সশস্ত্র বাহিনী দিবস

অস্ট্রেলিয়া এবং নিউ জিল্যান্ড ২৫ এপ্রিল ANZAC Day বা সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালন করে। সেদিন সরকারি ছুটির দিন; সরকারি উদ্যোগে অনেক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। প্রথম এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার অংশগ্রহণকে যতদূর সম্ভব ইতিবাচক হিসেবে দেখানো যায়, অস্ট্রেলিয়ার যুদ্ধ ইতিহাস পাঠ করলে এবং ক্যানবেরার ওয়ার মিউজিয়াম ঘুরলে তা পাওয়া যায়। ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে এদের নিজেদের মধ্যে অনেক টানাপোড়ন গেছে, এই নিয়েও মুক্ত আলোচনা হয়। এমনকি ইরাক এবং আফগানিস্তান অভিযানে অংশগ্রহণ সঠিক ছিল কিনা তা নিয়েও আলোচনা হয়। যুদ্ধ এবং নানা অভিযানে অংশ গ্রহণ পুরোপুরি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল, তারপরেও সেই সিদ্ধান্ত সামরিক বাহিনীর সাথে পরামর্শ করে নাকি বন্ধু দেশের অনুরোধ বা চাপে নেয়া হয়ে ছিল, তা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে, হয়তো আরও হবে। এইসব আলোচনা এবং গবেষণার উদ্দেশ্য কাউকে খাটো বা দোষী করা নয়; মূল উদ্দেশ্য রাজনৈতিক এবং সামরিক সিদ্ধান্তের জবাবদিহিতা, ভবিষ্যতে অধিকতর সঠিক সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করা, এবং প্রয়োজনে সশস্ত্র বাহিনীকে আরও উন্নত করা। সশস্ত্র বাহিনীর অনেক নথিপত্র জনগণ দেখতে পারে, পড়তে পারে, অভিমতও দিতে পারে। যেহেতু জনগণের করের পয়সায় সব হচ্ছে, ভালো মন্দ অনেক কিছুই জনগণ জানতে চাইতে পারে।
প্রতি বছর ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দিবস খুব জাকজমকের সাথে উদযাপিত হয়। নিজের পেশার বিশেষ একটা দিন, সবাইকে নিয়ে একটু আনন্দ করা যেতেই পারে। দিবসটাকে সামনে রেখে একটু ভিন্ন কথা বলি। ১৯৭১ এ আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ যা জনযুদ্ধ হিসেবে পরিচিত, সেখানে জনসাধারণের সহায়তায় আমাদের সশস্ত্র বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জাতি সশ্রদ্ধ চিত্তে তা স্মরণ করে। ১৯৭১ এ জনগণের ও আমাদের সীমিত সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে যে পরিমান গবেষণা হবার কথা ছিল তা হয় নাই। সামরিক বাহিনীর অধিকাংশ আলোচক এবং গবেষক আদি এবং অন্তে নিজেদের বীরত্বের কথা বেশি তুলে ধরেছেন যেখানে জনগণ এবং অসামরিক মুক্তিযুদ্ধাগণ ছিল শুধু একটা সহায়ক শক্তি। অথচ দেশের বাইরের এবং অধ্যাপক মুনতাসির মামুনের মতো গবেষকদের মতে কিন্তু ব্যাপারটা ছিল সম্পূর্ণ উল্টা। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট থেকে সশস্ত্র বাহিনী নিজেদেরকে সমালোচিত করেছে তাদের ফৌজদারি অপরাধ সমতুল্য কাজকর্ম এবং রাজনীতিতে জড়িয়ে। সে দুই চারজন উচ্চাভিলাসী অফিসার বা যত সামান্য সংখ্যক সদস্যই হোক, তারা কিন্তু পুরো বাহিনীকেই জড়িয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড, জেলখানায় হত্যাকান্ড, খালেদ মোশাররফ হত্যাকান্ড, জিয়াউর রহমানের সময়ে ১৯৭৭ সালের বিমান বাহিনীর বিদ্রোহ ও হাজার হাজার সৈন্যের ফাঁসি, কয়েক ডজন ক্যু এর গুজব, ১৯৮১ তে জিয়াউর রহমানের মৃত্যু, প্রহসনের ট্রায়াল, জেনারেল মঞ্জুর হত্যাকান্ড, এরশাদের অবৈধ ক্ষমতা দখল, এবং ২০০৭ এর ১/১১… এইগুলো কোনোক্রমেই সশস্ত্র বাহিনীর মর্যাদা বৃদ্ধি করে নাই। এইখানে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। পুরোটাই ছিল।nternal muscle flexing। শক্ত শৃংখলার দাবিদার সশস্ত্র বাহিনী কিন্তু এই সব অস্বীকার করতে পারবে না, আবার সেই সময় বা এই ঘটনাগুলো undo করতে পারবে না। তাই সশস্ত্র বাহিনীর উচিত প্রতিটা ঘটনার তদন্ত করা, document করা এবং তা প্রকাশ করা। এতে হয়তো অনেক অন্ধকার দিক উঠে আসবে, কিন্তু এতে লজ্জার কিছু নেই, বরং ভবিষ্যতের চলার পথ আলোকিত হবে। যতদিন পর্যন্ত জনগণ সরকারি বা সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিবেদন না পড়তে পারছে, ততদিন নানা রকম গুজব শুনে জনগণ নিজেদের মতো করে একটা মানসিক মতামত তৈরী করে ফেলে যা কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনে না।
জনগণের কাছে অন্যায় স্বীকারে কোনো লজ্জা নেই, কারণ জনগণের টাকায় সশস্ত্র বাহিনী চলে তাই জনগণ হিসাব চাইতেই পারে। শুধু সশস্ত্র বাহিনী নয়, সব কিছুই চলে জনগণের টাকায় তাই সবাই জবাবদিহি করতে বাধ্য। কেউই সাংবিধানিক আইনের উর্ধে নয়।
আমাদের সশস্ত্র বাহিনী জনগণ এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনে আরো উন্নতি করুক- সবার কাম্য।
Related Articles
McCain Visit to Bangladesh
Three senior US senators, including defeated presidential candidate John McCain (72), paid a visit to Bangladesh on December 2nd for
Canberra Ramadan 2021 (1442H) Starts on Tuesday 13th April
Salamu Alaikum WRT, WBT (Peace be on you). The Canberra Mosque along with the Imams Council of the ACT announces
মন্ত্রিসভার ভূমিকম্প
ফজলুল বারী: নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা নিয়ে লিখতে বেশ দেরি করে ফেললাম। বিদেশে আমরা যারা থাকি জীবিকার কাজ আমাদের পয়লা নাম্বার