এক ধুনক যুবকের কিছু স্মৃতি

এক ধুনক যুবকের কিছু স্মৃতি

বাংলাদেশে এই কিছুদিন আগেও ধুনকেরা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে লেপ-তোষক বানাত। হেমন্ততের শেষে কিংবা শীতের শুরুতে গ্রামে গ্রামে ফেরী করে বেড়াত ধুনকেরা। মফস্বল শহরগুলোতে এখনও লেপ-তোষক এর দোকান রয়েছে। বড় বড় শহরগুলোতে এখনও হয়ত তাদের দেখা মেলে! মেলে কি?

দেশ ছাড়ার পরে শীতে কখনও ফেরা হয়নি। হয়ে উঠেনি। তাই ধুনকেরও দেখা মেলেনি। এ কারণেই স্মৃতিগুলো আজকাল অনেক বেশী মূল্যবান হয়ে উঠছে। মেলবোর্নে আসার কিছুদিন পরে ক্লাসে একদিন এক গ্রীক স্যার বলেছিলেন তোমরা যেদিন দেশ ছেড়ে এসেছ, যতবার দেশে যাবে ঠিক সেই শেষবারের ছবিগুলো খোঁজবে মন। সেই আলো-বাতাস, সেই গন্ধ-শব্দ, সেই চেনা মুখ-আড্ডাকে খোঁজে ফিরবে মন। কিছুটা হয়ত পাবে বাকী সব হারিয়ে যাবে। স্থানীয়রা টেরই পাবে না। কিন্তু তুমি ঠিক বুঝবে সেই বদলে যাওয়াটা। বার-তের বছর পরে এসে কথাগুলোর অর্থ বুঝতে পারি। আমাদের পাড়াগুলো থেকে ঠিক সেই ধুনকের হারিয়ে যাওয়ার মতন আমিও হারিয়ে গিয়েছি সেই আলো-বাতাস, সেই গন্ধ-শব্দ, সেই চেনা মুখ-আড্ডা থেকে। মাঝে মাঝে দেখা মেলে যখন প্রয়োজন সুতীব্র।

সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় ছয় মাস কাজ করার সুযোগ থাকে হেমন্তের শেষ থেকে গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়টুকুতে। তারপর মানুষগুলো নিরুদ্দেশ হয়ে যায় উজানে কাজের খোঁজে। সেই মানুষগুলো কিছুদিন পর পর ফিরে আসে হাওরে প্রাণবায়ু সেবনের জন্য। ফিরে আসে সেই আলো-বাতাস, সেই গন্ধ-শব্দে, সেই চেনা মুখ-আড্ডায়। আজকাল এই ছন্দেও ফাটল ধরেছে। উজানে এত এত গার্মেন্টস। চাইলেও তারা আর ফিরতে পারে না। ফেরা হয়ে উঠে না ঠিক ধুনকের মত। মাঝে মাঝে ধুনকের দেখা মেলে। মেলে শুধু প্রয়োজন যখন সুতীব্র। প্রবঞ্চিত সময়ে এই ঢের।


Place your ads here!

Related Articles

পরবাসিনী রোজার ‘বাংলা আগুন’এ কবি গুরুর ‘আলোক-লোক ফাঁকা’

পরবাসের জীবন একেক জনের কাছে এক এক রকম হয়ে ধরা দেয়। তার কারণ হল একেক জনের দেখার চোখ এক এক

রক্তাক্ত জনপদ ও চরমপন্থীদের আত্মসমর্পন

ফজলুল বারী: দেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থীদের নিয়ে কুড়ি বছর আগে ‘রক্তাক্ত জনপদ’ শিরোনামে আমার  একটি সিরিজ রিপোর্ট জনকন্ঠে ধারাবাহিক ছাপা

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment