চাইছি তোমার বন্ধুতা

‘বন্ধুত্ব ‘ – কি সহজ একটি শব্দ ! কিন্তু বন্ধু সম্পর্ক টি কি সত্যিই এত সহজ ? বাংলায় কাছাকাছি আরেকটি শব্দ আছে ‘বন্ধুর’ , যার অর্থ কিন্তু একেবারেই সহজ নয়। আমার মতে বন্ধুত্বের সম্পর্ক টি সেই ভীষণ রকম বন্ধুর।
আচ্ছা, কাদের মাঝে এই সম্পর্ক দৃঢ় ? দুটো ছেলের মাঝে নাকি দুটো মেয়ের মাঝে ? নাকি একটি ছেলে ও একটি মেয়ের মাঝেই সম্ভব সত্যিকারের বন্ধুত্ব ? দুজন ছেলের বন্ধুত্ব কতদিন, কতটুকু থাকে ? ক্যারিয়ার গঠনে বা একই মেয়ে কে পছন্দের কারণে যে নীরব প্রতিযোগীতা শুরু হয় তখনও কি সেই ছেলে দুটো আগের মতোই বন্ধু থাকে ? তাদের মাঝে ঈর্ষা ,গোপন নিষ্ঠুরতা জন্ম নেয় না ? প্রতিযোগিতায় যে ছেলেটি পিছিয়ে যায় সে বন্ধুহীন হয়ে পড়ে। তার দায়ভার কিছুটা তার হীনমন্যতাজনিত অপারগতা আর বাকিটা তার পূর্বের বন্ধুদের অবহেলা ও অবজ্ঞা। তবে যে ছেলেটি মোটামোটি জয়ী বা নিদেনপক্ষে এগিয়ে চলেছে তার বন্ধুভাগ্য কতটা ভাল ? সে কি তার বন্ধুদের স্মরণ করার সময় বা সুযোগ পাচ্ছে ? আমি এখানে স্তাবক নয় ছেলেটির বন্ধুদের খুঁজছি। দিনশেষে তবে সে ও কি একাকী নয় ?
কিন্তু তবুও তারা একসাথে আড্ডা দেয় , হাসে ,ক্রিকেট আর রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করে পৃথিবী উদ্ধার করে। তাদের কে কি সত্যিই বন্ধু বলা যায় ?
মেয়েদের ব্যাপার টা তো আরো অদ্ভূত। সুখের দিনে যে মেয়েটি কে সবচেয়ে আপন মনে হত বিপদে সেই সবচেয়ে রূঢ় আচরণ করে বসে। বন্ধুই যদি সে তবে কেমন করে পারে আরেক বন্ধুর বিপদে তার বিপরীতে দাঁড়াতে , তার সম্পর্কে সমালোচনা করতে। হিংসুক ছেলের চেয়ে হিংসুক মেয়ে আরো বেশি ভয়ংকর কেননা মেয়েরা খুব দ্রুত দল গঠন করে ফেলে। অদ্ভূতভাবে শিক্ষিত , উচ্চশিক্ষিত, সুস্থ বিচার বোধ সম্পন্ন মানুষও খুব সহজেই এই দলে যুক্ত হতে থাকে। অন্যান্য কারণ যাই হোক না কেন একটা বড় কারণ হল মেয়েরা ভীষণ সামাজিক। তারা সমাজচ্যুত হতে ভয় পায়। দলছুট হলেই অস্তিত্বহীনতার আশংকায় অস্থির হয়ে ন্যায়-অন্যায় বোধ জলাঞ্জলি দেয়। তাই তারা যুক্তি করে তাদেরই এতদিনের কথিত বন্ধুর কড়া সমালোচক হয়ে তাকে ত্যাগ করে। তার মানে যে সময়ে একটি মেয়ের তার মেয়ে বন্ধুটিকে সবচেয়ে বেশি পাশে পাওয়ার কথা সে সময় সে তারই কথার তীক্ষ্ণ বাণে জর্জরিত হয়। প্রমাণিত হয় আবার ও মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু।
মজার ব্যাপার হল মেয়েরা কিন্তু ছেলেদের মত একসাথে হলে মুহূর্তের হাসিটুকুও হাসতে পারে না , এড়িয়ে যেতে চায়। পারস্পরিক বন্ধুত্বের এই পর্যায়ে এসে তারা পুরোনো সেই বন্ধুটি নয় বরং সেই বন্ধু বর্জিত নতুন দলটির প্রতি সৎ ও নিষ্ঠাবান হয়ে পড়ে। কোনো ভাবেই এই দল যেন তাকেও বহিস্কার না করে।
