এমপির স্ত্রী হওয়া সহজ, কিংবদন্তি সবাই হয়ে উঠেন না
আমার প্রেম ও প্রত্যাখ্যান দু’টোই তীব্র।
কারো প্রতি ঘৃণা নেই, অপছন্দ আছে।
কোন মানুষের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করার দুঃসাহস বা স্পর্ধা কোনটাই আমার নেই।
তসলিমা নাসরিন। তুমুল বিতর্কিত লেখিকা। মৌলবাদীদের দ্বারা বিতারিত বাংলাদেশী লেখিকা। ব্যক্তিগতভাবে আমার অপছন্দের একজন লেখিকা। তাঁর কোন বই আমার কোন কালেই পড়ার সৌভাগ্য হয়নি।
সময়টা ৯০’র দশক। লেখক-পাঠক সমাজে বেশ হৈ চৈ তসলিমা নাসরিনকে ঘিরে। আমার স্কুল জীবন প্রায় শেষদিকে। দুরন্ত কৈশোর। কৌতূহলী মন। বন্ধুরা সুযোগ পেলেই তসলিমা ইস্যু নিয়ে কথা বলে। তাঁর লেখা পড়ার জন্য ছটফট করি। উৎসুক মনে নানান প্রশ্ন! হঠাৎ বন্ধু রিটা বলল – ওর বড় বোনের কাছে তসলিমা নাসরিনের লেখা একটা বই আছে। নাম__ লজ্জা। কিন্তু বড় বোন বলে কথা, এবইয়ের নাম মুখেও আনা যাবে না। কুৎসিত নগ্ন যৌনতা পুঁজি করে তিনি লেখিকা হয়ে উঠেছেন, আড়ালে পড়ে আছে তাঁর মেধাবী চিকিৎসক জীবন। আরো বছর দু’য়েক কেটে গেল। হঠাৎ একদিন ঢাকার নীলক্ষেত ফুটপাত ধরে হাঁটছি__ দু’পাশে সারি সারি বইয়ের দোকান। ভ্রাম্যমাণ এক হকারের হাতে অন্যান্য বইয়ের পাশাপাশি এই লেখিকার দু’টো বই__ ‘আমার মেয়ে বেলা’ ও ‘ফরাসী প্রেমিক’। চোখ আঁটকে গেলো, কেনার আগ্রহ বোধ করলাম। পরক্ষনেই মনে হল – রাস্তার সব মানুষ আমাকে দেখছে। একাধিক স্বামী ও একাধিক পুরুষের সঙ্গে তার দেহজ সম্পর্কের কথা তিনি বেশ রসিয়ে রসিয়ে লিখে যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন পাঠক সমাজে, আমিও হয়তো এর অংশ হয়ে উঠছি! রুচিতে বাঁধলো। আমার পাঠক মনকে সংবরণ করে বাসায় চলে এসেছিলাম সেদিন। তারপর ভুলেই ছিলাম। ইদানিংকালে ফেসবুকের কল্যানে এই লেখিকার লেখা টাইম লাইনে ভেসে উঠে। আলোচ্য বিশেষ কিছু হলে তাঁর লেখা পড়ি।
তিনি লিখেছেন: ‘ছেলেদের নারীবিদ্বেষী মোল্লা আর জিহাদি জঙ্গী না বানিয়ে মানুষ বানানোর চেষ্টা করুন’
বাংলাদেশের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবানাকে উদ্দেশ্য করে তিনি তাঁর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন “এতকাল অভিনয় করে, পরপুরুষকে আলিঙ্গন করে, তাদের সঙ্গে কোমর দুলিয়ে নেচে যে ‘পাপ’ কামিয়েছেন, তা মোচন করতে নামাজ রোজা তো করছেনই, হজে যাচ্ছেন, মসজিদ মাদ্রাসা বানাচ্ছেন।” আরো অনেক কিছু …!
