Toggle Menu

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে বাংলাদেশের অর্জন অনেক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে বাংলাদেশের অর্জন অনেক

ফজলুল বারী: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকে কেন্দ্র করে বিভেদ প্রিয় প্রবাসী আওয়ামী লীগের সাময়িক জোড়াতালির ঐক্য, বিএনপি-জামায়াতের প্রতিবাদের নামে দেশ বিরোধী নোংরামির বিপরীতে বড় হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ নামের সম্ভাবনাময় দেশটির প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সম্মান। গ্লোবাল উইমেন্স লিডারশীপ এডয়ার্ড’ শিরোনামের আন্তর্জাতিক সম্মান তুলে দিতে শেখ হাসিনাকে দাওয়াত করে সিডনি নিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল। শুক্রবার সকালে সিডনি পৌঁছার পরপর হোটেলে ছুটে এসে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ। এরপর বিশপ সাংবাদিকদের বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একজন সাহসী নেত্রী। সে কারনেই তাকে আন্তর্জাতিক সম্মান দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতেও বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে যাবার ঘোষনা দেন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পরে প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলের সঙ্গে বৈঠকেও গুরুত্ব পায় রোহিঙ্গা ইস্যু। এরজন্যে বাংলাদেশকে প্রায় দেড়শ কোটি ডলার সহায়তার ঘোষনা আসে। এরজন্যে গ্লোবাল উইমেন্স লিডারশীপ এওয়ার্ড নিতে সিডনি এলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল অর্জন হয়ে ওঠে রোহিঙ্গা ইস্যুতে অস্ট্রেলিয়ার বিপুল সমর্থন।

অস্ট্রেলিয়ায় আমরা রাস্তা বন্ধ করে ভিভিআইপি চলাচল দেখে অভ্যস্ত নই। আমাদের ড্রাইভিং প্রশিক্ষনে আমরা শিখেছি পুলিশ-এম্বুলেন্স আর ফায়ারসার্ভিসের গাড়ির হর্ন আর বাতি জ্বালানো দেখে কিভাবে তাদের পথ ছেড়ে দিতে হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্যে ভিভিআইপি প্রটেকশন প্রটোকল এবার আমরা মন ভরে দেখলাম। এ যেন বাংলাদেশের সব মানুষজনকেই অস্ট্রেলিয়াবাসীর সম্মান। দেশের মতো সিডনিতেও শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আছেন, এমন জেনেশুনেই বুঝি তার নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে অস্ট্রেলিয়া কর্তৃপক্ষের সতর্কতা ছিল লক্ষ্যনীয়। সিডনিতে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে অস্ট্রেলিয়া সরকারের আতিথেয়তায় প্রধানমন্ত্রীকে রাখা হয়েছিল। এর আশেপাশে কোথাও একসঙ্গে আট-দশজন বাংলাদেশিকেও দাঁড়াতে দেয়া হচ্ছিলোনা।

সিডনি আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র যেখানে শেখ হাসিনাকে গ্লোবাল উইমেন্স লিডারশীপ এওয়ার্ড দেয়া হয়। সিডনি হারবার লাগোয়া এলাকাটি পর্যটন এলাকা। বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার পর্যটক এ এলাকাটিতে থাকেন। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছেলেমেয়ে এখানকার আশেপাশের বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট সহ নানান প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। সেখানে বিএনপি-জামায়াতের প্রতিবাদ সমাবেশে চিৎকার করে বলা হচ্ছিল ‘গো বেক হাসিনা’, ‘কিলার হাসিনা’! দেশের রাজনীতি নিয়ে অনেক সমস্যা আছে। বিদেশে এসব নোংরামি টেনে এনে কার লাভ হলো? বিদেশে বাংলাদেশের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতেও এ নিয়ে ছি! ছি! করেছে। আগামীতে বিরোধীদলে গেলে একই কাজ করবে বলে আওয়ামী লীগও বিষয়টি নিষিদ্ধ করা নিয়ে মোটেই আন্তরিক না। বিদেশে দেশের রাজনীতি করেন খুব অল্প সংখ্যক প্রবাসী। সংখ্যাগরিষ্ঠদের এসবে সময় দেবার মতো আজাইরা সময় অথবা রূচিও নেই। কিন্তু এসব নোংরামিতে যে দেশের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এতে ভূক্তভোগী সব প্রবাসী।

