাচ্ছিলোনা। এমন একটি অনেকটা না ঘরকা না ঘটকা অবস্থার বিকল্পধারায় বিএনপিত্যাগী শমসের মোবিন চৌধুরীদের যোগদানে বিশেষ চমকের সৃষ্টি করে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপের পর ধারনা হলো শুধু এরশাদের জাতীয় পার্টি না বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ঐক্য প্রক্রিয়াও নির্বাচনে আসছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ‘বদু কাকা’র সঙ্গেও একটি হাসিখুশি ছবিও তুলেছেন। সংলাপে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়েও বিকল্পধারা একটি বার্তা দেয়। এসব সরকারের জন্যে আরেকটি সুবিধাজনক অবস্থান। এ অবস্থায় ড কামালের ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনের বাইরে থাকার সম্ভাবনা কম।
গত সপ্তাহে দেশের রাজনীতির নতুন মোড় এনে দেয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথা সরকারের নাটকীয় সাড়া। ঐক্যফ্রন্ট যখন সংলাপের জন্যে চিঠি দেয় তখন এর নেতারা নিঃসন্দেহে এই সাড়ার আশা করেননি। বোধকরি এ নিয়ে তাদের মূল চিন্তাটি ছিল বিদেশিদের দেখানো যে সবাইকে নিয়ে নির্বাচন প্রশ্নে সরকার আন্তরিক নয়। এরজন্যে তাদের সংলাপের আহবানে সরকার সাড়া দেয়নি। কিন্তু সাড়ার বিষয়টি শুধু চমক নয় তাদের কারো কারো মধ্যে কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থারও সৃষ্টি করে। আমার তখন জেপির প্রধান নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর একটি উক্তির কথা মনে পড়ছিল। আমার সঙ্গে ঢাকায় এক আড্ডায় আনোয়ার হোসেন মঞ্জু একবার বলেছিলেন, ‘ফজলুল বারী দেশেতো শেখ হাসিনা ছাড়া কোন রাজনীতিক নেই। তিনি মাঝে মাঝে একেকটি রাজনৈতিক চাল চালেন সেটি নিয়ে আমরা কয়েকদিন নাচি। এরপর সেটি পুরান হয়ে গেলে চালেন আরেকটি নতুন চাল।’ সংলাপ প্রশ্নে শেখ হাসিনার সাড়াকে তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা হিসাবে প্রশংসা করা হয়েছে। কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, এটি ছিল শেখ হাসিনার জীবনের সেরা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। যদিও সংলাপে সরকারের চলতি অবস্থানের মৌলিক কোন পরিবর্তন হবে এমন আশাবাদী জ্যোতিষী কোথাও কেউ ছিলেননা।
সংলাপ নিয়ে দেশের বিশেষ কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষকের লেখা পড়ছিলাম। শুনছিলাম টকশোয় তাদের বক্তব্য। এদের লেখার বলার এঙ্গেলটি আওয়ামী লীগ যেন একটি রামকৃষ্ণ মিশন! আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে বিএনপি ক্ষমতাসীন হলেও যেন তাতে দেশের রাজনীতি শুদ্ধ বলে বিবেচিত হবে! আওয়ামী লীগ যেমন পুননির্বাচিত হতে চায়, বিএনপিও তেমন ক্ষমতায় ফিরতে চায়। কারো রাজনৈতিক দলই রামকৃষ্ণ মিশন না বা এদের কেউ রামকৃষ্ণ মিশনের সেবায়েত না। বিএনপিও ক্ষমতায় ছিল। ক্ষমতায় থাকতে তারা দলীয় রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান করে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা কম করেনি। এভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিতর্কিত হয়েছে বিএনপির মাধ্যমেই। আদালতের রায়ের সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ আর সে ব্যবস্থায় ফিরতে রাজি নয়। কারন লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অভিজ্ঞতা তাদের আছে। অতএব নিজস্ব অতীত অভিজ্ঞতায় দেশের প্রধান দুটি দল যার যার স্বার্থ মাথায় রেখেই এক্ট করছে।
এমন বাস্তব অবস্থায় দেশ এখন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার মুখে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার পর নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এ অবস্থায় তফসিল বিলম্বিত করতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বলেছে সংলাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেন তফসিল ঘোষনা করা না হয়। এর বিপরীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন ৭ নভেম্বরের পর আর সংলাপ চলবেনা। ৮৫’র মতো দল সংলাপ চেয়েছে। অনির্দিষ্টকাল চলতে পারেনা সংলাপ। এরমানে দুই পক্ষের বক্তব্যে ধারনা পাওয়া যাচ্ছে তফসিল ঘোষনা হয়ে যাবে শীগগির। আর তফসিল হয়ে গেলে মানিনা মানবোনা বলে মাঠে নামার অবস্থা থাকবেনা ড কামাল, বিএনপির জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। আন্দোলনের অংশ হিসাবে নির্বাচনে অংশগ্রহনের ঘোষনা হয়তো দেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আরেকটি সত্য আসছে সামনে। খালেদা জিয়া, তাঁর ছেলে তারেক রহমান এই নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারছেননা। ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা বাংলাদেশের আইনে দন্ডিত পলাতক তারেক রহমান প্রার্থী হতে পারবেননা কারন তিনি তাঁর সাজার বিরুদ্ধে আপীল করেননি। খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা নিয়ে আপীল নিষ্পত্তি হতে হতে নির্বাচন হয়ে যাবে।
Related Articles
Canberrans are embracing Diwali- a festival of light
‘Canberrans are embracing Diwali’, said Gai Brodtmann, a member of the Australian House of Representatives. In an interview with Ekushey
Teachers and Politics
শিক্ষক রাজনীতি, শিক্ষার মান ও স্বায়ত্বশাসন ড. ফরিদ আহমেদ, অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলি শিক্ষার মান উন্নয়নে
National Multicultural Festival in Canberra – eat as much as you can and dance as long as you can
The National Multicultural Festival in Canberra is a signature annual event organised by the ACT Government in partnership with the