শুভ জন্মদিন প্রিয় প্রধানমন্ত্রী
ফজলুল বারী: সত্তুরতম জন্মদিন আপনার সামনে প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৮ সেপ্টেম্বর। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে জন্মদিনটা আপনার প্রায় কাটে আমেরিকায়। কারন প্রতিবছর এই সেপ্টেম্বরেই বসে জাতিসংঘের সাধারন অধিবেশন। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে জাতিসংঘে আপনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে নিউইয়র্ক যান। এরপর সেখান থেকে যান ওয়াশিংটনে ছেলের বাসায়। সেখানেই মূলত কাটে আপনার জন্মদিনের ঘরোয়া আয়োজন। এবারেও এর ব্যত্যয় হয়নি। কিন্তু এবার আপনার জন্মদিনটা পালিত হচ্ছে বিশেষ একটি অবস্থায়-মর্যাদায়। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়দাত্রী হিসাবে বিশেষ পরিস্থিতির কারনে জাতিসংঘের অধিবেশনে আপনি ছিলেন আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। এই সময়ের বিশ্বের সবচেয়ে মানবিক এবং বেদনাদায়ক এই অধ্যায়ের নাম জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত বার্মার রোহিঙ্গা শরণার্থী। গত এক মাসে ৪ লাখের বেশি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। ভারতের মতো দেশ যেখানে হুংকার দিয়ে বলছে একজনকেও ঢুকতে দেবোনা, বাংলাদেশ চার লাখ অসহায় মানুষকে বুক পেতে নিয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘের বক্তৃতাও তাই এই প্রথম সবাই আগ্রহ নিয়ে শুনেছে। প্রথমদিকে কিছু দোটানায় থাকলেও প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, চরম একটি সময়ে সীমান্ত খুলে দিয়ে আপনি ভাগ্য বিড়ম্বিত লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর প্রাণ বাঁচিয়েছেন। আপনাকে কৃতজ্ঞতা।
এরপর আপনার দুটি বিশেষ উক্তি এই সময়ের মানবিক মূল্যবোধের বিশেষ ম্যাগনাকার্টা হয়ে থাকবে। আশা হারানো শরণার্থী মা-মেয়েদের বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে আপনি বলেছেন, ‘আমরাও মানুষ। আমরাও শরণার্থী ছিলাম। শরণার্থী হবার কষ্ট আমরা বুঝি। যতদিন না বার্মা এদের জন্যে নিরাপদ না হবে ততদিন শরণার্থীরা এখানে থাকবে। ষোল কোটি মানুষকে যখন খাওয়া পারি, আরও দশ লাখকে খাওয়াতে পারবো’। ‘প্রয়োজনে আমরা একবেলা খাবো। আরেকবেলার খাবার তাদের সঙ্গে ভাগ করে খাবো’। বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশের একজন সাংবাদিক এবং আপনার একজন কট্টর সমর্থক ও সমালোচক হিসাবে’ আপনার এ কথাগুলোয় আমারও চোখে পানি চলে এসেছে প্রিয় প্রধানমন্ত্রী।
জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে একথাগুলো তাই আবার উল্লেখ করলাম। কারন ভাগ্য বিড়ম্বিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাঁচার নতুন আশা দেখিয়েছেন আপনি। সে কারনে এক শরণার্থী তার মেয়ের নামও আপনার নামে রেখেছেন। প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, এখনকার জীবনতো আপনার এক্সটেনশন লাইফ। আজকের বিএনপিগং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সময়ে ঘটনাক্রমে আপনারা দুই বোন বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে গেছেন। এরপর জার্মানি আর ভারতে শরণার্থী জীবন কাটিয়েছেন দীর্ঘ ৬ বছর। আপনার দুই সন্তান জয়-পুতুলেরতো শিক্ষা জীবনও শুরু হয় শরণার্থী শিশু হিসাবে। শরণার্থী অবস্থায় আপনার ছোটবোন শেখ রেহানা বিয়ে করে সংসারী হন। কেউ সখ করে দেশছাড়া শরণার্থী জীবন কাটাতে চায় না। কাজেই শরণার্থী জীবনের কষ্ট-যন্ত্রণা আপনার দলের বর্তমান সুবিধাভোগীদের বোঝার কথা না প্রিয় প্রধানমন্ত্রী। একজন আত্মস্বীকৃত শরণার্থী নেত্রীর নেতাকর্মী হওয়া স্বত্ত্বেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে আপনার দলের একশ্রেনীর নেতাকর্মী-সমর্থকদের নানান অমানবিক বর্ণবাদী মন্তব্য-টিকা-টিপ্পনি সবাইকে অবাক করেছে! রোহিঙ্গা শরণার্থী নারীদের পেটের দিকে পর্যন্ত এদের নজর পড়েছে! অসভ্যের মতো প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে জানতে চাইছে, এত শরণার্থী নারীর পেটে বাচ্চা কেনো! আপনিও নারী প্রিয় প্রধানমন্ত্রী। সন্তানের মা। জানিনা সামনে সারাক্ষন নেত্রী নেত্রী করলেও নারী হওয়াতে আপনার অলক্ষ্যে-আড়ালে এরা কী মন্তব্য করে!
