অ্যালিসের বিস্ময়রাজ্যে একদিন
![অ্যালিসের বিস্ময়রাজ্যে একদিন](https://priyoaustralia.com.au/wp-content/uploads/2018/01/1-890x395_c.jpg)
লুইস ক্যারলের অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড ছোট বড় সকল মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয় এক উপন্যাসের নাম। সেটা আরো বেশি উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল রুপালি পর্দায়। সর্বশেষ ওয়াল্ট ডিজনির মাধ্যমে পর্দায় ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে রুপালি পর্দায় হাজির হয় বিস্ময় বালিকা অ্যালিস যার মাধ্যমে অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড আরো বেশি জনপ্রিয়তা পায়। তাই এই উপন্যাস বা চলচিত্রের চরিত্রগুলোকে যখন বাস্তবে দেখার সুযোগ তৈরি হল তখন আর আমরা সেই সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইলাম না।
অস্ট্রেলিয়াতে স্কুল হলিডে চলাকালীন বাচ্চাদের উপযোগী বিভিন্ন প্রকারের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেগুলোর মূল উপলক্ষ্য থাকে খেলাধুলার মাধ্যমে বাচ্চাদের বিনোদনের পাশাপাশি শিক্ষা। সিডনির ব্লাকটাউন শোগ্রাউন্ডে ১৩ থেকে ২৮শে জানুয়ারি চলছে অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড এর প্রদর্শনি। এটার আয়োজক সংস্থা হচ্ছে যৌথভাবে ব্লাকটাউন সিটি কাউন্সিল এবং স্যান্ড স্কাল্পটিং ইভেন্ট অস্ট্রেলিয়া। এই প্রদর্শনির বিশেষত্ব হচ্ছে এখানে অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড এর চরিত্রগুলোকে বাস্তবে রুপ দেয়া হয়েছে ২৫০ টন বালির মাধ্যমে। এখানে একে একে উপন্যাসের সকল চরিত্রকে হাতের নিখুত কারুকাজে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সেই সাথে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোও যেমন অ্যালিসের গর্তে প্রবেশের দৃশ্যটা। প্রত্যেকটা ভাস্কর্যের বাইরে লেখা আছে কোনটা কোন চরিত্র বা ঘটনাকে দেখাচ্ছে। তাই যদি কেউ আগে উপন্যাসটা পড়েও না থাকে বা চলচিত্রটা দেখে না থাকে তবুও সহজেই ঘটনাগুলো রিলেট করতে পারবে।
রুপা বৌদি যখন এই ইভেন্টের খবর মেসেঞ্জারে জানালেন তাই তখন আমি আর তাহিয়া একবাক্যে রাজি হয়ে গেলাম। কারণ অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড চলচিত্রটা আমাদের দুজনেরই দেখা। আমরা পরেরদিনই অর্থাৎ ২১শে জানুয়ারি দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু সেইদিন অনেক গরম পড়াতে আমরা একটু দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম কিন্তু তাহিয়া এলভিরা এবং রেনোর উৎসাহে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলাম না। এটা পরিদর্শনের জন্য স্যান্ড স্কাল্পটিং এর ওয়েবসাইটে যেয়েও টিকিট করা যায় বা একবারে পরিদর্শনের স্থানে যেয়েও সরাসরি টিকিট কাটা যায়। আমরা পরিদর্শনের স্থানে যেয়ে দু’পরিবারের জন্য দু’টো ফ্যামিলি টিকেট কিনে ফেললাম। এরপর ভিতরে প্রবেশ করার মুখে আমরা আরো কিছু তথ্য জানলাম। এখানে উপন্যাসের চরিত্রগুলো দেখার পাশাপাশি বাচ্চারাও নিজেরা নিজেরা বালি দিয়ে অনেক কিছু বানাতে পারবে। বাচ্চাদের জন্য আরো আছে কুইজের ব্যবস্থা। কুইজের প্রশ্নপত্র পূরণ করে জমা দিলে সেখান থেকেও আছে পুরষ্কারের ব্যবস্থা। প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত এই প্রদর্শনি খোলা থাকে। এছাড়াও ভিতরে বাচ্চাদের জন্য আছে আলাদাভাবে খেলার জায়গা যেখানে বাচ্চারা অনেক বড় লুডোর কোর্টে লুডু খেলতে পারে বা অনেক বড় ক্রস এবং নটের কোর্টে ক্রস-নট খেলতে পারে। অথবা কাঠের ব্লক দিয়ে বাড়িঘরও নির্মাণ করতে পারে।
