মেলবোর্নের চিঠি – ১৪[পূর্ব প্রকাশিত মেলবোর্নের চিঠি]

মেলবোর্নের চিঠি – ১৪[পূর্ব প্রকাশিত মেলবোর্নের চিঠি]

[পূর্ব প্রকাশিত মেলবোর্নের চিঠি]

মেলবোর্নের চিঠি শুরু করেছিলাম গেলো বছর। আজ লিখছি এর ১৪তম। শুরুতে প্রায় প্রতিমাসে দুই/একটা লেখা নিয়ে আসতে পারলেও, গেলো বছরের শেষ থেকে আর ওভাবে পারছিনা।

নিঃসন্দেহে যাপিত জীবনের চাপ একটা বিশাল ফ্যাক্ট। তবে গেল বছর হিসেবে মাসিক একটা লেখা নিয়ে আসতে পারলেও এ বছরের শুরুতেই ছন্দ পতন। একটু ভাঙ্গা মন নিয়েই শুরুটা করলেও আবার সেই স্পিরিট নিয়ে ফিরতে খুব চেষ্টা করে যাচ্ছি, কিন্তু পাচ্ছি কই!

যাই হোক প্রিয় কবির চরণ ধার করে যা বলি সব সময়, ‘’যদি ভালোবাসা পাই শুধরে নেবো জীবনের ভুলগুলি’’। মানে বলতে চাইছি, চিঠি ছোট্ট করে হলেও যেভাবে অল্প কিছু মানুষের সাথে আমায় জুড়ে দিয়েছে এক বন্ধনে সেই টানে আশা করি জীবনের যা কিছু আয়োজন ব্যাস্ততা তার মাঝেই সময়কে ছেনেমেনে তুলে আনবোই আমার কিছু কথা অনুভুতি প্রতিটা চিঠিতে, আছি যতদিন বেঁচে।

ভুমিকা শেষ, এবার মুল বিষয়ে ফিরি। প্রবাস জীবনের শুরুতেই যে বিষয়টা নিয়ে সবাই খুব বেশী ভাবে, তা হচ্ছে বাসস্থান। অস্ট্রেলিয়ায় একেকটা স্টেটে বাসা বাড়ি খুঁজে পেতে একেক রকম ঝামেলা বা নিয়মনীতি ফলো করতে হয়। কোথাও বেশীই বাড়াবাড়ি (অন্তত আমাদের তাই মনে হয়) এবং সময় লাগে, কোথাও ওভাবে না। তবে এটা ঠিক বাসা পেতে দেশ থেকে আসার আগে কোন না কোন বন্ধু আত্মীয়ের কাছ থেকে সহযোগিতা নিতেই হয়।

আমি ২০০৯ এ এসেছি, তখনও তাই। এডেলেড শহরে জীবন শুরু করার আগেই বাসাটা ঠিক করতে পেরেছিলাম সেই এক আত্মীয়ের জন্যেই। আজকাল যদিও অনেক সহজ হয়ে গেছে বিষয়টা। ফেসবুকে বাংলাদেশী লিভিং ইন অস্ট্রেলিয়ার সবাই কোন না কোন পেজে যুক্ত আছেনই। ইনফরমেশন বা যেকোন সাহায্যের জন্যে কাউকে না কাউকে পাওয়া যায়।

থাকার বন্দোবস্ত হয়ে গেলে প্রাথমিক একটা দুশিন্তা কিনারা হয়। এরপরই সবচেয়ে বেশী যেটা দরকার সেটা হচ্ছে কাজ। যে মানুষটি পড়তে আসে তারও একটা পার্ট টাইম জবের দরকার হয়। আর যে বা যারা রেসিডেন্ট ভিসা নিয়ে আসে তাঁদের জন্যে তো এটা অনেক বেশী জরুরী বিষয়ই বটে। একা হলেও কিংবা পরিবার নিয়ে এলেও।