১৯৮১ সালে শরণার্থী জীবন থেকে আওয়ামী লীগের হাল ধরতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনি ফিরে আসেন দেশে। ঝুঁকিটার কারন আপনার পিতাকে যারা হত্যা করেছে হত্যার সঙ্গে জড়িতরা- বেনিফেশিয়ারিরা তখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। জিয়া আপনার পিতার হত্যার সঙ্গে জড়িত। এরশাদ সেই হত্যার বেনিফেশিয়ারি। আর বাংলাদেশ এবং আপনার দলের নেতাকর্মীরা একজন নারী নেতৃত্বের অধীনে কাজ করে অভ্যস্ত না। এরকারনে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসাবে প্রথম দিকে যত নেতার সঙ্গে আপনার সমস্যা হয়েছে এর অন্যতম কারন কিন্তু পুরুষতন্ত্র। একজন নারীর কর্তৃ্ত্ব মানতে চায়নি তাদের পুরুষমন। এদেরই কেউ কেউ পরে নানান নীতিবাক্য আওড়ে দল ছেড়ে চলে যায়। ভুল বুঝে তাদের কেউ কেউ পরে দলে ফিরেও এসেছে। ভালোমন্দের নানান বিশ্লেষন আছে। কিন্তু আজকের আওয়ামী লীগের সত্য হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পর দেশের মানুষ আপনাকেই মনে করে আওয়ামী লীগের ঐক্যের প্রতীক। তিন যুগ ধরে আপনি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে এটি ভালো দেখায়না। কিন্তু এর ভালো বিকল্পও নেই আওয়ামী লীগের।
১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামে আপনাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে জাতির পিতাকে হত্যার বেনিফেশিয়ারি এরশাদ। খালেদা-তারেকগং আপনাকে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে মারতে চেয়েছে। আপনি বেঁচে গেছেন দেশবাসী আর আপনার নেতাকর্মীদের ভালোবাসায়। আপনার এই জীবনকে সে কারনেই এক্সটেনশন লাইফ বলেছি লিখেছি এখানে। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে আপনি যে ক্ষমতায় ফিরলেন এটি ছিল আপনাকে হত্যা করতে খালেদা-তারেকগং এর অপচেষ্টার প্রতিবাদ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষজনের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন-আখাংকা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আপনি ক্ষমতায় আসেন ২০০৮ সালের নির্বাচনে। সেই স্বপ্ন আজ সত্যি-বাস্তব। সাঈদি ছাড়া শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী একটাও আজ আর বেঁচে নেই। জাতির এই স্বপ্ন পূরণের কারন আপনি প্রিয় প্রধানমন্ত্রী। সংসদে দাঁড়িয়ে একদিন আপনি অকাট্য সত্য একটি কথা বলেছিলেন। তাহলো শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীকে কেনা যায়! যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলী-সাকা চৌধুরীকে বাঁচাতে কে কোথায় কত টাকা খেয়েছিলেন তা আপনি জানেন। শুধুমাত্র আপনাকে কিনতে না পারায় যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হয়েছে প্রিয় প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে এই কীর্তির জন্যে আপনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
