অস্ট্রেলিয়া পড়তে যেতে প্রস্তুতি নিতে হবে যেভাবে
ফজলুল বারী।। ইনবক্স ভরে যাচ্ছে একটা আকুতিতে! অনেকেই লিখছেন, ভাই আমারে অস্ট্রেলিয়া নিয়া যান। ওখানে গিয়া কাম করুম! অনেকে জানতে চাইছেন, অস্ট্রেলিয়া যাবার খরচ কত? যারা এমন বার্তা পাঠাচ্ছেন তাদের প্রায় সবাই বয়সে তরুন। সৃষ্টি সুখের উল্লাসী নতুন প্রজন্ম। দেশ তাদের ভরসা দিতে পারছেনা! এ বড় কষ্টের। এ ব্যর্থতা আমাদের সবার। কিন্তু আমার সাম্প্রতিক কোন পোষ্ট কী তাদের ভুল বার্তা দিয়েছে? নতুবা এমন আকুতির ঝড় বইবে কেনো আমার ইনবক্স লক্ষ্য করে? তাদের উদ্দেশে আবার লিখছি।
তরুন যারা অস্ট্রেলিয়া আসতে চান, পড়াশুনার উদ্দেশ্য ছাড়া এখানে আসার কোন সুযোগ নেই। এরজন্য প্রথমে থাকতে হবে ব্যক্তিগত মেধা। এরপর অভিভাবকের আর্থিক সাচ্ছল্য। কারন এরা যে তাদের দেশে বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের ওয়েলকাম করে এটি তাদের ব্যবসা। এডুকেশন এদের বড় একটি ইন্ডাস্ট্রি। এখানে কোন মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নেই। ঢাকায় মাঝে মাঝে অস্ট্রেলিয়া সহ বিভিন্ন দেশ শিক্ষা মেলার আয়োজন করে। এরা জানে বাংলাদেশের টাকাওয়ালাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করতে বিদেশে যায়। তারা যাতে তাদের দেশে আসে, ডলারগুলো যাতে আসে তাদের এডুকেশন ইন্ডাস্ট্রিতে, এ লক্ষ্যেই যারা আয়োজন করে এসব শিক্ষা মেলার। কিন্তু বাংলাদেশের অনেক স্টুডেন্ট যেহেতু অনলাইনে গবেষনায় অভ্যস্ত না, এসব শিক্ষা মেলা তাদের বিভ্রান্তও করছে! বড় নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় দেখে অনেকে এমন সব সাবজেক্টে পড়তে আসছেন, যেগুলো অস্ট্রেলিয়ার ডিমান্ড লিস্ট ঞেই। ওগুলো পড়ে এদেশে অভিবাসনের জন্যেও আবেদন করা যাবেনা। অথচ বেশিব্রভাগ ক্ষেত্রে এসব সাবকেক্টের টিউশন ফী প্রতি সেমিস্টারে ১৩ হাজার ডলারের বেশি! কাজ করে ১৩ হাজার ডলার জোগাড় করা অনেক কঠিন। টিউশন ফী যদি সেমিস্টারে ৬-৭ হাজার ডলারের মধ্যে হয় তাহলে তা কাজ করে জোগাড় করা সহজ। অস্ট্রেলিয়ার ডিমান্ড লিস্ট দেখে কম টিউশন ফীর প্রতিষ্ঠানে পড়তে আসার চেষ্টা করুন। এদেশে অভিবাসন হয়ে যাবার পর আরও যত খুশি পড়ুন। কেউ বাধা দেবেনা। অস্ট্রেলিয়ার ডিমান্ড লিস্ট দেখতে জানতে ঢু মারুন এই ওয়েব লিঙ্কে http://www.immi.gov.au/…/Pages/skilled-occupations…/sol.aspx
আমি আমার দেশের মেধাবী ছেলেমেয়েদের অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে আসতে উৎসাহ দেই, কারন এখানে এখনও ছাত্রছাত্রীদের কাজ পাবার সুযোগ তুলনামূলক অনেক দেশের চেয়ে বেশি এবং এদেশে এখনো পড়াশুনা শেষে অভিবাসনের আবেদন করার সুযোগ আছে। অনেকে বিবিএ-এমবিএ, মাস্টার্স এমন হিল্লিদিল্লি নানা ডিগ্রীর উদ্দেশে অস্ট্রেলিয়া আসতে আগ্রহী। তাদের বলছি এভাবে অস্ট্রেলিয়া আসার চেষ্টা করবেন না। এদেশে আসতে চাইলে এদের অগ্রাধিকার সাবজেক্ট দেখবেন। যে সব বিষয়ে পড়লে এদেশে অভিবাসনের আবেদন করা যাবে। এই সাবজেক্ট তালিকাটি এদেশের এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে পাবেন। এই তালিকাটি আবার স্থির না। এদের চাহিদা অনুসারে সময়ে সময়ে তালিকা বদলায়। মনে রাখবেন এখানে পড়াশুনা করতে এসে কাজ করবেন ঠিক, কিন্তু পড়াশুনা, ক্লাস উপস্থিতি, পরীক্ষা পাস তথা একাডেমিক সব এক্টিভিটিজ ঠিক রাখতে হবে। নতুবা আপনার ভিসা বাতিল হয়ে যাবে।