এটা ঠিক কেউ কেউ দেশ ছেড়ে আসার বিষয়টাও বেশ গুছিয়েই করতে পারে। মানে আসার আগেই অন্তত মাসছয়েক চলার আর্থিক একটা অবস্থান নিয়েই মুভ করে। অনেকের পক্ষেই সেটা সম্ভব হয়না। খুব বশী হলে ১/২ মাস। তবে যার বাস্তবতা যাই হোক। এসেই একটা কাজে ঢুঁকে যাওয়ার বিষয়টা খুব গুরুত্বের সাথেই নেয়।

আমার অভিজ্ঞতার ভান্ডার শুরুই হয়েছে ২০০৯ থেকে। সেই সময়ের কথা পড়তে যেয়ে এই ২০১৮ তে এসে অনেকেই অবাক হবেন বৈকি। তবে কিছু বিষয় আবার নুতন করে আপনাদের কারো কারো মনে উঁকি দিয়ে যেতে পারে কিন্তু।

আমি বলেছি মনে হয়, বাংলাদেশ ছেড়ে এসেই অস্ট্রেলিয়া জীবন শুরু করেছিলাম সিডনী থেকে। জুলাই ২০০৯ কাটিয়ে অগাস্টের ১৭ তারিখে পাড়ি দেই এডেলেড শহরে। ঐ শহরে যেয়েই প্রথম কাজ হবে কাজ খোঁজা। সেইটা অল্প কয়দিন পিকনিক মুডে কাটানোর পরই মাথায় চলে আসে, আনতেই হয়। নিজের ছোট ভাই এবং তার বন্ধুদের গ্রুপ থেকেও বেশ কিছু তথ্য দেয়া হয় কাজ পাওয়া সংক্রান্ত।

শুরুতে আমি যে প্রফেশন ছেড়ে এসেছি সেটা ধরেই জব নাও হতে পারে, এটাও বুঝতে পারি সিডনীতেই কিছু রেফারেন্স পাওয়া অফিসে যোগাযোগ করে। আমার শুরুটা একটু অন্যরকম ছিলো।

বাংলাদেশে যে কাজটা করতাম, অস্ট্রেলিয়ার বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, ইন্সটিটিউট এর সাথে ইমেইল যোগাযোগ ছিলো। বিশেষ করে ইউনিভার্সিটি অব বালারাত এর সিডনী ক্যাম্পাস যেটাকে University of Ballarat at IIBIT বলা হতো। সেখানেই যাই প্রথম কাজের জন্যে। একদফা ব্যার্থ হয়ে ফিরে আসি যেখানে কথা বলতে হবে তাঁদের কাউকে পাইনা। আবার যেয়ে একটা ইন্টারভিউ ডেট পাই, এবং অনেক কাঙ্খিত সেই সাক্ষাৎকার পর্ব কোনভাবে শেষ হলেও বিপত্তি দেখা দেয় আমার ভিসা ক্যাটাগরি। আমার ভিসা স্ট্যাটাস অনুযায়ী আমাকে সাউথ অস্ট্রেলিয়াতেই দুই বছর থাকতে হবে।

চাকরী সিডনীতে স্কোপ থাকলেও আমার জন্যে এডেলেড, সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় আদৌ সেই একই ক্যাম্পাসে সেই চাকরী পাওয়া সম্ভব কিনা সেই অনিশ্চয়তা নিয়েই উড়াল দেই। সাথে আমার ভাই আমার এবং ছেলের বাপের প্রায় ৩/৪ রকমের ক্যাটাগরির সিভি করে দিলো। প্রতিটি ক্যাটাগরির ৫০ থেকে ১০০টা করে কপি। সে এক কান্ড বটে। বুঝলাম এই পরবাসে টিকতে হলে কাজের বিষয়টা শুরুতেই কত কঠিন এক চাপ।