আপনার নেতৃত্বের দৃঢ়তার কারন এ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি আজ সত্য বাস্তব। মানুষের মাথাপিছু আয় তিনগুনের বেশি বেড়েছে। নিজের অর্থে পদ্মাসেতু হচ্ছে বাংলাদেশের। আপনার শারীরিকভাষা আজ বাংলাদেশের সাহস-আস্থা-সৌকর্য্যের প্রতীক। গত কয়েকবছরে একের পর এক দুর্যোগ সামাল দিয়ে যাচ্ছেন। একসঙ্গে চার লাখের বেশি নতুন রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেয়া নতুন আরেক দুর্যোগের নাম। বার্মা নতুন আরেক যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। আর আপনি জবাব দিচ্ছেন কূটনীতিতে। বিএনপি নামের একটি আবাল দল বলে যাচ্ছে আপনি বার্মার নিন্দা করেননি। অং সাং সু চির নিন্দা করেননি। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত নিতে হবে বার্মাকে। এ আপনার দৃঢ় অবস্থান। নিন্দা করেতো আপনি সেই দরজা বন্ধ করতে পারেননা। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের কারনে বার্মা আজ সারাবিশ্বের মানুষের কাছে নিন্দিত এক দেশের নাম। অং সাং সু চি নিন্দিত এক নেত্রীর নাম। তারা যাই হোক এখানে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের তাদেরকেই ফেরত নিতে হবে। এই কাজটিও করতে হবে শেখ হাসিনাকে। আপনার কূটনৈতিক অবস্থানটি রাষ্ট্রনায়কোচিত। আবালদের কথা শোনা আপনার কাজ নয়।
২০০৬ সালে ইসরাইল-হিজবুল্লাহ’র যুদ্ধের সময় আমি রিপোর্ট করতে লেবাননে যাই। তখন সেখানকার নানাকিছু দেখেশুনে মনে হয়েছে লেবানন নামের প্রকৃতির ভূ-স্বর্গ দেশটির দূর্ভাগ্য-দুর্যোগের নাম সেখানকার ইসরাইল সীমান্ত। প্রতি ১০-১২ বছর পর নানা উছিলায় ইসরাইল নামের দেশটি বিমান হামলা চালিয়ে লেবানন দেশটিকে ধবংসস্তুপে পরিণত করে। একেকবার ধবংসস্তুপ করা শেষ হবার পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর করায় জাতিসংঘ নামের আমেরিকার পাপেট প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশের এখনকার দূঃখ প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়। তার সীমান্ত ভারত-বার্মার সঙ্গে এটিই যেন বড় এক দুর্যোগের নাম। মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারত দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন পুরোপুরি অর্থনৈতিক। অর্থনীতির হিসাব কষে তারা হাসা-কাঁদার অভিনয় করে। অর্থনীতির হিসাব কষে এবার ভারতও বার্মার মানবতাবিরোধী সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে। আর বার্মার কাজ হলো তাদের বৌদ্ধ রাষ্ট্রে তারা যেহেতু রোহিঙ্গাদের রাখবেনা নানা উছিলায় তারা মেরেকুটে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেবেই। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে ধবংসের জন্যে সীমান্তে ফেনসিডিলের মাদকায়নের কারখানাসব গড়ে তুলেছে ভারত। আর বার্মা গড়ে তুলেছে ইয়াবা কারখানা। আর এখন যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চাপিয়ে দিয়ে!
পৃথিবীর যে কোন অঞ্চলের বাস্তুচ্যুত মানুষেরা সবসময় নিকট সীমান্তের কোন দেশে গিয়ে আশ্রয় নেয়। যেমন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা গিয়ে আশ্রয় নেয় ভারতে। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী পাহাড়ি শরণার্থীরা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। নিজ দেশে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদেরও নাফ নদী অথবা বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে আশ্রয় নেবার সহজ জায়গাটি হচ্ছে বাংলাদেশ। আগে থেকে চারলাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে ছিল। দীর্ঘ শরণার্থী জীবনের হতাশায় তাদের কেউ কেউ নানা অপরাধেও জড়িত হয়েছে। এরওপর এবার আরও নতুন শরণার্থী এসে উঠেছে চার লাখের বেশি। এত বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর ভারবহনের সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই। কিন্তু শরণার্থীরা নিরুপায়। মানুষের দেশ মানবিক বাংলাদেশও নিরুপায়। এভাবে সীমান্ত খুলে দিয়ে এত শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ায় মানবিক পৃথিবীর কাছে বাংলাদেশ আজ প্রশংসিত একটি দেশের নাম। দুনিয়ায় কেউ এটা করেনা। নির্যাতিত এত মানুষকে এভাবে আশ্রয় দেবার জন্যে শেখ হাসিনা এখন সারাবিশ্বে প্রশংসিত এক মানবিক নেত্রীর নাম। বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে অসহায় শরণার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে তা দেখে বিশ্ব আজ অভিভূত। মানুষের ভালোবাসার এমন শক্তিতে এ তুফান পাড়ি দিতে হবে। শরণার্থী জীবনের কষ্ট জানা শেখ হাসিনা দেশের নেতৃত্বে আছেন। মানবিক পৃথিবী আজ বাংলাদেশের পক্ষে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। বাংলাদেশ তা পারবে। কারন নেতৃত্বে আছেন শেখ হাসিনা।
অস্ট্রেলিয়ায় আমার ক্লাসে কিছু সহপাঠী ছিল সৌদি আরবের। সেই সৌদি ছাত্ররা আমাকে প্রায় বলতো কিছু বাংলাদেশির কারনে তাদের অনেক সামাজিক সমস্যা-আইনশৃংখলা পরিস্থিতির সমস্যা হচ্ছে। আমি তাদের বলতাম তোমরা যে অস্ট্রেলিয়া এসেছো এরজন্যে আইএলটিএস দিতে হয়েছে। অথবা এখানে আসার পর ইংরেজি শিখতে হচ্ছে। কিন্তু সৌদি আরবে আমার দেশ থেকে শ্রমিক যারা গেছে তাদেরতো আইএলটিএস দিতে হয়নি। কত কম মজুরি তাদের দিয়ে খাটাও জানো? অস্ট্রেলিয়ায় তা কী কল্পনা করতে পারবে? কাঁঠাল গাছে আম চাও কেনো? আমার কথার যুক্তিতে তারা চুপ মেরে গিয়ে উল্টো প্রশংসা শুরু করে বলতো বাংলাদেশিরা রোজায় পিঁয়াজো সহ নানাকিছু বানিয়ে তাদের খাওয়ায়। বাংলাদেশি খাবার খুব টেস্টি। বাংলাদেশি লোকজন খুব পরিশ্রমী। আন্তরিক, ইত্যাদি।
রোহিঙ্গারা বার্মার সবচেয়ে অনগ্রসর অঞ্চল আরাকান থেকে এসেছে। এরা মূলত কৃষি শ্রমিক। বার্মিজ সেনাদের নিপীড়নে জন্মভূমিতেও একরকম লুকিয়ে কেটেছে তাদের জীবন। নাগরিক অধিকার না থাকাতে রোহিঙ্গা শিশুদের পড়াশুনার সুযোগও সেখানে সীমিত। বাংলাদেশের চরাঞ্চল অথবা বস্তির বেশিরভাগ পুরুষদের জীবনের বিনোদন হচ্ছে সারাদিনের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর রাতের বেলা সঙ্গম করা। এরজন্যে চরাঞ্চলে এবং বস্তিতে জন্মহার বেশি। অথচ পড়াশুনা করা চাকরিজীবী পরিবারগুলো সামর্থ্যের হিসাব-নিকাশ করে অটোমেটিক ছোট হয়ে যাচ্ছে। আলোর জীবন বঞ্চিত রোহিঙ্গাদের জীবনের অবস্থাও বাংলাদেশের চরাঞ্চল অথবা বস্তি জীবনের মতো যেনো! আর আমাদের অনগ্রসর মুসলমান সমাজের ‘মুখ দিয়েছেন যিনি আহার দেবেন তিনি’ বুলিবাক্যটিতো আছেই। আর সেই নারীরাতো অন্তঃস্বত্ত্বা হয়েছে তাদের স্বামীর মাধ্যমে। স্বামীকে বাদ দিয়ে অন্তঃস্বত্ত্বা নারীর পেটের দিকে আঙ্গুল তোলাতো পুরুষতন্ত্রের আরেক রূপ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক, উন্নয়নকর্মী কলামিস্টের লেখার একটি লাইন পড়ে চমকে উঠেছি। একজন নারী হিসাবে তাকে পেয়ে আসল আরেকটি কথা রোহিঙ্গা নারীরা তাকে বলেছেন! তাকে বলা হয়েছে পেটে বাচ্চা থাকলে বার্মিজ ধর্ষক সেনারা তাদের নিতোনা। খালি পেট দেখলে নিয়ে যেতো! কী করুন এক জীবন কাটিয়ে আজ আমাদের কাছে এসে আশ্রয় নিয়েছে এমন নির্যাতিতা রোহিঙ্গা মায়েরা! অতএব প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার দলের লোকজনকে একটু সভ্য হতে বলুন। অসহায় রোহিঙ্গা নারীদের পেটের দিকে তাকাতে না করুন প্লিজ। এমন কতিপয় অর্বাচিনের বর্ণবাদী পুরুষতান্ত্রিক কথাবার্তা-টিকাটিপ্পনি দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে বিশাল এক পবিত্র মিশনে রয়েছে সে সম্পর্কে তাদের যথেষ্ঠ ধারনার অভাব রয়েছে। রোহিঙ্গারা ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত? নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত? অস্ট্রেলিয়ার রোহিঙ্গারা কেনো এসবের সঙ্গে জড়িত নয়? ইয়াবার নামওতো অস্ট্রেলিয়ার লোকজন জানেনা। আগে নিজের কাপড় ঠিক করুন। পরে অন্যের কাপড়ের দিকে তাকান।
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী আপনার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েও এখানে শুধু রোহিঙ্গা রোহিঙ্গা করছি কারন এটিই এখন বাংলাদেশের সামনে নতুন আরেক পরীক্ষা। আপনার জন্যেও আরেক পরীক্ষা। মানবিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের কোন কাজ যেন কোথাও প্রশ্নের মুখে না পড়ে। বায়োমেট্রিক নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের মোবাইল ফোনের সিম কিনতে না পারাটা বর্তমান সভ্য বিশ্বে প্রশ্ন তুলবে। কারন এটি একজন মানুষের অধিকার। এর আগে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনেকে সুবিধামতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলে গেছেন। বার্মা এদের ফেরত নেবে এমন নিশ্চয়তা নেই। এখন যারা এসেছে তাদের কেউ কেউ যদি অন্য কোথাও চলে যান তাতে বাংলাদেশের ক্ষতি কী। এই যুগে একটি মোবাইল ফোন যে কারো সামর্থ্য বাড়ায়। একটা শিশুর জন্ম যেখানে হবে তার জন্মস্থান সূত্রের নাগরিকত্ব একটি আন্তর্জাতিক মৌলিক অধিকার। জন্মস্থান সূত্রের নাগরিকত্বের জন্যে আমাদের ধনাঢ্য ব্যক্তির স্ত্রীরা সন্তান জন্ম উপলক্ষে আমেরিকা-কানাডার মতো দেশে চলে যান। দৈবক্রমে বাংলাদেশে এসে পড়া কোন রোহিঙ্গা মায়ের সন্তানের অধিকার আমরা অস্বীকার করতে পারিনা।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ত্রান কার্যক্রমে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানো একটি প্রশংসিত উদ্যোগ। স্কাউট-গার্লসগাইড সহ সারাদেশের উদ্যমী তরুন স্বেচ্ছাসেবীদের শরণার্থী সেবায় কাজে লাগানো যেতে পারে। পৃথিবীর বন্ধু দেশগুলোর নেতাদের আমন্ত্রন জানিয়ে বাংলাদেশে আনার উদ্যোগ নিলে ভালো হবে। তারা আসুক দেখুক আমরা কি করছি। আমরা কি করতে পারি। শরণার্থীদের নতুন বেঁচে থাকার আস্থার উৎস আপনি শেখ হাসিনা ত্রান কার্যক্রম সরেজমিন দেখতে বারবার শিবিরগুলোতে যাবার চেষ্টা করুন। আমাদের এই জটিল শরণার্থী পরীক্ষাও পাশ করতে হবে। এবারের জন্মদিনে জাতির পক্ষে এটিও আমাদের অন্যতম চাওয়া। আপনি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, দীর্ঘজীবী হোন প্রিয় প্রধানমন্ত্রী। জন্মদিনে আপনাকে অফুরান শুভেচ্ছা।
Related Articles
গরুর লেজ, মহিষের পিঠ
গ্রামের প্রকৃতি নিয়ন্ত্রিত জীবনে যেমন কোন হঠাৎ চমক নেই তেমনি অপর দিকে আছে বিনা পয়সায় অফুরন্ত আনন্দের অনুষঙ্গ। শিশু কিশোরদের
The Case For Calculations: Attempting to Curtail The Crescent Controversies
A very long lecture to justify using Calculations in Islam by Shaykh Dr Yasir Qadhi . It seems even calculating