সেমিফাইনালে টাইগাররাঃ ইটস নট জাস্ট এ ক্রিকেট ম্যাচ ফর বাংলাদেশ

একটা লম্বা উইকইন্ড পুরোটাই কন্যাদের সাথে কাঁটিয়ে সোমবারের সকালে গাড়ি পার্ক করে যেইমাত্র অফিসমুখো হয়েছি এক অস্ট্রেলিয় বন্ধু আমার পাশে হাটা শুরু করে প্রথমেই যে বাক্যটি উচ্চারণ করলো তাহলো-
“নাদিম, যেখানে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ড টুর্নামেন্টের বাইরে ছিটকে গেলো সেখানে বাংলাদেশ কি করে সেমিফাইনাল খেলছে? কিভাবে এটা সম্ভব হল?”
তার জিজ্ঞাসার প্রতিক্রিয়ায় সপ্তাহের শুরুটা করলাম রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা, আন্তর্জাতিক পুঁজির সফল প্রবাহ ও বাণিজ্যিকীকরণ, তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও খেলোয়াড় তুলে আনার/ উঠে আসার সুস্থ ও সুন্দর চর্চা ইত্যাদি যেভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সমৃদ্ধ করেছে ও এগিয়ে নিয়ে গেছে, ও ভবিষ্যতে বাংলাদেশ যে আরও এগুবে, এবং সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের পারফরমেন্স এমন ধারাবাহিক আর পেশাদার যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতো বটেই আগামি পাঁচ-দশ বছরে এ দল বিশ্বকাপ নিয়ে ঘরে ফিরলেও কেউই যে আর খুব বেশী আশ্চর্য হবেনা এই ধরনের একটি লম্বা বয়ান দিয়ে।
সেমিফাইনালে টাইগাররা খেলবে ভারতের বিরুদ্ধে। যতদূর জানি টিকেট ভারতীয়রা আগেভাগেই কিনে ফেলায় খুব বেশি সমর্থক মাঠে পাচ্ছেনা বাংলাদেশ। তবে নিশ্চিত ঢাকা টু ডয়েচল্যান্ড, ক্যানবেরা টু কানাডা টাইগারদের সফলতায় ও ব্যার্থতায় দেশে ও প্রবাসে বাংলাদেশী আর তাদের সন্তানেরা হাসবে ও কাঁদবে, আপ্লূত হবে, ভেঙে পড়বে, জয়ে প্রশংসা আর পরাজয়ে সমালোচনার ঝড় তুলবে। এসব কিছুই ক্রিকেট, আর একই সাথে নিখাদ বাংলাদেশপ্রেমও। ক্রিকেট যেভাবে দেশ ও প্রবাসে, বিশেষত নতুন প্রজন্মের মধ্যে বাংলাদেশী আত্মপরিচয় নিয়ে গর্ব করার বোধের বৈশ্বিকীকরণ ঘটিয়েছে সেটা সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া আর কোন কিছুই সেভাবে পারেনি বাংলাদেশের জন্যে, অন্তত সাম্প্রতিককালে।
যেভাবে আমাদের জীবদ্দশাতেই ক্রিকেট নিজেকে বাংলাদেশীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা, আর একইসাথে দেশে ও প্রবাসে তাদের জীবনযাপনের, দৈনন্দিনতার, আনন্দ, বেদনার, উচ্ছাসের, আবেগের অপরিহার্য অংশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলো সেটা আমার কাছে এক অসাধারণ উপাখ্যান মনে হয়। ক্রিকেটের শুরু ঔপনিবেশিকতারকালে ইংল্যান্ড এ হলেও বাংলাদেশ ক্রিকেটকে যেভাবে তাদের উত্তর-ঔপনিবেশিক সংস্কৃতির প্রয়োজনানুসারে পুনর্গঠন, রুপান্তর ও পুনরাবিষ্কার করেছে সেটা আমার কাছে বরাবরই দুর্দান্ত মনে হয়।