এখানে পড়াশুনার অগ্রাধিকার যোগ্যতা হলো আইএলটিএস এ ভালো স্কোর। এর সঙ্গে শুদ্ধ উচ্চারনে ইংরেজি বলা রপ্ত করবেন ভালোভাবে। কারন শুদ্ধ ইংরেজি বলতে পারাটা এদেশের কাজের সবচেয়ে বড় স্কিল। এদেশে যেহেতু বাংলাদেশের শিক্ষা প্রায় মূল্যহীন, তাই দেশে বেশি দেরি করার দরকার নেই। এইচএসসির পরই চেষ্টা শুরু করা ভালো। কোর্স ভেদে এদেশে আসতে অভিভাবক অথবা স্পন্সরের ব্যাংকে ৫০-৬০ লাখ টাকা দেখাতে হয়। বাবার টাকা না থাক, এমন একজন স্পন্সর ম্যানেজ করুন যিনি আপনার জন্যে ব্যাংকে টাকা দেখিয়ে বলবেন, আপনার খরচ তিনি চালাবেন। তাকে নগদ কোন টাকা দিতে হবেনা। ঢাকার অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন বড় বড় ল’ফার্ম দিয়ে তদন্ত করিয়ে নিশ্চিত হবে টাকাগুলো বৈধ আয় কিনা, ট্যাক্স পেইড কিনা।
আইএলটিএস স্কোর সহ পছন্দের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অনলাইনে অথবা এজেন্টের মাধ্যমে যোগাযোগ করে অফার লেটার জোগাড় করতে হবে। এরপর ঢাকায় থাকতেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে একটি সেমিস্টারের টিউশন ফী জমা দিয়ে এরপর ভিসার জন্য যাবেন হাইকমিশনে। মনে রাখবেন এদেশে সবকিছু হবে আইনানুগ। কোথাও কোন তদবিরের সুযোগ নেই।
আমি তাদেরকেই অস্ট্রেলিয়া আসার চেষ্টা করতে বলি যাদের দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার আর্থিক সামর্থ্য আছে। দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব স্টুডেন্টই অভিভাবকের টাকায় পড়েন। আর এদেশে আসা প্রায় সব স্টুডেন্ট পড়েন নিজের টাকায়। দেশে নানা কারনে যথা সময়ে কোর্স শেষের নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু এখানে নিশ্চয়তা শতভাগ। দেশে এখন মেয়েদের পদে পদে নানা ঝুকি। সে তুলনায় অস্ট্রেলিয়ায় আপনার মেয়ে থাকবে অনেক নিরাপদে। এদেশে মেয়েদের মেয়ে না, মানুষ হিসাবে দেখে সমাজ এবং রাষ্ট্র। এখানে যাদের পরিচিত কেউ নেই তাদের জন্য আমার মতো ভাইরা এদেশে আছেন। কোন বাংলাদেশি পরিবারের সঙ্গে আপনার মেয়েকে আমরা থাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারবো।
অভিভাবক বা স্পন্সরের ব্যাংকে ৫০-৬০ লাখ টাকা দেখালেও এদেশে আসা প্রায় সব স্টুডেন্ট একটা টিউশন ফী, টিকেট, হাতে কিছু নগদ টাকা, এভাবে ১০-১২ লাখ টাকা খরচ করে আসেন। বাকি সব টাকা জোগাড় করেন কাজ করে। এরজন্য তাদের যে কষ্ট করতে হয়, তা দেশে থাকতে তারা কল্পনায়ও ভাবতে পারবেন না। কাজ মানে দোকান কর্মচারী, রেষ্টুরেন্টের কিচেন হ্যান্ড জব, ক্লিনিং এসব। এখানে এসব কাজ করতে আপনার খারাপ লাগবেনা। কারন সবাই এখানে কাজ করে। এবং প্রায় সব ছাত্রই এখানে একাধিক কাজ করেন। একটা কাজের টাকায় নিজের থাকা-খাওয়ার খরচ জোগান। আরেক জবের টাকা জমিয়ে টিউশন ফী দেন। এভাবে কিন্তু স্টুডেন্টরা ঘুমানোর জন্য ৩-৪ ঘন্টার বেশি সময় পান না। এসবের সঙ্গে নিজেদের খাবার রান্নাবান্না করতে হয়। স্টুডেন্টরা তাদের কাজে ঘন্টায় ১০ থেকে ১৭ ডলার পর্যন্ত পান। আমাদের দেশের হাজার হাজার স্টুডেন্ট যারা দেশে কোন দিন কোন কাজ করেননি, কিন্তু এদেশে এসে সব কাজ করছেন, পড়াশুনা ঠিক রাখছেন, এসব করে আবার নিয়মিত বাড়িতেও টাকা পাঠাচ্ছেন। তাদের দেখলে ভালোবাসায় শ্রদ্ধায় মন ভরে যাবে। বাংলাদেশ থেকে আসা প্রায় সব স্টুডেন্টইই এদেশে স্মার্ট, আইনানুগ হিসাবে সমাদৃত। অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশুনার সব তথ্য পাবেন এই ওয়েবসাইটেwww.studyinaustralia.gov.au
Related Articles
Tipaimukh Dam: Facts Current Position
The planned construction of Tipaimukh dam on the common Barak River has caused deep antagonism against India by the people
পরবাসিনী রোজার ‘বাংলা আগুন’এ কবি গুরুর ‘আলোক-লোক ফাঁকা’
পরবাসের জীবন একেক জনের কাছে এক এক রকম হয়ে ধরা দেয়। তার কারণ হল একেক জনের দেখার চোখ এক এক
India’s muscle power
South Asia’s security does not depend only on South Asian countries because China comes in the picture. The impact of