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একজন জীবন্ত কিংবদন্তী অভিনেত্রী/ নায়িকা শাবানা। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারসহ আরো অসংখ্য পুরষ্কার। গতকাল পেয়েছেন বাংলা চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের জন্য আজীবন সম্মাননা এবং বাংলাদেশের অগণিত মানুষের অকৃপণ ভালবাসা শ্রদ্ধা ও সম্মান।
একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্রপ্রেমী হিসেবে এই গুণী অভিনেত্রী আমারও অনেক ভালো লাগার। তাঁর অভিনীত অসংখ্য সিনেমার ভক্ত আমি।
গত বিশ বছর চলচ্চিত্র জীবন থেকে তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। যতটুকু জানি সপরিবারে তিনি বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন। সংসার, ধর্ম-কর্মে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। মাঝেমধ্যে দেশে আসলেও কঠিন গোপনীয়তা রক্ষা করে চলেন। পুরুনো সহকর্মীদের থেকেও নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন। শাবানাপ্রেমী কোটি দর্শক/ভক্ত প্রিয় অভিনেত্রী শাবানার সেচ্ছায় নির্বাসন মেনে নিতে পারেননি। সময় গড়িয়ে অনেক পরিবর্তন। অশ্লীলতা,নকল,অনিয়মের ধস,দুঃসময়,যৌথ বানিজ্যে প্রতারণা,শিল্পী-নির্মাতা-প্রযোজকের ব্যক্তিস্বার্থ বানিজ্যকরন/জিম্মি নানান অভিযোগে বাংলা চলচ্চিত্র মুখ থুবড়ে পড়ে আছে গত দুই দশকের বেশী সময়।
শাবানাকে কোথাও দেখা যায়নি। অথচ, তাঁর সমসাময়িক অনেকেই চলচ্চিত্রের এই দুঃসময়ে এগিয়ে এসেছেন। নিজ নিজ অবস্থান থেকে চেষ্টা করছেন পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে।
শাবানা আবারো আলোচনায়! খবরের শিরোনামে! বিশ বছরের আড়াল ছিন্ন করে আবারো পর্দায়! তবে, সিনেমার নয়___ বাস্তবে! তিনি বর্তমানে দেশে আছেন। গনমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। পুরুনো সহকর্মী/গনমাধ্যমকর্মী/সাংবাদিকদের বাসায় ডেকে নিজে রান্না করে খাওয়াছেন। নিউজে কাভারেজ পাচ্ছে সেইসব। নিজ এলাকায় মসজিদ মাদ্রাসা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন।
এপর্যন্ত ঠিক ছিল।
খবরের নেপথ্যে ঘটনাঃ স্বামী ওয়াহিদ সাদিক নেমেছেন রাজনীতির জটিল পথে, আর তাতে সহযাত্রী হয়েছেন শাবানা। ভবিষ্যৎ এম পি’র স্ত্রী।
একজন এম পি’র স্ত্রী হওয়া সহজ, কিন্তু একজন শাবানা যুগ যুগ তপস্যা করেও হওয়া যায় না!
তসলিমা নাসরিন নিন্দিত, কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত। প্রিয় অভিনেত্রী আপনি নন্দিত, সৃষ্টিকর্তার অকৃপণ দানে আপনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশের মসজিদ মাদ্রাসাগুলোয় কী শেখানো হয়, কী পড়ানো হয় — তা লক্ষ রাখার জন্য কোনও সরকারি ব্যবস্থা নেই। একটা রুগ্ন, পঙ্গু, অসুস্থ, দুর্বল, বিকৃত,লোভী,স্বার্থপর প্রজন্ম তৈরি করার জন্য মৌলবাদীদের অবদান অনেক।
মসজিদ মাদ্রাসার পাশাপাশি বিজ্ঞান, থিয়েটার, গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানের দিকেও নজর দিন। তসলিমাদের মন-মগজ দেশের জন্য কেঁদে উঠার আগেই আপনাদের বিবেক জাগ্রত করুন।
তা না হলে আড়ালেই থাকুন। যেমনটা উপমহাদেশের আরেক কিংবদন্তী ছিলেন। তিনিও বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পকে অলংকৃত করেছেন তাঁর অসাধারণ অভিনয়, সৌন্দর্য ও প্রতিভা দিয়ে। বাঙালির স্বপ্ন, নির্ভরতা ও অনুপ্রেরণার প্রতীক__ মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। তিন দশকের বেশি সময় তিনি অন্তরালে থেকে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। বিদায় নিয়েছেন পৃথিবীর পর্দা থেকে।
প্রিয় অভিনেত্রী শাবানা, জনসম্মুখে থেকে মানবসেবা দিয়ে হয়ে উঠুন বাঙালি হৃদয়ের নয়নতারা। যেমনটা ছিলেন সোফিয়া লরেন, এলিজাবেথ টেলর।
এম পি’র স্ত্রী নয়, একজন শাবানা হয়ে স্বকীয়তায় আপনি বেঁচে থাকুন যুগ যুগ।
#হ্যাপি রহমান
সিডনি-অস্ট্রেলিয়া
২৫.০৭.২০১৭
Related Articles
21st February: A Day of Mourning, Pride Action
21st February is a day of national mourning, pride, reflection and action. It is the Language Martyr’s Day. It is
তোমার জন্য মুগ্ধ!
একটা গানের এলবাম হাতে এসেছে, গত সপ্তাহে। শুনবো শুনবো করে, আজই প্রথম শুনার সময় পেলাম। প্রকৃত পক্ষে গান শোনার জন্যে
টনি এ্যাবটের অস্ট্রেলিয়া
টনি এ্যাবটের অস্ট্রেলিয়া শুধু মাত্র আনুষ্ঠানিক শপথ বাকি, তারপরই লিবারেল পার্টির প্রধান টনি এ্যাবট অস্ট্রেলিয়ার ২৮ তম প্রধানমন্ত্রী। সর্বশেষ হিসাব