৩০ লাখ বীরশহীদ পরিবার, ঘুমিও না আর

৩০ লাখ বীরশহীদ পরিবার, ঘুমিও না আর

মুক্তিযুদ্ধে প্রাণদানকারী ৩০লাখ বীরশহীদ পরিবারের সদস্যদের উদাসীনতাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, বাড়াবাড়ি ও বৈষম্যের কারণ। শহীদের এ সংখ্যাটি বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই ঘোষণা করেছেন। তিনিই ৬৭৬ বীরকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত করেছেন। তম্মধ্যে ৭জন শহীদকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব দিয়েছেন। এছাড়া দেশের সবাইকে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা করেছেন। ৩০লাখ বীরশহীদ ও ২লাখ আত্মত্যাগী মা-বোনদেরকে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে সম্মানিত করেছেন। এভাবে দেশবাসীকে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারভুক্ত করে ঐক্যবদ্ধ বাঙ্গালি জাতি গড়েছেন। বঙ্গবন্ধুর শহীদের ঘোষণাটি অনলাইনে এখানে-

অথবা

৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু আগেই ঘোষণা করেছিলেন, তোমরা সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। এ সাতকোটি থেকেই ৩০লাখ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন এবং ২লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন। তাদের আত্মত্যাগ ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্ভব ছিলনা। ৭কোটি থেকে ৩০লাখ ও ২লাখ সংখ্যা বিবেচনা করলে দেশের ১টি পরিবারও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বাইরে নয়। বঙ্গবন্ধু এ সত্যই প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা, অমুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ বিভাজন করেননি। তাঁর সময়ে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় ছিলনা। এমনকি পঙ্গু ও যুদ্ধাহতদের জন্যও ভাতাসুবিধা ছিলনা।

আজ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নেই। ৩০লাখ বীরশহীদের বংশ-পরিবারের অস্তিত্ব নেই। শহীদ ও আত্মত্যাগীগণ মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃত নয়। মাত্র ২লাখ মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত। তারা মোটা অংকের ভাতাপ্রাপ্ত। তাদের সন্তান-সন্ততি চাকুরী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে কোটাসুবিধাপ্রাপ্ত। আর ৩০লাখ বীরশহীদ পরিবার সম্পুর্ণ বঞ্চিত। অর্থাৎ শহীদগণ মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন করেও ব্যর্থ। আর বঙ্গবন্ধুর শহীদের ঘোষণাটি মিথ্যা ও কল্পনাপ্রসূত।

অথচ ৩০লাখ বীরশহীদের স্মৃতিতেই মিশে আছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের প্রকৃত অনুভূতি। তবুও তাদের সন্তান-সন্ততি ও বংশ-পরিবারের নেই স্বীকৃতি। বরং বাংলাদেশে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাকিস্তানি ঘাতকদের পরিবর্তে বাঙ্গালিরাই হয়েছে ঘাতক, যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী। ট্রাইব্যুনালের সামনে আন্তর্জাতিক শব্দ থাকায় এবং বাংলাদেশের বিচারকদের মাধ্যমেই বিচার পরিচালিত হওয়ায় বিশ্বজুড়ে ১৯৭১ এর ইতিহাস এখন অসত্য আর ট্রাইব্যুনালের রায়ই চুড়ান্তরূপে গৃহীত। এভাবে ১৯৭১ এর সকল হত্যাকান্ড ও অপরাধে বাঙ্গালিরাই অভিযুক্ত, পাকিস্তানিরা নয়। এ লান্থণা, লাখো শহীদ ও আত্মত্যাগী পরিবার মেনে নিতে পারেনা।

সুতরাং ৩০লাখ বীরশহীদ পরিবারের সদস্যদেরই জাগতে হবে। প্রথমে শহীদদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি আদায় করতে হবে। তারপর স্বার্থান্বেষীদের হটিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শমতে, শুধু ২লাখ মুক্তিযোদ্ধা যেমন দেশ স্বাধীন করেনি তেমনি ৩০লাখ বীরশহীদের আত্মত্যাগও বৃথা যায়নি। তাই ৩০লাখ বীরশহীদদের বাদ দিয়ে শুধু ২লাখ মুক্তিযোদ্ধা তালিকা বৈধ হয়নি। এ অবৈধ বিভাজন, বিকৃতি ও বৈষম্য দুর করতে ৩০লাখ বীরশহীদ পরিবারসহ সবাইকে জাগতে হবে।

সিরাজী এম আর মোস্তাক
শিক্ষানবিস আইনজীবী, ঢাকা।
mrmostak786@gmail.com.


Place your ads here!

Related Articles

তিনি শুধু প্রধান বিচারপতি নন

সিরাজী এম আর মোস্তাক: মাননীয় প্রধান বিচারপতি জনাব এস কে সিনহা একটি উজ্জল নক্ষত্র। বিচারবিভাগে তাঁর ভূমিকা চির ভাস্বর। তাঁর

একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক রনেশ মৈত্র’র পঁচাশিতম জন্মদিন

ফজলুল বারী: প্রিয় রনেশ দা’র আজ জন্মদিন। বয়স তাঁর মাত্র ৮৫ নট আউট। সেঞ্চুরি হতে আর মাত্র ১৫ বাকি। আশির

জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালায় ১ কোটি প্রবাসীর স্বার্থ উপেক্ষিত !

অর্থনীতির চালিকাশক্তি রেমিটেন্সের উৎস প্রবাসীদের স্বার্থরক্ষায় বাংলাদেশের কোন সরকারই আজ অবধি সর্বোচ্চ আন্তরিকতার পরিচয় দিতে পারেনি। সদ্যঘোষিত ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা’

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment