বীরপ্রতীক ডাব্লু এস ওডারল্যান্ডের জন্মদিন আজ

ইতিহাস আর ইতিহাস বিকৃতি নিয়ে কত কথা কত ঝগড়া আমাদের। সব কিন্তু দলগত। আসলে যে ইতিহাস আমাদের জানা উচিত আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা দরকার তা নিয়ে আদৌ মাথাব্যথা নাই কারো। থাকলে আজ সব মিডিয়ায় এই বিদেশী মানুষটির জন্য এক তিল পরিমাণ হলেও জায়গা থাকতো।
ইনি সেই মানুষ, যিনি একাত্তরে আমাদের হয়ে গেরিলা যুদ্ধ করেছিলেন। টঙ্গীর বাটা কোম্পানীতে নির্বাহী পদে কর্মরত ভদ্রলোক তাঁর জীবন বাজী রেখে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। কতটা ঝুঁকি নিয়েছিলেন তার গল্পটা জানা থাকলে বুঝতে সুবিধা হবে কেমন ত্যাগ ছিলো তাঁর। নিজের প্রভাব আর মেধা খাটিয়ে ইনি রাও ফরমান আলী আর টিককা খানের বন্ধু হবার ভান করে পোঁছে গিয়েছিলেন পাকিদের গোপন দপ্তরে। নিয়াজীর তালিকায় মান্যবর ও বিশেষ অতিথি এই ভদ্রলোক তখন থেকেই মুক্তিযোদ্ধা আর বাঙ্গালী সেনা অফিসারদের খবর দেয়া নেয়া করতেন। পরে আমাদের দু:খ কষ্ট আর মুক্তি সংগ্রামের একাত্মতায় অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন। গেরিলাদের কৌশল জানানো ও ট্রেনিং দেয়ার পাশাপাশি যুদ্ধ করে খেতাব পেয়েছিলেন বীরপ্রতীক।
আমি যখন অষ্ট্রেলিয়া আসি তখন নাছিলো মোবাইলের ছড়াছড়ি না
এমন সহজ আকাশভ্রমণ। নতুনদেশে নিজেকে মানিয়ে নেবার সংগ্রামে সদ্য পাওয়া চাকরী ছেড়ে তাঁকে দেখতে যাবার মত টাকা বা সময় কোনটাই ছিলোনা হাতে। তিনি থাকতেন এক ই দেশে সিডনি থেকে প্রায় সিঙ্গাপুরের দূরত্বে পার্থে। তারপর ও আমি ফোনে কথা বলার জন্য ছিলাম মরিয়া। কিন্তু সহজে তা হয়নি। তাঁর স্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন অসম্ভব। কারন তিনি শয্যাশায়ী। চোখে দেখেননা প্রায়। আমি নাছোড়বান্দা । মাঝে মাঝে ফোন করতাম বলে একসময় তার মন গললো, জানতে চাইলেন কেন কথা বলতে চাই? ামি জবাব দিয়েছিলাম, মুক্তিযোদ্ধাকে আমার শ্রদ্ধা জানাতে। সাবধান করে দিলেন এই বলে, বাংলাদেশের নাম শুনলেই আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠা বিদেশী যোদ্ধা যা খুশী বলতে পারেন আর রাগারাগি করলেও যেন মনে কিছু না করি।
তারপর খুব ছোট আলাপে বুঝলাম কেন তিনি রেগে ছিলেন। যে দেশের জন্য একজন বিদেশী হবেও তিনি যুদ্ধ করেছিলেন সেদেশের জনকও তাজউদ্দীন সহ অন্যদের হত্যা তিনি মানতে পারেননি। পারেননি বলে পঁচাত্তরের পর উল্লাসরত বাটার কর্মচারীকে পদচ্যূত করতেও দ্বিধা করেননি। বারবার বলছিলেন, এই বাংলাদেশের জন্য লড়াই করিনি আমরা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতা আর নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া নাৎসী অনাচারের বিভীষিকায় তিনি যে আলো খুঁজে নিয়েছিলেন সেটাই দিয়েছিলেন আমাদের। আমার জীবনের পরম সৌভাগ্য আমি এমন একদেশে বসবাস করি যেখানে সুদূর প্রশান্তপাড়ে বাংলা বাংলাদেশ বাঙ্গালীর জন্য জীবন উৎসর্গে রাজী থাকা এক বীরপ্রতীক ঘুমিয়ে আছেন।
মানুষ মনে রাখূক বা না রাখুক, বদলে যাওয়া রাজনীতির মনে থাকুক বা নাথাকুক, স্বার্থপর সমাজ ও তারুণ্যের মনে দাগ কাটুক আর না কাটুক, দেশের আলো হাওয়া মাটি আকাশ জানে তার জন্য এই তারকা বীরের অবদান।
বাংলাদেশের একমাত্র বিদেশী বীরপ্রতীক ডাব্লু এস ওডারল্যান্ডের জন্মদিন আজ।
Related Articles
Life is a tale told by an idiot
Sometimes we pose a question to ourselves “What is life?” We contemplate about the purpose of life and how it
প্যারিসে পালিত হলো বাংলা বর্ষবরন অনুষ্ঠান
গত রোববার প্যারিসে বাংলা নতুন বর্ষ ১ লা বৈশাখ ১৯১৭ পালিত হয়। আইফেল টাওয়ার চত্বরে অনুষ্ঠিত এই বর্ষবরন অনুষ্ঠানে সারা
Time to rethink the direction of Bangladesh foreign policy
Foreign policy is not formulated in a vacuum. It is based on certain ingredients that cannot be changed, such as,