আমাদের অনেকের জীবনেরই শুরুটা, অর্থাৎ আমাদের শৈশব এবং কৈশোর লেপটালেপটি হয়ে ছিলোনা ক্রিকেটের সাথে। আমাদের কাবাডি ছিল, ফুটবল ছিল, ডাংগুলি ছিল, দাড়িয়াবান্ধা ছিল, কানামাছি ছিল, গোল্লাছুট ছিল। ডাংগুলি খেলা সম্ভবত এখন আর হয়ে উঠেনা আমাদের কারো। এখন সবাই মিলে আমরা ক্রিকেট খেলি। ক্রিকেটের প্রসার, ক্রিকেট নির্ভরতা ও নানাবিধ দেশিও খেলার ক্রমশ বিলীন হয়ে যাওয়ার মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে কিনা সেটা মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় আমার কাছে।
বহুজাতিক কোম্পানিগুলো কোন এক কালে যারা ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, মধ্য প্রাচ্য আর দক্ষিণপূর্ব এশিয়াকেই যারা এক সময় তাদের বাজার মনে করতো ক্রিকেট ও টেলিভিশান বরাতে তারা তাদের পণ্যকে নিয়ে যাচ্ছে সর্বত্রে, সুদূর প্রত্যন্তেও, তৈরি হচ্ছে নতুন বাজার, প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় নানা চাহিদাও। মনে রাখুন ক্রিকেটের ইতিহাস, যেমন ধরুন ক্রিকেটের রমরমা বাণিজ্যিকীকরণের এইকালে এখন একসময়ের দাপুটে ওয়েস্টইন্ডিজ আর ক্রিকেটের জন্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই আহবান থাকবে ক্রিকেটের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত পৃষ্ঠপোষকতা করতে যেয়ে নানাবিধ দেশীয় খেলাগুলোকে অবহেলা করে হারিয়ে যেতে যেন না দেয় বাংলাদেশ। ক্রিকেট বাংলাদেশকে ভুলে গেলেও বাংলাদেশের জন্য মন ঠিকই পুড়বে কাবাডি আর দাড়িয়াবান্ধার।
ক্রিকেট আর ডাংগুলি দুটোই গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। ঠিক যেভাবে আদিবাসী ও বাঙ্গালী, কিংবা শহর/ মহানগর ও হাওরাঞ্চল সমান গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য।
আহা যে আদিবাসী গ্রামে মানুষের অমূল্য প্রান, ভিটেবাড়ি আর যাবতীয় সহায়সম্বল ভেসে গেছে বাঙ্গালিত্তের বানের পানিতে সেখানেও কি ক্রিকেট আর বাংলাদেশের সম্ভাব্য বিজয় একই তাৎপর্য নিয়ে ফিরে আসবে এবার? বন্ধ হোক আদিবাসীদের প্রতি যাবতীয় নিপীড়ন, বৈষম্য আর অন্যায্যতা।
গুড লাক ক্রিকেট। গুড লাক বাংলাদেশ।
নাদিমুল হক মণ্ডল
১৪ জুন ২০১৭, ক্যানবেরা।
Related Articles
Canberra Eid-ul-Adha Friday 31st July
Assalamu Alaikum. Eid day will be Friday, 31st July, Inshallah – Imam’s Council of the ACT.
Healthy democratic tradition set by declining the offer of Ministership
On 13th September seven—five ministers and two state ministers- –were sworn in by the President. Earlier in the media, the
কেনবেরার ২০১৯ সালের প্রভাতফেরি পৃথিবীর সকল বাংলাদেশ দুতাবাসের জন্য অনুকরনীয় হতে পারে
কেনবেরায় এবারই প্রথমবারের মত বিভিন্ন ভাষাভাষির মানুষ একত্রিত হয়ে ২১ ফেব্রূয়ারি ২০১৯-এর সকালে প্রভাতফেরি’র হাটায় অংশ নিয়েছিল । বাঙ্গালী অবাঙ্গালী