এবার আসি ছেলে মেয়ের বন্ধুত্বে। সবাই বলে, ছেলেরা সরল আর মেয়েরা কুটিল। তাই মেয়ে মেয়ে বন্ধুত্বের চেয়ে ছেলে মেয়ের বন্ধুত্ব নির্ঝঞ্ঝাট। যেহেতু একজন প্রেমিক বা প্রেমিকা বর্তমান, কাজেই বাকি ছেলে বা মেয়ে বন্ধুরা শুধুই বন্ধু। সমস্যা হল কেউ কেউ ভীষণ ভাল বন্ধু। সুখ-দুঃখ , হাসি-কান্না ,ঝগড়া-মারামারি সবখানে সে বর্তমান। একদম কাবাব মে সস আর কি। সত্যি ? এই ‘সস’ শুধুমাত্রই বেস্ট ফ্রেন্ড ? এর বেশি কিছু নয়? বন্ধুত্ব নামক পরিশীলিত সম্পর্কের গভীরে পারস্পরিক যে টান , নির্ভরতা সর্বোপরি বিশ্বাস তা কি কেবলমাত্র একটি সূক্ষ্ম মাত্রা দ্বারা চিহ্নিত সচেতন প্রতিরোধ নয়? আর এ মাত্রা অতিক্রমের সাধ দুজনের কারো একজনের অবচেতন মনে কি লুকিয়ে থাকে না ? নইলে জীবনের ক্রান্তিকালে মুহূর্তেই মাত্রা উধাও, আর প্রিয় বন্ধু কেন রূপ নেয় প্রেয়সী কিংবা প্রিয়তমের।
আসলে নারী আর পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান সেই আদিম আকর্ষণ। যদি দুজন ছেলে মেয়ে খুব ভাল বন্ধু হয় তবে তারা জীবনের যে কোনো পর্যায়েই যে কোনো রকমের যুগল এর রূপকার হতে পারে। আর যদি না পারে তবে তারা মোটেও ভাল বন্ধু ছিল না , কেউ কারো সেই অর্থে অতটা প্রিয় ও ছিল না।
তার মানে কি ? গুরুজনদের রক্ষণশীল বস্তাপচা মতবাদ – ছেলে আর মেয়ের কখনও বন্ধুত্ব হয় না।
আসলে একটা সময়ের পর মানুষ বোধ হয় আর মানুষের বন্ধু হয় না। স্বার্থ আর ব্যস্ততা মানুষ কে আত্মভোলা থেকে আত্মকেন্দ্রিক করে তোলে। সময়ের সাথে সাথে ভীষণ একা হতে থাকে। আজকাল আমার ও মাঝে মাঝে খুব একা লাগে। তখন আমি বন্ধু খোঁজার চেষ্টা করি আর এই জটিলতা গুলো অনুভব করি।
আমার ও নিশ্চই কিছু বন্ধু আছে যাদের কাছে আমি -আমি , কোনো আরোপিত ইমেজ নই।
“ওলো সই , ওলো সই
আমার ইচ্ছা করে তোদের মতন
মনের কথা কই
ছড়িয়ে দিয়ে পা দুখানি
কোনে বসে কানাকানি
কভু হেসে , কভু কেঁদে
চেয়ে বসে রই “
আমার লেখা শেষ। পোস্ট করতে যাব এমন সময় একটা ছোট্ট টেক্সট এল।কাকতালীয়ভাবে এক বন্ধুর কাছ থেকে , একজন মেয়ে বন্ধু…
“সত্যিকারের বন্ধুরা ছায়া দানকারী বৃক্ষের মতো।হাজার হাজার কয়লার টুকরো থেকে হাজার বছরের পুরণো এক টুকরো কয়লা যেমন হিরায় পরিণত হয়।তেমনি এই পৃথিবীর হাজার হাজার স্বার্থপর মানুষের ভিরে যারা একটা সত্যিকারের বন্ধু খুঁজে পায়।তারা সত্যিই অনেক অনেক ভাগ্যবান।”
ও কি করে জানল ঠিক এই মুহূর্তে আমার একজন বন্ধু প্রয়োজন যে আমাকে টেনে তুলবে আমার এই সাময়িক বিহ্বলতা থেকে ? ওর মত আমার সকল হীরের টুকরা বন্ধুরা দ্যুতি ছড়াক আমার জীবনে এভাবেই !
বন্ধুত্ব শুভ হোক, কল্যাণময়ী হোক সবার জীবনে !
মুনমুন
মেলবোর্ন
Related Articles
Trial of War Criminals:
War crime is a generic term. It includes genocide, crimes against humanity, and grave breaches of the 1949 Geneva Conventions
দ্বি-খন্ডিত জাতীয়তা: কিভাবে উন্নয়ন সম্ভব?
বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে সম্প্রতিকালে কিছু লেখা ছেপেছে বাংলাদেশের পত্রিকা। সেসব লেখা প্রমাণ করে নেতৃত্বের সংকট উন্নয়নের মূল প্রতিবন্ধকতা। ১/১১ পর
ইডেন গার্ডেনসে টি-২০: বাংলদেশের খেলা দেখতে যাবেন?
ফজলুল বারী, কলকাতা থেকে: বাংলাদেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি বাঙ্গালি থাকেন পশ্চিমবঙ্গে, কলকাতায়। সেই কলকাতায় আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ-পাকিস্তানের খেলা। সুপার টেনের