সাহাদাত মানিকের ‘মানুষের সংলাপ’

সাহাদাত মানিকের ‘মানুষের সংলাপ’

আতিকুর রহমান শুভ: আমার পদ্য পছন্দ নয় একেবারেই৷ পদ্যের শব্দের কারুকার্য আমি কম বুঝি৷ গদ্যের সারল্য আমাকে বরাবর টানে৷ তবুও কবি নির্মেলেন্দু গুণ যখন লেখেন ” স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো” বা “আজ একটি কবিতা পড়া হবে”৷ এই শব্দমালাও কবিতা হয়ে উঠে, এতো সরল বাক্য আবার কবিতাও হয়ে উঠে; তখন কবিতা না ভালোবেসে আর থাকা যায় কি ?
সাহাদাত মানিকের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ “মানুষের সংলাপ” পডে আমরা এমন সরল সোজা শব্দমালা পাই৷ সেই সারল্য কতটুকু কবিতা হয়ে উঠেছে পাঠকেরাই বলবেন৷

সাহাদাত মানিকের জন্ম ডাকাতিয়ার তীর ঘেঁষে প্রশন্নপুর গ্রামে৷ খেয়ানৌকার মাঝি খন্দকারকে গ্রামবাসীরা খাটো করে খোনার বলতো৷ সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক অসংখ্য লেখায় তার গ্রামের বাড়ি জলেশ্বরীতে ফিরতে চেয়েছেন৷ সাহাদাত মানিকও ডাকাতিয়া যেতে চেয়েছেন বারবার। তিনি কবিতায় বলছেন,

মনে পড়ে সেবার
ডাকাতিয়ায় বর্ষার জল দেখে
আমাকেই জড়িয়ে ধরেছিলে তুমি
এ নদীতে কুমির নেই
আমি নিশ্চিত করে বলেছিলাম…

বা কিছুই মনে পড়েনা কবিতায়

কীভাবে বোঝাই সত্যি সত্যিই
সবই ভুলে গেছি আমি
জ্বোনাকির আলো
ঝরো বৃষ্টি
ডাকাতিয়ার উত্তাল ঢেউ
খোনারের হাসি…

প্রবাস জীবনের এ নিত্য সংগ্রামে সাহাদাত মানিক লিখে চলেছেন। সংগ্রাম বলছি এ কারনে যে, অর্থ উপার্জনের কাজের পাশাপাশি আমাদের নারী পূরুষ সকলকে সংসারের সকল কাজ করতে হয় এখানে। নিউক্যাসেল প্রবাসী কবি মিল্টন হাসনাত একবার আমাকে বলছিলেন, দিনশেষে রাত্রিতে বাচ্চাকে ঘুম পাডিয়ে নিজের চোখে রাজ্যের ঘুম নিয়ে তিনি জেগে থাকেন এবং ভাবেন বা একটু লিখবার সময় পান। আমাদের কবি সাহাদাত মানিকও নিশ্চয়ই এভাবেই লিখে চলেছেন, ভাবছেন। নইলে, কে হায় হৃদয় খুঁডে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে।

মানিকের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পংক্তির মাঝে আমার কাছে এদু’টি লাইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে;
এত ভালোবাসা, এত ভালোবাসি
তবু কার অভিশাপে নতজানু আমি….
অথবা এই দুই লাইন;
তুমি বেঁচেছ মরে
আমি মরেছি বেঁচে।

প্রশ্ন করছেন কবি। কবে যেন শুনেছিলাম বাউল সাধক শাহ আব্দুল করিম বলছেন, যারা প্রাতিষ্ঠানিক ধার্মিক তারা কি ভীষন লোভী নন? নিজের পরকাল বা ভালোর জন্যইতো তাদের সকল বন্দেগী।
আমার বুঝতে ভুল হতে পারে, তবে কবি এখানে বলছেন,
ঈশ্বরের কি তাডা আছে
আছে কি তাডা?
কার কি অভাব জানবার…

জীবনানন্দ দাশ আমাদের বাংলার কবি। দেশ বিভাগের ঠিক আগে তিনি পশ্চিম বাংলায় যেয়ে আটকে যান। তারপরই সেই ট্রাজিক মৃত্যু। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জীবনানন্দ বাংলায় তার ধানসিঁডি তীরে ফিরতে চেয়েছেন। পারেননি।

সাহাদাত মানিক স্হায়ীভাবে বসবাস অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায়। দেশে ফেরার আকুঁতি তারও কবিতায়;

যদি পারো যেয়ো
দেখে এসো
আমার ঘর, একলা বাড়িটা
আমার নদী, খেয়াঘাট
আমার হেলান পাল, সুনীল মাস্টার
…… … ….. …. … ………..
এ জনমে বোধ হয়
আমার আর প্রশন্নপুর যাওয়া হবেনা।

আমার এ লেখায় হয়ত সবগুলো কবিতা এবং তার বিষয় উঠে আসেনি। তবে আমি বলতে পারি সাহাদাত মানিক পুরোপুরি একজন কবি হয়ে উঠেছেন। কবিতাগুলোতে তার প্রাণের ছোঁয়া শতভাগ।

মানুষের সংলাপ বইটির মুখবন্ধে বলা হয়েছে, কবি সাহাদাত মানিক মাটির কাছাকাছি থেকে মাটির গন্ধেই লিখেছেন কবিতাগুলো। মানুষের একান্ত দু:খ, বেদনা, বিরহ, আনন্দ, উল্লাস আর ভালোবাসার নিজস্ব সংলাপ; প্রকৃতই মানুষের সংলাপ। বইটি বের করেছে মুক্তভাস ফাউন্ডেশন, চমৎকার প্রচ্ছদ করেছেন অসীম চন্দ্র রায় । আগ্রহী পাঠক বইটি পেতে চাইলে কবির সংগে যোগাযোগ করতে পারেন।


Place your ads here!

Related Articles

ধলেশ্বরী-6

দিন ক্ষন আজ আর মনে করতে পারছিনা, সম্ভবত নব্বইয়ের শেষের দিকে, মফস্বল থেকে ঢাকাত এসেছি। ঢাকা শহরের অলি গলি তেমন

Where did BNP’s strategy go wrong?

Since 1991 Bangladesh Nationalist Party ( BNP) either formed the government or sat in the opposition in the parliament. For

দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে বাংলাদেশের রান ২৬৯/৪

ফজলুল বারী, ওয়েলিংটন থেকে রোদেলা ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভ মাঠে দিনটা নিজের মতো করে শুরু করলো নিউজিল্যান্ড দল। দিনের তৃতীয় ওভারে

2 comments

Write a comment
  1. নদী
    নদী 11 December, 2017, 01:35

    আহ কবি এবং কাব্য আলোচনা দুটোই অসাধারণ!!!

    Reply this comment

Write a Comment