এডেলেড এসে দুই চারদিন পরই সেই ইউনিভার্সিটি অব বালারাত এট আইআইবিআইটি ক্যাম্পাসে যাই এবং নানান চড়াই উৎরাই পার হয়ে একটা এক বছরের জন্য ফুল টাইম জব পেয়ে যাই। এডমিন কনসাল্টেন্ট এই ছিলো আমার অস্ট্রেলিয়ার প্রথম কাজ। আমার সেই কাজ পাওয়া এবং এই সংক্রান্ত কথা নিয়ে ফিরবো আগামী চিঠিতে।

আজ অন্যরকম একটা ছোট্ট অভিজ্ঞতা দিয়ে শেষ করি। এডেলেড একটা ছোট শহর। ২০০৯ এ বাংলাদেশী ছিলো বেশ কম। আমি নুতন এসেই একটা রীতিমত ভালো জব পেয়ে যাই। এটা নিয়ে প্রথম কিছুদিন কোন বাসায় বেড়াতে গেলেই খুব পজিটিভ কথা সবাই বলতো আমায়, খুব ভালো লাগতো। হয়তো কোথাও কারো সাথে কথা বলছি, অপরিচিত কেউ আমার নাম শুনেই বলতো, ও আপনিই নদী, আপনি তো খুব লাকি… এমন অভিজ্ঞতা ভিতরে নানান প্রশ্ন এনে দিতো।

তবে এটা বুঝেছিলাম হুট করে জব পেয়ে যাওয়া এই শহরে খুব সহজ কোন বিষয়না ।

কাজ শুরু করার অল্প কিছুদিন পরই, এডেলেড এর একটা বাংলাদেশী সংগঠনের প্রোগ্রামে গেছি পরিবার নিয়ে, প্রোগ্রাম স্থলে ঢোকার আগেই রাস্তার পাশে কিছু বাংলাদেশী ভাই বেরাদর দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন, দেখছিলাম। তাঁদেরকে পার হয়ে যখন যাচ্ছি, ওখানেই থাকা স্বল্প পরিচিত এক বড় ভাই, আমাকে দেখেই বললেন। ও আপনিই নদী, আচ্ছা আপনি নাকি কি ইস্কুলে না কই যেন চাকরী করছেন। আমি সরলমনে বললাম জ্বী ভাই জব পেয়েছি, একটা ইউনিভার্সিটির এখানকার ক্যাম্পাসে।
সাথে থাকা ছেলের বাপ এবং অন্য এক বোন ছিলো আমার পাশেই। পরে বাসার ফেরার পর বললো, ঐ ভাই নাকি আমায় খুব তাচ্ছিল্য করে জিজ্ঞেস করছিলো। আমি কেন বুঝলামনা, মানে স্কুল বলেছেন ইচ্ছে করেই তিনি (যদিও কি যায় আসে তাতে)!?

বলাই বাহ্লল্য আমি এইসব বিষয় একটু দেরীতেই বুঝি, বা অনেক সময় বুঝিওনা তাই এই সংক্রান্ত কষ্টও নেই আমার।

তবে, প্রশ্ন আসলেই কী আমাদের না পাওয়া আমাদের হীনমন্য করে দেয়, কেন কেউ কেউ এমন!!!

[পূর্ব প্রকাশিত মেলবোর্নের চিঠি]

নাদিরা সুলতানা নদী
মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
১৩ মে ২০১৮


Tags assigned to this article:
মেলবোর্নের চিঠি

Place your ads here!

Related Articles

প্রবাসে স্বজন

আব্বা-মাকে ফেলে জীবনে প্রথম বাইরে থাকা বুয়েটে চান্স পাবার পর। আমি জীবনে আব্বা-মাকে কখনই কোন সৌজন্যমূলক কথাবার্তা বলি নাই কারণ

মিস ইউ বাংলাদেশ!

নানুবাড়ি যাওয়ার সপ্তাহখানেক আগে প্রস্তুতি শুরু করতেন আম্মা। প্রতিদিন আমার কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান, ‘তোর পরীক্ষা শেষ হইতে আর কয়দিন

Concerns of Patriotic Awami League Supporters

Many supporters of the Awami League (AL) are very conscious and patriotic, who support the AL because they love Bangladesh

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment