ধর্ষক শাফাতের বাবা, থানার ওসিও আসামী করা হোক বনানীর ধর্ষন কান্ডের মামলায়
ফজলুল বারী: বনানীর অভিজাত হোটেলে ঢাকার তিন ধনীর দুলালের ধর্ষনকান্ড নিয়ে এখন হৈচৈ চলছে দেশে। এরা জন্মদিনের আনন্দ উপভোগ করতে দামী হোটেলে ধর্ষনের আয়োজনও করে! এমনিতে ধর্ষন বাংলাদেশে অথবা এর আশেপাশের দেশের কোন অস্বাভাবিক বা অকস্মাৎ ঘটনা নয়। ভোগবাদী পুরুষ শাসিত সমাজে-দেশে-বিশ্বে এটি লাম্পট্যের আরেক রূপ। আমি একবার এক পতিতা পল্লীতে রিপোর্ট করতে গিয়ে একটি কমন তথ্যে চমকে যাই! প্রতিটি পতিতার এ পথে আসার পিছনে এক বা একাধিক পুরুষ জড়িত। তারা তাকে ফুসলিয়ে ভোগ করেছে। এরপর সমাজ-পরিবার বিচ্যুত হয়ে পতিতাপল্লীর বাসিন্দা হয়ে যাওয়া ছাড়া তার আর গত্যন্তর ছিলোনা! উন্নত বিশ্বে যেহেতু প্রাপ্ত বয়স্ক যুবাদের সেক্সের সামাজিক ও আইনানুগ নানান ব্যবস্থা বিদ্যমান তাই ধর্ষনের মতো ঘটনার ব্যাপকতা সে সব সমাজ-রাষ্ট্রে কম। বাংলাদেশ ধর্মীয়-সামাজিক-আইনানুগ কিতাবে পবিত্র(!) একটি দেশ। মুখে মুখে বেশিরভাগ লোকজন মুসল্লি এবং ভাবখানা ফুলের মতো পবিত্র সবার চরিত্র! কিন্তু আন্ডারগ্রাউন্ডে অনেকের যে কী রূপ-অবস্থা তা বনানীর ধর্ষন কান্ডের মতো ঘটনা যখন ফাঁস হয় তখন এর কিছুটা জানা সম্ভব হয়।
বনানীর ঘটনা যত পড়ছি-জানছি তা প্রতিবাদের স্মারক হয়েছে বিশেষ কিছু কারনে। প্রথম হলো ভিকটিমদের সামাজিক অবস্থান। তারা যেহেতু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, এবং ভিকটিমদের একজন সাহস করে নিজে বাদিনী হয়ে থানায় গিয়ে মামলা করেছেন তা নাগরিক সমাজকে নাড়া দিয়েছে। দ্বিতীয় চরিত্র পুলিশ! সাম্প্রতিক জঙ্গি দমন সহ নানান ইস্যুতে পুলিশ দেশের মানুষের প্রশংসা পাচ্ছে। আর বনানীর ঘটনার মতো ঘটনায় পুলিশ যেন হেলায় তার অর্জনসমগ্র হারায়! এখানে বাদিনী এবং দুই ভিকটিম সশরীরে থানায় উপস্থিত, কিন্তু বিশেষ বশে শরমিন্দা(!) পুলিশের মামলা নিতে লেগেছে ৪৮ ঘন্টা সময়! কিসের আশায় পুলিশ এসব করে তা সবার মুখস্ত। বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলের পুলিশ যেমন রাতের বেলা পার্কের বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে দেহপশারিনীর টাকার ভাগ খায়, এক্ষেত্রেও ধর্ষকদের অর্থবিত্তের ঝাঁঝ সামলাতে সামলাতে কীনা সব তালগোল পাকিয়ে ফেললো! এখন তা আর হজম না বদহজম হবার জোগাড়! সঙ্গে যোগ হয়েছে বড় শানদার ব্যবসা এক প্রতিষ্ঠানের নাম আপন জুয়েলার্স!
এই আপন জুয়েলার্সের মালিকদের একজন দিলদার হোসেন। তিনি এই আলোচ্য ধর্ষনকান্ডের কুশীলব তিন ধর্ষকের প্রধান অথবা শীর্ষ ধর্ষক শাফাতের পিতা। এ ঘটনায় মিডিয়ার লোকজনের নজরে আসার পর এই পিতৃদেব যা বলিলেন না, কাদের মোল্লার ঘটনাই যেন সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছে! যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার প্রথম রায়ে তার ফাঁসির আদেশ হয়নি। এতে খুশিতে দাপটে ডগমগ একাত্তরের কসাই কাদের ট্রাইব্যুনাল থেকে বেরিয়ে যাবার সময় ঔদ্ধত্যের ভি’ তথা বিজয়ের চিহ্ন দেখায়! তার ওই ঔদ্ধত্যের ভি’ তথা বিজয়ের চিহ্নটিই প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে দেয় সবখানে! ঢাকার সামান্য কয়েকজন ব্লগার ফেসবুকে ইভেন্ট খুলে কসাই কাদেরের যাবজ্জীবন সাজার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে জড়ো হন শাহবাগে। সেই কয়েকজন মূহুর্তে কয়েকশো, এরপর কয়েক হাজার, এরপর লক্ষ জনতায় রূপ নেয়। এরপর কি হয়েছে তা সবার জানা। বাংলাদেশে একাত্তরের সাত মার্চের পর এমন প্রতিবাদ আগে আর কেউ দেখেনি। সেই প্রতিবাদকে সম্মান দেখাতে সরকার আইন পরিবর্তন করে বাদীপক্ষের আপীলের নতুন আইন পাশ করে। কাদের মোল্লার ফাঁসিও হয়েছে।
আর এখানে এক ধর্ষকের পিতা দিলদার হোসেন ন্যাক্কারজনক ঘটনাটিকে তার পুত্রের সমঝোতায় নারীভোগ বলে জায়েজ করতে চান! টাকায় পুলিশ তার পক্ষে চলে গিয়েছিল বলে কী এমন ঔদ্ধত্যের বক্তব্য এসেছে এক ধর্ষকের পিতার মুখে? বলাবাহুল্য এ ঘটনা ঘৃতাহুতি ছড়িয়েছে। এরপর দেখা গেলো পুলিশের সেই চরিত্র! সোশ্যাল মিডিয়া আর মিডিয়ার ধারাবাহিক চাপের মুখে ৪৮ ঘন্টা পর মামলা নিলেও তারা নড়েওনা চড়েওনা! পুলিশ বলতে শুরু করে তারা আসামিদের খুঁজে পাচ্ছেনা! বিমান বন্দরে পাহারা বসানো হয়েছে, ইত্যাদি! আর একই সময়ে ধর্ষকের পিতা দিলদার হোসেন মিডিয়াকে বলছেন, তার ছেলে বাড়িতেই আছে। ঘটনা প্রমান না হলে পুলিশ তাকে ধরবে কেনো, ইত্যাদি! এরপর একদিন সকালে বেলা আসামী ধরতে এসেছি দেখাতে পুলিশ মোটরসাইকেলে আসে ধর্ষকের গুলশানের বাড়িতে।
একই সময়ে মিডিয়ায় জানা গেলো গাড়ির বহর নিয়ে ধর্ষক গেছে সিলেটে। সেখানে এক রিসোর্টে রুম ভাড়া নিতে যায়। রিসোর্টের নিয়ম অনুসারে তারা অতিথিদের ছবি তুলতে চাইলে তাতে রাজি না হয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। আর একই সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলা শুরু করেছেন, অপরাধী যত শক্তিশালী হোকনা কেনো তাকে ধরা হবেই! মিঃ মন্ত্রী বাহাদুর, আপনার পুলিশ একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক ৫৭ ধারার একটি মামলা পেলে পড়ি কি মরি করে তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডেও নিয়ে যায়, আর এখানে চাঞ্চল্যকর একটি ধর্ষন মামলা নিতে সময় লাগে ৪৮ ঘন্টা! এরপর আসামী ধরবো কি ধরবোনা করতে করতে সহজ কাজগুলো কঠিন করে পানি ঘোলা করে খায়!এরমাঝে পুলিশ কতটাকা হজম করেছে এ নিয়ে কী কোন পৃথক মামলা হবে? বাংলাদেশে পুলিশ যখন টাকায় হাসে-নাচে তখন আম জনতা বিশ্বাস করে ফেলে এই টাকার ভাগ ওপরমহল পর্যন্ত যায়! হয়তো সবক্ষেত্রে এটা সত্য না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও নিশ্চ এসব টাকাকে হালাল মনে করেননা। কিন্তু বদনাম যারা তৈরি করে তাদের গ্রেফতারতো হয়ইনা, উল্টো যে সব ফুলেল শাস্তির ব্যবস্থা হয় তাতে মানুষের আরও ক্রোধ ছড়ায়। এর উত্তর কী মিঃ মন্ত্রী বাহাদুর?
এখন বলাবলি শুরু হয়েছে এত পুরনো ঘটনা, মেডিক্যালি ধর্ষন প্রমান করা যাবে কিনা। এই পুলিশ বা বাংলাদেশের পুলিশি মামলার মেডিক্যাল টেস্ট দিয়ে তা প্রমান করা যাবেনা সত্য। কিন্তু ধর্ষন শনাক্তে উন্নত আরও অনেক টেস্ট এখন উন্নত বিশ্বে আছে। ধর্ষকদের ডিএনএ, চুল-লালা সহ নানকিছুর সঙ্গে শিকারদের এসব মিলিয়ে অপরাধ প্রমান করা সম্ভব। বাংলাদেশের জুলুমবাজ পুরুষতান্ত্রিক আইনে আছে ধর্ষিতাকে প্রমান করতে হয় যে সে ধর্ষনের শিকার হয়েছে। এক্ষেত্রে সাহসিনী বাদিনী আছে আইনের সামনে। যে হোটেলের ঘটনা সেই হোটেল যদি কক্ষদুটির আলামত সংরক্ষন না করে তাদেরকেও ধরতে হবে। তাদের সিসিটিভির ফুটেজে এই মেয়েদের হোটেলে প্রবেশ, বেরিয়ে যাওয়া সহ নানাকিছুর প্রমান থাকার কথা। এসব যদি ঠিকমতো সরবরাহ করা না হয় হোটেলওয়ালাকেও ধরতে হবে। কারন ব্যবসার কিছু আইনানুগ নিয়ম মেনে চলতে তারা বাধ্য।
বনানীর ধর্ষন কান্ডে ফুটে উঠেছে আমাদের দেশের অসৎ বড়লোক অথবা হঠাৎ বড়লোকদের পারিবারিক নৈরাজ্য! ধর্ষক শাফাতের বাবা দাবি করেছেন, তার ছেলে নিজের পছন্দে বিয়ে করেছিলো। তারা সেই বিয়ে মেনে নেননি। ডিভোর্স করিয়েছেন। তার সন্দেহ শাফাতের ডিভোর্সি বউ এসব ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। ধর্ষিতাদের একজনের জবানবন্দিতে এসেছে জন্মদিনের দাওয়াতে কথা বলে হোটেলে নিয়ে তাদের জোরপূর্বক ধর্ষনের আগে বাবা’র সোনা চোরাচালানের অর্থের দাপট দেখিয়ে শাফাত বলছিল এয়ারপোর্টে যে এত সোনা ধরা পড়ে এসব যায় কোথায়! এমন দুই একটা মেয়েকে মেরে ফেললেও তার কিছু হবেনা! আরও কদর্য যে ঘটনাটি ঘটেছে যা আজকাল অনেক ব্ল্যাকমেইলিং এর ঘটনায় সমান দেখা যায়! আমাদের কিছু পুরুষ শয়তান একটি মেয়ের সর্বনাশের সময় তা আবারও ভিডিও’ও করে রাখে! সেই ভিডিও ফাঁসের ভয় দেখিয়ে তাকে মামলা থেকে বিরত রাখে অথবা নিয়মিত ভোগের সামগ্রী বানায়! ধর্ষক শাফাত এই ভিডিওর কাজটি তার দেহরক্ষী আর গাড়িচালকের মাধ্যমে করেছে! এই ভিডিও ভাইরাল করে দেবার ভয় দেখিয়ে আবার মেয়েগুলোতে তাদের বাসা থেকে আনতে পাঠিয়েছে! এরপর ভিকটিমরা মরেছিতো এমনিতেই এই ভেবে মামলা করতে গেছে থানায়! আর ধর্ষক শাফাতের পিতা দিলদার হোসেন বিষয়টির শিরোনাম করেছে সমঝোতায় তার ছেলের নারীভোগ! আইনে আছে কিনা জানিনা আমারতো মনে হয় এই ঘটনাটিকে দৃষ্টান্ত হিসাবে নিতে এই পিতা এবং ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদেরও এই মামলায় আসামী করা উচিত।
বনানী কান্ডের পর আবার প্রমানিত ছাত্রলীগ-ছাত্রদল এসব সংগঠন তাদের প্রয়োজনীয়তা হারিয়েছে। শুধুমাত্র বড়দলের ধামাধরার কাজ করাই কী এদের কাজ। ঢাকা শহরে দুটি ছাত্রী বোন একদল পাষন্ডের হাতে ইজ্জত হারিয়েছে, এর প্রতবাদে যদি এরা রাস্তায় না নামে তাহলে ছাত্র নামযুক্ত এসব সংগঠনের কী দরকার? অবশ্য আগেও দেখা গেছে এরা সাধারন ছাত্র মানসের প্রতিনিধিত্ব আর করেনা। শামসুন্নাহার হলে ছাত্রী নিগ্রহের প্রতিবাদও এসব সংগঠনের উদ্যোগ নেতৃত্বে শুরু হয়নি। মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনায় সক্রিয় হয়েছে। জাতীয় মহিলা পরিষদ-জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির মতো সংগঠনগুলোকেও এই ঘটনার বিচার নিশ্চিতকরনে সক্রিয় ভূমিকায় চাই। অনলাইনে যারা প্রতিবাদ সংগঠনে সক্রিয় তাদের প্রশংসা করি, হাল ছেড়ে দিওনা বন্ধুগণ। ভিকটিম বোন দুটিকে বলি, সাহস রেখো, বাংলাদেশের সৎ মানুষেরা তোমাদের পক্ষে। এ ঘটনার তদন্ত-বিচার একটি দৃষ্টান্ত হোক।
Related Articles
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেরাই কি ছাত্র অপরাজনীতির জন্য দায়ী নয়?
১.বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে একজন ছাত্র-ছাত্রীকে মেধা ও যোগ্যতা সবকিছু থাকার পরেও শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার জন্য আরও একটি বিশেষ যোগ্যতার
Pitha Mela on 23 August at Chandler
Dear Community Members We are welcoming all of you to attend a Massive Festival of the Year the Pitha Mela,
গাছ, প্রকৃতি ও আমরা
প্রতিদিন কাজে যাবার আর বাসায় ফেরবার সময় রাস্তার পার্শ্বে এই অসাধারন সুন্দর গাছগুলিকে দেখি। আমার বাসার পার্শ্বে রাস্তায়, উল্টা দিকের