ভিতরে ঢোকার পরেই বাচ্চারা সবার আগে বালি দিয়ে বিভিন্ন প্রকারের আকৃতি বানাতে ব্যস্ত হয়ে গেল। সেখানে এলভিরা, তাহিয়া এবং রেনোর পাশাপাশি মাত্র দু বছর বয়সের রায়ানও ওদের সাথে হাত লাগালো। এক একটা আকৃতি বানায় আর অনেক উতসাহ নিয়ে বড়দের দেখায়। আকৃতিগুলোর মধ্যে হার্ট আবার সেটাতে মুখ চোখ দিয়ে মুখের আদলে বদলে দেয়া এভাবেই চললো ওদের খেলা। পরে বড়রা তাড়া দিলে ওরা ভাসস্কর্যগুলো দেখা শুরু করলো। কিন্তু প্রচণ্ড রোদ ও গরমের কারণে ওরা বেশিক্ষণ শেডের বাইরে থাকতে চাইছিলো না। তবুও আমরা উপন্যাসের কিছুই জানি না এমনভাব করে ওদের কাছে জানতে চাইলাম কোন ভাস্কর্যটা কি বুঝাতে চাইছে। তখন ওরা অনেক উৎসাহ নিয়ে আমাদেরকে বুঝাতে শুরু করলো। এভাবে প্রায় সব ভাস্কর্য দেখা শেষে ওরা কেউ লুডু কেউ বা ব্লক নিয়ে খেলা শুরু করলো।
সবশেষে গরমের থেকে একটু রেহাই পাওয়ার জন্য ওরা বলল স্নো কোণ খাবে যেটা আসলে আইসক্রিমেরই একটা প্রকার। স্নো কোণ কিনে আনার পর আমরা সেটা স্যান্ড কোণ বলে ওদের সাথে অনেকক্ষণ মজা করলাম। এতে ওরাও একটু দ্বিধায় পড়ে গেলো। কারণ ভিতরের সমস্ত স্থাপনায় ছিলো বালির তৈরি। এভাবে আমরা সকলে মিলে অনেক সুন্দর একটা দিন পার করলাম। এই স্কুল হলিডেতে আপনিও আপনার সব বয়সি বাচ্চাকাচ্চাকে নিয়ে চলে যেতে পারেন ব্লাকটাউন শোগ্রাউন্ডে যেখানে বালির মাধ্যমে আপনি অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ডের চরিত্রগুলোকে চোখের সামনে দেখতে পারেন। কারণ আমাদের পরিদর্শন শেষে এলভিরা একটা উক্তি করেছিল যেটা দিয়ে লেখাটা শেষ করতে চাই – এ ডে ওয়েল স্পেন্ট।
![Md Yaqub Ali](https://priyoaustralia.com.au/wp-content/uploads/2017/12/Yaqub-Ali-150x150.jpg)
Md Yaqub Ali
আমি মোঃ ইয়াকুব আলী। দাদি নামটা রেখেছিলেন। দাদির প্রজ্ঞা দেখে আমি মুগ্ধ। উনি ঠিকই বুঝেছিলেন যে, এই ছেলে বড় হয়ে বেকুবি করবে তাই এমন নাম রেখেছিলেন হয়তোবা। যাইহোক, আমি একজন ডিগ্রিধারী রাজমিস্ত্রি। উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করতে অস্ট্রেলিয়াতে আমার আগমন ২০১৫ সালের মার্চে। আগে থেকেই ফেসবুকে আঁকিবুকি করতাম। ব্যক্তিজীবনে আমি দুইটা জীবের জনক। একটা হচ্ছে পাখি প্রকৃতির, নাম তার টুনটুনি, বয়স আট বছর। আর একজন হচ্ছে বিচ্ছু শ্রেণীর, নাম হচ্ছে কুদ্দুস, বয়স দুই বছর। গিন্নী ডিগ্রিধারী কবিরাজ। এই নিয়ে আমাদের সংসার। আমি বলি টম এন্ড জেরির সংসার যেখানে একজন মাত্র টম (আমার গিন্নী) আর তিনজন আছে জেরি।
Related Articles
World Environment Day Bangladesh
On 5th June, the World Environment Day has been observed by all nations including Bangladesh to highlight the link between
“লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার” – একুশের চেতনা’র বৈশ্বিক প্রাতিষ্ঠানিক দর্শন(উপসংহার)
“লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার”– একুশের চেতনা’র বৈশ্বিক প্রাতিষ্ঠানিক দর্শন উপসংহার (বাঙালির করনীয় এবং প্রাপ্তি) –নির্মল পাল ‘লাইব্রেরী’ তথ্য-উপাত্ত তথা তথ্য সম্পর্কিত
Bangladesh needs its supply driven education systems
Introduction: Remittances sent back home by migrants are a powerful financial force in Bangladesh. Quite a number of Bangladeshis depend