শেখ হাসিনার সফর উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়ার তিনখন্ড আওয়ামী লীগ, কয়েক খন্ড বঙ্গবন্ধু পরিষদ এক হয় তাকে সম্বর্ধনা দিয়েছে। হাইকমিশনের মাধ্যমে ঢাকার নির্দেশনার ভাষা পড়ে এই ঐক্যের বিকল্প ছিলোনা। কিন্তু অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনা, বক্তৃতার শব্দমালা জানান দিচ্ছিলো এই ঐক্যের ভবিষ্যত! একজন আরেকজনকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন রাজনীতিতে নবাগত। সেই নবাগত(!) বক্তৃতা দিতে এসে জানিয়ে দিচ্ছেন তিনি কে? এ বছর একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীন সাংবাদিক রনেশ মৈত্র এখন সিডনিকে অবস্থান করছেন। সিডনিতে থাকায় দেশে তার পক্ষে পদক গ্রহন করেন তার ছেলে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কারাজীবনে থাকা রনেশ মৈত্র বারবার বিনীতভাবে জানতে চাইছিলেন কার সঙ্গে যোগাযোগ করলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পাঁচ-দশ মিনিটের জন্যে দেখা করা যাবে। অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম বাংলাদেশি ইমিগ্রেন্ট নজরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর সম্বর্ধনা উপলক্ষে সফিটেল হোটেলে সস্ত্রীক এসেছিলেন। কিন্তু অব্যস্থাপনার জন্যে অপেক্ষায় থাকতে থাকতে বিরক্তি নিয়ে ফিরে যান। ভদ্র নেতারা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সম্ভবত এমন আরও অনেককিছুতে যত্মবান ছিলেননা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতায় গুরুত্ব পেয়েছে দেশের উন্নয়ন সাফল্যের গল্প। শেখ হাসিনার বক্তৃতাই হয়ে ওঠে মূল। শেখ হাসিনা বলেন, “২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে। উন্নত সমৃদ্ধ দেশ যাতে হয় তার ব্যবস্থা, তার পরিকল্পনা, তার নীতিনির্ধারণী ইতোমধ্যেই করেছি।“এখন থেকে শুরু করছি, ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সাল- আমরা বাংলাদেশকে কেমন দেখতে চাই, কী উন্নতি করেত চাই। আমরা সেই পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজও শুরু করে দিয়েছি।” এসব উল্লেখ করে আত্মিবিশ্বাসী দৃঢ়চেতা শেখ হাসিনা বলেন, “২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত দেশ।”

দেশবাসী আর প্রবাসীদের সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে। ক্ষমতাকে নিজেদের ভোগ বিলাসের বস্তু বানিয়েছে, ক্ষমতা মানে কোন বাদশাহর দরবারে গিয়ে কী দেখে আসল, গালফ স্টেটে গিয়ে কী একখান চেয়ারের রঙ দেখল, কোথায় একটা সোফা দেখল, কোথায় একটা গয়না দেখল, কোথায় হীরে জহরত দেখল, কোথায় ফ্রেঞ্চ শিফন দেখল, কোথায় কী দেখল- ওর জন্য জীবন তাদের চলে যাচ্ছে।”কারও নাম উল্লেখ না করলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে ইঙ্গিত করে এসব বলেন প্রধানমন্ত্রী।

হলভর্তি গুনমুগ্ধদের হাস্যরসের মধ্যে বলেন,“আমাদের তো তা নয়। আমরা খেয়ে পরে ঘর থেকে এসেছি। আমরা তো চাবাগান থেকেও আসি নাই, আর ওই কুচবিহার থেক কুচ কুচ বিহারী হয়েও আসি নাই।”উল্লেখ্য বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার পৈত্রিক বাড়ি ফেনী হলেও তার জন্ম দিনাজপুরে। তার জন্মস্থান নিয়ে সংসদে বেশ কয়েকবার কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপিরা। আর এরশাদের জন্ম ভারতের কুচিবহারেI শেখ হাসিনা বলেন, “এই বাংলার মাটিতে আমাদের জন্ম, এই বাংলার মাটিতে আমরা বড় হয়েছি। বাংলার মানুষের জন্য আমার বাবা সারা জীবন কাজ করেছে। আমরা সেভাবেই কাজ করব, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।”তিনি বলেন, “বাংলার মানুষ যখন ভালো থাকে, একটা কিছু ভালো অর্জন হয় সেটাই আমাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য।

শনিবার সকালে ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের এখানে যারা পড়তে আসে.. এখান থেকে শুধু ডিগ্রি নিয়ে যাওয়া নয়, এদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।” তার সামনে তখন বাংলাদেশের জুডিশিয়ারিতে কর্মরত এবং এখন স্কলারশীপে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত বেশকিছু ছাত্রছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে স্থাপিত বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাও জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা। ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির সাউথ ক্যাম্পাসে ইন্সটিটিউট অফ ওসন গভার্নেন্সের সামনে ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর এই আবক্ষ ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সমুদ্রসীমা নির্ধারণে ১৯৭৪ সালে সংসদে আইন করায় ইন্সটিটিউট অফ ওসন গভার্নেন্সের সামনে বাংলাদেশের জাতির জনকের আবক্ষ ভাস্কর্যটি স্থাপন সঠিক বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।


Place your ads here!

Related Articles

কান্নার তনু

তনু যখন সব বন্ধুদেরকে ফোন দিয়ে বলছিল, আমি চলে যাচ্ছি, মাফ করে দিস; আমরা কেউ তার কথা বিশ্বাস করতে পারিনি।

ভালোবাসায় বাংলাদেশ

আমেরিকায় জন্ম মিলিয়ার। এক সময় বাঁশি বাজাতেন। পঞ্চাশ বছর ধরে ক্যানবেরায় আছেন। বুধবার ক্যানবেরার মানেকা ওভালে বাংলাদেশ দলকে সমর্থন করতে

Successful Delivery of Bangladesh eGovernment Strategy by Australian National University

Several events in Dhaka, Bangladesh marked the delivery of major project outputs to develop e-government capacity in Bangladesh government being

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment